Suktara Tv

অজানার সন্ধানে

এশিয়াবিশ্ব

জাপান সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য – Amazing and interesting facts about Japan in bengali

Table of Contents

জাপান সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য – Amazing and interesting facts about Japan in bengali

জাপান সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য : জাপান পূর্ব এশিয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত একটি দেশ। জাপানি ভাষায় জাপান শব্দটিকে নিহন বা নিপুন নামে ডাকা হয়। এক সময় মনে করা হতো সকালে পূর্ব দিকে সূর্য উঠাটাকে জাপান থেকেই সবচেয়ে আগে দেখা যায়। এর জন্য জাপানকে ল্যান্ড অফ দি রাইসিং সান – Land of the Rising Sun বলা হয়।

   শুকতারা Tv র এই পর্বে জানব জাপান সম্পর্কে এমন কিছু অবাক করা তথ্য যা যদি আপনি প্রথম শুনে থাকেন তাহলে অবশ্যই চমকে যাবেন।

জাপান সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু তথ্য

জাপানের রাজধানী টোকিও
জাপানের জাতীয় ভাষা জাপানি
জাপানের জনসংখ্যা ১২৬,৯১৯,৬৫৯ (২০১৫ আনুমানিক)
জাপানের জাতীয় খেলা সুমো এবং জুডো
সরকার এককেন্দ্রিক সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র
জাপান দেশে দ্বীপের সংখ্যা ৬৮৫২ টি
জাপানের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির
জাপানের জাতীয় ফুল চেরি ফুল (শাকুরা)

জাপানের ইতিহাস

ঐতিহাসিকদের মতে প্রায় ১৩ বছর ক্রিস্টপূর্বে জাপানে জমান নামক মানব সভ্যতার খোঁজ মেলে এবং তাদের আদিম মানুষ বলা হয়। আসলে এরাই জাপানের আদিবাসী বাসিন্দা আইনু দের পূর্বপুরুষ। চীনা ইতিহাস বই বুক অফ হান্ট সর্বপ্রথম, যেখানে জাপানের নাম পাওয়া যায়।

জাপানের ভৌগোলিক অবস্থান, গঠন ও আয়তন

জাপানকে একটি দ্বীপের দেশ বলা হয়। দ্বীপের দেশ বলার কারণ জাপান দেশটি প্রায় ৬৮৫২ টি দ্বীপের্ সমন্নয়ে গঠিত। এই দ্বীপ গুলির মধ্যে হোনশু, হক্কাইডো, কিউশু, শিকোকু উল্লেখযোগ্য। জাপানে একটি দ্বীপ আছে যার নাম ওকুনোশিমা, যা পুরোটা খরগোশ দিয়ে ভরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা নিয়ে এসেছিলেন। এই দেশের রাজধানী হলো টোকিও। জাপানের জাতীয় ফুল হলো  চেরি ব্লসম। জাপানের আয়তন ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯৭২ বর্গকিমি। 

জাপানের জলবায়ু   

জাপানের জলবায়ু প্রধানত নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির। তবে উত্তর থেকে দক্ষিণে জলবায়ুর মধ্যে বিরাট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। জাপানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যগুলি ছয়টি প্রধান জলবায়ু অঞ্চলের মধ্যে বিভাজিত হয়েছে। এগুলি হল: হোক্কাইডো, জাপান সাগর, কেন্দ্রীয় উচ্চভূমি, সেতো অন্তর্দেশীয় সাগর, প্রশান্ত মহাসাগর ও র্যু ক্যু দ্বীপপুঞ্জ। সর্ব উত্তরে অবস্থিত অঞ্চল হোক্কাইডোতে আর্দ্র মহাদেশীয় জলবায়ু দেখা যায়। এখানে শীতকাল দীর্ঘ ও শীতল এবং গ্রীষ্মকাল খুব উষ্ণ থেকে শীতল। এখানে ভারি বৃষ্টিপাত দেখা যায় না। তবে শীতকালে দ্বীপগুলি শীতকালে গভীর তুষারের চাদরে আচ্ছাদিত হয়ে যায়।

  জাপানের গড় শীতকালীন তাপমাত্রা ৫.১ °সে এবং গড় গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা ২৫.২ °সে। জাপানের সর্বকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা—৪০.৯ °সে ।

জাপানের জৈববৈচিত্র্য   

জাপানে নয়টি বনাঞ্চলীয় পরিবেশ অঞ্চল রয়েছে। এগুলিতে দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু ও ভূগোল প্রতিফলিত হয়। র্যু ক্যু ও বোনিন দ্বীপপুঞ্জে দেখা যায় ক্রান্তীয় আর্দ্র দীর্ঘপত্রী বন। প্রধান দ্বীপপুঞ্জের মনোরম জলবায়ু অঞ্চলে দেখা যায় নাতিশীতোষ্ণ দীর্ঘপত্রী ও মিশ্র বন। উত্তরের দ্বীপপুঞ্জগুলিতে শীতল অঞ্চলগুলিতে দেখা যায় নাতিশীতোষ্ণ সরলবর্গীয় বন। জাপানে বন্যপ্রাণীর ৯০,০০০ প্রজাতি দেখা যায়। এগুলির মধ্যে বাদামি ভাল্লুক, জাপানি ম্যাকাক, জাপানি র্যােককুন কুকুর ও জাপানি জায়েন্ট স্যালাম্যান্ডার উল্লেখযোগ্য। জাপানের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীগুলিকে রক্ষা করার জন্য জাপানে অনেকগুলি জাতীয় উদ্যান স্থাপিত হয়েছে। সেই সঙ্গে এই দেশে ৩৭টি রামসর জলাভূমিও রয়েছে। চারটি স্থান এগুলির অসাধারণ প্রাকৃতিক মূল্যের জন্য ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকাভুক্ত হয়েছে।

জাপানের শাসন ব্যবস্থা

জাপানের প্রথম স্বাসকের নাম ছিল জিম্মু তান্নু এবং বর্তমানেও একজন স্বাসক  যার নাম আকিহিতো। কিন্তু বর্তমানে জাপান একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত দেশ। দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশকে পরিচালিত করে।

জাপানকে কেন ভূমিকম্পের দেশ বলা হয়?

জাপান দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের নিকট অবস্থিত হওয়ায় জাপানে খুবই ভূমিকম্প হয়। জাপানের বেশির ভাগ দ্বীপ গুলিই ভূমিকম্প প্রবন এলাকা পেসিফিক রিং অফ ফায়ারে অবস্থিত। পেসিফিক রিং অফ ফায়ার হলো প্রশান্ত মহাসাগরের একটি এলাকা যেখানে ছোট বড়ো অনেক আগ্নেয়গিরি রয়েছে। সেখানে প্রায় ১০৮ টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। ১৯২৩, ১৯৯৫ এবং ২০১১ সালের ভূমিকম্পে অনেক মানুষ মারা গিয়েছে। জাপানে প্রায় প্রতিদিন গড়ে ৫/৬ বার ভূমিকম্প হয়।  জাপানের প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা ই বসবাসের অযোগ্য। সেখানে রয়েছে ঘন ঘন জঙ্গল, পাহাড় পর্বত তাই দেশের অধিকাংশ জনসংখ্যাকে উপকূলবর্তী এলাকায় দেখা যায়। 

জাপানকে কেন পৃথিবীর সবচেয়ে ঘন বসতির দেশ বলা হয়?

জাপান পৃথিবীর সবচেয়ে ঘন বসতির দেশ গুলির একটি। যেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৩৩৬ জন মানুষ বসবাস করে। শুধুমাত্র দেশের রাজধানী টোকিওতে প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষ বসবাস করে। জাপানের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ হোনশু নামক দ্বীপটিতে বসবাস করে। জাপানের মানুষদের আয়ুকাল অনেকবেশী হয়ে থাকে এবং জাপানিরা খুবই পরিশ্রমী হয়ে থাকে। 

জাপানের জনসংখ্যা

জাপানের জনসংখ্যা ২০১৫ আনুমানিক ১২৬,৯১৯,৬৫৯ জন। জাপানের সংবিধান অনুযায়ী সেখানে সব ধর্মের মানুষ বসবাস করতে পারে। জাপানে প্রায় ৫১.৮২ শতাংশ সিন্টো, ৩৪.৯ শতাংশ বৌদ্ধ এবং ২.৩ শতাংশ খ্রীষ্টান ধর্মের মানুষ বসবাস করে। জাপানের প্রধান ভাষা হলো জাপানীজ। জাপানীজ ভাষায় বিভিন্ন ধরণের অক্ষর দেখা যায়। 

জাপানকে কেন প্রযুক্তিবিদ্যার দেশ বলা হয়?

জাপানকে প্রযুক্তিবিদ্যার দেশও বলা হয়। কারণ জাপান প্রযুক্তিবিদ্যাতে অন্য দেশ গুলির থেকে অনেক এগিয়ে। ১৯৪৫ সালে জাপানের দুইটি শহর হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পরমাণু হামলা হয়েছিল। তখন সেখানকার মানুষের খুবই ক্ষতি হয়েছিল।  তারপরেও তারা নিজেদের পরিশ্রমে এতো তাড়াতাড়ি উন্নতির ছোঁয়া পেয়েগেছে। পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু ইলেকট্রনিক এবং গাড়ির কোম্পানি যেমন সনি, প্যানাসনিক, নিশান, টয়োটা, হোন্ডা ইত্যাদি জাপানের তৈরি করা। জাপানের তৈরি করা ইলেক্ট্রনিকে প্রচুর পরিমানে সোনা এবং রুপো  ব্যবহার করা হয়। জাপানে বাবহার করা বেশিরভাগ ফোন ওয়াটার প্রুফ হয়।  জাপান খুব তাড়াতাড়ি সুপার কম্পিউটার তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। জাপানের ট্রেন পৃথিবী বিখ্যাত। জাপানের ট্রেন গুলি পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত গতির ট্রেন। সেখানকার ট্রেনগুলি সময় মতো চলে সবসময়। জাপানের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন শিনকানসেন সারা পৃথিবীতে বুলেট ট্রেন হিসাবে পরিচিত। এই ট্রেন গুলি প্রতি ঘন্টায় প্রায় ২৪০ কিমি থেকে ৩০০ কিমি বেগে চলে। শিঞ্জুকু রেলওয়ে স্টেশন পৃথিবীর ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন। সেখানে প্রত্যেক দিন প্রায়  ২০ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করে। এই দেশের সবচেয়ে বড়ো এয়ারপোর্ট হানেডা, এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় ব্যস্ততম এয়ারপোর্ট। 

জাপানের পর্যটন শিল্পও অনেক উন্নত। প্রতি বছর অনেক পর্যটক জাপানে বেড়াতে যান। টোকিও স্কাই ট্রি পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা টাওয়ার।  জাপানের রাজধানী টোকিও শহরটি খুবই সুন্দর একটি শহর। সেখানকার বড়ো বড়ো বিল্ডিং গুলি, সেখানকার শিল্প নিদর্শন গুলি পর্যটকদের বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করে।

  জাপানের মানুষরা অনেক ক্রিয়েটিভ হয়ে থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অ্যানিমেশন ডিসাইন জাপানে তৈরি হয়।

জাপানের অর্থনীতি

জাপান একটি শিল্পোন্নত দেশ যার বাজারভিত্তিক অর্থনীতি বিশ্বের ২য় বৃহত্তম অর্থনীতি। এর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক খাতগুলি অত্যন্ত দক্ষ ও প্রতিযোগিতাশীল। তবে সুরক্ষিত খাত যেমন কৃষি, বিতরণ এবং বিভিন্ন পরিষেবায় উৎপাদনশীলতা তুলনামূলকভাবে কম।

  শিল্পনেতা, কারিগর, সুশিক্ষিত ও পরিশ্রমী কর্মী বাহিনী, উচ্চ মাত্রায় সঞ্চয়ের প্রবণতা, উচ্চ বিনিয়োগ হার, শিল্প ও বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নয়নের জন্য সরকারের জোরালো সমর্থন — এ সব কিছু মিলে জাপান একতি পরিণত শিল্পোন্নত অর্থনীতি।

জাপানের বিখ্যাত খাবার গুলো কি কি?

জাপানে কিছু লোকপ্রিয় খাবার আছে। জাপানের মানুষ কাঁচা ঘোড়ার মাংস খায় যাকে বাসিসি বলে। ভাতের সাথে চিনি, লবন দিয়ে মেখেও খাওয়া হয় যাকে সুসি বলা হয় এবং তার সাথে কাঁচা মাছ কেটে কেটে পরিবেশন করা হয়। আমেরিকার পর সবচেয়ে বেশি ম্যাকডোনাল্ড এর রেস্টুরেন্ট জাপানে আছে। জাপানের মানুষরা সামুদ্রিক খাবার খুবই পছন্দ করেন। তারা প্রতিবছর প্রায় ১৭ মিলিয়ন টন সামুদ্রিক খাবার আমদানি করে থাকে। 

জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ বলার কারণ কী?

জাপান সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শাব্দিক অর্থে নিপ্পন (জাপান) সূর্যোদয়ের দেশ হলেও প্রকৃতপক্ষে জাপান কিন্তু সূর্যোদয়ের দেশ নয়। প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের বুকে অনেক ছোট ছোট দ্বীপদেশ আছে যারা সূর্য উদয়ের প্রথম প্রভাত উপভোগ করে। তাঁদের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরের রিপাবলিক অফ কিরিবাতি নামের একটি ছোট্ট দ্বীপদেশ সূর্য উদয়ের প্রথম সাক্ষী। তাহলে প্রশ্ন হল কেন জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ বলা হয়। ধারনা করা হয়, ইউরোপীয় উপনিবেশের সময় থেকে জাপানকে সবচেয়ে পূর্বের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হত। তাছাড়া যেহেতু জাপানী ভাষায় চীনা ভাষার উপস্থিতি অত্যান্ত শক্তিশালী। সেহেতু নিপ্পন শাব্দিক অর্থ সূর্যের উৎপত্তির বিশ্লেষণে ইউরোপীয়রা জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে প্রচার করে ফেলে। সম্ভবত ইউরোপীয়রা জাপানকে সবচেয়ে পূর্বের দেশ হিসেবে বিবেচনা করেই সুর্যদয়ের দেশ বলে প্রচার করে ফেলে। সেই প্রচারের ধারাবাহিকতায়ই আজও জাপান সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে কিরিবাতির মত এমন অনেক দ্বীপদেশ আছে (ফিজি, কুক আইল্যান্ড, টোঙ্গা, সামোয়া, নাওরু, টোকেলাউ, টোভেলু ইত্যাদি) যা কিছুকাল আগেও কেউ ধারনা করেনি। ১৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে একদল ওলন্দাজ নাবিক সর্বপ্রথম অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রসীমা প্রদক্ষিণ করে। তখন থেকে অস্ট্রেলিয়াকে সবচেয়ে পূর্বের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হত। তারও প্রায় ১৩০ বছর পর ক্যাপ্টেন জেমস কুক ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দে অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেন। নঅস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার হওয়ার অনেক পরে ধীরে ধীরে ছোট ছোট অনেক দ্বীপদেশ (১৮শতাব্দির গোঁড়ায় এবং উনিশ শতাব্দীর প্রথমে) আবিষ্কৃত হয়েছে। অনেক অনেক বছর পর আবিষ্কৃত এইসব দ্বীপদেশগুলো সম্পর্কে আমরা বিভিন্ন তথ্য জানতে পারছি। যেমন নিউজিল্যান্ডের পিট আইল্যান্ড ভারত মহাসাগরের একেবারে পশ্চিম গোলার্ধে এন্টারটিকার কাছাকাছি অবস্থিত। তাই এই দ্বীপটিও জাপানের চেয়েও চার ঘণ্টা আগে সূর্যোদয় হয়। আর দ্যা রিপাবলিক অফ কিরিবাতি প্রশান্ত মহাসাগরের সবচেয়ে পুর্বের দেশ হওয়াতে সেখানেই সূর্য প্রথম উদিত হয়। যেহেতু জাপানে প্রথম সূর্যোদয় হয় না। সেহেতু জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ বলাটা অসংগতিপূর্ণ। প্রশান্ত মহাসাগরে সবচেয়ে পুর্বে অবস্থিত এই দ্বীপদেশটি (রিপাবলিক অফ কিরিবাতি) প্রকৃত সূর্যোদয়ের দেশ।

ভারত ও জাপানের মধ্যে বর্তমান সম্পর্ক

  1. ভারত ও জাপানের মধ্যে ঐতিহাসিক কাল থেকে গভীর কৌশলগত আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব রয়েছে। দু’দেশের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একই রকম চিন্তাভাবনা রয়েছে। দুই দেশই তাঁদের জনগণের উন্নত ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। 
  2. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করে সুশাসনের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করে যেতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে। ভারত ও জাপান বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও জনসংযোগ বৃদ্ধির বিষয়েও সম্মত হয়েছে।
  3. ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত ও জাপান বিভিন্ন উন্নয়নী প্রকল্পে একযোগে কাজ করতে সহমত হয়েছে। এই লক্ষ্যে জাপান – ভারত বাণিজ্য সহযোগিতা মঞ্চ তৈরির বিষয়ে আলোচনাকে দুই প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানান। এই অঞ্চলের শিল্প করিডর তৈরিতে ভারত ও জাপানের বাণিজ্য মহলের উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে।
  4. জাপান ‘পূবে তাকাও’ ফোরামের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়নী প্রকল্পের কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে – যোগাযোগ বৃদ্ধি, বিপর্যয় মোকাবিলা ও জনসংযোগ বৃদ্ধি। ভারতের ক্ষুদ্র দ্বীপগুলিকে স্মার্ট দ্বীপ হিসাবে গড়ে তোলার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
  5. মুম্বাই – আমেদাবাদ উচ্চ গতির রেল প্রকল্প সহ দিল্লি – মুম্বাই শিল্প করিডর ও ফ্রেড করিডরের মতো পরিকাঠামো উন্নয়নমূলক কাজের মধ্য দিয়ে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে জাপানের ভূমিকার প্রশংসা উল্লেখযোগ্য।

জাপান সম্পর্কে আরও কিছু আশ্চর্যজনক তথ্য

  1. জাপানি ভাষায় ‘জাপান’ শব্দের অর্থ ‘নিপ্পন’, যার অর্থ ‘উদীয়মান সূর্যের ভূমি’। অর্থাৎ জাপান হল সেই দেশ, যেই দেশের জনগণ ভোরের সূর্য প্রথম দেখে থাকে।
  2. জাপানে স্বাক্ষরতার হার শতকরা ১০০ শতাংশ। তাদের পত্রিকায় আমাদের দেশের মত দূর্ঘটনা, রাজনীতি, সিনেমার সংবাদ, দেশ বিরোধী, অসামাজিক সংবাদ ইত্যাদি ছাপানো হয় না। সেখানে শুধু প্রয়োজনীয় ও আধুনিক জগৎ সম্পর্কে সংবাদ ছাপা হয়।
  3. চেরি ফুল (শাকুরা) জাপানের জাতীয় ফুল।
  4. জাপানীরা রাস্তায় ময়লা ফেলে না, তাদের ধূমপায়ীরা ব্যাগে করে ছাইদানি নিয়ে ঘুরে, জাপানের রাস্তায় যে সিগারেটের ছাই পর্যন্ত ফেলা নিষিদ্ধ!
  5. জাপানের কোন প্রাকৃতিক সম্পদ নেই এবং প্রতি বছর শত শত ভূমিকম্প হয় তবু তারা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।
  6. জাপানে মোট প্রকাশিত বইয়ের ২০% হচ্ছে কমিক্স বই। কারণ জাপানিরা কমিক্স বই পড়তে খুব ভালোবাসে।
  7. জাপান 3,000 এরও বেশি ম্যাকডোনাল্ডের রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কোনও দেশে সবচেয়ে বেশি।
  8. জাপানের ৯০ ভাগ মোবাইল ফোন জলনীরোধক। কারন জাপানের যুবক-যুবতিরা স্নান করতে করতেও মোবাইল ব্যবহার করতে পছন্দ করে!
  9. জাপানিজরা খাবার অপচয় করে না,  রেস্টুরেন্টে গেলে দেখবেন।  মানুষ যার যতটুকু দরকার এর বেশি নেয়না।
  10. জাপানে শিক্ষাজীবনের প্রথম ৫ বছর কোন পরীক্ষা হয়না। কারন তারা মনে করে লেখাপড়া চরিত্র গঠনের জন্য, পরীক্ষা নেয়ার জন্য না।
  11. জাপানে রেস্টুরেন্ট ও ট্রেনে মোবাইল ফোন ইউজ করা নিষেধ।
  12. জাপানিদের পুরো জীবনটাই কাটে কাজের প্রতি বিপুল উদ্দীপনায়, পরিবার, সমাজ ও দেশের কল্যাণে। জাপানে শিক্ষাজীবনের প্রথম ৬ বছর শেখানো হয় নৈতিকতা ও কিভাবে মানুষের সাথে চলতে হবে।
  13. জানেন কি, জাপানের রাস্তায় কোন ডাস্টবিন থাকে না! এমনকি দেশটির কোথাও অন্যান্য দেশের মত বর্জ্যের ভাঁগাড় পর্যন্ত দেখতে পাবেন না, কেন জানেন? জাপানিরা ওইসব সবরকম বর্জ্য রিসাইকেল করে ফেলে! যেগুলো রিসাইকেল করা সম্ভব না সেগুলো খুব নিপূণভাবে একটি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়।
  14. জাপান হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে পারমানবিক বোমা নামক অমানবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। হিরোশিমায় বোম মারার মাত্র ১০ বছরে হিরোশিমা তার আগের জায়গায় ফিরে আসে। [কিন্তু জাপানের সেই হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে এখনও ফসল আগের মত ফলে না। এখনও বিকলাঙ্গ বাচ্চা জন্ম হয়!]
  15. বিশ্বজুড়ে অসম্ভব করিৎকর্মা পরিশ্রমী একটি জাতি হিসেবে জাপানীদের দারুণ সুনাম রয়েছে। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরের পরও তারা ঘরে বসে থাকতে পছন্দ করে না। ঘরের কাজে, বাচ্চাদের যত্নআত্তিতে, বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় কেটে যায় তাদের। গড়ে প্রায় ৮৩ বছর বাঁচে জাপানীরা, পুরো জীবনটাই কাটে কাজের প্রতি বিপুল উদ্দীপনায়, পরিবার, সমাজ ও দেশের কল্যাণে।

জাপান দেশ Q&A

  1. জাপানের রাজধানী কোথায়?

Answer : টোকিও।

  1. জাপান দেশের জনসংখ্যা কত?

Answer : ১২৬,৯১৯,৬৫৯ (২০১৫ আনুমানিক)।

  1. জাপানের জাতীয় ভাষা কি?

Answer : জাপানি।

  1. জাপানের জাতীয় ফুল কি?

Answer : চেরি ফুল (শাকুরা)।

  1. জাপানের জাতীয় খেলা কি?

Answer : সুমো এবং জুডো

  1. জাপান দেশে দ্বীপের সংখ্যা কত?

Answer : ৬৮৫২ টি।

  1. জাপানের জলবায়ু কেমন?

Answer : নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির।

  1. জাপানের প্রধানমন্ত্রীর নাম কি?

Answer : ইয়োশিহিদে সুগা (Yoshihide Suga)(2020 to continue)।

  1. বর্তমান জাপান সম্রাটের নাম কি?

Answer : নুরুহিতো (Naruhito)(2019 to continue)।

  1. জাপানের জাতীয় প্রতিষ্ঠা দিবস কবে?

Answer : ১১ ফেব্রুয়ারি, খ্রিস্টপূর্ব ৬৬০ অব্দ।

  আশা করি এই পোস্টটি বা ” জাপান সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য – Amazing and interesting facts about Japan in bengali ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *