Table of Contents
হিমাচল প্রদেশ এর ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ | Facts About Himachal Pradesh in Bengali
দেব ভূমি বা “ল্যান্ড অফ গড” নামে অভিহিত হিমাচল প্রদেশ, উত্তরে জম্মু ও কাশ্মীর, পশ্চিমে পাঞ্জাব, দক্ষিণে উত্তর প্রদেশ এবং পূর্বে উত্তরাঞ্চল দ্বারা সীমান্তবর্তী রয়েছে। “হিমাচল” শব্দের অর্থ হল তুষারের আবাস। হিমাচল প্রদেশের রাজধানী হল সিমলা। এই রাজ্য অপরিমেয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দ্বারা আবৃত এবং নিঃসন্দেহে, বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় গন্তব্য স্থল। বিপুল আপেলের উৎপাদনের জন্য, হিমাচল প্রদেশ “আপেলের রাজ্য” হিসাবেও পরিচিত।
হিমাচলপ্রদেশের ইতিহাস, নদী, পাহাড়, ঐতিহাসিক স্থান, জনসংখ্যা ইত্যাদি সম্পর্কে জানব শুকতারা Tv র এই পর্বে।
হিমাচল প্রদেশ এর কিছু সংক্ষিপ্ত তথ্য | Facts about Himachal Pradesh in Bengali
ভারতের রাজ্য | হিমাচল প্রদেশ (Himachal Pradesh) |
রাজধানী | সিমলা |
জেলার সংখ্যা | 12 টি |
জনসংখ্যা | প্রায় ৬৮ লক্ষ ৫৭ হাজার |
নারী / পুরুষ | ৯৭.৪ / ১০০ জন |
আয়তন | ৫৫৬৭৩ বর্গকিলোমিটার |
জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমি | ১২৩ জন |
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার | ১২.৮১ শতাংশ ( ২০০১-২০১১ ) |
সাক্ষরতার হার | ৮৩.৭৮ শতাংশ |
প্রধান ভাষা | হিন্দি কিন্তু পাঞ্জাবি ও ইংরেজিরও চল আছে |
আবহাওয়া | এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসে এখানকার আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ থাকে । তবে জুলাই থেকে আগস্ট মাস বর্ষাকাল । নভেম্বর থেকে মার্চ বরফে ঢাকা থাকে এ রাজ্য । |
হিমাচল প্রদেশ এর ইতিহাস (History of Himachal Pradesh) :
ভারত রাষ্ট্রের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত এই জনপদের অস্তিত্ব আজ থেকে দু- হাজার বছর আগেও ছিল বলে জানাচ্ছেন ঐতিহাসিকরা । তাঁদের মতে বহু অতীতে এইস্থানে এসে বাস করতে শুরু করেছিলেন দাসরা । হিমালয় লাগোয়া এই রাজ্যে আসার আগে এই জাতির বাস ছিল গাঙ্গেয় উপত্যকায় । কালক্রমে আর্য জাতির সঙ্গে মিশে গিয়ে আরও নানান উপজাতিতে ভাগ হয় তাঁরা , গঠনও করে নিজ নিজ রাজ্য ।
সুদীর্ঘ বিস্তৃত হিমালয় পর্বতের কোলে অবস্থান করায় রাজ্যের ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য বরাবর আকর্ষণ করেছে শাসকদের । গুপ্ত , বর্ধন , মামুদ গজনী , তুঘলক , মোগল , রানা , ঠাকুর প্রত্যেক শাসকই হিমাচলকে রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছিলেন । অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে নেপালের গোর্খারাও এই রাজ্যকে দখলে নিতে নিয়মিত আক্রমণ চালাতে থাকে । ঠাকুররা ভয় পেয়ে ব্রিটিশদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন । বন্ধু হিসেবে ব্রিটিশরা প্রথম পদার্পণ করল হিমাচলপ্রদেশে । গোর্খাদের হিমাচল অভিযান বন্ধ হল ঠিকই , কিন্তু এবার শুরু হল ইংরেজদের হিমাচল দখল অনুষ্ঠান । প্রথমে তারা গ্রীষ্মকালীন বাসা বাধার জন্য ঠাকুরদের কাছ থেকে সিমলা পাহাড় দখল করে নেয় । পরবর্তীকালে চুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণ পশ্চিম হিমাচলের বেশ কিছুটা অংশ দখল করে নেয় ব্রিটিশ । তারা ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানীও গড়ে সিমলায় । এ সময় অবশ্য বহু স্বাধীন খণ্ডে বিভক্ত ছিল এই প্রদেশ । প্রায় প্রতিটি রাজ্যেরই শাসক ছিলেন রাজপুতরা । স্বাধীনতা লাভের মাস আটেক পর স্বাধীন ৩০ টি রাজ্যকে একত্রিত করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয় হিমাচলকে । হিমাচলপ্রদেশের বর্তমান রূপ পেতে লেগেছে আরও কয়েক দশক । ১৯৫১ – য় তৃতীয় শ্রেণির রাজ্যের সম্মান পায় ও ১৯৫৪ – তে বিলাসপুরকে আনা হয় হিমাচলের মধ্যে । ১৯৫৬ – তে এই অঞ্চলকে পঞ্জাব রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করতে গেলেই গোল বাধে । শুরু হয় আন্দোলন । দিল্লি তখনকার মতো স্থগিত রাখতে বাধ্য হয় সিদ্ধান্তকে । ১৯৬৬ – তে পুনর্বিবেচনার পর পাঞ্জাব রাজ্যের থেকে কয়েকটি জেলা এনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় হিমাচলে । ১৯৭১ – এ হিমাচল রাজ্যের মর্যাদা পায় ।
হিমাচল প্রদেশ এর প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক পরিবেশ :
বর্তমানে দেশের কপালে , অর্থাৎ জম্মু ও কাশ্মীরের ঠিক দক্ষিণে অবস্থান করছে এই সকল রাজ্যেরই সমষ্টি হিমাচল প্রদেশ । রাজ্যের পূর্ব সীমান্ত গড়ে উঠেছে চীনের সঙ্গে । দক্ষিণে রয়েছে হরিয়ানা , উত্তরপ্রদেশের সামান্য অংশ ও উত্তরাখণ্ড রাজ্য । আর পশ্চিম দিকে স্বমহিমায় অবস্থান করছে পাঞ্জাব রাজ্য । অবশ্যই উল্লেখ্য , হিমাচলকে চারদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে পর্বতশ্রেণি । যেমন জন্মু ও কাশ্মীর থেকে হিমাচল আলাদা হয়েছে পীরপাঞ্জালের দ্বারা । উত্তর – পূর্বে অবস্থান করছে হিমালয় আর উত্তর – পশ্চিমে রয়েছে ধৌলাধার। রাজ্যের দক্ষিণ দিককে পাহারা দিচ্ছে শিবালিক পর্বতমালা ।
প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদে পৃষ্ঠ হিমাচলপ্রদেশ । অরণ্য ও প্রকৃতি প্রেমিদের স্বর্গরাজ্য হয়ে বছরে লাখো লাখো পর্যটকদের আকর্ষণ করছে এরাজ্য । বসন্তকালে সমগ্র রাজ্যই সেজে ওঠে নানান রঙের ফুলে । এ সময় হিমাচল দেখতে যাওয়ার মজাই আলাদা । প্রায় ৬৮ লক্ষ ৫৬ হাজার মানুষের বাস এখানে । তাঁদের বেশিরভাগই হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী । বৌদ্ধধর্মের প্রভাবও হিমাচলে কম নয় ।
ইরাবতী , বিপাশা , চন্দ্রভাগা , শতদ্রুর মতো কয়েকশো নদীতে ভরপুর হিমাচলের মানুষের প্রধান জীবিকা ফলের চাষ । অরণ্যের ওপর নির্ভর করেও জনসংখ্যার বিশাল অংশ জীবন অতিবাহিত করেন । আর রয়েছে পর্যটন শিল্প । হিমাচলের চাষিরা ফলের চাষে বেশি আগ্রহি হলেও ধান , গম , ভুট্টার চাষও মন্দ হয় না এখানে ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কাকে বলে , তা অনুধাবন করার জন্য অন্তত একবার হিমাচলপ্রদেশে ঘুরে আসা উচিত । সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় যেমন সমগ্র রাজ্য অপরূপ রঙে সাজে , ঠিক তেমনই চাঁদনি রাতে হিমাচল রাজ্যের যেকোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার অভিজ্ঞতা অনবদ্য।
হিমাচল প্রদেশ এর সংস্কৃতি :
হিমাচল প্রদেশ, ভারতের একটি বহুভাষী এবং বহুবর্ণ সংস্কৃতির রাজ্য। যেহেতু প্রাচীনকালে বিভিন্ন জাতি এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছে, তাই এই রাজ্য ভিন্ন সংস্কৃতির ও বর্ণের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, যা প্রদর্শিত হয়-ভিন্ন প্রকারের রঙিন পোষাক, সঙ্গীতের সুর, উচ্ছসিত অনুষ্ঠান, নৃত্য ভঙ্গি এবং সরল-সাধারণ সমৃ্দ্ধ জীবনধারা দ্বারা। কলা এবং হস্তশিল্প এখানকার সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের বিশেষত্ব হল পশমিনা শাল বয়ন যা নিয়মিত ভাবে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এছাড়াও, স্থানীয়দের দ্বারা তৈরি করা হয় কাঠের আসবাব-পত্র, ধাতব গহনা, পাত্র, বড় ধরনের নৌকা ইত্যাদি। সঙ্গীত এবং নৃত্য হিমাচলবাসীদের জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য এবং অপরিহার্য অংশ।
সিমলা (Shimla) :
হিমাচলপ্রদেশের রাজধানী সিমলার খ্যাতি সারা বিশ্বজুড়ে । এখানকার আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে ভ্রামণিকদের । ব্রিটিশদের হাতে তৈরি ৮০ টি শৈল শহরের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল সিমলা । এই নামের একটি কারণ ও রয়েছে , দেবী ‘ শ্যামলা ‘ – এর নাম থেকে এসেছে সিমলা । ধৌলাধার পর্বতমালার ওপর ২১৩০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত শহরটি ভারতের বৃহত্তম পাহাড়ি শহর । গোর্খাদের বিরূদ্ধে ইংরেজরা জয়লাভ করলে সহযোগিতার জন্য পাতিয়ালার রাজাকে উপহার দেওয়া হল সমগ্র সিমলা । ১৮১৯ খ্রীস্টাব্দে যুদ্ধ ফেরত ব্রিটিশ সৈনিকরা সর্বপ্রথম এই জায়গাকে একান্ত কাকতালীয় ভাবে আবিষ্কার করে ফেলে । এ সময়েই ব্রিটিশরা হঠাৎই আবিষ্কার করে ফেলে সিমলা পাহাড় । এখানে প্রথম বাড়িটি গড়েছিলেন মেজর কেনেডি , ১৮২২ – এ । এই থেকে শুরু শহর গড়ার । প্রক্রিয়া । এ সময় জাগয়াটিকে পাঞ্জাব হেড বলে চিহ্নিত করেছিল ইংরেজরা । ১৮৩২ – এর গ্রীষ্মকাল লর্ড বেন্টিঙ্ক কাটিয়েছিলেন কেনেডির বাড়িতেই । এরপর থেকেই দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে শহর । ১৮৬৪ – তে দেশের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী বসানো হয় এই শহরেই । ইংরেজদের হাতে গড়ে ওঠা ভারতের অন্যতম হিল স্টেশন সিমলা ১৯৩৯ পর্যন্ত দেশের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল । স্বাধীনতার পর ব্রিটিশরা চলে গেলেও তাদের তৈরি এই অত্যাধুনিক শহরটি রয়েই গেছে । দেখুন প্রাসাদোপম ভাই সরিগাল লজ , এখানেই সিমলা চুক্তি সম্পাদিত হয় । বর্তমানে হিমাচলপ্রদেশ ভ্রমণকারীদের কাছে অন্যতম দর্শনীয় স্থান ফার , ওক , দেবদারুর ছায়ায় অবস্থিত সিমলা । সমগ্র শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা লিলি ও রডোডেনড্রন ফুল যোগ করেছে অন্য এক নান্দনিকতা । সমগ্র ভারত থেকেই বরফ দেখতে মানুষ আসেন এখানে । অক্টোবর – নভেম্বর মাসের দিকে এখানে এসে ভ্রামণিকরা অনুধাবন করেন প্রস্ফুটিত ফুলের মতো সিমলার রূপ । এ শহরে অবস্থানকালে অবশ্যই ঘুরে নিতে হয় বিশেষ বিশেষ দর্শনীয় স্থানগুলি । ১৮২৮ – এ সিমলা স্যানেটোরিয়াম রূপে পত্তন হয় । এখানে অ্যাম্ফিথিয়েটার , প্রদর্শনী সভা ও অন্যান্য বিনোদন সামগ্রীসহ একটা গ্যালারি রয়েছে ।
ম্যাল (হিমাচল প্রদেশ) :
অন্যান্য পাহাড়ি শহরের মতো এই শহরেরও প্রাণকেন্দ্র ম্যাল । সারাদিন লোক থাকে ম্যালে । স্থানীয় মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়ার ও কথা বলার সুযোগ এনে দেয় ম্যাল । এইস্থানেই রয়েছে পর্যটক তথা স্থানীয় মানুষের সমস্ত প্রয়োজনীয় দোকানপাট , রেঁস্তোরা ও পর্যটন দপ্তরের অফিস । বিনোদনের কোনও অভাব নেই এখানে । ম্যালে প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে । চলতে চলতেই দেখে নেওয়া যায় নানান পর্বত শৃঙ্গ । ঘোড়া চেপেও বেড়িয়ে নেওয়া যায় ব্রিটিশদের তৈরি সুবিশাল ম্যালে । সন্ধ্যা ও রাতে ম্যাল ও তার চারপাশের দৃশ্য খুবই উপভোগ্য হয়ে ওঠে ।
অ্যাঙ্গলিসিয়ান ক্রাইস্ট চার্চ (হিমাচল প্রদেশ) :
প্রায় ১৩ বছর ধরে নিও – গথিক শৈলিতে গড়ে তোলা হলদে রং – এর চাচটি ভ্রামণিকদের জন্য অপেক্ষা করছে ম্যালের ঠিক শেষে । ১৮৪৪ – এ তৈরির কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৮৫৭ – তে । বর্তমানে এটি ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীন চার্চের সম্মান পেয়েছে । সুন্দর কারুকার্য খোচিত এই গির্জার ওপরের দিকে রয়েছে চিত্র শোভিত কাঁচের জানালার সারি । অদুরেই বিশালাকার লাইব্রেরিটি দেখে নেওয়া চলে একই সঙ্গে ।
গেইটি থিয়েটার (হিমাচল প্রদেশ) :
১৮৮৭ সালে তৈরি থিয়েটার ভবনটি আজও প্রমাণ দিচ্ছে ব্রিটিশ সংস্কৃতির । হেনরি আরউইনের নকশায় তৈরি এই সুবিশাল থিয়েটারটি লন্ডনে পুরস্কৃত হয়েছিল তার গঠন শৈলির জন্য ।
স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট (হিমাচল প্রদেশ) :
শহরের কেন্দ্রবিন্দু থেকে ভাইসরয়ের কন্যা অপহৃত হওয়ার পর নামকরণ করা হয় স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট । ম্যালের উচ্চতম এই অংশে স্কেটিং রিঙ্কও রয়েছে । আর আছে পরপর দাঁড়িয়ে থাকা দেশের নানান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মূর্তি ।
স্টেট মিউজিয়াম (হিমাচল প্রদেশ) :
ম্যাল থেকে ঘণ্টাখানেক হাঁটাপথে ইনভেরাম পাহাড়ের চূঁড়োয় হিমাচল স্টেট মিউজিয়ামটি দেখে নেওয়া অবশ্য কর্তব্য । সমগ্র হিমাচলের নানান মন্দির থেকে আনা কাঠ ও পাথরের ভাস্কর্য , মূর্তি , পোশাক – আশাকে সমৃদ্ধ এই সংগ্রহশালা । এখানকার মিনিয়েচার ছবির সংগ্রহও নজর কাড়ে । সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে । মিউজিয়াম থেকে হাঁটাপথ ( ৪ কিমি দূরে ) অবজারভেটরি হিল । ভাইসরয় লর্ড ডাফরিনের জন্য গড়া দ্য রিট্রিট নামের প্রাসাদটিও দেখে নেওয়া যায় । এই বাড়িতে বসেই জওহরলাল নেহেরু ভারত ভাঙার প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন । ভারত – পাকিস্তানের শান্তি চুক্তিও হয়েছিল এখানেই । স্বাধীনতার পর ভারতীয় রাষ্ট্রপতির গ্রীষ্মকালীন আবাসে পরিণত হয় দ্য রিট্রিট । ১৯৫৬ – তে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্স স্টাডিজের সেন্টার খোলার জন্য বাড়িটি দান করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ । এর প্রবেশদ্বার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে । প্রবেশমূল্য মাত্র ৩০ টাকা । অদূরের বটানিক্যাল গার্ডেনটিও দেখবার মতো ।
সিমলা কালীবাড়ি (হিমাচল প্রদেশ) :
এই কালীবাড়ির খ্যাতি বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে যথেষ্টই । সিমলা পৌঁছেই অনেকে কালীবাড়ি দর্শন করতে যান । জয়পুর থেকে আনা কালী মূর্তির পুজো হয় এখানে । প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো মন্দিরের আরাধ্য দেবতা হলেন শ্যামলী দেবী । ডানদিকে আছেন মা সাধনচন্ডী ও বামদিকে মা শ্যামলা । এই কালী বাড়ি আরো একটি বিশেষ কারণে বিখ্যাত— সেটা হল এখানে সিমলার একমাত্র দুর্গাপুজো হয় । ১৮৪৫ – এ রামচরণ ব্রহ্মচারীর গড়া এই মন্দিরের লাইব্রেরিটিও নানান গ্রন্থে সমৃদ্ধ । অদূরের গোর্টেন ক্যাসেলটিও দেখে নেওয়া যায় কালীবাড়ি যাওয়ার সময় । এখানকার দেবী প্রতিমা সেই কবে জয়পুর থেকে আনা হয়েছিল ।
জাকু হিলস (হিমাচল প্রদেশ) :
সিমলার উচ্চতম পাহাড় জাকু হিলস থেকে দেখতে পাওয়া যায় চারপাশের বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত বরফ ঢাকা পাহাড় । ম্যাল থেকে দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার । ২৪৫৫ মিটার ( ৮০৪৮ ফুট ) উচ্চতায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়ের মজা নিতে খারাপ লাগে না । এখান থেকে সমগ্র সিমলা শহরও দেখতে পাওয়া যায় । হিলের চূঁড়োয় হনুমান মন্দির আছে । প্রবাদ সেখানে থাকা পায়ের ছাপটি নাকি রামভক্ত হনুমানের । গন্ধমাদন পর্বত আরোহণকালে ক্লান্ত হনুমান বিশ্রাম নিয়েছিল জাকু পাহাড়ে । অন্যপথে ফাইভ বেঞ্চেস রোড হয়ে গভর্ণমেন্ট আর্ট কলেজ দেখে ফেরা যায় রিজে ।
দ্য রিজ (হিমাচল প্রদেশ) :
দ্য রিজ এর পাশে পর্বতগুলি খুব আকর্ষণীয় রূপ নিয়ে আপনাকে অভিবাদন জানাবে , এটির নিচের জলাশয় থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল সরবরাহ করা হয়ে থাকে । তাই দ্য রিজ – এর গুরুত্ব খুব । দ্য রিজ -এ বিভিন্ন সভা , অনুষ্ঠান হয়ে থাকে । একটা সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে জায়গাটা পরিপূর্ণ ।
গ্লেন (হিমাচল প্রদেশ) :
সিমলায় থাকার সময় পায়ে পায়ে ঘুরে নেওয়া যায় শহর থেকে চার কিমি দূরে পাইন ও পপলার গাছের অরণ্য গ্লেনে । ওক , দেওদার গাছ এই অরণ্যকে আরও গভীর করে তুলেছে । শহর থেকে গ্লেনের পথে যেতে ভাগ্যবানেরা দেখতে পান নানান পশুপাখি । তবে তাদের দেখা না পেলেও আরণ্যক প্লেনের পরিবেশ ভ্রামণিকদের কষ্টের ফল দেয় । পাশ দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি নদীর পাড়ে চড়ুইভাতিও করা যেতে পারে । সামান্য নিচে আনানদেল । ব্রিটিশদের গড়া রেসকোর্সে আজ স্থানীয়দের খেলাধুলার আসর বসছে । পর্যটকদের চিত্ত বিনোদনের সমস্ত ব্যবস্থাই রয়েছে এখানে । শীতের সময় রিভোলি বাসস্ট্যান্ডের মাথায় স্কেটিংও হয় । একইসঙ্গে দেখে নেওয়া যায় চিড়িয়াখানা , পুষ্পউদ্যান , ব্রাহ্মসমাজ মন্দির ও মনাস্ট্রি ।
সামার হিল (হিমাচল প্রদেশ) :
শহর থেকে পাঁচ কিমি দূরে অবস্থিত সামার হিলে ( উচ্চতা ২০০০ মিটার ) গান্ধিজি কাটিয়ে গিয়েছেন বেশ কিছু দিন । ১৯৪৫ – এর ঐতিহাসিক গান্ধি – ভাইসরয়ের স্বাধীনতা সম্পর্কিত আলোচনা হয়েছিল রাজকুমারী অমৃত কাউরের বাড়িতে । এই বাড়িতেই এখন বসেছে এআইআইএসএস – এর গেস্ট হাউস । মহাত্মা গান্ধি সিমলা সফরের সময় যে বাড়িতে ছিলেন তার নাম হল ম্যানভিলা ম্যানসন । অদুরেই হিমাচল বিশ্ববিদ্যালয় ও ৬৭ মিটার উচ্চ চ্যাডউইক ফলসটি দেখে নেওয়া উচিত হবে ।
প্রসপেক্ট হিল (হিমাচল প্রদেশ) :
ম্যাল থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে সিমলার আরও এক দর্শনীয় স্থান হল প্রসপেক্ট ছিল । এখান থেকেই দেখতে পাওয়া যায় সিমলা পাহাড় , জুটোগ , সামার হিলস , শতদ্রু নদ । সূর্যাস্ত ভালোই উপভোগ করা যায় এখান থেকে । অদূরে ৩০০ বছরের প্রাচীন ছোট্ট দুর্গা মন্দির কামনাদেবী ।
তারাদেবীর মন্দির (হিমাচল প্রদেশ) :
শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে দূরত্ব ১০ কিমি । তারাদেবীর মন্দির থেকে গোটা সিমলা শহরকে দেখতে পাওয়া যায় । পাশেই রয়েছে শিবমন্দির ও স্কাউটের প্রধান দপ্তর । পথে সঙ্কটমোচন মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে ।
ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার হল , কুফরী , ফাগু (হিমাচল প্রদেশ) :
তীর্থনের উপত্যকায় গড়ে ওঠা ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার হলটি অবশ্যই দেখে নেওয়া দরকার । ২২ হেক্টর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ফুলের বাগানে সব সময়ই ফুটে থাকে নানান রঙের ফুল । তবে বর্ষায় সমগ্র বাগানটিই ভরে যায় ফুলে । পাখিদের কুজন এখানে উপরি পাওনা । ফুলের রং মনে ধরিয়ে তিন কিমি পথ এগিয়ে যেতে পারলেই পাওয়া যায় নৈসর্গিক শোভামণ্ডিত কুফরী । এখান থেকেই দেখতে পাওয়া যায় কেদারনাথ , বদরীনাথ , পীরপাঞ্জাল ও শিবালিক শৃঙ্গ । শীতকালে একসময় স্কি খেলার আসর বসত , এখন শীতকালীন নানান খেলার প্রতিযোগিতা হয় এখানে । সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত ছবি ‘ গুপী গাইন বাঘা বাইন ’ ছবির বরফদৃশ্যও শ্যুটিং হয়েছিল কুফরীতে । সিমলা শহর থেকে দূরত্ব ১৬ কিমি । হিমালয়ান নেচার পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানাটিতেও ঢু মারা যেতে পারে । ইয়াকের পিঠে চড়ে বেড়াবার অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করা যায় । এখান থেকে । আরও ৬ কিলোমিটারে ফাগু । নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের মাঝে আলু গবেষণা কেন্দ্রটিও দেখে নেওয়া যায় । সৌন্দর্যের প্রতীক মাশোব্রাও ( ১২ কিমি ) ঘুরে নেওয়া যায় এই সুযোগে ।১৮৫০ সালে লর্ড ডালহৌসির হাতে গড়ে ওঠে এই মাশোরী । উচ্চতা প্রায় ৮৫০০ ফুট । মাশোব্রা থেকে ঘুরে আসা যায় ৩৫ কিমি দূরে খাতনোল গ্রাম । সেখান থেকে ৩ কিমি পথ ট্রেকিং করে পৌঁছানো যায় শালী টিব্বা শিখর ।
ক্রেগনানোর (হিমাচল প্রদেশ) :
মাশোব্রা থেকে আরও তিন কিলোমিটার দূরে পাইন ও ওকে ছাওয়া ক্রেগনানোর । এখানকার প্রশস্তি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক । প্রায় ২০ একর বিস্তৃত এই পার্কে মেরি গো রাউন্ড , জায়ান্ট হুইল , ম্যাজিক শো , ডগ শো ছাড়াও রয়েছে আরও অনেক কিছু । ইয়াক ও পনি চড়ার সুযোগ রয়েছে এখানে ।
নলদেরা , তপ্তপানি (হিমাচল প্রদেশ) :
শহর থেকে প্রায় ২৩ কিমি দূরে অবস্থিত নলদেরা দেখে মুগ্ধ হতে হয় সকলকেই । এইস্থানের রূপে আবিষ্ট হয়ে লর্ড কার্জনের মেয়ে । আলেকজান্ডার নাম বদলে করে দেন নলদেরা । পাইনের ছায়ার নিচে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অল্প সময়ের মধ্যেই দেখে নেওয়া যায় সমগ্র জনপদটিই । বিশ্বের প্রাচীনতম ৯ হোলের গল্ফ কোর্স , মাহুং নাগের মন্দির এখানকার অন্যতম দ্রষ্টব্য । এখান থেকে আরও কিছুটা নিচে শতদ্রু নদের পাড়ে গড়ে ওঠা তপ্তপানি বালিয়াড়ি ( ৫১ কিমি ) । বালি থেকে রংবেরং – এর পাথর কুড়ানোর সুযোগ রয়েছে এখানে । গন্ধক মিশ্রিত উষ্ণ প্রস্রবণের জন্য এইস্থান খুবই বিখ্যাত । এছাড়াও অবশ্য দ্রষ্টব্য জামু মন্দির , চেইল ( ৪৫ কিমি ) এবং নারকান্ডা ( ৬৪ কিমি ) । চিকিৎসকদের পছন্দের জায়গা এটি । কারণ , তপ্তপানি নাম হয়েছে হট ওয়াটার থেকে । এই প্রস্রবণ উষ্ণ তাই নাম তপ্তপানি । এই জ্বলে সালফিউরাস মিশ্রিত , একই সাথে অনেক ভেষজগুন সমৃদ্ধ এই জল । তথাকথিত নিয়মে কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ আবিষ্কৃত হয়নি , অথচ এর জল পান করলে , বহু কঠিন রোগ থেকে মুক্তি লাভ হয় । এই প্রমাণ লক্ষ লক্ষ মানুষ পেয়েছেন বলে দাবী করা হয় । আবার ঠিক পাশের শতদ্রু নদী , যে জল খুব ঠান্ডা — স্নান করে সুস্থ হবেন । ১৩ কিমি দুরে কুফরি । এটি খুব ছোট্ট হিল স্টেশন এরও নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে যা মুগ্ধ করবে । কুফরি শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ হল কুফরা , যার অর্থ লেক । স্থানীয় শব্দ । এই কুফরির তীর্থন উপত্যকায় ২,৫৯৩ মিটার উঁচুতে ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার হল । পাইনে ঘেরা অনন্য জায়গা । ঠিক বর্ষার পর নাম না জানা ফুলেরা ফোটে – তার মাঝে কত জানা – অজানা পাখিদের নাচানাচি ।
হিমাচল প্রদেশ এর পাহাড় :
ডালহৌসি –
ভারতের ভ্রামণিক মাত্রই ডালহৌসি পাহাড়ের নামের সঙ্গে পরিচিত । উচ্চতা প্রায় ২০৩৬ মিটার । ধৌলাধার ও শিবালিক পর্বতে ১৩ বর্গ কিমি বিস্তৃত ডালহৌসি বহুকাল আগে থেকেই হিমাচলের পর্যটন মানচিত্রে বিশেষ স্থান অধিকার করে রেখেছে । একদা সাহেবদের বসবাস ছিল চেনাব , রাবি ও বিপাশা নদীর তীরে অবস্থিত ডালহৌসি শহরে । পাঞ্জাবের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির হাতে গড়া এই শহর । বাংলোর মতো বিশাল বিশাল বাড়িতে সমৃদ্ধ ডালহৌসি পাহাড়ে স্বাধীনতার পর মানুষ বাস করতো না । চীন তিব্বত দখল করায় সেখানকার মানুষেরা ডালহৌসি পাহাড়ে চলে আসেন । এই বাড়িগুলিতেই গড়ে ওঠে তাঁদের উপনিবেশ । প্রকৃতির দানে ভরপুর এই শহরে প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে পারেন ভ্রামণিকরা । এখানকার নৈসর্গিক দৃশ্য অলেখ্য । পায়ে পায়ে ঘুরে দেখে নেওয়া যায় বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া ডালহৌসি ক্লাব , গান্ধি চক , সুভাষ চক , শিব – বিষ্ণু – নারায়ণ মন্দির , ৩ টি ম্যাল ও আরও অনেক দর্শনীয় স্থান । শহরের চার কিমি দূরে সাতধারার মিষ্টিজল পানে পুণ্য অর্জন হয় , আরও কিছুটা এগিয়ে দেখে নেওয়া যায় পঞ্চপুল্লা জলপ্রপাত । এখানেই রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামী অজিত সিং – এর স্মৃতিসৌধ । সামান্য দূরে বাকরোটা পাহাড় থেকে দেখে নেওয়া যায় হিমালয়ের বিস্তৃত অঞ্চল । পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত স্নো – ডন বাড়িটি । নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও বেশ কিছু দিন থেকে গেছেন এখানে । অদূরেই তাঁরই স্মৃতিতে ঝরনার নামকরণ করা হয়েছে সুভাষ বাওলি । শোনা যায় এখানকার জল খেয়েই নেতাজি সুস্থ হয়েছিলেন ।
ডালহৌসি অবস্থানেই বেড়িয়ে নেওয়া যায় ডাইন্ডকুণ্ড । বাতাসের গান শুনতে শুনতে এই কুণ্ডের জলেই স্নান করে পরীরা , স্থানীয় মানুষের ধারণা এমনটাই । অদ্ভুত সৌন্দর্যে ভরা এই কুণ্ডটি কিছুটা সময় ব্যয় করে দেখে নেওয়া উচিত হবে । এখান থেকে ঘুরে আসা যায় কালাটপ অভয়ারণ্য ।
ডালহৌসি পাহাড়ে আসার সময় পথে দেখে নেওয়া যেতে পারে আরও এক অনন্য সুন্দর জায়গা নুরপুর । হাজার বছরের প্রাচীন দূর্গ , মহাকালী ও ব্রিজরাজ মন্দির এখানকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান ।
হিমাচল প্রদেশ এর অরণ্য :
গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্ক –
আরণ্যক হিমাচলের দর্শন পাওয়া যায় ৭৬০ কিমি ব্যাপ্ত গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্কে । এই অরণ্যকে ঘিরেই রয়েছে সিমলা , কুলু , মানালী , কল্পা শহর । একাধিক পাহাড়ি নদীও যাচ্ছে এই অরণ্যকে চিরে । অদূরেই রয়েছে সেইঞ্জ ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি , পার্বতী জাতীয় উদ্যান ও ইকো ডেভেলপমেন্ট জোন । সমগ্র চত্বরটি ঘুরে দেখলে ধারণা করা যায় জিম করবেটের লেখা অরণ্যের সঙ্গে আজকের অরণ্যের কোনও তফাৎ নেই ।
হিমাচল প্রদেশ এর ঐতিহাসিক স্থান :
চেইল –
হিমাচলের বিখ্যাত শৈলাবাসের মধ্যে একটি চেইল । এখান থেকেই দাঁড়িয়ে দেখতে পাওয়া যায় । হিমালয়ের বিস্তৃত অংশ আর কাসৌলী শহর । মহারাজা ভূপিন্দর সিং গোর্খাদের কাছ থেকে জায়গা কিনে এখানে গ্রীষ্মকালীন রাজধানী স্থাপন করেন । পাইন , ওক , রডোডেনড্রনের চেইলে ১৮৯১ – তে তিনি বিশালাকার রিসর্টও গড়েন । সেই থেকে তিনটি পাহাড়ে ছড়িয়ে থাকা চেইলের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে । একটি পাহাড়ের মাথায় ১৮৯৩ – এ তৈরি বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্রিকেট গ্রাউন্ডটি এখনও অবস্থান করছে স্বমহিমায় । শৈলাবাসের সঙ্গে সঙ্গে অরণ্য দেখার সাধও মেটে চেইলে । রাজার মৃগয়াভূমি পরিণত হয়েছে অভয়ারণ্যে । জঙ্গলের সুউচ্চ ওয়াচটাওয়ার থেকে দেখে নেওয়া যায় মুনজাক , ঘোরাল , বন্য শুয়োর , লেপার্ড , হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার – এর মতো ভয়ংকর প্রাণিদের।
রামপুর –
অতীতে বুশাহার রাজ্যের রাজধানী ছিল । রামপুর শহর । শতদ্রু নদীর তীরে এইস্থানে ছিল প্রচীন জনপদ । ১৯১৯ সালে পদম সিং রাস্তার উপরেই নির্মাণ করেন এই প্যালেস । পাথর ও কাঠের সংমিশ্রণে এটি বিখ্যাত শিল্পীদের দ্বারা তৈরি হয় । কিন্নরের গেটওয়ে বলে খ্যাত এই রাজধানী ছিল রাজপুতদের দখলে । নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় | ১০০ বছরের পুরোনো পদম প্যালেসটি সে ইতিহাসই বর্ণনা করছে । মোগল শৈলিতে তৈরি রাজপ্রাসাদের | দেওয়ালে শোভা বর্ধন করেছে নানান চিত্র ও কারুকার্য । তবে জনসাধারণের জন্য আজ প্রাসাদের দ্বাররূ হয়েছে । আর আছে ঊনবিংশ শতাব্দীতে তৈরি বৌদ্ধ উপাসনালয় ৷ বহু প্রাচীন কৃষ্ণ মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় অল্প সময় খরচ করে । চীন , ইয়ারকন্দ ও তিব্বতের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রামপুরের বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছিল যথেষ্ট । নভেম্বরের ১১-১৪ লাভী মেলা দেখার জন্য ভ্রামণিকরা ভিড় জমান এখানে । এখান থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় ১৪ কিমি দূরের পুরাণ খ্যাত পরশুরামের গ্রাম নিরামণ্ড । পরশুরামের কারুকার্যময় মন্দিরও রয়েছে এখানে । রামপুর থেকে ট্রেক করে অনেকেই যাচ্ছেন বশলই পাস ও জালোরিতে ।
হরিপুরধার –
সিরমোর জেলায় হরিপুরধার , ৭,৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত । একটি পরিপূর্ণ পাহাড়ি শহর । কিন্তু ইতিহাস সমৃদ্ধ । এখানে আছে ভাঙ্গিয়ানি মাতার মন্দির । স্থানীয় মানুষেরা ন্যায়ের দেবী বলে মানেন । এই মাতা আবার শিরগুল মহারাজের ভগিনী । শিবরাত্রিতে খুব ভিড় হয় । মন্দির থেকে হিমালয়ান তুষারশৃঙ্গ দেখা যায়
সিমলা থেকে লাথাম , রাজগড় হয়ে হরিপুর ধারের দূরত্ব ১৪০ কিমি । সিমলা থেকে গাড়ি ভাড়া করতে হবে।
নগ্নর –
অতীতে কুলুর রাজধানী ছিল নগ্নর । সপ্তদশ শতাব্দীতে রাজা বিশুধপালের হাতে এ শহরের পত্তন । কংক্রিটের বাঁধানো রাস্তা ধরে চলে যাওয়া যায় রাজা সিধ সিং – এর তৈরি দূর্গ । ষষ্ঠদশ শতাব্দীর এই দুর্গ ছাড়াও এখানে রয়েছে রাজাদের স্থাপিত আরও অনেক সৌধ । পরবর্তীকালে রাজধানী সুলতানপুরে স্থানান্তরিত হলেও রাজ পরিবারের গ্রীষ্মাবাস থেকেই যায় এখানে । ব্রিটিশরা এসে এই দূর্গটি খরিদ করে নিজের মতো করে রূপান্তর ঘটায় । সংরক্ষণশালাও রয়েছে দূর্গ অভ্যন্তরে । সমগ্র উপত্যকাটি সুন্দর দেখতে পাওয়া যায় দূর্গ থেকে । এছাড়া একাদশ শতাব্দীর চতুর্ভূজ বিষ্ণুমন্দির , ঠাবা রাধা – কৃষ্ণ মন্দিরও দেখে নেওয়া যায় সামান্য সময় খরচে । রোটাং পাস ও জিফং পিকের সৌন্দর্য আঁচ করা যায় এখানে দাঁড়িয়ে । সুযোগের সদব্যবহার করে শিল্পী নিকোলাস রোয়রিকের বসত বাড়িতেও ঘুরে নেওয়া যায় । ছেলে সোয়েলভ রোয়রিকও শিল্পী ছিলেন । তাঁদের আঁকা ছবির সংগ্রহও রয়েছে এখানে । অদূরে আদিবাসীদের তৈরি শিল্পকার্যের সংগ্রহশালাটিও দেখে নেওয়া উচিত হবে ।
নগরে অবস্থানকালে ১২ কিমি দূরের জগৎসুখ জনপদটিও বেড়িয়ে আসা যেতে পারে । মন্দিরময় এই গ্রাম । ছোটো এলাকা অথচ মনোরম সুন্দর পাহাড় আর হিমায়িত তুষারশৃঙ্গ নিয়ে এর অনবদ্যরূপ ভ্রামণিকদের পাগল করে দেয় । বহু নবদম্পতি মধুচন্দ্রিমা করানোর জন্য এখানে আসেন । নগ্নরের আগে এখানেই ছিল কুলুর রাজধানী । অষ্টম শতাব্দীতে তৈরি শিবমন্দির , সন্ধ্যা গায়ত্রী মন্দির দেখে নেওয়া উচিত হবে । ট্রেকাররা জগৎসুখকে বুড়ি করে খানোল , চিকো , চিক্কা , শেরাই , দেওটিকার সৌন্দর্য দেখে আসতে পারেন । রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য অনেকে দেওটিক্কা থেকে চন্দ্রতাল ঘুরে আসেন । নগ্নরের অন্য বিশেষ দর্শনীয় স্থান হল ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির । এটির বিশেষত্ব হল এটি শুধু দেবদারু কাঠের তৈরি । এই মন্দিরে একটি বিশেষ রীতি প্রচলিত আছে প্রতিবৈশাখে এখানে হাজার হাজার মৃতদেহের শবাচ্ছাদন বস্ত্র জমা করা হয় , এবং সেগুলি পরপর দেবীর পরিধেয় বস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
মানালী থেকে কুলুর বাস ধরে কাতরেইনের পাঁচ কিমি দূরের পাতলিখুল নেমে যেতে হবে । এখান থেকে বিপাশা পেরিয়ে অটোয় যাওয়া যায় নগ্নর ।
মালানা –
বিশ্বের প্রথম গণতান্ত্রিক গ্রাম মালানা । সমাজে এখনও তার প্রভাব বর্তমান । খ্রিস্টপূর্ব ৩২৫ – এ রাজা আলেকজান্ডারের দলছুট কিছু সৈন্য এখানে বসতি স্থাপন করেন । গ্রামের মাঝে বেদিতে ৩৫ জনের হরচা আদালত এখনও সমস্ত বিবাদের মীমাংসা করে । হরচা ব্যর্থ হলে জমলুর ওপর বিচারের দায়িত্ব বর্তায় । গ্রামের মানুষজন ও পবিত্র মন্দির বহিরাগতদের ছোঁয়া নিষেধ । মন্দিরের গায়ে হাত দিলে এক হাজার টাকা জরিমানা । চুরি , ডাকাতি নেই এখানে । বার্লি , মধু ও চরস চাষ এদের জীবিকা ।
পাওনটা –
গুরু গোবিন্দ সিং – এর স্মৃতিবিজড়িত পাওনটা শিখদের তীর্থস্থান । শিরমুরের রাজার হাতে আক্রান্ত হয়ে গুরু গোবিন্দ মাত্র ১৬ বছর বয়সে এসে উপস্থিত হলেন প্রকৃতির অকৃপণ দানে পুষ্ট পাওনটায় । গুরুর নিজের হাতেই গড়া এই শহর । প্রায় তিন বছর বাস করেছিলেন তিনি এই শহরে । পাওনটায় প্রবেশ করে গুরু গোবিন্দ যে স্থানে ঘোড়া থেকে অবতরণ করছিলেন সেখানেই আজ গুরদ্বারাটি অবস্থান করছে । এখানে বসে গ্রন্থ সাহিবের বেশ কিছুটা রচনা করেছিলেন তিনি । গুরুর স্নানের ঘাটেও হয়েছে গুরুদ্বারা । গোবিন্দ সিং এখানে দুর্গও গড়ে তুলেছিলেন । সেটিও আজ দেখে নেওয়া যায় । যমুনার পাড়ে ৫২ জন কবিকে নিয়ে কবি দরবারে বসতেন , এই স্মৃতিতে এখনও হোলা মহল্লায় কবিদের দরবার বসে । যমুনার পার ধরে নানান হিন্দু দেবদেবীর মন্দিরও রয়েছে । এছাড়াও অতীতের রাজপ্রাসাদটি দেখে নেওয়া যায় অল্প সময় ব্যয়ে ।
নাহান –
রাজা করণ প্রকাশ ১৬২১ – এ এই শহরের পত্তন করেন । শিরমুরের রাজধানীর তকমাও অনেকদিন ধরে ছিল নাহানের শিরে । হ্রদ , মন্দির ও বাগিচার শহর নাহানে দর্শনীয় জিনিস নানান । রানিতালকে কেন্দ্র করে এই শহর পাক খেয়েছে । হ্রদের পাশে অবস্থিত সুদর্শন মন্দিরটি রাজা দীপপ্রকাশের ( ১৫৭৩ ) তৈরি । গুরু গোবিন্দ সিংহ কিছুদিন অবস্থান করেছেন এখানে । শিখ সম্প্রদায়ের গড়া গুরদ্বারাগুলিও দেখে নেওয়া প্রয়োজন । বর্ষাকালের শেষে রাওয়ান দ্বাদশীর উৎসবে ৫২ টি দেবমুর্তি আসে শহরের জগন্নাথ মন্দিরে । এই উৎসবে অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতাও অনবদ্য । নাহান অবস্থানে বেড়িয়ে নেওয়া যায় ৬০ কিমি দূরস্থ ফসিল পার্কটি । ফাইবার গ্লাসের তৈরি মডেলের মাধ্যমে লুপ্ত জীবজন্তুকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এখানে ।
হিমাচল প্রদেশ এর অন্যান্য দর্শনীয় স্থান :
খাড়াপাথর –
সিমলার দিকে খাড়াপাথর । সিমলা থেকে রোহরু যাতাযাতের জাতীয় সড়ক । এখানে সবচেয়ে উচ্চতায় ২৮০০ মিটার খাড়াপাথর । শীতকালে নিয়মিত তুষারপাত হয় । ঘনসবুজ প্রকৃতি । দেখার মহত্ব ।
পরওয়ানু –
নৈসর্গিক শোভা ব্যতীত এখানকার অন্যতম আকর্ষণ কেবলকার । এই গাড়িতে চেপে আকাশপথে পাড়ি দেওয়া যায় টিম্বার ট্রেল রিসর্ট থেকে টিম্বার ট্রেল হাইটে।
বারোগ –
টয় ট্রেনের সবথেকে বড়ো টানেলটি অবস্থিত বারোগ স্টেশন থেকে মাত্র তিন কিমি দূরে । ট্যানেল পার হতে সময় লাগে প্রায় তিন মিনিট । অথচ এই টানেল বানানোর কোনও ফল না পেয়ে প্রধান ইঞ্জিনীয়ার বারোগ জাতীয় অর্থের অপচয়ের দায়ভার নিয়ে আত্মহত্যা করেন । শায়িত আছেন তিনি তাঁরই নামাঙ্কিত শহরে । কালকা- সিমলা রেলপথের বারোগ স্টেশনে অবতরণ করে চোখ ধাঁধিয়ে যায় । অতিব সুন্দর স্টেশনটি দেখে নিয়ে এগিয়ে চলা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে । এখানকার অতুলনীয় শোভার মাঝে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যাওয়াই যায় । রাতে কটেজ থেকে শুনতে পাবেন উল্লুক ও কুকুটের মিলিত চিৎকার।
সোলন –
আরও এক নয়নাভিরাম স্থান সোলন । অতীতের ভগৎ রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল এই শহরে । তবে তার আর কোনও অস্তিত্ব নেই আজকের সোলনে । অন্যতম দর্শনীয় স্থান সালোনী দেবীর মন্দির । আর রয়েছে মোহন মেকিন ডিস্টিলারি কারখানা । সোলন অবস্থানকালে দেখে নেওয়া যায় ভারতের একমাত্র উদ্যান বিশ্ববিদ্যালয়টি ।
কাসৌলী –
ভারতের অন্যতম শৈলাবাস গড়ে উঠেছে হিমাচল প্রদেশের কাসৌলী নামের ছোট্ট শহরটিতে । আকারে সিমলা অথবা মুসৌরীর থেকে ছোট্ট হলেও সৌন্দর্যে কোনও অংশে কম নয় । বড়ো শহরের থেকে এখানকার জীবনযাপন অনেকটাই শান্ত । অতীতে স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য সমগ্র ভারতের অসুস্থ মানুষেরা আসতেন এখানে । জলাতঙ্ক রোগের হাসপাতালও গড়ে উঠেছে কাসৌলীতে । প্রাকৃতিক শোভার পাশাপাশি দর্শনীয় স্থানগুলি হল সেন্ট্রাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট , পাস্তুর ইন্সটিটিউট , হেনরি লরেন্স প্রতিষ্ঠিত স্কুল , লোয়ার ও আপার ম্যাল । রাতেরবেলা কাসৌলী থেকে চণ্ডীগড় শহরের আলোকবর্ষাও দেখতে মন্দ লাগে না ।
নারকান্দা –
বাস থেকে নেমে আট কিলোমিটার হাঁটতে পারলেই পৌঁছানো যায় স্বর্গের কাছাকাছি । সেখানে দাঁড়িয়েই দেখে নেওয়া যায় তুষারশুভ্র হিমালয়ের রূপ । এখান থেকে দেখা সূর্যাস্তের আলো অনেক দিন ভ্রামণিকদের মনে লেগে থাকে । হাটুপিক পাহাড়ের চূঁড়োয় অবশ্যই উঠতে হয় নারকান্দা ভ্রমণকালে । কালো পাথরের তৈরি দুর্গা মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় এই সুযোগে । ট্রেকাররা বারবার ফিরে আসেন নারকান্দায় । শীতকালীন নানা খেলার আসর বসে এখানে । পাইন , ফার , ওক , সিডারে ভরা নারকান্দাকে চাঁদনি রাতে দেখার মজাই আলাদা । অমাবস্যার সময় তারাগুলিকে খুব কাছে বলে মনে হয় । উৎসাহীরা এখান থেকেই ঘুরে আসতে পারেন বাপ্পী , খাদরালাও , রোহরু ও শিলাদেশে ।
কিন্নর –
দেবতাদেশ কিন্নরে আগে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল । ১৯৯৩ – এ এই নিষিদ্ধাদেশ তুলে নেওয়া হয় । সরল প্রকৃতির মাঝে সিধাসাদা মানুষের বাস এখানে । ঐতিহাসিকদের মতে খ্রিস্টজন্মেরও কয়েক শতাব্দী আগে এখানে বসবাস করতে শুরু করে মঙ্গোলিয়ানরা । তিব্বতের রাজার প্রভাবে এখানকার অনেকেই বৌদ্ধধর্মে দিক্ষিত হন । গান – নাচ প্রিয় বর্তমান বাসিন্দারা হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী । হিমালয় পর্বতমালা র এখানেই মিলিত হয়েছে । সমগ্র কিন্ন কিন্নরে ৩৩ টি মনাস্ট্রি রয়েছে ।
সারাহান –
সারাহান কিন্নর ও সিমলার সীমান্তে অবস্থিত । সারাহানের মনোলোভা সৌন্দর্য অনবরত আকর্ষণ করে চলেছে ভ্রামণিকদের । উচ্চতা প্রায় ১৯২০ মিটার । শ্রীখণ্ড পাহাড়ের পাদদেশে এই জনপদে দাঁড়ালে পশ্চিম থেকে পূর্বে বিস্তৃত পর্বতমালা দেখতে পাওয়া যায় । সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় এখানকার সৌন্দর্য একলাফে অনেক গুণ বেড়ে যায় । রামপুর প্রাসাদ তৈরির অনেক আগে থেকেই এখানে বুশাহার রাজারা থাকতেন । বুশাহারের রাজার গ্রীষ্মকালীন বসবাসের ব্যবস্থা ছিল এখানে । বুশাহাররাজাদের অতীত রাজধানীও ছিল । রয়েছে রাজ পরিবারের গৃহদেবতা ভীমাকালীর মন্দির । প্রায় দুই শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরটির দরজা সোনার তৈরি , মন্দিরের বিগ্রহটিও সোনার । বুশাহার রাজাদের আরাধ্য দেবী ভীমাকালী , সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম । মন্দিরের দেওয়ালে তিব্বতী শৈলিতে কাঠের কারুকার্য দেখবার মতো । একদম উঁচু তলায় দেবী রয়েছেন । এখানে সতীর কান পড়েছিল । কথিত আছে , বানাসুর কন্যা ঊষা ও শ্রীকৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধের বিয়ে হয়েছিল এই মন্দিরেই । গর্ভগৃহের দ্বিতলে রয়েছে মূল দেবীমূর্তি । রয়েছে একটি মিউজিয়ামও । এছাড়াও রয়েছে নরসিংহ মন্দির , রঘুনাথ- হনুমান – শিব মন্দির , অযোধ্যানাথ মন্দির , দত্তাত্রেয় মন্দিব ও রামপুর রাজপ্রাসাদ । মন্দির চত্বরে চামড়ার জিনিস নিয়ে প্রবেশ ও ফটোগ্রাফি করা নিষিদ্ধ । উল্লেখ্য রামপুর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের প্রাচীন শোণিতপুরই বর্তমানের এই সারাহান ।। দশেরা ও নবরাত্রির সময় সমগ্র সারাহান মেতে ওঠে উৎসবে । শহরের বাইরেই রয়েছে আপেল ও খোবানির ক্ষেত । সারাহান থেকে ৪৩ কিমি দূরে ওয়াংটুও দেখে নেওয়া যায় । টাপরি / কারছাম পথে সারাহান থেকে বেড়িয়ে রাজ্যের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের দিকে চলে যাওয়া যায় ।
সাংলা –
প্রায় ৯৫ কিমি বিস্তৃত অতিব সুন্দর উপত্যকা বাসপার প্রাণকেন্দ্র সাংলা । উচ্চতা ২৬৮০ মিটার । এর উত্তর দিকে রয়েছে কৈলাস আর দক্ষিণে । রয়েছে গাড়োয়াল পর্বতমালার সুউচ্চ প্রাচীর । এপ্রিল -মে তে আপেল ফুলের সাদা রং – এ ভরে ওঠে সাংলা । এমন রূপ অবশ্যই দুর্লভ বলতে হবে । ফুল থেকে আপেল হয় আগস্ট – সেপ্টেম্বরে । ছোটো ছোটো গ্রামের এই উপত্যকায় রয়েছে আপেল , পিচ বাগিচা । পাহাড়ের ধাপে ধাপে তিব্বতীয় শৈলিতে গড়া বাড়িঘরে যে মানুষগুলি থাকেন তাঁদের বেশিরভাগই বৌদ্ধ ধর্মে দিক্ষিত । উপত্যকার যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে মন্দির ও গুম্ফা । বাসপার অদূরে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ও ট্রাউট মাছের গবেষণা কেন্দ্রও দেখে নেওয়া যায় । পায়ে পায়ে ঘুরে সমগ্র সাংলা দেখতে খুব বেশি সময় লাগে না । অদূরে কামরুতেও ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে । রামপুর রাজার গড়া পাঁচ তলার দূর্গটি অবস্থান করছে কামরুতেই । দূর্গের মধ্যে রয়েছে কামাক্ষ্যা দেবীর মন্দির , মিউজিয়াম , বদ্রিনাথ , বেরিনাথ মন্দির । এখান থেকে ঘুরে আসুন বাতসেরি গ্রাম । ভাগ্য ভালো থাকলে এই দূর্গের অস্ত্রাগারও দেখার সুযোগ হয়ে যায় । রূপন ও সিগন পর্বতশৃঙ্গ যেন কামরুর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে । এই দূর্গের পাশেই রয়েছে কামাক্ষ্যাদেবীর মন্দির ।
রকছাম ও ছিৎকুল –
সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম রকছাম । উচ্চতা ৩১১৫ মিটার । পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বাসপা নদী । পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখে নেওয়া যায় এই গ্রামটি । যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে ঝরনা , আপেল ও গালা ক্ষেত । রকছাম মন্দির দেখে চলে আসুন সীমান্তবর্তী ছিৎকুল ( ৩৪৫০ মিটার ) । এখানে ৫০০ বছরের পুরানো চিত্রলেখা মন্দির আছে । এর চারদিকে ভূর্জগাছের বন , যার ছালে প্রাচীন কালে লেখা হত । সুতরাং ভূর্জ গাছের বনের দিকে তাকিয়ে আপনি সুপ্রাচীন অতীতে চলে যাবেন । ছিটকুল থেকে ৬ কিমি দূরে চারপাশে বিরাট বিরাট পাহাড়ের মধ্যিখানে মস্তরং উপত্যকা । এত সুন্দর পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা আছে । তিব্বত ও ভারত সীমান্তের শেষ জনপদ । নী – লা থেকে সৃষ্ট বাসপা নদীর প্রবাহ গিয়েছে ছিৎকুলকে চিরে । মালভূমি প্রকৃতির এই স্থানে পৌঁছে কথা হারিয়ে ফেলেন ভ্রামণিকরা । রংবেরং – এর ফুটে থাকা ফুলে ও ফসলে অস্বাভাবিক সুন্দর দেখায় এইস্থানকে । প্রাচীন কাঠের দুর্গ, কালীমন্দিরও রয়েছে চিৎকুলে।
কল্পা –
ইংরেজদের তৈরি জেলাসদর ছিল চিনি , বর্তমানের কল্পা । উচ্চতা ২৯৬০ মিটার । কল্পনাতীত সৌন্দর্যে মণ্ডিত কল্পার চারদিক ঘিরে রেখেছে সুউচ্চ গিরি শৃঙ্গরা । কল্পা পিকে উঠে দেখে নেওয়া যায় কিন্নর – কৈলাস । কৈলাস শৃঙ্গেরডানদিকে একটি গ্রানাইট শিলা রয়েছে । মানুষ একে শিবলিঙ্গ হিসেবে পূজা করে । শিবভক্ত বানাসুর নাকি এর প্রতিষ্ঠাতা । একবার উঠলে আর এর এই চূঁড়ো থেকে নামতে ইচ্ছা করে না । সূর্যোদয় – সূর্যাস্তের সময় এইস্থান যে রূপ পরিগ্রহ করে তা বলে বা লিখে বোঝানো শক্ত । তিব্বতী শৈলিতে গড়া হিন্দু দেবদেবীর মন্দির ছাড়াও এখানকার অন্যতম আকর্ষণহল ১০০০ বছরের বেশি পুরোনোহু – বু – লান – কার বৌদ্ধ গুম্ফা । এখান থেকে দেখে নিন চিনি গ্রামের সামদুর চোলিং গুম্ফা ও নারায়ণ নাগিনী মন্দির , চণ্ডি মন্দির , হেরিটেজ ভিলেজ রোঘি , বৌদ্ধ মনাস্ট্রি । ৫ কিমি দূরে একটি গ্রাম রোটি , ১০ কিমি দূরে গ্রামটি পাটি – খুব পরিপাটি ও শান্ত । রোটি গ্রামটি হেরিটেজ সন্মানে সন্মানিত । এখানে যে নারায়ণ মন্দির আছে – তা প্যাগোদা আকারের । বোধি গ্রামের চেয়ে পাটি গ্রাম বড় । এখানেও একটি মন্দির আছে- দেখবার মতো ।
রেকংপিও –
কিন্নর জেলার সদর তথা বাণিজ্যিক শহর রেকংপিও – এর প্রাকৃতিক শোভা নিয়ে আলাদা কিছু বলার নেই । শহরের কেন্দ্রস্থল ময়দানকে ঘিরে বাড়ি উঠেছে কংক্রিটের । ১৯৯২ সালে দলাই লামার ঐতিহাসিক ভাষণের স্মারক রূপে প্রস্তুত মহাবোধি গুম্ফাটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে রেকংপিও – এ থাকার সময় । শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য অদূরে পিও নামের নতুন শহর গড়ে উঠেছে । সমগ্র কিন্নর জেলা ঘুরে দেখতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগে যায় । কারণ এখানকার উচ্চতা । কিন্নরের সর্বাধিক উচ্চতা ৬০৫০ থেকে কৈলাশ পর্বতও দেখতে পাওয়া যায় । ভারতে অবস্থিত ত্রিকৈলাশের মধ্যে অন্যতম কিন্নর কৈলাশ । পাহাড় কেটে ধাপে ধাপে আপেলের চাষও হচ্ছে কিন্নরে । আপেল থেকে প্রস্তুত মল্টি ও আঙুর থেকে তৈরি বহমি সুরার স্বাদ গ্রহণ করা যায় এ সফরে । কিন্নরের দক্ষিণে রয়েছে গভীর অরণ্য । নানান পাখির কুজন শোনা যায় এখানে । অহরহ চোখে পড়ে বন্য হরিণের পাল । জেলার মানুষেরা খুবই উৎসব প্রিয় । আগস্টে অনুষ্ঠিত হওয়া ফুলেখ এদের প্রিয় উৎসব । এছাড়াও রয়েছে সেপ্টেম্বরের বুদ্ধ মহোৎসব । সমাজ জীবন বিচিত্র এখানকার মানুষদের । নারীরা একাধিক পতি রাখতে পারেন । তবে এখন দ্রৌপদী প্রথা প্রায় লোপ পেয়েছে , তবুও সাথী নির্বাচনে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা মেলে কিন্নরবালাদের । কিন্নরীদের হাতের তৈরি শাল ও বুশাহারি টুপির যথেষ্ট খ্যাতি আছে । অদূরে আপার কিন্নর ।
অনুর্বর এই জায়গায় সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে যাতায়াতে বিধিনিষেধ রাখা হয়েছে । তবে কল্পা থেকে বাসে কুহু যাওয়া যায় । সেখান থেকে বাসে আরও ১৭ কিমি এগোলে পাওয়া যাবে স্পিতি ও পীরে চু নদীর মিলনস্থল সামধো । এটিই কিন্নর জেলার শেষ বসতি । অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত এখানে আদিবাসী মেলা হয় । এখান থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে আছে বোধী গ্রাম । সেখানে রয়েছে চন্ডিকা মন্দির । সমগ্র বিগ্রহটি সোনার ।
নাকো –
সমুদ্রতট থেকে ৩৬৬২ মিটার উে অবস্থিত নাকো গ্রাম । নীল জলের লেককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই জনপদ । উইলো ও পপলার গাছের নিবিড় ছায়ায় অবস্থিত নাকোর সৌন্দর্য নয়নাভিরাম । লেকের ধারে রয়েছে নানান বৌদ্ধ মন্দির । কালীমন্দিরও রয়েছে নাকোয় । গ্রাম থেকে আরও ২৩ কিমি দূরে খোবানি , আপেল , নাশপাতি উৎপাদনের জন্য খ্যাত রিব্বা । ৬০০ বছরের পুরোনো বৌদ্ধমঠও রয়েছে এখানে । মরাঙ , কানাম , খাবও ঘুরে দেখা যায় নাকো অবস্থানকালে । দুপাশ দিয়ে বয়ে গেছে অনেকগুলি দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা । পাশাপাশি বয়ে চলেছে শতদ্রু নদী । ৬০০ বছর আগে রিব্বাতে ধর্মগুরু রত্নভদ্র ( রিন ছেন জ্যান পো পো ) বৌদ্ধমঠ স্থাপন করেছিলেন ।
তাবো –
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষদের তীর্থস্থান তাবো । এখানকার অন্যতম আকর্ষণও বৌদ্ধ গুম্ফাগুলি । ৩০৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই পাহাড়ি জনপদের মানুষ । তিব্বতের রাজা স্রোন – ব্লাসোনের ( ৬১৮-৬৪৯ ) দ্বারা বৌদ্ধধর্মে দিক্ষিত হন । পরবর্তীকালে গুরু পদ্মসম্ভাবাও এ পথেই ভারতে এসেছিলেন বৌদ্ধধর্মের প্রসারের উদ্দেশ্যে । গজের রাজার দ্বারা প্রেরিত ধর্মপ্রচারক চেন – জ্যাঙ্গ – পোরহাতে ৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে তৈরি করেছিলেন মাটির গুম্ফা । পরে কাশ্মীর থেকে শিল্পী আনিয়ে বিশালাকার গুল্ফা তৈরি করা হয় । তাবোর মাটির গুল্ফাকে হিমালয়ের অজন্তাও বলা হয় । মাটির দেওয়ালে ভেষজ রঙের দ্বারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল বুদ্ধের জীবনের নানান কাহিনি । তাবোতে নয়টি গুল্কা , ২৩ টি চোর্তেন ও ৩০ টি থঙ্কাস , অসংখ্য দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে । ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের সম্মানও পেয়েছে এই মনাস্ট্রি । তাবোর হর্টিকালচার রিসার্চ ইন্সটিটিউটটিও দেখে নেওয়া অবশ্য কর্তব্য । মাত্র শ চারেক লোক বাস করে তাবোতে , নাচে – গানে ভরপুর তাঁদের জীবনযাত্রা দেখেও আনন্দ লাভ করা যায় ।
কাজা , থ্রাংখার –
কাজা স্পিতি জেলার সদর শহর । কাজে গুম্পা থেকে এইস্থানের নাম হয়েছে কাজা । ৩৬৬০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই শহরও হিমাচলের অন্যান্য অংশের মতো প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর । কাজা শহরকে দুভাগে ভাগ করে নতুনটিতে বসেছে সরকারি অফিস , বাসস্ট্যান্ড , হোটেল । আর পুরোনো কাজায় বসবাস করেন স্থানীয় মানুষেরা , যাদের জীবনযাপনে তিব্বতীয় প্রভাব সুস্পষ্ট । বিশ্বের উচ্চতম পেট্রল পাম্পটি অবস্থান করছে এখানেই । সামান্য দূরেই ৬০০ বছরের প্রাচীন কাঙ্গরি গুম্ফা , হিকিম , কোমিক , লাঙ্গিয়া , কী মনাস্ট্রি ( ১২ কিমি ) , ডাংকার মনাস্ট্রি ( ২৪ কিমি ) দেখে নেওয়া যায় কাজা থাকাকালীন । কী মনাস্ট্রি দেখে আরও এগিয়ে চলা যায় ৪২০৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত কিব্বের গ্রাম দেখেতে । এখানে থাকা শ- পাঁচেক মানুষই পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন । ট্রেকারদেরও আনাগোনা আছে কিব্বের গ্রামে ( ৮০ কিমি ) । আরও সাত কিমি পূর্বদিকে এগোলেই পৌঁছে যাওয়া যায় পৃথিবীর উচ্চতম জনবসতি গেট্টে – তে । সমুদ্রতট থেকে ৪২৭০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই গ্রাম ঘুরতে খুব বেশি সময় লাগে না ।
একটা দিন খরচ করে এখান থেকেই ঘুরে আসা যায় স্পিতির অতীত রাজধানী ব্রাংখায় ।
ব্রাংখায় রাজার তৈরি দূর্গ ছাড়াও রয়েছে প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো মনাস্ট্রি । এখান থেকে অল্পদূরে পিন ভ্যালি ন্যাশানাল পার্ক । ৬৭৫ বর্গ কিমি বিস্তৃত এই অরণ্যে দুষ্প্রাপ্য আইবেক্স ও স্নো লেপার্ড সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণি দেখতে পাওয়া যায় ।
ল্যাংলস পেরিয়েই পড়বে কোমিক গ্রাম । শাক্যপা গোষ্ঠির থাংগুড় গুল্ফা এখানে রয়েছে । এই গুম্ফায় রয়েছে ছোট বিদ্যালয় এবং অতিথিশালা রয়েছে । কোমিক থেকে হাঁটুন , প্রকৃতির সাথে আলাদা নৈকট্য পাবেন , নয়তো চামরি গাইয়ের পিঠে চড়ে ডেমপু গ্রামে যাওয়া যায় । কাজা থেকে মাত্র ৭ কিমি দূরের ‘ কী ‘ গ্রামের ওপরে টিলার মাথায় গুম্ফাতে রয়েছে । প্রচুর প্রাচীন পুঁথি , পান্ডুলিপি ও থাঙ্কা ।
লাহাহুল ও স্পিতি –
বাণিজ্যের সুবিধার জন্য ১৮৪১ – এ লাহাহুল ও স্পিতি দখল করে ব্রিটিশরা । বর্তমানে কিন্নর একটি স্বতন্ত্র জেলা । মোট ৭৭ টি গ্রাম রয়েছে এখানে । আর লাহাহুল ও স্পিতি উপত্যকা একটি আলাদা জেলায় পরিণত হয়েছে ।
জেলাসদর বসেছে কেলং –
এ । এই দুই উপত্যকার মানুষের মধ্যে তিব্বতীয় প্রভাব স্পষ্টই দেখা যায় । দশম শতাব্দীতে লাডাকের অংশও ছিল লাহাহুল । পরবর্তীতে শিখরা ও তারও পরে ব্রিটিশরা দখল নেয় অস্বাভাবিক সুন্দর এই উপত্যকায় । এ জেলার বেশিরভাগ মানুষ বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী হলেও হিন্দুধর্মের প্রভাবও বর্তমান সমাজ জীবনে । অদূরে থিরোট ও উদয়পুর জনপদও দেখে নেওয়া যায় একই সফরে । বাতাল থেকে ১৬ কিমি পথ ট্রেক করে দেখে নেওয়া যায় প্রকৃতির আশীর্বাদে ধন্য চন্দ্রতাল হ্রদটি । এখান থেকেই চন্দ্র নদীর উৎপত্তি । থাকার কোনও ব্যবস্থা না থাকায় তাঁবু ও খাবার সঙ্গে নিয়ে ট্রেক শুরু করতে হয় । শীতকালে ( অক্টোবর থেকে মার্চ ) বরফে ঢাকা । থাকে এ জেলা । তবে গ্রীষ্মের দিনেও শীত বর্তমান থাকে । বসবাসকারী মঙ্গোলিয়ান জাতির উত্তরপুরুষদের প্রধান জীবিকা আলু ও হপ চাষ । এখানকার এক রূপসী উপত্যকার নাম বাতাল । ভ্রামণিকদের আকর্ষণ করার জন্য যা যা প্রয়োজন প্রকৃতি সে সবেরই ব্যবস্থা রেখেছে এখানে । উপত্যকার অন্যতম জনপদ তথা গ্রাম লোসার পার হতেই স্পিতি ভ্যালির শুরু । পথেই পরে তাঙি , চন্দ্র ও ভাগা নদীর মিলনক্ষেত্র । আরও কিছুটা এগোলে পৌঁছানো যায় কুনজুমে । বড়াসিথ্রি ও ছোটাসিথ্রি হিমবাহ দুটি দেখে নেওয়া যায় এখান থেকেই । মন্দির আছে বৌদ্ধদের উপাস্য কুনজুম মাতার । এই ছোট্ট জনপদ থেকেই শুরু লাহা উপত্যকার । কুনজুম অবস্থানকালে ৬ কিমি ট্রেক করে চলা যেতে পারে চন্দ্রতাল লেকের সৌন্দর্য দেখতে । ৪৩০০ মিটার উঁচুতে টলটলে নীল জলের হ্রদটির পরিধি প্রায় আড়াই কিলোমিটার । কুনজুমে ফিরে আরও এগিয়ে চললে এসে যায় গ্রামফু । সুন্দর ছোট্ট জনপদের মানুষগুলোর সঙ্গে কিছুটা সময় অতিবাহিত করা যায় । তারপর কেলৎমুখী রাস্তা ধরে পাঁচ কিমি এগোলে পৌঁছে যাওয়া যায় স্পিতি উপত্যকার শেষ গ্রাম খোকসারে । অদূরের বিশাল জলপ্রপাতটি দেখে নেওয়া যায় এই সুযোগে । জানুয়ারি মাসে জমকালো উৎসব হয় এই গ্রামে । আরও ২৩ কিমি পথ অতিক্রম করতে হয় সিশু পৌঁছানোর জন্য । এখানকার মনাস্ট্রিটি দেখার মতো । লাহাহুল ও স্পিতি জেলার গেটওয়ে বলা হয় রোটাং পাসকে । অতীতে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের পথও ছিল রোটাং পাস । সিশু দেখে চলা যায় ১২ কিমি দূরের গোণ্ডালায় । ৩০০ বছরের প্রাচীন দুর্গটি প্রথমেই দেখে নিতে হয় । দুর্গের মধ্যে দলাই লামার উপহার সোর্ড অফ উইসডম সহ আরও নানান অস্ত্রশস্ত্র , পোশাক ও সিবাবের সংগ্রহ রয়েছে । এখানে অবস্থি বিশালাকার পাথরটি সবসময়ই জায়গা বদল করে । দলাই লামার মতে এই পাথরই হবে বুদ্ধের পুনর্জন্মের কারণ । তাই এখানে তৈরি হয়েছে নতুন শুল্কা , বোধিসত্ত্ব জ্ঞানে পুজো হয় এই পাথর । গুরু পদ্মসম্ভাবার হাতে তৈরি ঘান্টাল মনাস্ট্রিতে দেখে নেওয়া যায় কিছুটা সময় খরচ করে । কাঠের তৈরি লাহাহুলের প্রাচীনতম মনাস্তিতে কালী মূর্তিটি দেখে অবাক হতে হয় । গোগুলা থেকে আরও ১৬ কিমি গিয়ে পৌঁছানো যায় জেলা সদর কেলং – এ । এটিই লাহাল ও স্পিতি জেলার একমাত্র শহর । চারদিকে পাহাড় ও অরণ্যে ঘেরা এ শহরটিকে স্থানীয় মানুষরা জঙ্গলের মরূদ্যান বলে থাকেন । এখানকার সমাজ জীবন বড়োই বিচিত্র । বাড়ির বড়ো ছেলে বিয়ে করে বংশ রক্ষা করবে আর বাকিরা যাবে মঠে , লামা হওয়ার উদ্দেশ্যে । বড়োজনের মৃত্যু ঘটেলে পরের জন বাড়ি ফিরে বিধবা বৌদি , তাঁর সন্তান ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় । ছেলেদের মতো মেয়েদেরও পাঠিয়ে দেওয়া হয় কনভেন্টে । কেলং আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেশ অনেকটা পথই এগিয়েছে । লর্ড হার্ডিঞ্জকে বোমা ছোড়ার অপরাধে ১৯১২ – তে এখানেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বিপ্লবী রাসবিহারী বসু । তাঁর মূর্তি বসেছে শহরের কেন্দ্রে । নানা মনাস্ট্রি ছাড়া দুর্গার মন্দির আছে কেলং শহরে । অদূরেই অতীত রাজধানী খারদুং – এর প্রায় ৮০০ বছরের পুরানো মনাস্ট্রিটি দেখে নেওয়া যায় অল্প সময় খরচ করে । আরও কিছুটা এগিয়ে শাশুর মনাস্ট্রি ও তায়ুল মনাস্ট্রিটি অবশ্য – দৃশ্য ।
উদয়পুর –
সপ্তদশ শতকের মারকুলের নাম পরিবর্তন হয়ে হয় উদয়পুর । এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনবদ্য । বাজারের মাথায় অবস্থিত কারুকার্য খোচিত মন্দিরটির বয়স হাজার বছরেরও বেশি । রুপোর তৈরি লাহুলীরা পুজো হয় এই মন্দির । এখান থেকে আট কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে দেখে নেওয়া যায় ত্রিলোকনাথের মন্দিরে । অষ্টম শতাব্দীতে কাশ্মীর রাজ ললিতাদিত্যের তৈরি শিবমন্দিরের জায়গায় তৈরি বৌদ্ধমন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় । নানান মূর্তিতে সমৃদ্ধ বৌদ্ধ মন্দিরটির বিশেষ এক মূর্তিতে দাবি হিন্দু ও বৌদ্ধ দুই সম্প্রদায়েরই । বুদ্ধ পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে তিন দিনের জাঁকালো পাউরি উৎসব হয় উদয়পুরে । এছাড়াও হিমাচলের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ও যাওয়ার জ জন্য জংশন হিসেবেও উদয়পুরের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে । শীতকালে এখানে যানবাহন চলাচল স্থগিত থাকে । উদয়পুরকে কেন্দ্র করেই দেখে নেওয়া যায় পট্টন উপত্যকার ত্রিলোকনাথ ।
রোটাং পাস –
তিব্বতী শব্দ রোটাং জোতের অর্থ মৃতদেহের স্তূপ । অতীতের রোটাং জোত আজ রোটাং পাস ( লা ) -এ পরিণত হয়েছে । হিমাচলে ভ্রমণকারীদের কর্তব্য এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাসটি দেখা । মানালী থেকে কেলং যাওয়ার পথেও দেখে নেওয়া যায় রোটাং পাস । আবার কেলং না গিয়ে মানালী থেকে কেবলমাত্র রোটাং পাসের সৌন্দর্য দেখেই ফিরে আসা যায় । এপথের শোভাও অতুলনীয় । বিভিন্ন দর্শনীয়স্থান ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছানো যায় রোটাং – এ । মানালী ছাড়ার পাঁচ কিমির মধ্যেই পড়ে অর্জুন গুম্ফা । আরও এক কিমি এগিয়ে দেখে নেওয়া যায় নেহেরু কুণ্ড ও পার্ক । আরও দশ কিমি গেলে চুড়ুইভাতির আদর্শ জায়গা সোলাং ভ্যালি পৌঁছানো যায় । এ গ্রামেই বরফ জমে তৈরি হয়েছে শিবলিঙ্গ । সেটি দেখেও ভাগ্যবান হওয়া যায় । রোটাং যাওয়ার পথে পাহাড়ি গ্রাম কোটি কোদিতেও ঢু মারা যেতে পারে । আরও ১২ কিমি এগোলেই দেখতে পাওয়া যায় রাহালা ঝরনা । প্রায় ৭০ মিটার উচ্চতা থেকে জলধারা আছরে পড়ছে পাহাড়ের গায়ে । আরও আট কিলোমিটারের মাথায় নৈসর্গিক শোভা সম্পন্ন মারহি । এখান থেকে আরও ১৬ কিমি পথ যেতেই পাহাহুলের গেটওয়ে রোটাং পাস । স্কি করার ও স্লেজ গাড়ি চড়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে । ঘোড়ায় চড়ে । বিপাশা নদীর উৎপত্তি স্থল বিয়াসকুণ্ডটি দেখে নেওয়া যায় । মন্দির আছে নাগজির । পাশেই পবিত্র সরকুণ্ড । সোনাপানি গ্লেসিয়ারও দেখে আসা যেতে পারে রোটাং পাস থেকে । দুপুরের পথ থেকে আবহাওয়ার বিভ্রাট ঘটতে দেখা যায় । তাই উচিত হবে সকাল সকাল রোটাং পাস দেখে ফেরার পথ ধরা ।
মানালী –
ভারতের অন্যতম প্রসিদ্ধ ভ্রমণকেন্দ্রের নাম মানালী । জনশ্রুতি , এখানেই বসবাস করতেন মানুষের সৃষ্টিকর্তা মনু । বিপাশা নদীর তীরেই প্রথম মানুষের জন্ম । মনুর নাম অনুসারে এইস্থানের তৎকালীন নাম ছিল মানালসু , কালক্রমে তা পরিবর্তন হয়ে । বর্তমান নাম পেয়েছে এই উপত্যকা । ২০৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত পাহাড়ি শহরটি চারদিক থেকে সাদা পাহাড়ে ঘেরা । অন্যান্য বিখ্যাত পাহাড়ি শহরের মতো ঘিঞ্জি নয় এই শহর । যথেষ্ট নীরবতা ও শান্তি বিদ্যমান সবুজাভ মানালীতে । শহরের নিচে দিয়ে নিরলস গতীতে বয়ে চলেছে মানালী ও মানালসু নদী । এই শহরটার বিশেষ আকর্ষণীয় ব্যাপার যেদিকেই হেঁটে যান , দেখবেন হঠাৎ করে চোঁখে লাগছে রোদ চকচকে পিরপাঞ্জাল ও বড়া ভাঙ্গল পর্বতশ্রেণী । ব্রিটিশরা প্রথম আপেল বাগান প্রস্তুত করা ছাড়া আর তেমন কোনও ছাপ রাখতে পারেনি এখানে।
তবে স্বীকার করতেই হয় ব্রিটিশদের তৈরি বাগানের আপেলের খ্যাতি আজ সারা বিশ্বে । এছাড়াও চেরি ও পিচের বাগিচা রয়েছে এখানে । আর আছে গাঁজা ও চরসের চাষ । তবে এখানকার পুলিশ খুবই সতর্ক । গাঁজা কেনা বা সেবন থেকে বিরত থাকাতেই ভ্রামণিকদের মঙ্গল । র্যাফটিং , প্যারাগ্লাইন্ডিং – এর মতো রোমাঞ্চকর খেলার আসরও বসে এখানে । শোনা যায় , মানালীর রূপে আকৃষ্ট হয়ে পাণ্ডবরাও প্রায় একবছর অতিবাহিত করেছিল এখানে । তবে আজ জনসংখ্যার চাপ কিছুটা হলেও বেড়েছে । ফলে হ্রাস পেয়েছে নীরবতা । যত্রতত্র দেখতে পাওয়া যায় আপেল বাগিচার গাছ কেটে বাড়ি তোলা হচ্ছে সেখানে । বাসস্ট্যান্ডকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ঘিঞ্জি পরিবেশ । এসব জেনে মন খারাপ করার প্রয়োজন নেই । কারণ এখনও শহরের কেন্দ্রস্থলকে অতিক্রম করলেই পাওয়া যায় মানালীর সুগন্ধ ।
শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিমি দূরে ওল্ড মানালী ঘুরে নেওয়া যায় পায়ে হেঁটে । এখানকার গ্রামে গ্রামে হিপিরা আস্তানা গেড়েছে । সুন্দর অলঙ্কৃত পাহাড়ি শৈলির বাড়িগুলি দেখতে ও হিপিদের আহ্লাদের জীবনযাপনের সঙ্গে মিশে যেতে বেশ ভালোই লাগে । কাঠের তৈরি মনু মহর্ষি মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় । অতীতের মানালী দুর্গটিও আজ বিধ্বস্ত । ট্যুরিস্ট অফিস থেকে দেড় কিলোমিটার পায়ে হাঁটা পথে ঢুংরি পাহাড়ের হিড়িম্বা মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় মানালী অবস্থানকালে । অদূরের প্যাগোডার মতো দেখতে মন্দিরেও ঢু মারা যায় । ১৫৫৩ – য় তৈরি এই মন্দিরের দেওয়ালে নানান জীবজন্তু ও নানা দেবদেবীর মূর্তি ।
স্থানীয় মানুষের মতে , মন্দিরের পাথরের ছাপটি বিষ্ণুর পায়ের । বিপাশা নদী পেরিয়ে মানালী ক্লাব হাউসটিও দেখে নেওয়া যায় । এখানে নানান ইন্ডোর গেমের আসর বসে । ভাগ্য ভালো থাকলে মানালীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও দেখার সুযোগ মিলে যাবে ক্লাব হাউসের অডিটোরিয়ামে । বিপাশা পাড়ের পার্কটিতে কিছুটা সময় কাটাতে মন্দ লাগে না । মডেল টাউনের তিব্বতীয় মনাস্ট্রিটি আর এক দর্শনীয় স্থান । ছবির সম্ভারের সঙ্গে হস্তশিল্পের নিদর্শন দেখার ও কেনাকাটার সুযোগ আছে এখানে । শহরের মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউটটিও আরেক দ্রষ্টব্য । রিসেপশন সেন্টারের পেছন দিয়ে বিপাশা পেরিয়ে তিন কিমি যেতেই পাহাড়ের গায়ে বশিষ্ঠ মুনির আশ্রম । কথিত আছে এখানে বসেই ধ্যান করতেন মুনি । কাঠের তৈরি মন্দিরের পাশেই গরম জলের কুণ্ড । এছাড়া অবশ্য দ্রষ্টব্য বনবিহার নেচার পার্ক , নিংমাপা বুদ্ধ মনাস্ট্রি , ফোক মিউজিয়াম , সোলাং ভ্যালি । অদূরেই প্রাচীন রাম মন্দির ও ঘটোৎকচ মন্দির । হ্রদও আছে পাহাড়ের চূঁড়োয় ভৃগু মুনির তপস্যা ক্ষেত্রে ।
কাতরেইন –
মানালীর ঘিঞ্জিপনায় বিরক্ত হয়ে উঠলে চলে আসতে হয় সেখান থেকে ১৯ কিমি দূরে প্রকৃতির মাঝে কাতরেইনে । বিস্তারিত আপেল ক্ষেতে ভরা এই জনপদে ভ্রামণিকদের চাপ খুব একটা বেশি থাকে না । অবস্থানকালে দেখে নেওয়া যেতে পারে ট্রাউট মাছের হ্যাচারিটি । পাশ দিয়ে বয়ে চলা বিপাশাকেও লাগে সুন্দর ।
হিমাচল প্রদেশ এর কুলু উপত্যকা :
ভ্যালি অফ গড বা ভগবানের উপত্যকা হল কুলু । রামায়ণ , মহাভারতের কাল থেকে এই উপত্যকার খ্যাতি । উচ্চতা ১২১৯ মিটার । তখন অবশ্য নাম ছিল কুলুত । শতদ্রু , তীর্থন , সারোবরী , চন্দ্রাভাগা , পার্বতী নদীর পাড়ে অবস্থিত এই অতিব পুরাতন জনপদে একদা বসবাস ও তপস্যা করতেন বেদব্যাস , গৌতম , বশিষ্ঠ , ভৃগু , মনুর মতো আরও খ্যাতনামা ঋষিরা । রোটাং থেকে মাণ্ডী প্রায় ৮০ কিমি দীর্ঘ এই উপত্যকা প্রস্থে ২ কিমি । কুলুতে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকালে একাধিক পাহাড়ি খরস্রোতা নদীর দর্শন মেলে আর মাথার ওপর হিমালয়ের পীরপাঞ্জাল , পার্বতী , বারাভাঙ্গাল , ধৌলাধারের মতো পাহাড় সারি । বছরের নানান সময় কুলুর রূপ বদল হয় । বসন্তে এই উপত্যকা রেঙে ওঠে পাকা আপেল , নাশপতি , চেরি ও খুবানির রঙে । বছরের অন্যসময় রডোডেনড্রন , ধান , গমের রঙ লাগে কুলুর মনে । কুলু উপত্যকায় অবস্থানকালে সেখানকার ঝলমলে মানুষগুলির সঙ্গে আলাপ করা ছাড়াও দেখে নেওয়া যেতে পারে নানান পর্যটন কেন্দ্র ।
কুলু- কুলু উপত্যকা জেলার সদর কুলু শহর । অতীতে স্বাধীন রাজ্য ছিল কুলু জেলা । রাজধানী ছিল নগ্গরে । পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কুলু রাজ্যের পরিধি অনেকটাই বাড়ে । সে সময়ই রাজধানী স্থানান্তরীত করে আনা হয় কুলু শহরে । কুলুর ঐতিহাসিক গুরুত্ব যথেষ্ট হওয়া সত্ত্বেও ভ্রামণিকরা কেমন যেন মুখ ফিরিয়ে আছে প্রাচীন এই শহর থেকে । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখানে কম , সে কথাও বলা যায় না । মানালীতে অবস্থানকালেই পর্যটকরা বেড়িয়ে নেয় কুলুতে । অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া দশেরা উৎসবের খ্যাতি আছে । পাহাড়ি গ্রাম থেকে উপাস্য দেবতা সহ নেমে আসেন গ্রামবাসীরা , কুলুর দশেরায় সামিল হওয়ার জন্য । মানালী থেকে আসে দেবী হিড়িম্বা , মালানা থেকে জমলু । এ রকম আরও প্রায় ৬০০ টি দেবদেবী আসেন কুলু পরিক্রমায় । বিস্তৃত ভাবে জানা দরকার , কুলুর ২৩ কিমি দূরে নাপ্পার । ইহা ছিল প্রাচীন রাজধানী , এখানে বিসুধ পাল নামে এক রাজা একসময়ে রাজত্ব করতেন । এখানে কাঠের দূর্গ অন্যতম দর্শনীয় স্থান । অন্যদিকে আসলে , রঘুনাথজি এখানে রাম নামেই পূজিত হন এবং দশেরার রাম নগর পরিক্রমায় বেরিয়ে পড়েন । রাজা জগৎ সিং অযোধ্যা থেকে মূর্তিটি নিয়ে এসে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন । কুলুতে থাকতে থাকতে দেখে নেওয়া উচিত হবে , ১৬৫৭ – র তৈরি কুলুর মহারাজা জগৎ সিং – এর রঘুনাথজির মন্দির , বৈষ্ণোদেবী মন্দির , তীরথান অভয়ারণ্য । সুলতানপুরের রাজপ্রাসাদ , জগন্নাথী মন্দির , বিজলেশ্বর মহাদেব শিবমন্দির ( দূরত্ব ১৪ কিমি ) । এছাড়া দেখে আসতে পারেন অপরূপ চিত্রকলা । সমৃদ্ধ ভিখালির দেবী ভুবনেশ্বরী মন্দির । কুলু থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৫ কিমি ।
সামসি –
উপত্যকার বিখ্যাতজায়গা সামসি । এখানেই তৈরি হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত শাল । পদব্রজে সামসি ঘুরতে ঘুরতে দেখে নেওয়া যেতে পারে শাল তৈয়ারির পদ্ধতি । দোকানও বসেছে অনেক , স্মারক রূপে অল্প দামেই সংগ্রহ করা যায় এখানকার শাল ।
বাজায়ুরা –
কুলু উপত্যকার আরও এক সুশ্রী প্রাচীন জনপদ বাজায়ুরায় রয়েছে অষ্টম শতাব্দীর বিশ্বেশ্বর মহাদেব মন্দির । পিরামিডের আদলে তৈরি এই মন্দির নানান দেবদেবীর মূর্তিতে সমৃদ্ধ । বাজায়ুরার উৎপাদিত ফল সারা ভারতেই বিক্রি হয় ।
জারি , কাসোল , মণিকরণ , গ্রহণ –
কুলু থেকে মণিকরণের জন্য যাত্রা শুরু করলে মাত্র ১৪ কিমি দূরে জারি গ্রাম যাওয়া যায় । চরসের গন্ধে ভরপুর এই গ্রামের পাইনের ছাওয়া যেন একটু বেশিই মিষ্টি । নানান পর্বতশৃঙ্গও দৃশ্যমান এ গ্রাম থেকে । আরও এগোলেই মেলে কাসোল জনপদ । আলাদাভাবে এখানকার সৌন্দর্য বর্ণনা করার মতো কিছু নেই । হিমাচল প্রদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এটিও প্রকৃতির দানে পৃষ্ঠ । কাসোলের সুন্দরকে উপভোগ করে এগিয়ে যেতে হয় মণিকরণের দিকে । উচ্চতা ১৭৩৭ মিটার । এটি হিমাচলপ্রদেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে । পার্বতী নদীর তীরে অবস্থিত পার্বতী উপত্যকার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও শোভাময় জনপদ মণিকরণ । পুরাণ মতে , এখানেই দেবদেবীদের মিলন ঘটত । উষ্ণ প্রস্রবণ যেমন আছে এখানে , তেমনই এই প্রস্রবণকে ঘিরে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনি । গুরু নানকের ( ১৫৭৪ সাল ) পদধূলিও পড়েছে এইস্থানে । রয়েছে গুরদ্বারাও । নিরিবিলিতে কয়েকটা দিন কাটিয়ে দেওয়া যায় এখানে । আবার কাসোল থেকে ৯ কিমি ট্রেক করে গ্রহণ গ্রামে পৌঁছানো যায় । প্রকৃতি এখানে উদার হস্ত । অদূরেই কানাওয়ার অভয়ারণ্যে দেখে নেওয়া যায় পাহাড়ি ছাগল , সিভেট ক্যাট , কস্তুরী মৃগ , থর , স্নো লেপার্ড – এর মতো বন্যপ্রাণি ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি । মণিকরণ থেকে বাসে বারসোনিও যাওয়া চলে । সরেজমিনে দেখে নেওয়া যায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ । অদুরের জমলু মহাদেব মন্দিরটি অবশ্যই দেখতে হয় । পার্বতী নদীর তীরে ১,৭৩৭ মি . উঁচুতে উষ্ণ প্রস্রবন – এর জলে রয়েছে ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য রেডিও অ্যাক্টিভ খনিজ উপাদানের মিশ্রণ । যে কারণে এর জল সর্বরোগ – এর মহৌষধ রূপে গ্রাহ্য – এই মতামত এখানে আসা ভ্রমণার্থীগণ বিশ্বাস করেন । কথিত আছে , ১৫৭৪ সালে শিখগুরু নানক মণিকরণে আসেন এবং যখন তিনি স্থানীয় অভুক্ত মানুষদের রান্না করে খাওয়াতে চান , তখন তিনি আগুনের কোনো ব্যবস্থা না পেয়ে এই জলরাশিকে উষ্ণপ্রস্রবণে পরিণত করেন । আবার এখানে রয়েছে ১৭ শতকে রাজা জগৎ সিং – এর গড়া রামচন্দ্র মন্দির , জনশ্রুতি হল । রামচন্দ্র নিজেই এই মন্দিরকে অযোধ্যা থেকে এখানে নিয়ে আসেন । তাই এখানে রাম ও সীতার বিগ্রহ পূজিত হয় । এখানে লস্কর খানায় তীর্থ যাত্রী ও ভক্তদের জন্য খাবার বিতরণ করা হয় । রয়েছে শ্রীগুরুনানক দেবজি গুরুদোয়ারা । এটি শিখদের জন্য জনপ্রিয় তীর্থস্থান । অনেকে বলেন , গুরুনানক ও তার পাঁচ শিষ্য এই গুরুদোয়ারা ঘুরে গিয়েছেন । এখানেও রয়েছে লস্করখানা । মণিকরণ গ্রন্থটি হরিহর পর্বত দিয়ে ঘেরা বলে দেখতে নৈঃসর্গিক লাগে ।
মাণ্ডী –
হিমাচলপ্রদেশের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র মাণ্ডীই অতীতে তিব্বত যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল । সে থেকেই এই শহরের ভৌগোলিক গুরুত্ব যথেষ্টই বৃদ্ধি পেয়েছে । ১০৪৪ মিটার উঁচু এই শহর একসময় মান্ডবনগর নামে পরিচিত ছিল । রাজপুত রাজাদের হাতে তৈরি এই শহর থেকেই কুলু উপত্যকার শুরু । বলা যায় ১৫২০ – তে তৈরি এই শহরটিই সমতলের সঙ্গে পাহাড়ের মেলবন্ধন করেছে । এ শহরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই দেখে নিতে হয় । প্রায় ৪০০ বছর আগে তৈরি সোনার কারুকার্যময় তারানা মন্দির বা শ্যামাকালী মন্দির । অদূরের রানি অমৃত কাউর পার্কের আকর্ষণও কম নয় । এছাড়াও রয়েছে ত্রিলোকনাথ মন্দির , অর্ধনারীশ্বর মন্দির , ভূতনাথ মন্দির , অমরনাথের সদৃশ মন্দির । এ সবকে ছাপিয়ে মাণ্ডীর প্রধান দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে হিন্দু , বৌদ্ধ ও শিখধর্মের তীর্থস্থান রিওয়ালসর লেক । মাণ্ডী শহর থেকে ২৫ কিমি দূরে এই লেক । উচ্চতা ১৩৬০ মিটার । এখানে ৩ টি বৌদ্ধ গুম্ফা রয়েছে । পাহাড়ের গাত্রে সরু পঞ্চসম্ভবের মূর্তিটিও চমৎকার । রয়েছে লোমন ঋষির মন্দির । লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির এবং গুরুদ্বার । হ্রদের দক্ষিণেই স্যাংচুয়ারি । সেখানে হরিণ ও হিমালয়ান বিয়ারের প্রাচুর্য । মাণ্ডী শহর থেকে ৫০ কিমি দূরস্থ পরাশর মুনির সাধনক্ষেত্র পরাশর লেকটি দেখে নেওয়া যায় একটা দিন খরচ NIT করে । পরাশর লেকের উচ্চতা ২৭৩০ মিটার । কুলুর দিকে এগোতে ১৯ কিমিতে অবস্থিত প্যান্ডো লেকটিও দ্রষ্টব্য । আবার মাণ্ডী সিমলা পথে ২২ কিমি অগ্রসর হলে সুন্দর শহর সুন্দরনগর । পাহাড় চূঁড়োর মহামায়া মন্দির , বিপাশা – শতদ্রু লিঙ্ক প্রোজেক্ট ও সুন্দরনগর হ্রদ দেখে নিতে হয় এই সফরে । আরও ৪৩ কিমি যেতে বিলাসপুরে গোবিন্দ সাগর নামের হ্রদ । এই হ্রদের জলেই ডুবে আছে অতীতের বিলাসপুর জনপদ । পাহাড়ের চূঁড়োয় নতুন করে শহর তৈরি হয়েছে । নভেম্বর থেকে মার্চ মাস এই সময় জল কম থাকায় প্রায় হাজার বছর পুরোনো বিলাসপুর শহরের নানান স্থাপত্য জেগে ওঠে । নানান মন্দিরও রয়েছে বিলাসপুরে । সুন্দরনগর থেকে অন্যপথে ১৮ কিমি গিয়ে তত্তপানি নামের উষ্ণ প্রস্রবণও বেড়িয়ে নেওয়া যায় ।
যোগীন্দর নগর –
রাজা যোগীন্দর সেন শুকরাহাটি গ্রামে হাইডেল পাওয়ার প্রোজেক্ট গড়েছিলেন পরবর্তীতে তাঁরই সম্মানে জনপদের নাম পরিবর্তন করা হয় । এখন হিমাচলের অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি এই শহর । জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সঙ্গে সঙ্গে দেখে নেওয়া যেতে পারে উলী নদীর কৃত্রিম জলাধার । লামবাডাগ নামের কৃত্রিম জলপ্রপাতটিও সুন্দর । ইলেকট্রিক ট্রলি করে বোটে ঘোরার সুযোগ থাকলেও সকলে সাহস করে উঠতে পারেন না । তবে কোনও ক্রমে একবার উঠে পড়তে পারলে অনবদ্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয় । কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত বিষয়ের পাশাপাশি এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও দেখার মতো । পাহাড়ের চূঁড়োয় রয়েছে বন্দেরী দেবীর মন্দির , আর প্রাচীন কেল্লার ধ্বংসাবশেষ । ১৫ কিমি দূরের বীর – এও ঘুরে আসা চলে যোগীন্দর নগর থেকে । চারিদিকে ক্ষেত – খামারে ভরা বীরের বৌদ্ধ মনাস্ট্রিটি দেখার মতো ।
বৈজনাথ –
কাংড়া উপত্যকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সুন্দর শহর বৈজনাথ ঘুরে দেখা যেতে পারে । নবম শতাব্দীতে গড়া বৈজনাথ শিবমন্দির এস্থানের অন্যতম আকর্ষণ হলেও ধৌলাধার , আশাপুরী পর্বত ও নিচ দিয়ে বলে চলা বিনোয়া নদীর দর্শন পেয়েও মুগ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না । বৈজনাথে মোট ১৬ টি মন্দির রয়েছে , আর মূর্তি রয়েছে অগণিত । ভক্তদের বিশ্বাস এই মন্দিরগুলি স্থাপন করেছিলেন পাণ্ডবরা । রাবণও অমরত্ব পাওয়ার আশায় এখানেই এসেছিলেন ।
পালমপুর –
হিমাচলের অন্যতম স্বাস্থ্যপদ স্থান হল পালমপুর । অনেকে চা বাগিচার মাঝের স্বাস্থ্যকর আবহাওয়ার থেকে শরীর ও মনকে সতেজ করে ফিরে আসেন কাজে । ‘ লটস অফ ওয়াটার’- এর অর্থ পুলুম তা থেকেই ক্রমে নাম হয়েছে পালমপুর । পাইন ও ঝাউ গাছের ছাওয়ায় ঢাকা এইস্থানে চায়ের চাষ শুরু হয় ব্রিটিশদের হাত ধরে । বর্তমানে এখানকার চা বিশ্ববিখ্যাত । পালমপুরে অবস্থানের সময় চা বাগানগুলি ছাড়াও ঘুরে দেখে নিতে হয় চা প্রসেসিং ফ্যাক্টরি , কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় , সেন্ট জন চার্চ , বুণ্ডুলামাতার মন্দির । অদূরের জলপ্রপাতের ভীষণতাও দেখে নেওয়া চলে সুযোগ বুঝে ।
পালমপুর থেকেই দেখতে যাওয়া যায় তাশিজং মনাস্ট্রি , গোপালপুর ন্যাশনাল পার্ক , হ্যাং গ্লাইডিং খেলার জন্য খ্যাত বিল্ডিং , শিল্পীদের গ্রাম আন্দ্রেত্তা ।
চামুণ্ডা দেবী –
প্রায় ৭০০ বছরের পুরোনো চামুণ্ডা দেবীর মন্দিরটি ধরমশাল যাওয়ার সময় দেখে নেওয়া উচিত হবে । সুন্দর পাহাড়ি পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত মন্দিরের দেবী নাকি খুবই জাগ্রত । অদূরে নন্দীকেশ্বর শিবের গুহা , ঝরনা ও দুর্গামন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় একই সুযোগে । চামুণ্ডা দেবীর মন্দির থেকে ১৬ কিমি পায়ে হেঁটে পৌঁছানো যায় চণ্ড ও মুণ্ড অসুর বধের স্থানটিতে ।
ধরমশালা –
কাংড়া জেলার সদর ধরমশালা ধৌলাধারের সিংহাসনে উপবিষ্ট । উচ্চতা প্রায় ১২৫০ থেকে ২০৮২ মিটার । শহরের পায়ের কাছ থেকে নেমে গেছে নানান উপত্যকা । ওক , পাইন , দেবদারু গাছে সমৃদ্ধ এই শান্ত পাহাড়ি শহরের পত্তনকাল ১৮৫৫ সালে । ব্রিটিশরা চলে গেলেও ধরমশালাকে সাজিয়ে দিয়ে গেছে , দ্বিতীয় লন্ডন বা তারচেয়েও কিছু বেশি । সবকিছুই তৈরি হয়েছে পরিকল্পনানুযায়ী , এবং ছিমছাম । দেখবেন ওদের হাতে গড়া টিউত্তর ও কার্ডিয়ান ঢঙের কটেজ চারদিকে । অবশ্য বর্তমানে , এদের পাশাপাশি বিলাসবহুল বড় বড় বাড়ি তৈরি হচ্ছে । আর তা অবশ্যই ব্রিটিশদের রুচি ও সৌন্দর্যের ধারার সাথে খাপখাইয়ে । ব্রিটিশদের তৈরি শৈলশহরগুলির মধ্যে সমধ্যে অন্যতম এটি । লর্ড এলগিন এই স্থানটিতে গ্রীষ্মকালীন বাসস্থান গড়ার চেষ্টা করেও সফল হননি । ধরমশালাকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেন দলাই লামা । মার্চ , এপ্রিল , মে , অক্টোবর ও নভেম্বর এই পাঁচ মাস ধরমশালা ভ্রমণের যথার্থ সময় । এখানে থাকার সময় দেখে নেওয়া যায় , লোয়ার
ধরমশালার কোতোয়ালি বাজার , কাংড়া আর্ট মিউজিয়াম ( মঙ্গল – শনি , সকাল ১০.০০-১৭.০০ ) , ডলস মিউজিয়াম , সেন্ট জন চার্চ , ডাল লেক , ইন্দো – চায়না ও ইন্দো – পাক যুদ্ধের শহিদদের উদ্দেশ্যে তৈরি ওয়ার ১০৩ মেমোরিয়াল , স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিবিজড়িতহরিকুঠি । আর আপার ধরমশালায় রয়েছে ম্যাকলয়েডগঞ্জ ও ফরসিথগঞ্জ । ঘুরে দেখা অবশ্য কর্তব্য । ব্রিটিশ গভর্নর স্যার ইয়ান ম্যাকলয়েডের নাম অনুসারে এইস্থানের নাম হয় ম্যাকলয়েডগঞ্জ । ধরমশালা থেকে ম্যাকলয়েডগঞ্জের দূরত্ব ১০ কিমি । ম্যাকলয়েডগঞ্জের উচ্চতা ২০৮২ মিটার । এখানে অবস্থিত ১৯৫৯ – এ চীন – তিব্বত দখল করায় দলাই লামা তার মিশন নিয়ে চলে আসেন এখানে , গড়েন মনাস্ট্রিও । চীন আক্রমণে শহিদ তিব্বতীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি স্তূপটি দেখে নেওয়া যায় । আপার ও লোয়ার ধরমশালার মধ্যে অবস্থান করছে স্কুল অফ টিবেটান কালচার লাইব্রেরি । এখানে তিব্বতীয় ভাষার নানান দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি , পুঁথি ছাড়াও রয়েছে ছোট্ট এক সংগ্রহশালা । অদূরে মনাস্ট্রি । টিবেটান হ্যান্ডিক্রাফটস সেন্টারেও ঢু মারা যায় । পছন্দসই জিনিস অল্পদামে কেনার সুযোগ রয়েছে এখানে । ১৭৫৪ – য় তৈরি বৌদ্ধ ধর্মশিক্ষা গ্রহণের বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান নরবুলিংকা ইন্সটিটিউট ও অ্যাস্ট্রো মেডিক্যাল ইন্সটিটিউটটি দেখে নিন একই সঙ্গে ।
ম্যাকলয়েডগঞ্জের থেকে সামান্য দূরে ভাগসুনাথ শিবমন্দির , জলপ্রপাত , হ্রদ ও উষ্ণ জলের প্রস্রবণ । আবার ম্যাকলয়েডগঞ্জে ফিরে ৭ কিমি ট্রেক করে পৌঁছে যাওয়া যায় ট্রিউন্ড , সেখান থেকে আরও পাঁচ কিমি গেলে বরফ রাজ্য লিয়াকা । আবার শহরে ফিরে দেখতে যাওয়া চলে ডাল লেক ( ম্যাকলয়েডগঞ্জ থেকে দূরত্ব ৩ কিমি . ) ও লাগোয়া শিবমন্দির । আরও কিছুটা এগিয়ে যাওয়া যায় নাজ্জিতে । এখান থেকে দেখতে পাওয়া যায় নানান পর্বত শৃঙ্গ । ধরমশালার প্রাণকেন্দ্র কোতয়ালি থেকে ৩৫ কিমি দূরের অনন্যসুন্দর কারেরি লেকও ঘুরে আসা যায় একটি দিন খরচ করে ।
কাংড়া –
এখানকার মিনিয়েচার পেন্টিং জগৎ | বিখ্যাত । হিমাচলের একান্ত আপন পাহাড়ি শৈলীর সঙ্গে মোগল শৈলীর মেল বন্ধনে তৈরি কাংড়া মিনিয়েচার ছবির প্রধান বিষয় রাধা – কৃষ্ণের প্রেম । প্রথিতযশা শিল্পীদের কাজ দেখার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার ব্রজেশ্বরী মন্দিরটির জৌলুসও দেখার মতো । আবুল ফজলের বর্ণনায় এই মন্দিরের মহত্ব প্রকাশ পায় । ১৭৪৪ , রাজা গোবর্ধন সিং – এর সময় থেকে কাংড়ার গুরুত্ব বাড়তে থাকে । ব্রিটিশরা ধরমশালাকে জেলা সদর হিসেবে বেছে নেওয়ায় এই ছোট্ট শহরের পাহাড়ি শহরে উপভোগ্য দৃশ্যরসওদাগী গুরুত্ব কমে যায় । তা হলেও এখনও এই নিরিবিলি শহর ভ্রামণিকদের মধ্যে বেশ খ্যাত । কাটোকরাজাদের তৈরি কাংড়া দূর্গটির ধ্বংসাবশেষ এই সফরে যোগ করতে পারে অন্য মাত্রা । সুলতানি রাজের সঙ্গেও এইস্থানের সম্পর্ক গভীর । চায়ের বাগানে ঘেরা কিছু কম নয় । নওয়া ১৫ কিমি দূরের মসরুর ঘুরে দেখে নেওয়া যায় ইন্দো – আর্য কৃষ্টিতে তৈরি ১৫ টি মন্দির । গাছপালা ঘেরাটোপের মধ্যে রয়েছে ছোট লেক , এখানে বোটিং করুন । ১৬ কিমি দূরে রয়েছে বৈজনাথ , ১৩২০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত । পাথরে গড়া প্রাচীন শিবমন্দির ধৌলাধারের কোলে । খোদাই শিল্পের অপূর্ব সব কাজ । এগুলি জাতীয় ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে পরিচিত । কাংড়া আর্ট মিউজিয়াম রবি ও সোমবার বন্ধ থাকে । সপ্তাহের বাকি পাঁচদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে সংগ্রহশালা।
জ্বালামুখী –
প্রাচীন এই জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায় পুরাণে । সতীর জিহ্বা পড়েছিল এইখানে । জ্বলন্ত জিহ্বার শিখা আবিষ্কার করেন এক রাখাল । এই শিখাকে কেন্দ্র করে রাজা ভূমিচন্দ্র মন্দির নির্মাণ করেন । এই মন্দিরের চারপাশে ক্রমে গড়ে উঠতে থাকে জনপদ । এখন তা রূপ নিয়েছে শহরের । প্রাকৃতিক গ্যাসে জ্বলতে থাকা এই শিখাই মন্দিরের উপাস্য । আকবর মন্দিরটির চূঁড়ো সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছিলেন । পাঞ্জাবের রাজার দানে মন্দিরের দরজা হয়েছে রুপোর ।
জ্বালাজি মন্দির ছাড়াও এ শহরে আরও অনেক মন্দির রয়েছে । জ্বালামুখী থেকে ৩৫ কিমি দূরে অবস্থিত চিন্তাপূর্ণি ঘুরে আসা যায় একই সঙ্গে । এখানেই রয়েছে ছিন্নমস্তাদেবী ভগবতীর মন্দির । শোনা যায় সতীর চরণ পড়েছিল এখানে , বর্তমানে এটি হিন্দুদের পরম তীর্থস্থান ।
খাজিয়ার –
‘ সুইজারল্যান্ড অফ ইন্ডিয়া ’ খাজিয়ারের রূপ দেখে লর্ড কার্জন বলেছিলেন এমন সৌন্দর্য দ্যা টাভেল অন্ ভারত পরিক্রমা তিনি আর কখনোই দেখেননি । এই শৈলশহরটি ১৯৫১ মিটার উঁচু । আজও কমবেশি সেই সৌন্দর্যই এখনও মুগ্ধ করে যাচ্ছে ভ্রামণিকদের । এখনও ছোট্ট এই পাহাড়ি উপত্যকা রাতের অন্ধকারে জোনাকিতে ভরে ওঠে , ঝিঁঝিঁর ডাকে জাগে অদ্ভুত নেশা । দেবদারু গাছে ঘেরা ছোট্ট লেকটিও সুন্দর । অদূরের সুন্দর গল্ফ কোর্সটিও দর্শনীয় । সামান্য এগোতেই দ্বাদশ শতাব্দীর খাজিয়ানাগের মন্দির এবং ১.৬ কিমি লম্বা ও ০.৯ কিমি চওড়া সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ ।
ডালহৌসি থেকে খাজিয়ার যাওয়ার পথে কালাটপও বেড়িয়ে নেওয়া যায় । এখান থেকে পর্বত শৃঙ্গের পেছনে সূর্যাস্ত দেখতে খুবই ভালো লাগে । অদূরে কালাটপ – খাজিয়ার স্যাংচুয়ারিটিতে বিভিন্ন বন্যপ্রাণি দেখে মন ভরানো যায়।
চাম্বা –
ইরাবতী নদীর ধারে ভারমোরের রাজা সাহিল ভার্মার হাতে এই শহরের পত্তন হাজার বছরের বেশি সময় আগে । অতীতে ভ্যালি অফ মিল্ক ও হানি নামে খুবই প্রসিদ্ধ ছিল এই বাণিজ্যিক শহর । তিন বর্গ কিমি বিস্তৃত রাজধানীর কেন্দ্রে এক কিমি জুড়ে রাজার প্রমোদ উদ্যান বা চৌগান । অপার্থিব সৌন্দর্যের মাঝে দাঁড়িয়েই দেখে নেওয়া যায় নিচ দিয়ে বয়ে চলা রাবি নদী আর ওপর দিকে তাকালেই দেখা যায় নানান পর্বত শৃঙ্গ । শিব ও বিষ্ণু চাম্বার উপাস্য দেবতা , সারা শহর জুড়ে অজস্র মন্দির ছড়িয়ে আছে তাদের । এখানকার চর্মজাত নানান সামগ্রীর খ্যাতি রয়েছে সারা ভারতে । চাম্বা প্রবেশ করেই দেখে নেওয়া যায় পাহাড়ের চূঁড়োয় অবস্থিত দশম শতাব্দীর চামুণ্ডা মন্দির । ডোগরা বাজারের পেছনে লক্ষ্মীনারায়ণ ও বিষ্ণু মন্দিরটি দেখে নেওয়া কর্তব্যের মধ্যে পড়ে । চাম্বার অতীত জানতে যেতে হয় হাসপাতালের বিপরীতে ভুরি সিং মিউজিয়ামে । আগস্ট মাসে স্থানীয় বাসিন্দা গদ্দীদের মিঞ্জার উৎসবের পর্যটনমূল্য যথেষ্টই । অনেক ভ্রামণিকই এই রঙিন উৎসবে সামিল হওয়ার জন্য চাম্বাতে যান । রাজা উমেদ সিং – এর গড়া অখণ্ড চণ্ডী প্রাসাদ ও চম্পাবতী মন্দির দুটিও দ্রষ্টব্য । রাজকন্যা চম্পাবতীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে চম্পাবতী মন্দিরটি নির্মিত হয় । এখানে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা পুজিত হন । এছাড়াও এখানকার অন্যান্য দ্রষ্টব্য হল লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির , সেন্ট অ্যান্ড্রু চার্চ , হরিরাই মন্দির , কাটা সান মন্দির , ভন্ডাল ভ্যালি । চাম্বা থেকে ২ কিমি দূরে সুভাষ বাওলি প্রস্রবণ পায়ে পায়ে হেঁটে দেখে নেওয়া যায় ।
মণিমহেশ –
কৈলাশ পর্বতের ঢালে অবস্থিত মণিমহেশের সৌন্দর্য না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না । যাওয়ার পথেই পড়ে ভারমোর । এখানকার প্রকৃতিও অনন্য সুন্দর । অতীতে চাম্বার রাজ্যের রাজধানীও ছিল ভারমোর । আপেল বাগান ছাড়াও এখানে রয়েছে চৌরাশিয়া অর্থাৎ ৮৪ টি শিবমন্দির । এছাড়াও রয়েছে ভীষণদর্শনা মন্দির ও উগ্রস্বভাবা ব্রাহ্মণী গুহা মন্দির । এখান থেকে ১৮ কিমি যেতে হাড়সার গ্রামটিও ঘুরে দেখা যায় । এটিই এ পথের শেষ বসতি । আরও আট কিমি এগোতে ধানছো । সেখান থেকে চড়াই- উতরাই ভেঙে ১০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় মণিমহেশে । এখানকার আকর্ষণীয় লেক দেখার জন্য আরও ১০ কিমি পথ এগোতে হয় । এখানেই রয়েছে মণিমহেশ তথা শিবলিঙ্গ । কৈলাশ পাহাড়কেও অনেকে শিবলিঙ্গ জ্ঞানে পুজো করেন । আগস্ট – সেপ্টেম্বর এপথে যাতায়াত করা শ্রেয়।
ভাকরা বাঁধ- ভারত তথা বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধটি দেখার অভিজ্ঞতাই আলাদা । ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই বাঁধের ওপর দিয়ে ৩০ ফুট চওড়া রাস্তা তৈরি হয়েছে । এ পথেই হাঁটতে হাঁটতে দেখে নেওয়া যায় শতদ্রু নদের বিশালতা । বাঁধের উচ্চতা ও ‘ ভি ’ আকৃতি দেখে সাধারণ পর্যটকদের অবাক হতেই হয় । শতদ্রুর জল ধারণ করছে গোবিন্দ সাগর । ১৬৬ বর্গ কিমি বিস্তৃত এই জলাশয়ে মাছ ধরা ও বোটিং – এর ব্যবস্থা রয়েছে । হ্রদের চারপাশের প্রকৃতি ও পাখিদের রকমভেদ দেখার মতো । এই হ্রদ থেকেই হিমাচল প্রদেশ , দিল্লি , পাঞ্জাব , হরিয়ানা , রাজস্থানের এক কোটি একর জমিতে সেচের জল সরবরাহ হচ্ছে । এখানে উৎপাদিত ১০ লক্ষ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ দেশের নানান প্রদেশকে আলোকিত করছে । ভাকরা- নাঙ্গাল দেখার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয় , পিআরও , নাঙ্গাল টাউনশিপ , নাঙ্গালের থেকে । ছবি তোলা এখানে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ।
রেণুকাজি –
রাজাপ্রসেনজিৎ – এর মেয়ে , পরশুরামের মার নামে এই শহরের নাম হয়েছে রেণুকাজি । পিতা জমদ্যাগ্নির আদেশে পরশুরাম কুঠার আঘাতে মাকে দ্বিখণ্ডিত করে দেয় । এইস্থানে অবস্থিত হ্রদকে দেখে মনে হয় যেন রেণুকাজি স্বয়ং ঘুমিয়ে আছে । লেকের পাশেই রয়েছে রেণুকাজির মন্দির । পরশুরাম লেকের পাশে অবস্থিত পরশুরাম মন্দিরটিও দেখার মতো । আরও অনেক মন্দির রয়েছে রেণুকাজিতে । লেককে ঘিরে গড়ে উঠেছে ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি , লায়ন সাফারি ও চিড়িয়াখানা । ফলে অরণ্য দেখার অনেকটাই।
হিমাচল প্রদেশ প্রশ্ন ও উত্তর (Himachal Pradesh FAQ Question and Answer in Bengali) :
- হিমাচল প্রদেশ এর রাজধানী কোথায়?
Ans: হিমাচল প্রদেশ এর রাজধানী সিমলা।
- হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের জেলার সংখ্যা কত?
Ans: হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের জেলার সংখ্যা 12 টি।
- হিমাচল প্রদেশ এর জনসংখ্যা কত?
Ans: হিমাচল প্রদেশ এর জনসংখ্যা প্রায় ৬৮ লক্ষ ৫৭ হাজার জন।
- হিমাচল প্রদেশ এর নারী / পুরুষ অনুপাত কত?
Ans: হিমাচল প্রদেশ এর নারী / পুরুষ অনুপাত ৯৭.৪ / ১০০ জন।
- হিমাচল প্রদেশ এর আয়তন কত?
Ans: হিমাচল প্রদেশ এর আয়তন ৫৫৬৭৩ বর্গকিলোমিটার।
- হিমাচল প্রদেশে জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমি কত?
Ans: হিমাচল প্রদেশে জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমি ১২৩ জন।
- হিমাচল প্রদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কত?
Ans: হিমাচল প্রদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১২.৮১ শতাংশ ( ২০০১-২০১১ )।
- হিমাচল প্রদেশে সাক্ষরতার হার কত?
Ans: হিমাচল প্রদেশে সাক্ষরতার হার ৮৩.৭৮ শতাংশ।
- হিমাচল প্রদেশ এর প্রধান ভাষা কি?
Ans: হিমাচল প্রদেশ এর প্রধান ভাষা হিন্দি কিন্তু পাঞ্জাবি ও ইংরেজিরও চল আছে।
- হিমাচল প্রদেশ এর আবহাওয়া কেমন?
Ans: এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসে এখানকার আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ থাকে । জুলাই থেকে আগস্ট মাস বর্ষাকাল । নভেম্বর থেকে মার্চ বরফে ঢাকা থাকে এ রাজ্য ।
◆ আরও দেখুন :-
- বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Bermuda Triangle in Bengali
- জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir): ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
হিমাচল প্রদেশ এর ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ | Facts About Himachal Pradesh in Bengali
আশা করি এই পোস্টটি বা ” হিমাচল প্রদেশ এর ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ | Facts About Himachal Pradesh in Bengali ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।