রাজধানী দিল্লি (ভারত): ইতিহাস, নদী, পাহাড়, ঐতিহাসিক স্থান, জনসংখ্যা
রাজধানী দিল্লি (ভারত): ইতিহাস, নদী, পাহাড়, ঐতিহাসিক স্থান, জনসংখ্যা

Table of Contents

রাজধানী দিল্লি (ভারত): ইতিহাস, নদী, পাহাড়, ঐতিহাসিক স্থান, জনসংখ্যা

রাজধানী দিল্লি : ভারতের বর্তমান রাজধানী হলো নিউ দিল্লি। রাজধানী দিল্লিতে প্রতি বর্গ কিমি ১১২৯৭ জন মানুষ বসবাস করে থাকে। রাজধানী দিল্লি ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল শহর এবং দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল মহানগর অঞ্চল। এটি বিশ্বের ভারতের ৩য় বৃহত্তম শহরাঞ্চলও বলা যায়।

  রাজধানী দিল্লির ইতিহাস, নদী, পাহাড়, ঐতিহাসিক স্থান, জনসংখ্যা ইত্যাদি সম্পর্কে জানব শুকতারা Tv র এই পর্বে।

রাজধানী দিল্লি (ভারত) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য

রাজধানী নিউ দিল্লি (ভারত)
জনসংখ্যা ১ কোটি ৬৭ লক্ষ ৫৩ হাজার ২৩৫ জন
নারী / পুরুষ ৮৬.৬ / ১০০ জন
আয়তন ১৪৮৩ বর্গকিলােমিটার
জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমি ১১২৯৭ জন
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০,৯৬ শতাংশ (২০০১-২০১১)
সাক্ষরতার হার ৮৬.৩৪ শতাংশ
প্রধান ভাষা হিন্দি
আবহাওয়া শীতকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি আর গ্রীষ্মতে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস । বৃষ্টির সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর ।

রাজধানী দিল্লির ইতিহাস :

বহু যুগ ধরে ভারতীয় রাজনীতি তথা প্রশাসনের কেন্দ্র হিসেবে অবস্থান করছে দিল্লি । খ্রিস্টের জন্মের ১০০ বছর আগে এই জনপদের রাজা ছিলেন দিলু , তার নাম অনুযায়ী উত্তরকালে এই স্থানের নামকরণ হয় । প্রায় তিন হাজার বছর পুরােনাে এই জনপদে নাকি রাজত্বও করেছেন পাণ্ডবরা । তখন নাম ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ । ভারত রাষ্ট্রের প্রায় মাঝামাঝি হওয়ায় এই শহর পছন্দ ছিল সমস্ত শাসকেরই । আর্যরাও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন এখান থেকেই । কেবল আর্য কেন , বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে আসা শাসকরা । ছাপ রেখে গিয়েছে এই শহরে । এখানে প্রথম রাজধানী গড়েন টোমর রাজপুত রাজা অনঙ্গপাল । নাম রাখেন লাল কোট । প্রায় ৫০০ বছর রাজত্ব করার পর দ্বাদশ শতাব্দীতে দখল যায় চৌহান রাজপুতাদের । তে । তৃতীয় পৃথ্বীরাজের সময় এই কিলা রায় পিথােরা শহরের পত্তন করলে লাল কোটের আয়তন বেড়ে যায় । এরপর আসেন মহম্মদ ঘােরী । প্রথমবার চৌহানদের হাতে পরাজিত হয়ে । ফিরে গেলেও দ্বিতীয়বার ( ১১৯২ ) তিনি দিল্লি দখল করতে সক্ষম হন । জেনারেল কুতুবকে সিংহাসনের দায়ীত্ব দিয়ে ফিরে গেলেন । যুদ্ধ জয়ের স্বারক রূপে । কুতুব তৈরি করেন এক স্তম্ভ , যা বর্তমানে কুতুব মিনার নামে খ্যাত । ১২০৬ – এ ঘােরীকে হত্যা করে ।

দিল্লি অধিপতি হলেন কুতুবুদ্দিন । তাঁর বংশের রাজা ইলতুৎমিসের সময় রাজধানীর প্রতিপত্তি আরও বাড়ে । এরপর তুরস্কের আলাউদ্দিন খিলজি সিরি দূর্গ নগরী গড়েন । গিয়াসুদ্দিন তুঘলক গড়েন । তুঘলকাবাদ ( ১৯৩০ ) । তার পুত্র মহম্মদ বিন তুঘলক জাহানপানা নগরী গড়েন । ফিরােজ শাহ তুঘলকের আদেশে তৈরি হয় ফিরােজাবাদ । এইস্থানটি বর্তমানে ফিরােজশাহ কোটলা নামে খ্যাত । এসময়েই ভারতে এসেছিলেন তৈমুরলও , সমগ্র দিল্লিকে লুঠ করে ১২০ টি হাতির পিঠে চাপিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন সমরখন্দে । তার উত্তরসূরী সৈয়দ রাজাদের হটিয়ে তুঘলকাবাদে রাজধানী স্থাপন করে ( ১৪১৪ ) লােধী বংশ । সিকান্দার লােধি রাজধানী স্থানান্তর করে । ( ১৪৯২ ) আগ্রায় নিয়ে যান । এই বংশেরই রাজা । ইব্রাহিম লােধীকে পানিপথের যুদ্ধে হারিয়ে দিল্লির মসনদে বসেন বাবর । শুরু হয় ভারতীয় ইতিহাসের নতুন অধ্যায় , মােগল শাসন । বাবর দিল্লি থেকে আগ্রায় যান । রাজধানী নিয়ে বাবরের পুত্র হুমায়ুন ফিরে আসেন । ফিরােজাবাদে । শেরশাহ সুরীর আক্রমণে পরাজিত হলে দিল্লি কিছু কালের জন্য মােগল সম্রাটের হাত ছাড়া হয় । কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানেই তা দখল করে ফেলে মােগলরা । হুমায়ুন প্রতিরক্ষাকে আরও জোরদার করার জন্য গড়ে তুললেন শাহজাহানাবাদ অর্থাৎ লালকেল্লা । হুমায়ুনের মৃত্যুর পর পুত্র আকবর রাজধানী স্থানান্তর করেন আগ্রায় । আকবরের নাতি খুরম অর্থাৎ শাহজাহান আগ্রা থেকে ফেরেন দিল্লি । ঔরঙ্গজেবও রাজত্ব করেন এখানে । ১৬৮১ – তে তিনি । রাজধানী স্থানান্তর ঘটান দাক্ষিণাত্যে । এরপরই মােগল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে । এই সুযােগে নাদীর শাহ ( ১৭৩৯ ) ঢুকে পড়েন দিল্লিতে । কোহিনুর , ময়ূর সিংহাসনের মতাে নানান অমূল্য সম্পদ পেয়ে খুশি হয়ে নাদীর দেশে ফিরে যান । দুর্বল মােগল উত্তরসুরীরা তখনও বর্তমান দিল্লিতে । এবার সুযােগ বুঝে প্রশাসনিক কেন্দ্রে ঢুকে পড়ে ব্রিটিশরা ( ১৮০৩ ) । মােগল সম্রাটকে ভাতা দিয়ে দেশে রাজত্ব চালাতে থাকে ইংরেজরা । ১৯১১ – য় ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে স্থানান্তরীত করে দিল্লিতে নিয়ে যায় । নিউ দিল্লি শহরটি ব্রিটিশরাই তৈরি করেছেন । সেই থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতের রাজধানী দিল্লি । ক্ষমতা হস্তান্তরের পর ১৯৫৬ – তে দিল্লিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তকমা দেওয়া হয় । পরবর্তীকালে স্বতন্ত্র রাজ্যে পরিণত করা হয় দিল্লিকে । দিল্লি রাজ্য ভ্রমণে ভ্ৰামণিকদের খুব বেশি বেগ পেতে হয় না । সবই যেন হাতের মুঠোয় , যােগাযােগ ব্যবস্থা দারুন , আর এক দর্শনীয় স্থান থেকে অন্যটির দূরত্বও বেশি নয় । জাতীয় উৎসবগুলিতে সেজে ওঠে এ রাজ্য । বিশেষ করে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন , ২৬ জানুয়ারি জাঁকালাে উৎসব হয় রাজ্য জুড়ে । এছাড়া দশেরা , দীপাবলি , ইদ , মহরমও পালিত হয় । মহাধুমধামের সঙ্গে । বিশ্বের অন্যতম উদ্যান নগরী দিল্লিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় । লালকেল্লাকে কেন্দ্র করে মােগলদের । গড়া শহর ওল্ড দিল্লি আর ব্রিটিশদের পরিকল্পিত সুঠাম শহর নিউ দিল্লি । নতুন ও পুরােনাে দিল্লির মিলন ঘটিয়েছে রামলীলা ময়দান ।

রাজধানী দিল্লির ভৌগোলিক অবস্থান, গঠন ও আয়তন :

উত্তর ভারতে ২৮.৬১° উত্তর ৭৭.২৩° পূর্ব অক্ষ-দ্রাঘিমাংশে দিল্লি অবস্থিত। দিল্লির উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে হরিয়ানা রাজ্য এবং পূর্ব দিকে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য অবস্থিত। দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের আয়তন ১,৪৮৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৭৮৩ কিলোমিটার গ্রামাঞ্চল এবং ৭০০ কিলোমিটার শহরাঞ্চল। এই কারণে আয়তনের হিসেবে এটি ভারতের বৃহত্তম শহর। উত্তর-দক্ষিণে এই শহরের প্রসার ৫১.৯ কিলোমিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে এর প্রসার ৪৮.৪৮ কিলোমিটার । দিল্লি ভারতের ভূ-কম্পী ক্ষেত্র-চারের অন্তর্গত। অর্থাৎ, প্রবল ভূমিকম্পে এই শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজধানী দিল্লির নদ-নদী :

রাজধানী দিল্লির ভূগোলের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল যমুনা নদী। যমুনা নদী ছিল পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের ঐতিহাসিক সীমানা। এই নদীর প্লাবন সমভূমি কৃষিকার্যের উপযোগী উর্বর পলিমাটি জোগায়। তবে এই নদীতে ঘন ঘন বন্যা দেখা দেয়। হিন্দুধর্মের পবিত্র নদী যমুনাই দিল্লির একমাত্র প্রধান নদী। হিন্ডন নদী গাজিয়াবাদকে দিল্লির পূর্ব অংশকে বিচ্ছিন্ন করেছে।

রাজধানী দিল্লির পাহাড় – পর্বতমালা :

রাজধানী দিল্লির ভূগোলের আরও একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল দিল্লি শৈলশিরা। দিল্লি শৈলশিরার উৎস দক্ষিণ দিকে অবস্থিত আরাবল্লি পর্বতমালা। এটি শহরের পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অংশগুলিকে বৃত্তাকারে পরিবেষ্টন করে আছে। এই শৈলশিরার সর্বোচ্চ স্থানটির উচ্চতা ৩১৮ মিটার। এটি এই অঞ্চলের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।

রাজধানী দিল্লির জলবায়ু :

দিল্লি আর্দ্র উপক্রান্তীয় জলবায়ুর (কোপেন সিডব্লিউএ) একটি নিদর্শন। এখানে গ্রীষ্মকার ৯ এপ্রিল থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময় দৈনিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৩৬ ° সেলসিয়াস। শীতকাল ১১ ডিসেম্বর থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময় দৈনিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে প্রায় ১৮ °সেলসিয়াস। মার্চ মাসের প্রথম দিকে বায়ুর দিক পরিবর্তিত হয়। উত্তর-পশ্চিম দিকের পরিবর্তে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। নভেম্বরের শেষ দিকে অল্পকালের জন্য অল্প শীত অনুভূত হয়। জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা সবচেয়ে হ্রাস পায়। এই সময় প্রায়ই কুয়াশা দেখা দেয়। এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তাপমাত্রা উষ্ণ থাকে। জুন মাসের শেষ দিকে বর্ষা আসে। সেই সময় আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়।

রাজধানী দিল্লির জনসংখ্যা :

ভারতের রাজধানী দিল্লির মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৬৭ লক্ষ ৫৩ হাজার ২৩৫ জন। নারী / পুরুষের অনুপাত ৮৬.৬ / ১০০ জন। রাজধানী দিল্লির মোট আয়তন ১৪৮৩ বর্গকিলােমিটার । রাজধানী দিল্লিতে জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমিতে ১১২৯৭ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০,৯৬ শতাংশ। ( ২০০১-২০১১ ) সাক্ষরতার হার- ৮৬.৩৪ শতাংশ। রাজধানী দিল্লির প্রধান ভাষা  হিন্দি ।

রাজধানী দিল্লির ঐতিহাসিক স্থান :

ভারতের রাজধানী দিল্লির বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানগুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

কুতুব মিনার (রাজধানী দিল্লি, ভারত) :

ভারত বিজয়ের স্মারক রূপে এই জয়স্তম্ভ তৈরি করার কাজে হাত দেন কুতুবুদ্দিন আইবক , ১১৯৯ – এ । মিনার গড়ার কাজ শেষ হয় জামাতা ইলতুৎমিসের সময় , ১২৩৬ – এ । অনেকে ধারণা করেন কুতুবের বংশের রাজা ফিরােজ শাহ তুঘলকের আমলে ( ১৩৫৭-৬৮ ) মিনারের কাজ শেষ হয় । পৃথ্বীরাজের কিলা রাই পিথােরাতেই ৭২.৫ মিটার উচ্চ এই মিনার নির্মাণ হয় । মিনারটি শ্বেতপাথর এবং লাল বেলে পাথরের তৈরি । ৩৬৭ টি সিঁড়ি ভেঙে মিনারের মাথায় ওঠারও ব্যবস্থা আছে । পাঁচতলার এই মিনারটি ভারতের সর্বোচ্চ স্থাপত্য হিসেবে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা পেয়েছে । কুতুব , ইলতুৎমিস ও ফিরােজের হাতে ধাপে ধাপে গড়ে ওঠা এই মিনারের প্রতিটি তলে ব্যালকনিও আছে । ১৮০৩ – এর ভয়ংকর ভূমিকম্পে কুতুব মিনার ক্ষতিগ্রস্থ হলে ব্রিটিশ মেজর রবার্ট স্মিথ তা সংস্কার করেন । মাঝে বেশ । কিছুকাল পাঁচতলায় চড়া নিষিদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা আর নেই । ফলে কুতুব মিনারের ওপর থেকে দেখে নেওয়া যায় দিল্লির বিস্তৃত অঞ্চল । খোলা থাকে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত । প্রবেশমূল্য মাত্র ১০ টাকা । 

লালকেল্লা (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

আগ্রা থেকে রাজধানী স্থানান্তর ঘটিয়ে দিল্লিতে এলেন শাহজাহান । ১৬৪৮ সালে বেলেপাথর দিয়ে ২.৫ কিলােমিটার দীর্ঘ পাঁচিলে ঘেরা এই কেল্লা তৈরি হয় । প্রবেশমূল্য ৩৫ টাকা । প্রায় দশ বছর লেগেছিল এই দূর্গের কাজ সম্পূর্ণ হতে । প্রায় আড়াই কিমি বিস্তৃত এই দুর্গ আটকোণ বিশিষ্ট । দূর্গের চারপাশে ১১০ মিটার গভীর পরিখাও । কাটা হয়েছিল । যমুনার দিকের ১৮ মিটার আর শহরের দিকে সুরক্ষিত ছিল ৩৩ মিটার উচু প্রাচীরের দ্বারা । সাত মাইল দীর্ঘ প্রাচীরে আবদ্ধ দূর্গের ফটকের সংখ্যা ছিল ১৪ টি । ব্রিটিশরা সিপাহী বিদ্রোহের বদলা নিতে ১৮৫৭ – য় ধ্বংস করে এই নগরী । অবশিষ্ট রয়েছে সামান্য প্রাচীর ও দুটি প্রবেশদ্বার । এখানেই ১৯৪৭ – এর ১৫ আগস্ট ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেন জওহরলাল নেহরু । এখানে । দাঁড়িয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণও দেন তিনি । সেই থেকে প্রতিবছর স্বাধীনতার দিনে প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লা । থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন ।

কুতুব মিনার (রাজধানী দিল্লি, ভারত)
কুতুব মিনার (রাজধানী দিল্লি, ভারত)

 চাঁদনিচকমুখী প্রবেশদ্বার দিয়ে দূর্গে প্রবেশ করলে । সেকালের মিনা বাজার । দুষ্প্রাপ্য পুরােনাে জিনিসের দোকানের সারিতে পরিণত হয়েছে মিনা বাজার । দূর্গে ঢুকে দেখে নিতে হয় ফুলের মতাে আকারের ড্রাম হাউস , কিল্লা – ই – মুবারক , দেওয়ান – ই – আম শুক্রবার বাদে প্রতিদিন দু ঘণ্টা করে সম্রাট এখানে । বসে প্রজাদের মুখােমুখি হতেন , ঠিক পেছনেই পার্সিয়ান বাগিচা , মেহতাব বাগ , শ্বেত পাথরের দেওয়ান – ই – খাস , বেগমদের রংমহল , মােতি মসজিদ , শাহজাহানের আপন খাস মহল , ঔরঙ্গজেবের তৈরি । মােতি মসজিদ ।

 মােগল আমল থেকে শুরু করে ভারতের । স্বাধীনতাপ্রাপ্তী পর্যন্ত লেজার শাে দেখানাের ব্যবস্থাও 

জুম্মা মসজিদ (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

১৬৫০-৫৬ – য় তৈরি শাহজাহানের এই মসজিদ দিল্লির অন্যতম দর্শনীয় স্থান । সম্রাট নিজে দূর্গ থেকে পায়ে হেঁটে শুক্রবার ও বিশেষ দিনগুলিতে নামাজ পড়তে আসতেন এখানে । পরবর্তীকালে মসজিদে ৪০ মিটার উঁচু দুটি মিনার বসানাে হয়েছে । দক্ষিণের মিনারটিতে উঠে লালকেল্লা সহ দিল্লির অনেকটি অংশই দেখে নেওয়া যায় । বিশালাকার এই মসজিদের উপাসনা কক্ষে একসঙ্গে ২৫ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন । আয়তনের দিক থেকে এশিয়ার বৃহত্তম মসজিদ এটি । এখানেই সংরক্ষিত আছে পয়গম্বর হজরত মহম্মদের দাড়ির কেশ , চটি , সমাধি সৌধর চাদোয়া , পায়ের ছাপের মতাে মহামূল্যবান জিনিস । নামাজের সময় ছাড়া যে – কোনাে সময়ে খালি পায়ে , ভাড়ার লুঙ্গি পরে , মাথা ঢেকে ঢােকা যায় মসজিদে । সকাল ৭ টা থেকে বেলা ১২ টা এবং দুপুর ১.৩০ টা থেকে সন্ধে ৬.৩০ টা পর্যন্ত এই মসজিদটি খােলা থাকে । 

লৌহ মিনার (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

কুতুবের পাশেই রয়েছে চতুর্থ শতাব্দীর রাজা চন্দ্রভার্মার তৈরি লৌহ মিনারটি । ৭.২ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন এই লােহার মিনারে এখনও মরচে লাগেনি । মিনারে খােদিত গরুড়ের মূর্তি দেখে ধারণা করা হয় কোনাে বিষ্ণু মন্দির থেকে তুলে এনে এই মিনারটিকে এখানে বসানাে হয়েছে । 

কুওয়াত – উল ইসলাম মসজিদ (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

ভারতের প্রাচীনতম মসজিদ এটি । হজরত মহম্মদের বাড়ির রেপ্লিকা হিসেবে কুতুব ১১৯৩ – এ মসজিদ গড়ার কাজে হাত দেন । ১৬ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন উপাসনা গৃহ বিশিষ্ট এই মসজিদটি তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ বছর । মসজিদের গায়ে হাতে লেখা হয়েছে । কুরআনের আয়াত । হিন্দু ও জৈন মন্দির থেকে নানান স্তম্ভ এনে লাগানাে হয়েছে এই মসজিদে । পরবর্তীতে ইলতুৎমিস ও আলাউদ্দিন খিলজির সময় মসজিদের আয়তন আরও বাড়ে ।

আলাই মিনার ও দরওয়াজা (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

আলাউদ্দিন এই মিনার গড়ার কাজে হাত দিয়েছিলেন । আশা ছিল কুতুব মিনারের থেকেও বড়াে স্তম্ভ গড়ার । আলাউদ্দিনের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ২৭ মিটারেই এই মিনার সমাপ্ত হয়ে যায় । এই চত্বরেই রয়েছে তাঁর ও পূর্বপুরুষ ইলতুৎমিসের সমাধি । আলাই মিনারের প্রবেশদ্বার লাল বেলেপাথরের আলাই দরওয়াজার কারুকার্য bia দেখার মতাে । বাইজেন্টাইন থেকে স্থপতি আনিয়ে এই বিশালাকার প্রবেশদ্বারটি তৈরি করিয়েছিলেন আলাউদ্দিন । 

মেহেরৌলি (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

মােগল সম্রাটের গ্রীষ্মকালীন বাসস্থান মেহেরৌলির মােগল বাগিচাগুলি দেখার মতাে । এখানেই অষ্টভূজ সমাধিক্ষেত্রে শায়িত আছেন হুমায়ুনের পালিত পুত্র তথা আকবরের ভাই আদম খা । মাণ্ড দখলের সময় রূপমতী আত্মহত্যা করলে আকবর আদম খাঁয়ের ওপর রুষ্ঠ হন । সেই অভিমানে অত্মহত্যা করেন আদম । তারই আশেপাশে আরও তিন নবাবের সমাধি রয়েছে । অদুরে ইলতুৎমিসের গড়া আউলিয়া মসজিদ , জামালি কামালি মসজিদ , সুফি কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকির দরগা শরীফ , শেষ মােগল সম্রাটের জাফরমহল , হিন্দু ও মুসলিম স্থাপত্যের সমন্বয়ে গড়া ইলতুৎমিসের ছেলে মামুদের সমাধি ( ১২২৯ ) , ১৩৮০ – র খিরকী মসজিদ , বেগমপুরী মসজিদ দেখে নেওয়া যায় একই সুযােগে ।

সফদারজং টু (রাজধানী দিল্লি, ভারত): 

অযােধ্যার নবাব সুজা – উদ – দৌল্লার পিতা মনসুর খানের সমাধিতে তৈরি সৌধ সফদারজং টুম্ব নামে খ্যাত । দেখতে অনেকটা হুমায়ুনের সমাধির মতােই । চারদিকে মােগলি বাগিচায় ঘেরা এই সৌধে চারটি মিনারও আছে । বিশালাকার গােলাপ বাগিচাও রয়েছে এখানে । পাশেই ফ্লাইং ক্লাবের মিনি এয়ারপাের্ট , এখানেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল সঞ্জয় গান্ধির । 

তুঘলাকাবাদ দূর্গ (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

কুতুব মিনার থেকে আট কিমি দূরে গিয়াসুদ্দিন তুঘলকের গড়া ( ১৩২১-২৫ ) তুঘলাকাবাদ দূর্গ । ১০ থেকে ১৫ মিটার উচ্চ প্রাচীরে ঘেরা এই দূর্গে ১৩ টি প্রবেশদ্বার রয়েছে । এখান থেকেই গিয়াসুদ্দিন রাজ্যপাট পরিচালনা করতেন ।পুত্র মহম্মদ বিন তুঘলক জলাভাবে এই দূর্গ পরিত্যাগ করে ১ কিমি দূরে পাহাড়ের চূড়ােয় আদিলাবাদ দূর্গ গড়েন । কিন্তু পাঁচ বছর পর সেখান থেকেও রাজধানী স্থানান্তরে বাধ্য হন । ফলে আদিলাবাদ দূর্গটিও পরিত্যক্ত হয় । তুঘলাকাবাদের দক্ষিণ দিকে কৃত্রিম জলাশয়ের মাঝে রয়েছে গিয়াসুদ্দিন , তাঁর স্ত্রী ও পুত্র মহম্মদ বিন তুঘলকের সমাধি ।

হুমায়ুনের সমাধি (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

হুমায়ুনের মৃত্যুর প্রায় নয় বছর পর সমাধির ওপর সৌধটি গড়েন তার স্ত্রী হাজী বেগম । ৪৩ মিটার উঁচু আট কোণার এই সমাধিক্ষেত্রে হাজি বেগমও শায়িত আছেন । চারদিকে ফোয়ারায় সাজানাে বাগানের মাঝে কারুকার্যমণ্ডিত এই সৌধ দেখে যথার্থই তাজমহলের অগ্রজ বলে মনে হয় । দারাশিকো , মুরাদ , সম্রাট বাহাদুর শাহ ও তাঁর বেশ কিছুপরিজন সমাধিস্থ হয়েছেন এখানে । চত্বরে উপস্থিত মসজিদটিও দেখার মতাে । সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সমাধি খােলা থাকে । প্রবেশমূল্য ১০ টাকা । 

হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

গুরু শেখ হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া ( ১২৩৬- ১৩২৫ ) চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এখানে । তার সমাধিক্ষেত্র – র ওপরেই ললাধী সম্রাট গড়ে তােলেন বিশালাকার শ্বেতমর্মর গম্বুজ । তবে সে সৌধটি বিনষ্ট হওয়ায় ১৫৬২ – তে বর্তমান সৌধটি তৈরি করা হয়েছে । শুক্রবার সন্ধ্যায় বর্ণাঢ্য কাওয়ালির আসর বসে এখানে । এ চত্বরের বিশালাকার জলাশয় , জামােয়েখানা মসজিদ , কবি মির্জা গালিব , আমির খুসরু , শাহজাহানের কন্যা জাহানারার , হজরত ইলায়েহ খানের সমাধিও দেখে । নিতে হয় । 

ইন্ডিয়া গেট (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

স্যার লুথিয়েনসের নকশায় ১৯৩১ – এ গড়ে ওঠে ৪২ মিটার দৈর্ঘ্যের ইন্ডিয়া গেট । ব্রিটিশের পক্ষ অবলম্বন করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও আফগান যুদ্ধে শহিদ হওয়া ভারতীয় সৈন্য এবং ইংরেজ সৈন্যদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি হয় এই সৌধটি । নামও খােদিত হয়েছে ১৩৫১৬ জন সেনার । ইন্ডিয়া গেট থেকে মহাকরণ পর্যন্ত খালও কাটা হয়েছে । বােটিং – এর ব্যবস্থাও আছে খালে । এর পাশেই ১৯৭১ – এর ভারত – পাক যুদ্ধের শহিদদের সম্মান জানানাের জন্য তৈরি হয়েছে অমর জওয়ান জ্যোতি সৌধ । 

যন্তর মন্তর (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

১৭২৪ – এ জয়পুরের রাজা সওয়াই জয় সিং দ্বিতীয়র তৈরি সূর্য , চন্দ্র , গ্রহ , নক্ষত্রের গতিবিধি ও সময় পরিমাপক যন্ত্র যন্তর মন্তর । জয়পুরের পরেই এই মানমন্দিরের স্থান । বিশালাকার প্রিন্স ডায়ালটিও অনবদ্য । অদূরের ভৈরব মন্দিরটিও ঘুরে দেখা যায় । 

জাতীয় মিউজিয়াম (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

১৯৬৫ – তে শুরু হওয়া এই সংগ্রহশালায় হরপ্পা , মহেঞ্জোদারাে , লােথাল , কলিঙ্গান , সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় । জৈন , বৌদ্ধ শিল্পের নিদর্শনও দেখতে পাওয়া যায় । ভারতের নানান প্রান্তের ছবির সম্ভার , অলংকৃত নানান গ্রন্থ , বাবরের হাতে লেখাববরনামার পাণ্ডুলিপি , জাহাঙ্গীরের দিনপঞ্জী , নানান বাদ্যযন্ত্রে ভরপুর এই সংগ্রহশালা । দুপুর আড়াইটেয় সংগ্রহের ওপর ছবিও দেখানাে হয় । সােমবার ছাড়া যেকোনাে দিন ১০০০-১৭.০০টার । মধ্যে বেশ কিছুটা সময় হাতে নিয়ে সংগ্রহশালাটি ঘুরে । 

রাষ্ট্রপতি ভবন (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

ভারত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বসবাস করেন এখানে । ৩৩০ একর জমির ওপর ছড়িয়ে থাকা এই বাড়িতে ঘরের সংখ্যা ৩৪০। রামসিনা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই ভবন চত্বরে রয়েছে কৃত্রিম ঝরনা , পাহাড় , বাগিচা , মােগল উদ্যান । ভাইস রিগ্যাল লর্ড হারডিঞ্জের বাসের জন্য ১৯২১-২৯ এই আট বছর ধরে এই বাড়িটি তৈরি করা হয় । নানান রঙের পাথরে সজ্জিত সুবিশাল ২৩ টি হল আছে এই ভবনে । প্রবেশ ফটকের কাছেই বসানাে জয়পুরের রাজার দেওয়া ১৪৫ মিটার উঁচু জয়পুর থামটি । ফেব্রুয়ারি থেকেমার্চ এই এক মাস সকাল ৯.৩০ থেকে দুপুর ১৪.৩০ টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য খােলা হয় রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজা । অন্য সময়ে রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারির অনুমতি নিয়ে দেখতে হয় । 

সংসদ ভবন (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

স্যার হার্বাট ব্রেকারের পরিচালনায় । ব্রিটেনের পার্লামেন্ট হাউসের আদলে গড়া চক্রাকার ভারতের সংসদ ভবনটিও ঘুরে দেখা যায় । অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড , সাউথ আফ্রিকা ও কানাডা সরকারের দেওয়া ডমিনিয়ন কলামস এ চত্বরকে আরও সুন্দর করে তুলেছে । 

নেহরু মিউজিয়াম (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

 ব্রিটিশ কমাণ্ডার ইন চিফের বাসভবন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পরিণত হয় । সে সূত্রে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরু বসবাস করতেন এ বাড়িতে । ১৯৬৪ – তে তার মৃত্যুর পর স্মারক মিউজিয়াম বসে এ বাড়িতে । নেহরু প্রাপ্ত উপহারের ডালি , আলােকচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে এখানে । সােম ছাড়া ১০,০০-১৪.৩০ – এর মধ্যে । দেখে নিতে হয় এই সংগ্রহশালা । 

ইন্দিরা স্মারক মিউজিয়াম (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

 দেহরক্ষীর গুলিতে ১ নং সফদরজং রােডের বাড়িতে ইন্দিরা গান্ধি খুন হওয়ার পর সেখানেই বসেছে তার স্মারক মিউজিয়াম । চেক সরকার প্রদত্ত কৃত্রিম জলপ্রবাহটিও অসাধারণ । ইন্দিরার ভূলুণ্ঠিত হওয়ার জায়গাটি কাচ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে । তার ব্যবহৃত নানান দ্রব্য ও আলােকচিত্রের প্রদর্শনীও রয়েছে এখানে । সােমবার । বাদে প্রতিদিন সকাল ৯.০০- বিকেল ৪.৪৫ পর্যন্ত এ বাড়িটি ঘুরে দেখার সুযােগ মেলে । 

ফিরােজ শাহ কোটলা (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

১৩৫৪ – য় আলাউদ্দিনের গড়া সিরি নগরীর নাম পরিবর্তন হয়ে আজ হয়েছে । হজ খাস । এখানেই ফিরােজ শাহ তুঘলক আরও এক নগরী গড়েন , নাম দেন ফিরােজাবাদ । যে দুর্গকে কেন্দ্র করে এই নগর গড়ে ওঠে তার নাম রাখা হয় । ফিরােজ শাহ কোটলা । ১৩ টি বিশালাকার মনােলিথিক স্তম্ভ এই নগরীর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছিল । বিশালাকার । সরােবর , মাদ্রাসা গড়েন ফিরােজ নিজেই । ফিরােজ শাহ তুঘলক ও সুলতানা রাজিয়ার সমাধি আছে এই চত্বরেই । 

পুরােনাে কিল্লা (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

হুমায়ুনের হাতে শুরু হওয়া । এই কিল্লা সম্পূর্ণতা পায় শের শাহর হাতে । তিনদিকে চওড়া পরিখা বিশিষ্ট এই কেল্লার নাম ছিল শের গড় । শের শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র ইসলামকে পরাজিত করে দিল্লিতে দখল নেন হুমায়ুন । শের গড়ও ধ্বংস করেন তিনি । তবে শের মঞ্জিলটি তিনি লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন । এই লাইব্রেরির সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েই মৃত্যু ঘটেছিল হুমায়ুনের । মঞ্জিলের পেছন দিকে হুমায়ুন দরওয়াজায় পুরাতত্ত্বের নিদর্শন নিয়ে গড়ে ওঠে মিউজিয়াম । সংগ্রহে রয়েছে সুলতান , মােগল , রাজপুত , গুপ্ত , কুষাণ , মৌর্য যুগের নানান বিষয় – সামগ্রী । অদুরের কিল্লা – ই – কুহানা মসজিদটিও অনবদ্য । ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের ব্রিটিশদের বিরূদ্ধে সােচ্চার হয়ে । ওঠার ফলে অন্ধ মােগল সম্রাট তথা কবি বাহাদুর শাহকে দিল্লি থেকে রেঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠায় ব্রিটিশরা । সেনাপতি লে হডসন বাহাদুর শাহর ছেলে সহ অন্যান্য বিপ্লবীদের গুলি করে ঝুলিয়ে দেয় এই পুরােনাে কেল্লার প্রবেশদ্বারে । সে সময় থেকে এই প্রবেশ পথের নাম হয় খুনি দরওয়াজা । বেশ কিছুটা সময় হাতে নিয়ে ঢুকতে হয় পার্শ্ববর্তী চিড়িয়াখানাটিতে । প্রায় ২০০০ জীবন্ত প্রাণীর সংগ্রহশালা এই চিড়িয়াখানাটিতে দেশি – বিদেশি নানান বন্যপ্রাণীর দেখা মেলে । 

প্রগতি ময়দান (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

এখানে ভারতের নানান রাজ্য থেকে আসা বাণিজ্যিক সংস্থার স্থায়ী মেলা বসেছে । নানান রাজ্যের হস্তশিল্পের প্রদর্শনী , ক্রাফট মিউজিয়াম , নেহরু প্যাভিলিয়ন , ইন্দিরা প্যাভিলিয়ন , ডিফেন্স প্যাভিলিয়নের মতাে নানান প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে মন্দ লাগে না । 

লােধী গার্ডেন্স (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

এখানে সৈয়দ ও লােধী বংশের শাসকেরা শায়িত আছেন চিরনিদ্রায় । বিশালাকার বাগিচার কেন্দ্রে ৫০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন বড়া । গম্বুজ মসজিদ , কাচের শিস গম্বুজ , আঠপুলা সেতু বাগিচার আকর্ষণ আরও বাড়িয়েছে । 

চাঁদনি চক (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

 নানান ধরনের গাছ , খাল কেটে যমুনার জল এনে তৈরি ফোয়ারার দ্বারা নিজের মতাে করে চাদনি চককে সাজিয়েছিলেন শাহজাহান কন্যা জাহানারা । ১৬৪৮ – এ প্রতিষ্ঠিত এই অঞ্চল বর্তমানে দিল্লির অন্যতম ঘিঞ্জি বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে । দিল্লি ভ্রমণে অবশ্যই ঘুরে দেখতে হয় চাদনি চক । এখানকার বিশালাকার গৌরীশঙ্কর । মন্দিরেও কিছুটা সময় কাটানাে যায় । 

দিগম্বর জৈন মন্দির (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

 কেল্লার অদূরে অবস্থিত দিশার জৈন মন্দিরটি প্রায় ৫০০ বছরের পুরােনাে । ২৩ জন জৈন তীর্থঙ্কর অধিষ্ঠান করছেন এই মন্দিরে ।। অসুস্থ পাখির চিকিৎসাও করা হয় এই মন্দির চত্বরে । তাই সাধারণের কাছে এই মন্দির পাখির হাসপাতাল নামে পরিচিত । জামা ও চামড়ার জিনিস বর্জন করে ঢুকতে হয় মন্দিরে। 

শিশগঞ্জ গুরদ্বারা (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

এখানেই শিখগুরু তেগবাহাদুরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ঔরঙ্গজেবের বিধানে । পরবর্তীকালে স্মারক হিসেবে এই গুরদ্বারা । তৈরি করা হয় । 

রাকাবগঞ্জ গুরদ্বারা (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

তেগবাহাদুরের শরীর দাহ করা হয়েছিল এখানে । প্রথমে দাহস্থলে মসজিদ গড়ে উঠলেও পরবর্তী মােগল সম্রাটের ফরমান পেয়ে সেইস্থানেই গড়ে তােলা হয় রাকাবগঞ্জ শুরদ্বারা ।

বাংলা সাহিৰ গুরদ্বারা (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

জয়পুরের রাজা জয় সিং – এর অতিথি রূপে গুরু হরকিষেন কিছুকাল বাস করেছিলেন এইস্থানে । তারই স্মারক ক্লিপে গড়ে উঠেছে এই গুরদ্বারা । বর্তমানে শিখ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অন্যতম তীর্থস্থান এটি সংলগ্ন জলাশয়ের জলে উপশম হয় । নানান ব্যাধি , শিঙ্খদের বিশ্বাস । এমনটাই দমদমা সাহিৰ গুৱাৱা- মােগল সম্রাটের সঙ্গে শিখদের দশম গুরু গােবিন্দ সিং – এর সাক্ষাতের স্মারক রূপে হুমায়ুনের সমাধির পাশেই তৈরি হয়েছে দমদমা সাহিব গুরদ্বারা । 

ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ণ আর্ট (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

রবীন্দ্রনাথ , অবনীন্দ্রনাথ , যামিনী রায় সহ ভারতের অন্যান্য প্রান্তের চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবির স্থায়ী প্রদর্শনী ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ণ আর্ট খােলা থাকে সকাল ১০.০০ টা থেকে বিকেল ৫.০০ টা পর্যন্ত । শিল্প সংক্রান্ত গ্রন্থের সংগ্রহটিও অনবদ্য । শিল্পরসি । এখানে বইগুলি হাতে নিয়ে দেখার সুযােগ পান।

ন্যাশনাল রেল মিউজিয়াম (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

চাণক্যপুরীতে অবস্থিত বিশালাকার এই সংগ্রহশালায় রয়েছে । ২৭ ধরনের লােকোমােটিভ ও দেশীয় রাজরাজারা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যবহার করা ১৭ টি ক্যারেজ । উল্লেখযােগ্য , বরােদার রাজার সেলুন কার , মহীশূরের মহারাজের ক্যারেজ , প্রিন্স অফ ওয়েলস – এর কেবিন , বিশ্বের প্রাচীনতম বাষ্পীয় ইঞ্জিন । এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ৯,৩০-১১.০০ , অক্টোবর থেকে মার্চ ৯.৩০-১৭.০০টার মধ্যে ঘুরে দেখতে হয় এই সংগ্রহশালা।

ন্যাচারাল হিষ্ট্রি মিউজিয়াম (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

বারখাম্বা রােড়স্থ এই সংগ্রহশালায় দেখতে পাওয়া যায় ফসিল , ডাইনােসরের রেপ্লিকা , বিশেষ পদ্ধতিতে কেমিক্যালের মধ্যে সংরক্ষিত জীবজন্তু , নানান পাখি । প্রতিদিন সকাল ১০,০০ থেকে বিকাল ১৭.০০ টা পর্যন্ত খােলা । থাকে এই মিউজিয়াম । বিভিন্ন প্রাণীর ওপর চলচ্চিত্র । দেখানাের ব্যবস্থাও আছে এখানে । 

স্বামী নারায়ণ অক্ষরধাম (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

যমুনার তীরে নয় । শহরে গড়ে ওঠা ১৪১ ফুট উঁচু স্বামী নারায়ণের মন্দিরটিও দেখে নিতে হয় । ৯ টি গম্বুজ ও ২০ টি চুড়াে বিশিষ্ট গােলাপি শ্বেত পাথরের এই মন্দিরে রয়েছে স্বামী নারায়ণের পদচিহ্ন , উদ্যান , মিউজিক্যাল ফাউন্টেনের মতাে নানান দর্শনীয় বিষয় । ২৩৪ টি স্তম্ভের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে থাকা এই মন্দিরটি খােলা থাকে সকাল ৯.৩০ টা থেকে সন্ধে ৬.৩০ টা পর্যন্ত ( সােমবার বাদে ) । 

বুদ্ধজয়ন্তী পার্ক (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

বুদ্ধের নির্বাণ লাভের ২৫০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই পার্কটি তৈরি করা হয় । শ্রীলঙ্কা থেকে মূল বােধি গাছের শাখা এনে এখানে বসানােও হয়েছে । সেই গাছকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা । নানান ফুলের গাছ পরিবেশকে স্নিগ্ধ করে । 

সূর্য কুণ্ড (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

কুতুব মিনার থেকে ১১ কিমি দূরে একাদশ শতাব্দীতে টোমররাজ সুর্যপালের খনন করানাে কুণ্ড এটি । এলাকার জলাভাব মেটানাের জন্য এই বিশালাকার কুণ্ডটি তৈরি হলেও বর্তমানে এতে জল নেই , তবে পার্শ্ববর্তী সূর্য মন্দিরটি এখনও রয়েছে । প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিন এই কুণ্ডকে কেন্দ্র করে মেলাও বসে । 

লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

রাজা বলদেও বিড়লা ১৯৩৮ – এ ওডিশি শৈলীর এই মন্দিরটি নির্মাণ করে করেন । লক্ষ্মী , নারায়ণ , শিব , দুর্গা রয়েছে মন্দিরের ভিতরে । মন্দিরের দেওয়ালে নানান কারুকার্যের মাধ্যমে । পৌরাণিক কাহিনি ফুটিয়ে তােলা হয়েছে । অদূরের কালীবাড়িটির সমাদর ভক্তদের কাছে যথেষ্টই । 

বাহাই মন্দির বা লােটাস টেম্পল (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

বাহাউল্লাহ প্রচারিত বিশ্বের সবথেকে নতুন ধর্মের মন্দির এটি । বিশ্ব এক , মানবজাতি এক , মানুষের ধর্মও এক মানবতা , এই মন্ত্র প্রচারের জন্য ১৮৭২ – এ বাহাউল্লাহ আসেন ভারতে । তার ধর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে ভক্তরা ১৮৮০ – তে বাহাপুরে এই মন্দিরটি গড়ার কাজে হাত দেন । ৩০.৫ মিটার উচ্চ এই মন্দিরটি পদ্মের কুড়ির মতাে দেখতে । ১৩০০ ভক্তের বসার ব্যবস্থা অভ্যন্তরে । মন্দির লাগােয়া উদ্যানটিও সুন্দর । প্রবেশমূল্য ১০ টাকা । 

ডলস মিউজিয়াম (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

জাপানি পুতুল সহ আরও ৮৪ টি দেশের ৬০০০ পুতুলের সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে অনবদ্য ডলস মিউজিয়াম । ভারতের নানান প্রান্তের পুতুলের সংখ্যা খুব একটা কম নয় । সােমবার ছাড়া ১০,০০- ১৭,০০ টা পর্যন্ত খােলা থাকে এই সংগ্রহশালা। 

রাজঘাট (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

যমুনা তীরের এই ঘাটে মহাত্মা গান্ধির শেষকৃত্য সমাধা হয়েছিল । কালেমমের বর্গাকার বেদি সে তথ্যই জানান দেয় । বেদির গায়ে খােদিত হয়েছে গান্ধির শেষ উক্তি , হে রাম । প্রতি শুক্রবার এখানে উপাসনা হয় । আলােকচিত্র , ভাস্কর্য ও চিত্রের সংগ্রহে গান্ধিজিকে ধরে রাখার চেষ্টা হয়েছে পাশের গান্ধি স্মারক সংগ্রহশালায় । সােমবার ছাড়া যে – কোনাে কানও দিন এ সংগ্রহ দেখা যেতে পারে । 

গান্ধি বলিদান স্থল (রাজধানী দিল্লি, ভারত):

এখানেই ১৯৪৮ – এর ৩০ জানুয়ারি গান্ধিজি খুন হয়েছিলেন । স্মারক রূপে মিউজিয়ামও হয়েছে ।

 এছাড়াও সামান্য সময় খরচ করে দেখে নেওয়া । যায় তিব্বতীয় পণ্যের সংগ্রহ তিব্বত হাউসের টিবেট মিউজিয়াম , পালাম মার্গের এয়ারফোর্স মিউজিয়াম , সংসদ মার্গে ফিলাটেলিকমিউজিয়াম , সুনেরি মসজিদ , ফুলের দোকানে সমৃদ্ধ ফুল কি মণ্ডি , বিয়ের পােশাক – আশাকের দোকানে ভরা কিনারি কি গলি , পরাটাওয়ালি গলির জিভে জল আনা নানান খাবার দোকান , ১৬০৫ – এর ফতেপুরি মসজিদ , গুরু হরকিষেণের দাহস্থলে গুরদ্বারা বাংলা সাহিব , আজমেরি গেটের গােবিন্দ সিং – এর দুই স্ত্রী মাতা সুন্দরী ও মাতা সাহিব কাউরের সমাধির ওপর গড়া গুরদ্বারা , ১৮৩২ – এ গড়া সেন্ট জেমস চার্চ , সবজি মণ্ডিতে ব্রিটিশদের মিউটিনি মেমােরিয়াল , কুদসিয়া গ্রাউন্ড , জওহরলালের শেষকৃত্য সমাধাস্থল শান্তিভবন , লালবাহাদুর শাস্ত্রির সমাধি বেদি বিজয়ঘাট , ইন্দিরা গান্ধির সমাধি স্মারক শক্তিস্থল , রাজীব গান্ধির স্মৃতিতে তৈরি বীরভূমি , পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী চরণ । সিং – এর স্মরণে কিষাণ ঘাট , দলিত নেতা বাবু জগজীবন রামের সমাধি মন্দির । 

রাজধানী দিল্লি – প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)

  1. ভারতের রাজধানী কোথায়?

Ans: নিউ দিল্লি।

  1. রাজধানী দিল্লির জনসংখ্যাকতো?

Ans: ১ কোটি ৬৭ লক্ষ ৫৩ হাজার ২৩৫ জন।

  1. 3. রাজধানী দিল্লির নারী / পুরুষ অনুপাত কতো?

Ans: ৮৬.৬ / ১০০ জন।

  1. রাজধানী দিল্লির আয়তন কতো?

Ans: ১৪৮৩ বর্গকিলােমিটার।

  1. রাজধানী দিল্লিতে জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমি কতো জন?

Ans: ১১২৯৭ জন।

  1. রাজধানী দিল্লির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কতো?

Ans: ২০,৯৬ শতাংশ (২০০১-২০১১)।

  1. রাজধানী দিল্লির সাক্ষরতার হার কতো জন?

Ans: ৮৬.৩৪ শতাংশ।

  1. রাজধানী দিল্লিতে প্রধান ভাষা কি?

Ans: হিন্দি।

  1. রাজধানী দিল্লির নামকরণ করা হয় কোথা থেকে?

Ans: খ্রিস্টের জন্মের ১০০ বছর আগে এই জনপদের রাজা ছিলেন দিলু , তার নাম অনুযায়ী উত্তরকালে এই স্থানের নামকরণ হয়।

  1. লালকেল্লা কোথায় অবস্থিত?

Ans: দিল্লিতে।

◆ আরও দেখুন :-

রাজধানী দিল্লি (ভারত): ইতিহাস, নদী, পাহাড়, ঐতিহাসিক স্থান, জনসংখ্যা

আশা করি এই পোস্টটি বা ” রাজধানী দিল্লি (ভারত): ইতিহাস, নদী, পাহাড়, ঐতিহাসিক স্থান, জনসংখ্যা ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here