Home Blog

হিমাচল প্রদেশ এর ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ | Facts About Himachal Pradesh in Bengali

হিমাচল প্রদেশ এর ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ | Facts About Himachal Pradesh in Bengali

  দেব ভূমি বা “ল্যান্ড অফ গড” নামে অভিহিত হিমাচল প্রদেশ, উত্তরে জম্মু ও কাশ্মীর, পশ্চিমে পাঞ্জাব, দক্ষিণে উত্তর প্রদেশ এবং পূর্বে উত্তরাঞ্চল দ্বারা সীমান্তবর্তী রয়েছে। “হিমাচল” শব্দের অর্থ হল তুষারের আবাস। হিমাচল প্রদেশের রাজধানী হল সিমলা। এই রাজ্য অপরিমেয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দ্বারা আবৃত এবং নিঃসন্দেহে, বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় গন্তব্য স্থল। বিপুল আপেলের উৎপাদনের জন্য, হিমাচল প্রদেশ “আপেলের রাজ্য” হিসাবেও পরিচিত।

  হিমাচলপ্রদেশের ইতিহাস, নদী, পাহাড়, ঐতিহাসিক স্থান, জনসংখ্যা ইত্যাদি সম্পর্কে জানব শুকতারা Tv র এই পর্বে।

হিমাচল প্রদেশ এর কিছু সংক্ষিপ্ত তথ্য | Facts about Himachal Pradesh in Bengali

ভারতের রাজ্য হিমাচল প্রদেশ (Himachal Pradesh)
রাজধানী সিমলা
জেলার সংখ্যা 12 টি
জনসংখ্যা প্রায় ৬৮ লক্ষ ৫৭ হাজার
নারী / পুরুষ ৯৭.৪ / ১০০ জন
আয়তন ৫৫৬৭৩ বর্গকিলোমিটার
জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমি ১২৩ জন
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১২.৮১ শতাংশ ( ২০০১-২০১১ )
সাক্ষরতার হার ৮৩.৭৮ শতাংশ
প্রধান ভাষা হিন্দি কিন্তু পাঞ্জাবি ও ইংরেজিরও চল আছে
আবহাওয়া এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসে এখানকার আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ থাকে । তবে জুলাই থেকে আগস্ট মাস বর্ষাকাল । নভেম্বর থেকে মার্চ বরফে ঢাকা থাকে এ রাজ্য ।

হিমাচল প্রদেশ এর ইতিহাস (History of Himachal Pradesh) :

 ভারত রাষ্ট্রের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত এই জনপদের অস্তিত্ব আজ থেকে দু- হাজার বছর আগেও ছিল বলে জানাচ্ছেন ঐতিহাসিকরা । তাঁদের মতে বহু অতীতে এইস্থানে এসে বাস করতে শুরু করেছিলেন দাসরা । হিমালয় লাগোয়া এই রাজ্যে আসার আগে এই জাতির বাস ছিল গাঙ্গেয় উপত্যকায় । কালক্রমে আর্য জাতির সঙ্গে মিশে গিয়ে আরও নানান উপজাতিতে ভাগ হয় তাঁরা , গঠনও করে নিজ নিজ রাজ্য ।

  সুদীর্ঘ বিস্তৃত হিমালয় পর্বতের কোলে অবস্থান করায় রাজ্যের ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য বরাবর আকর্ষণ করেছে শাসকদের । গুপ্ত , বর্ধন , মামুদ গজনী , তুঘলক , মোগল , রানা , ঠাকুর প্রত্যেক শাসকই হিমাচলকে রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছিলেন । অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে নেপালের গোর্খারাও এই রাজ্যকে দখলে নিতে নিয়মিত আক্রমণ চালাতে থাকে । ঠাকুররা ভয় পেয়ে ব্রিটিশদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন । বন্ধু হিসেবে ব্রিটিশরা প্রথম পদার্পণ করল হিমাচলপ্রদেশে । গোর্খাদের হিমাচল অভিযান বন্ধ হল ঠিকই , কিন্তু এবার শুরু হল ইংরেজদের হিমাচল দখল অনুষ্ঠান । প্রথমে তারা গ্রীষ্মকালীন বাসা বাধার জন্য ঠাকুরদের কাছ থেকে সিমলা পাহাড় দখল করে নেয় । পরবর্তীকালে চুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণ পশ্চিম হিমাচলের বেশ কিছুটা অংশ দখল করে নেয় ব্রিটিশ । তারা ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানীও গড়ে সিমলায় । এ সময় অবশ্য বহু স্বাধীন খণ্ডে বিভক্ত ছিল এই প্রদেশ । প্রায় প্রতিটি রাজ্যেরই শাসক ছিলেন রাজপুতরা । স্বাধীনতা লাভের মাস আটেক পর স্বাধীন ৩০ টি রাজ্যকে একত্রিত করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয় হিমাচলকে । হিমাচলপ্রদেশের বর্তমান রূপ পেতে লেগেছে আরও কয়েক দশক । ১৯৫১ – য় তৃতীয় শ্রেণির রাজ্যের সম্মান পায় ও ১৯৫৪ – তে বিলাসপুরকে আনা হয় হিমাচলের মধ্যে । ১৯৫৬ – তে এই অঞ্চলকে পঞ্জাব রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করতে গেলেই গোল বাধে । শুরু হয় আন্দোলন । দিল্লি তখনকার মতো স্থগিত রাখতে বাধ্য হয় সিদ্ধান্তকে । ১৯৬৬ – তে পুনর্বিবেচনার পর পাঞ্জাব রাজ্যের থেকে কয়েকটি জেলা এনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় হিমাচলে । ১৯৭১ – এ হিমাচল রাজ্যের মর্যাদা পায় । 

হিমাচল প্রদেশ এর প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক পরিবেশ :

 বর্তমানে দেশের কপালে , অর্থাৎ জম্মু ও কাশ্মীরের ঠিক দক্ষিণে অবস্থান করছে এই সকল রাজ্যেরই সমষ্টি হিমাচল প্রদেশ । রাজ্যের পূর্ব সীমান্ত গড়ে উঠেছে চীনের সঙ্গে । দক্ষিণে রয়েছে হরিয়ানা , উত্তরপ্রদেশের সামান্য অংশ ও উত্তরাখণ্ড রাজ্য । আর পশ্চিম দিকে স্বমহিমায় অবস্থান করছে পাঞ্জাব রাজ্য । অবশ্যই উল্লেখ্য , হিমাচলকে চারদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে পর্বতশ্রেণি । যেমন জন্মু ও কাশ্মীর থেকে হিমাচল আলাদা হয়েছে পীরপাঞ্জালের দ্বারা । উত্তর – পূর্বে অবস্থান করছে হিমালয় আর উত্তর – পশ্চিমে রয়েছে ধৌলাধার। রাজ্যের দক্ষিণ দিককে পাহারা দিচ্ছে শিবালিক পর্বতমালা ।

  প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদে পৃষ্ঠ হিমাচলপ্রদেশ । অরণ্য ও প্রকৃতি প্রেমিদের স্বর্গরাজ্য হয়ে বছরে লাখো লাখো পর্যটকদের আকর্ষণ করছে এরাজ্য । বসন্তকালে সমগ্র রাজ্যই সেজে ওঠে নানান রঙের ফুলে । এ সময় হিমাচল দেখতে যাওয়ার মজাই আলাদা । প্রায় ৬৮ লক্ষ ৫৬ হাজার মানুষের বাস এখানে । তাঁদের বেশিরভাগই হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী । বৌদ্ধধর্মের প্রভাবও হিমাচলে কম নয় ।

  ইরাবতী , বিপাশা , চন্দ্রভাগা , শতদ্রুর মতো কয়েকশো নদীতে ভরপুর হিমাচলের মানুষের প্রধান জীবিকা ফলের চাষ । অরণ্যের ওপর নির্ভর করেও জনসংখ্যার বিশাল অংশ জীবন অতিবাহিত করেন । আর রয়েছে পর্যটন শিল্প । হিমাচলের চাষিরা ফলের চাষে বেশি আগ্রহি হলেও ধান , গম , ভুট্টার চাষও মন্দ হয় না এখানে ।

  প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কাকে বলে , তা অনুধাবন করার জন্য অন্তত একবার হিমাচলপ্রদেশে ঘুরে আসা উচিত । সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় যেমন সমগ্র রাজ্য অপরূপ রঙে সাজে , ঠিক তেমনই চাঁদনি রাতে হিমাচল রাজ্যের যেকোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার অভিজ্ঞতা অনবদ্য।

হিমাচল প্রদেশ এর সংস্কৃতি :

হিমাচল প্রদেশ, ভারতের একটি বহুভাষী এবং বহুবর্ণ সংস্কৃতির রাজ্য। যেহেতু প্রাচীনকালে বিভিন্ন জাতি এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছে, তাই এই রাজ্য ভিন্ন সংস্কৃতির ও বর্ণের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, যা প্রদর্শিত হয়-ভিন্ন প্রকারের রঙিন পোষাক, সঙ্গীতের সুর, উচ্ছসিত অনুষ্ঠান, নৃত্য ভঙ্গি এবং সরল-সাধারণ সমৃ্দ্ধ জীবনধারা দ্বারা। কলা এবং হস্তশিল্প এখানকার সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের বিশেষত্ব হল পশমিনা শাল বয়ন যা নিয়মিত ভাবে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এছাড়াও, স্থানীয়দের দ্বারা তৈরি করা হয় কাঠের আসবাব-পত্র, ধাতব গহনা, পাত্র, বড় ধরনের নৌকা ইত্যাদি। সঙ্গীত এবং নৃত্য হিমাচলবাসীদের জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য এবং অপরিহার্য অংশ।

সিমলা (Shimla) :

হিমাচলপ্রদেশের রাজধানী সিমলার খ্যাতি সারা বিশ্বজুড়ে । এখানকার আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে ভ্রামণিকদের । ব্রিটিশদের হাতে তৈরি ৮০ টি শৈল শহরের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল সিমলা । এই নামের একটি কারণ ও রয়েছে , দেবী ‘ শ্যামলা ‘ – এর নাম থেকে এসেছে সিমলা । ধৌলাধার পর্বতমালার ওপর ২১৩০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত শহরটি ভারতের বৃহত্তম পাহাড়ি শহর । গোর্খাদের বিরূদ্ধে ইংরেজরা জয়লাভ করলে সহযোগিতার জন্য পাতিয়ালার রাজাকে উপহার দেওয়া হল সমগ্র সিমলা । ১৮১৯ খ্রীস্টাব্দে যুদ্ধ ফেরত ব্রিটিশ সৈনিকরা সর্বপ্রথম এই জায়গাকে একান্ত কাকতালীয় ভাবে আবিষ্কার করে ফেলে । এ সময়েই ব্রিটিশরা হঠাৎই আবিষ্কার করে ফেলে সিমলা পাহাড় । এখানে প্রথম বাড়িটি গড়েছিলেন মেজর কেনেডি , ১৮২২ – এ । এই থেকে শুরু শহর গড়ার । প্রক্রিয়া । এ সময় জাগয়াটিকে পাঞ্জাব হেড বলে চিহ্নিত করেছিল ইংরেজরা । ১৮৩২ – এর গ্রীষ্মকাল লর্ড বেন্টিঙ্ক কাটিয়েছিলেন কেনেডির বাড়িতেই । এরপর থেকেই দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে শহর । ১৮৬৪ – তে দেশের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী বসানো হয় এই শহরেই । ইংরেজদের হাতে গড়ে ওঠা ভারতের অন্যতম হিল স্টেশন সিমলা ১৯৩৯ পর্যন্ত দেশের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল । স্বাধীনতার পর ব্রিটিশরা চলে গেলেও তাদের তৈরি এই অত্যাধুনিক শহরটি রয়েই গেছে । দেখুন প্রাসাদোপম ভাই সরিগাল লজ , এখানেই সিমলা চুক্তি সম্পাদিত হয় । বর্তমানে হিমাচলপ্রদেশ ভ্রমণকারীদের কাছে অন্যতম দর্শনীয় স্থান ফার , ওক , দেবদারুর ছায়ায় অবস্থিত সিমলা । সমগ্র শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা লিলি ও রডোডেনড্রন ফুল যোগ করেছে অন্য এক নান্দনিকতা । সমগ্র ভারত থেকেই বরফ দেখতে মানুষ আসেন এখানে । অক্টোবর – নভেম্বর মাসের দিকে এখানে এসে ভ্রামণিকরা অনুধাবন করেন প্রস্ফুটিত ফুলের মতো সিমলার রূপ । এ শহরে অবস্থানকালে অবশ্যই ঘুরে নিতে হয় বিশেষ বিশেষ দর্শনীয় স্থানগুলি । ১৮২৮ – এ সিমলা স্যানেটোরিয়াম রূপে পত্তন হয় । এখানে অ্যাম্ফিথিয়েটার , প্রদর্শনী সভা ও অন্যান্য বিনোদন সামগ্রীসহ একটা গ্যালারি রয়েছে । 

ম্যাল (হিমাচল প্রদেশ) :

অন্যান্য পাহাড়ি শহরের মতো এই শহরেরও প্রাণকেন্দ্র ম্যাল । সারাদিন লোক থাকে ম্যালে । স্থানীয় মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়ার ও কথা বলার সুযোগ এনে দেয় ম্যাল । এইস্থানেই রয়েছে পর্যটক তথা স্থানীয় মানুষের সমস্ত প্রয়োজনীয় দোকানপাট , রেঁস্তোরা ও পর্যটন দপ্তরের অফিস । বিনোদনের কোনও অভাব নেই এখানে । ম্যালে প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে । চলতে চলতেই দেখে নেওয়া যায় নানান পর্বত শৃঙ্গ । ঘোড়া চেপেও বেড়িয়ে নেওয়া যায় ব্রিটিশদের তৈরি সুবিশাল ম্যালে । সন্ধ্যা ও রাতে ম্যাল ও তার চারপাশের দৃশ্য খুবই উপভোগ্য হয়ে ওঠে । 

অ্যাঙ্গলিসিয়ান ক্রাইস্ট চার্চ (হিমাচল প্রদেশ) :

প্রায় ১৩ বছর ধরে নিও – গথিক শৈলিতে গড়ে তোলা হলদে রং – এর চাচটি ভ্রামণিকদের জন্য অপেক্ষা করছে ম্যালের ঠিক শেষে । ১৮৪৪ – এ তৈরির কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৮৫৭ – তে । বর্তমানে এটি ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীন চার্চের সম্মান পেয়েছে । সুন্দর কারুকার্য খোচিত এই গির্জার ওপরের দিকে রয়েছে চিত্র শোভিত কাঁচের জানালার সারি । অদুরেই বিশালাকার লাইব্রেরিটি দেখে নেওয়া চলে একই সঙ্গে । 

গেইটি থিয়েটার (হিমাচল প্রদেশ) :

১৮৮৭ সালে তৈরি থিয়েটার ভবনটি আজও প্রমাণ দিচ্ছে ব্রিটিশ সংস্কৃতির । হেনরি আরউইনের নকশায় তৈরি এই সুবিশাল থিয়েটারটি লন্ডনে পুরস্কৃত হয়েছিল তার গঠন শৈলির জন্য । 

স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট (হিমাচল প্রদেশ) :

শহরের কেন্দ্রবিন্দু থেকে ভাইসরয়ের কন্যা অপহৃত হওয়ার পর নামকরণ করা হয় স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট । ম্যালের উচ্চতম এই অংশে স্কেটিং রিঙ্কও রয়েছে । আর আছে পরপর দাঁড়িয়ে থাকা দেশের নানান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মূর্তি ।

স্টেট মিউজিয়াম (হিমাচল প্রদেশ) :

ম্যাল থেকে ঘণ্টাখানেক হাঁটাপথে ইনভেরাম পাহাড়ের চূঁড়োয় হিমাচল স্টেট মিউজিয়ামটি দেখে নেওয়া অবশ্য কর্তব্য । সমগ্র হিমাচলের নানান মন্দির থেকে আনা কাঠ ও পাথরের ভাস্কর্য , মূর্তি , পোশাক – আশাকে সমৃদ্ধ এই সংগ্রহশালা । এখানকার মিনিয়েচার ছবির সংগ্রহও নজর কাড়ে । সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে । মিউজিয়াম থেকে হাঁটাপথ ( ৪ কিমি দূরে ) অবজারভেটরি হিল । ভাইসরয় লর্ড ডাফরিনের জন্য গড়া দ্য রিট্রিট নামের প্রাসাদটিও দেখে নেওয়া যায় । এই বাড়িতে বসেই জওহরলাল নেহেরু ভারত ভাঙার প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন । ভারত – পাকিস্তানের শান্তি চুক্তিও হয়েছিল এখানেই । স্বাধীনতার পর ভারতীয় রাষ্ট্রপতির গ্রীষ্মকালীন আবাসে পরিণত হয় দ্য রিট্রিট । ১৯৫৬ – তে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্স স্টাডিজের সেন্টার খোলার জন্য বাড়িটি দান করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ । এর প্রবেশদ্বার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে । প্রবেশমূল্য মাত্র ৩০ টাকা । অদূরের বটানিক্যাল গার্ডেনটিও দেখবার মতো ।  

সিমলা কালীবাড়ি (হিমাচল প্রদেশ) :

এই কালীবাড়ির খ্যাতি বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে যথেষ্টই । সিমলা পৌঁছেই অনেকে কালীবাড়ি দর্শন করতে যান । জয়পুর থেকে আনা কালী মূর্তির পুজো হয় এখানে । প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো মন্দিরের আরাধ্য দেবতা হলেন শ্যামলী দেবী । ডানদিকে আছেন মা সাধনচন্ডী ও বামদিকে মা শ্যামলা । এই কালী বাড়ি আরো একটি বিশেষ কারণে বিখ্যাত— সেটা হল এখানে সিমলার একমাত্র দুর্গাপুজো হয় । ১৮৪৫ – এ রামচরণ ব্রহ্মচারীর গড়া এই মন্দিরের লাইব্রেরিটিও নানান গ্রন্থে সমৃদ্ধ । অদূরের গোর্টেন ক্যাসেলটিও দেখে নেওয়া যায় কালীবাড়ি যাওয়ার সময় । এখানকার দেবী প্রতিমা সেই কবে জয়পুর থেকে আনা হয়েছিল । 

জাকু হিলস (হিমাচল প্রদেশ) :

সিমলার উচ্চতম পাহাড় জাকু হিলস থেকে দেখতে পাওয়া যায় চারপাশের বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত বরফ ঢাকা পাহাড় । ম্যাল থেকে দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার । ২৪৫৫ মিটার ( ৮০৪৮ ফুট ) উচ্চতায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়ের মজা নিতে খারাপ লাগে না । এখান থেকে সমগ্র সিমলা শহরও দেখতে পাওয়া যায় । হিলের চূঁড়োয় হনুমান মন্দির আছে । প্রবাদ সেখানে থাকা পায়ের ছাপটি নাকি রামভক্ত হনুমানের । গন্ধমাদন পর্বত আরোহণকালে ক্লান্ত হনুমান বিশ্রাম নিয়েছিল জাকু পাহাড়ে । অন্যপথে ফাইভ বেঞ্চেস রোড হয়ে গভর্ণমেন্ট আর্ট কলেজ দেখে ফেরা যায় রিজে । 

দ্য রিজ (হিমাচল প্রদেশ) : 

দ্য রিজ এর পাশে পর্বতগুলি খুব আকর্ষণীয় রূপ নিয়ে আপনাকে অভিবাদন জানাবে , এটির নিচের জলাশয় থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল সরবরাহ করা হয়ে থাকে । তাই দ্য রিজ – এর গুরুত্ব খুব । দ্য রিজ -এ বিভিন্ন সভা , অনুষ্ঠান হয়ে থাকে । একটা সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে জায়গাটা পরিপূর্ণ । 

গ্লেন (হিমাচল প্রদেশ) :

সিমলায় থাকার সময় পায়ে পায়ে ঘুরে নেওয়া যায় শহর থেকে চার কিমি দূরে পাইন ও পপলার গাছের অরণ্য গ্লেনে । ওক , দেওদার গাছ এই অরণ্যকে আরও গভীর করে তুলেছে । শহর থেকে গ্লেনের পথে যেতে ভাগ্যবানেরা দেখতে পান নানান পশুপাখি । তবে তাদের দেখা না পেলেও আরণ্যক প্লেনের পরিবেশ ভ্রামণিকদের কষ্টের ফল দেয় । পাশ দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি নদীর পাড়ে চড়ুইভাতিও করা যেতে পারে । সামান্য নিচে আনানদেল । ব্রিটিশদের গড়া রেসকোর্সে আজ স্থানীয়দের খেলাধুলার আসর বসছে । পর্যটকদের চিত্ত বিনোদনের সমস্ত ব্যবস্থাই রয়েছে এখানে । শীতের সময় রিভোলি বাসস্ট্যান্ডের মাথায় স্কেটিংও হয় । একইসঙ্গে দেখে নেওয়া যায় চিড়িয়াখানা , পুষ্পউদ্যান , ব্রাহ্মসমাজ মন্দির ও মনাস্ট্রি । 

সামার হিল (হিমাচল প্রদেশ) :

শহর থেকে পাঁচ কিমি দূরে অবস্থিত সামার হিলে ( উচ্চতা ২০০০ মিটার ) গান্ধিজি কাটিয়ে গিয়েছেন বেশ কিছু দিন । ১৯৪৫ – এর ঐতিহাসিক গান্ধি – ভাইসরয়ের স্বাধীনতা সম্পর্কিত আলোচনা হয়েছিল রাজকুমারী অমৃত কাউরের বাড়িতে । এই বাড়িতেই এখন বসেছে এআইআইএসএস – এর গেস্ট হাউস । মহাত্মা গান্ধি সিমলা সফরের সময় যে বাড়িতে ছিলেন তার নাম হল ম্যানভিলা ম্যানসন । অদুরেই হিমাচল বিশ্ববিদ্যালয় ও ৬৭ মিটার উচ্চ চ্যাডউইক ফলসটি দেখে নেওয়া উচিত হবে । 

প্রসপেক্ট হিল (হিমাচল প্রদেশ) :

ম্যাল থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে সিমলার আরও এক দর্শনীয় স্থান হল প্রসপেক্ট ছিল । এখান থেকেই দেখতে পাওয়া যায় সিমলা পাহাড় , জুটোগ , সামার হিলস , শতদ্রু নদ । সূর্যাস্ত ভালোই উপভোগ করা যায় এখান থেকে । অদূরে ৩০০ বছরের প্রাচীন ছোট্ট দুর্গা মন্দির কামনাদেবী । 

তারাদেবীর মন্দির (হিমাচল প্রদেশ) :

শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে দূরত্ব ১০ কিমি । তারাদেবীর মন্দির থেকে গোটা সিমলা শহরকে দেখতে পাওয়া যায় । পাশেই রয়েছে শিবমন্দির ও স্কাউটের প্রধান দপ্তর । পথে সঙ্কটমোচন মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে ।   

ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার হল , কুফরী , ফাগু (হিমাচল প্রদেশ) :

তীর্থনের উপত্যকায় গড়ে ওঠা ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার হলটি অবশ্যই দেখে নেওয়া দরকার । ২২ হেক্টর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ফুলের বাগানে সব সময়ই ফুটে থাকে নানান রঙের ফুল । তবে বর্ষায় সমগ্র বাগানটিই ভরে যায় ফুলে । পাখিদের কুজন এখানে উপরি পাওনা । ফুলের রং মনে ধরিয়ে তিন কিমি পথ এগিয়ে যেতে পারলেই পাওয়া যায় নৈসর্গিক শোভামণ্ডিত কুফরী । এখান থেকেই দেখতে পাওয়া যায় কেদারনাথ , বদরীনাথ , পীরপাঞ্জাল ও শিবালিক শৃঙ্গ । শীতকালে একসময় স্কি খেলার আসর বসত , এখন শীতকালীন নানান খেলার প্রতিযোগিতা হয় এখানে । সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত ছবি ‘ গুপী গাইন বাঘা বাইন ’ ছবির বরফদৃশ্যও শ্যুটিং হয়েছিল কুফরীতে । সিমলা শহর থেকে দূরত্ব ১৬ কিমি । হিমালয়ান নেচার পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানাটিতেও ঢু মারা যেতে পারে । ইয়াকের পিঠে চড়ে বেড়াবার অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করা যায় । এখান থেকে । আরও ৬ কিলোমিটারে ফাগু । নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের মাঝে আলু গবেষণা কেন্দ্রটিও দেখে নেওয়া যায় । সৌন্দর্যের প্রতীক মাশোব্রাও ( ১২ কিমি ) ঘুরে নেওয়া যায় এই সুযোগে ।১৮৫০ সালে লর্ড ডালহৌসির হাতে গড়ে ওঠে এই মাশোরী । উচ্চতা প্রায় ৮৫০০ ফুট । মাশোব্রা থেকে ঘুরে আসা যায় ৩৫ কিমি দূরে খাতনোল গ্রাম । সেখান থেকে ৩ কিমি পথ ট্রেকিং করে পৌঁছানো যায় শালী টিব্বা শিখর । 

ক্রেগনানোর (হিমাচল প্রদেশ) :

মাশোব্রা থেকে আরও তিন কিলোমিটার দূরে পাইন ও ওকে ছাওয়া ক্রেগনানোর । এখানকার প্রশস্তি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক । প্রায় ২০ একর বিস্তৃত এই পার্কে মেরি গো রাউন্ড , জায়ান্ট হুইল , ম্যাজিক শো , ডগ শো ছাড়াও রয়েছে আরও অনেক কিছু । ইয়াক ও পনি চড়ার সুযোগ রয়েছে এখানে । 

নলদেরা , তপ্তপানি (হিমাচল প্রদেশ) :

শহর থেকে প্রায় ২৩ কিমি দূরে অবস্থিত নলদেরা দেখে মুগ্ধ হতে হয় সকলকেই । এইস্থানের রূপে আবিষ্ট হয়ে লর্ড কার্জনের মেয়ে । আলেকজান্ডার নাম বদলে করে দেন নলদেরা । পাইনের ছায়ার নিচে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অল্প সময়ের মধ্যেই দেখে নেওয়া যায় সমগ্র জনপদটিই । বিশ্বের প্রাচীনতম ৯ হোলের গল্ফ কোর্স , মাহুং নাগের মন্দির এখানকার অন্যতম দ্রষ্টব্য । এখান থেকে আরও কিছুটা নিচে শতদ্রু নদের পাড়ে গড়ে ওঠা তপ্তপানি বালিয়াড়ি ( ৫১ কিমি ) । বালি থেকে রংবেরং – এর পাথর কুড়ানোর সুযোগ রয়েছে এখানে । গন্ধক মিশ্রিত উষ্ণ প্রস্রবণের জন্য এইস্থান খুবই বিখ্যাত । এছাড়াও অবশ্য দ্রষ্টব্য জামু মন্দির , চেইল ( ৪৫ কিমি ) এবং নারকান্ডা ( ৬৪ কিমি ) । চিকিৎসকদের পছন্দের জায়গা এটি । কারণ , তপ্তপানি নাম হয়েছে হট ওয়াটার থেকে । এই প্রস্রবণ উষ্ণ তাই নাম তপ্তপানি । এই জ্বলে সালফিউরাস মিশ্রিত , একই সাথে অনেক ভেষজগুন সমৃদ্ধ এই জল । তথাকথিত নিয়মে কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ আবিষ্কৃত হয়নি , অথচ এর জল পান করলে , বহু কঠিন রোগ থেকে মুক্তি লাভ হয় । এই প্রমাণ লক্ষ লক্ষ মানুষ পেয়েছেন বলে দাবী করা হয় । আবার ঠিক পাশের শতদ্রু নদী , যে জল খুব ঠান্ডা — স্নান করে সুস্থ হবেন । ১৩ কিমি দুরে কুফরি । এটি খুব ছোট্ট হিল স্টেশন এরও নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে যা মুগ্ধ করবে । কুফরি শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ হল কুফরা , যার অর্থ লেক । স্থানীয় শব্দ । এই কুফরির তীর্থন উপত্যকায় ২,৫৯৩ মিটার উঁচুতে ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার হল । পাইনে ঘেরা অনন্য জায়গা । ঠিক বর্ষার পর নাম না জানা ফুলেরা ফোটে – তার মাঝে কত জানা – অজানা পাখিদের নাচানাচি ।

হিমাচল প্রদেশ এর পাহাড় :

ডালহৌসি – 

ভারতের ভ্রামণিক মাত্রই ডালহৌসি পাহাড়ের নামের সঙ্গে পরিচিত । উচ্চতা প্রায় ২০৩৬ মিটার । ধৌলাধার ও শিবালিক পর্বতে ১৩ বর্গ কিমি বিস্তৃত ডালহৌসি বহুকাল আগে থেকেই হিমাচলের পর্যটন মানচিত্রে বিশেষ স্থান অধিকার করে রেখেছে । একদা সাহেবদের বসবাস ছিল চেনাব , রাবি ও বিপাশা নদীর তীরে অবস্থিত ডালহৌসি শহরে । পাঞ্জাবের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির হাতে গড়া এই শহর । বাংলোর মতো বিশাল বিশাল বাড়িতে সমৃদ্ধ ডালহৌসি পাহাড়ে স্বাধীনতার পর মানুষ বাস করতো না । চীন তিব্বত দখল করায় সেখানকার মানুষেরা ডালহৌসি পাহাড়ে চলে আসেন । এই বাড়িগুলিতেই গড়ে ওঠে তাঁদের উপনিবেশ । প্রকৃতির দানে ভরপুর এই শহরে প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে পারেন ভ্রামণিকরা । এখানকার নৈসর্গিক দৃশ্য অলেখ্য । পায়ে পায়ে ঘুরে দেখে নেওয়া যায় বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া ডালহৌসি ক্লাব , গান্ধি চক , সুভাষ চক , শিব – বিষ্ণু – নারায়ণ মন্দির , ৩ টি ম্যাল ও আরও অনেক দর্শনীয় স্থান । শহরের চার কিমি দূরে সাতধারার মিষ্টিজল পানে পুণ্য অর্জন হয় , আরও কিছুটা এগিয়ে দেখে নেওয়া যায় পঞ্চপুল্লা জলপ্রপাত । এখানেই রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামী অজিত সিং – এর স্মৃতিসৌধ । সামান্য দূরে বাকরোটা পাহাড় থেকে দেখে নেওয়া যায় হিমালয়ের বিস্তৃত অঞ্চল । পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত স্নো – ডন বাড়িটি । নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও বেশ কিছু দিন থেকে গেছেন এখানে । অদূরেই তাঁরই স্মৃতিতে ঝরনার নামকরণ করা হয়েছে সুভাষ বাওলি । শোনা যায় এখানকার জল খেয়েই নেতাজি সুস্থ হয়েছিলেন ।

 ডালহৌসি অবস্থানেই বেড়িয়ে নেওয়া যায় ডাইন্ডকুণ্ড । বাতাসের গান শুনতে শুনতে এই কুণ্ডের জলেই স্নান করে পরীরা , স্থানীয় মানুষের ধারণা এমনটাই । অদ্ভুত সৌন্দর্যে ভরা এই কুণ্ডটি কিছুটা সময় ব্যয় করে দেখে নেওয়া উচিত হবে । এখান থেকে ঘুরে আসা যায় কালাটপ অভয়ারণ্য ।

 ডালহৌসি পাহাড়ে আসার সময় পথে দেখে নেওয়া যেতে পারে আরও এক অনন্য সুন্দর জায়গা নুরপুর । হাজার বছরের প্রাচীন দূর্গ , মহাকালী ও ব্রিজরাজ মন্দির এখানকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান ।

হিমাচল প্রদেশ এর অরণ্য :

গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্ক – 

আরণ্যক হিমাচলের দর্শন পাওয়া যায় ৭৬০ কিমি ব্যাপ্ত গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্কে । এই অরণ্যকে ঘিরেই রয়েছে সিমলা , কুলু , মানালী , কল্পা শহর । একাধিক পাহাড়ি নদীও যাচ্ছে এই অরণ্যকে চিরে । অদূরেই রয়েছে সেইঞ্জ ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি , পার্বতী জাতীয় উদ্যান ও ইকো ডেভেলপমেন্ট জোন । সমগ্র চত্বরটি ঘুরে দেখলে ধারণা করা যায় জিম করবেটের লেখা অরণ্যের সঙ্গে আজকের অরণ্যের কোনও তফাৎ নেই ।

হিমাচল প্রদেশ এর ঐতিহাসিক স্থান :

চেইল – 

হিমাচলের বিখ্যাত শৈলাবাসের মধ্যে একটি চেইল । এখান থেকেই দাঁড়িয়ে দেখতে পাওয়া যায় । হিমালয়ের বিস্তৃত অংশ আর কাসৌলী শহর । মহারাজা ভূপিন্দর সিং গোর্খাদের কাছ থেকে জায়গা কিনে এখানে গ্রীষ্মকালীন রাজধানী স্থাপন করেন । পাইন , ওক , রডোডেনড্রনের চেইলে ১৮৯১ – তে তিনি বিশালাকার রিসর্টও গড়েন । সেই থেকে তিনটি পাহাড়ে ছড়িয়ে থাকা চেইলের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে । একটি পাহাড়ের মাথায় ১৮৯৩ – এ তৈরি বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্রিকেট গ্রাউন্ডটি এখনও অবস্থান করছে স্বমহিমায় । শৈলাবাসের সঙ্গে সঙ্গে অরণ্য দেখার সাধও মেটে চেইলে । রাজার মৃগয়াভূমি পরিণত হয়েছে অভয়ারণ্যে । জঙ্গলের সুউচ্চ ওয়াচটাওয়ার থেকে দেখে নেওয়া যায় মুনজাক , ঘোরাল , বন্য শুয়োর , লেপার্ড , হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার – এর মতো ভয়ংকর প্রাণিদের। 

রামপুর – 

অতীতে বুশাহার রাজ্যের রাজধানী ছিল । রামপুর শহর । শতদ্রু নদীর তীরে এইস্থানে ছিল প্রচীন জনপদ । ১৯১৯ সালে পদম সিং রাস্তার উপরেই নির্মাণ করেন এই প্যালেস । পাথর ও কাঠের সংমিশ্রণে এটি বিখ্যাত শিল্পীদের দ্বারা তৈরি হয় । কিন্নরের গেটওয়ে বলে খ্যাত এই রাজধানী ছিল রাজপুতদের দখলে । নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় | ১০০ বছরের পুরোনো পদম প্যালেসটি সে ইতিহাসই বর্ণনা করছে । মোগল শৈলিতে তৈরি রাজপ্রাসাদের | দেওয়ালে শোভা বর্ধন করেছে নানান চিত্র ও কারুকার্য । তবে জনসাধারণের জন্য আজ প্রাসাদের দ্বাররূ হয়েছে । আর আছে ঊনবিংশ শতাব্দীতে তৈরি বৌদ্ধ উপাসনালয় ৷ বহু প্রাচীন কৃষ্ণ মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় অল্প সময় খরচ করে । চীন , ইয়ারকন্দ ও তিব্বতের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রামপুরের বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছিল যথেষ্ট । নভেম্বরের ১১-১৪ লাভী মেলা দেখার জন্য ভ্রামণিকরা ভিড় জমান এখানে । এখান থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় ১৪ কিমি দূরের পুরাণ খ্যাত পরশুরামের গ্রাম নিরামণ্ড । পরশুরামের কারুকার্যময় মন্দিরও রয়েছে এখানে । রামপুর থেকে ট্রেক করে অনেকেই যাচ্ছেন বশলই পাস ও জালোরিতে ।

হরিপুরধার – 

সিরমোর জেলায় হরিপুরধার , ৭,৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত । একটি পরিপূর্ণ পাহাড়ি শহর । কিন্তু ইতিহাস সমৃদ্ধ । এখানে আছে ভাঙ্গিয়ানি মাতার মন্দির । স্থানীয় মানুষেরা ন্যায়ের দেবী বলে মানেন । এই মাতা আবার শিরগুল মহারাজের ভগিনী । শিবরাত্রিতে খুব ভিড় হয় । মন্দির থেকে হিমালয়ান তুষারশৃঙ্গ দেখা যায়

 সিমলা থেকে লাথাম , রাজগড় হয়ে হরিপুর ধারের দূরত্ব ১৪০ কিমি । সিমলা থেকে গাড়ি ভাড়া করতে হবে।

নগ্নর – 

অতীতে কুলুর রাজধানী ছিল নগ্নর । সপ্তদশ শতাব্দীতে রাজা বিশুধপালের হাতে এ শহরের পত্তন । কংক্রিটের বাঁধানো রাস্তা ধরে চলে যাওয়া যায় রাজা সিধ সিং – এর তৈরি দূর্গ । ষষ্ঠদশ শতাব্দীর এই দুর্গ ছাড়াও এখানে রয়েছে রাজাদের স্থাপিত আরও অনেক সৌধ । পরবর্তীকালে রাজধানী সুলতানপুরে স্থানান্তরিত হলেও রাজ পরিবারের গ্রীষ্মাবাস থেকেই যায় এখানে । ব্রিটিশরা এসে এই দূর্গটি খরিদ করে নিজের মতো করে রূপান্তর ঘটায় । সংরক্ষণশালাও রয়েছে দূর্গ অভ্যন্তরে । সমগ্র উপত্যকাটি সুন্দর দেখতে পাওয়া যায় দূর্গ থেকে । এছাড়া একাদশ শতাব্দীর চতুর্ভূজ বিষ্ণুমন্দির , ঠাবা রাধা – কৃষ্ণ মন্দিরও দেখে নেওয়া যায় সামান্য সময় খরচে । রোটাং পাস ও জিফং পিকের সৌন্দর্য আঁচ করা যায় এখানে দাঁড়িয়ে । সুযোগের সদব্যবহার করে শিল্পী নিকোলাস রোয়রিকের বসত বাড়িতেও ঘুরে নেওয়া যায় । ছেলে সোয়েলভ রোয়রিকও শিল্পী ছিলেন । তাঁদের আঁকা ছবির সংগ্রহও রয়েছে এখানে । অদূরে আদিবাসীদের তৈরি শিল্পকার্যের সংগ্রহশালাটিও দেখে নেওয়া উচিত হবে ।

 নগরে অবস্থানকালে ১২ কিমি দূরের জগৎসুখ জনপদটিও বেড়িয়ে আসা যেতে পারে । মন্দিরময় এই গ্রাম । ছোটো এলাকা অথচ মনোরম সুন্দর পাহাড় আর হিমায়িত তুষারশৃঙ্গ নিয়ে এর অনবদ্যরূপ ভ্রামণিকদের পাগল করে দেয় । বহু নবদম্পতি মধুচন্দ্রিমা করানোর জন্য এখানে আসেন । নগ্নরের আগে এখানেই ছিল কুলুর রাজধানী । অষ্টম শতাব্দীতে তৈরি শিবমন্দির , সন্ধ্যা গায়ত্রী মন্দির দেখে নেওয়া উচিত হবে । ট্রেকাররা জগৎসুখকে বুড়ি করে খানোল , চিকো , চিক্কা , শেরাই , দেওটিকার সৌন্দর্য দেখে আসতে পারেন । রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য অনেকে দেওটিক্কা থেকে চন্দ্রতাল ঘুরে আসেন । নগ্নরের অন্য বিশেষ দর্শনীয় স্থান হল ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির । এটির বিশেষত্ব হল এটি শুধু দেবদারু কাঠের তৈরি । এই মন্দিরে একটি বিশেষ রীতি প্রচলিত আছে প্রতিবৈশাখে এখানে হাজার হাজার মৃতদেহের শবাচ্ছাদন বস্ত্র জমা করা হয় , এবং সেগুলি পরপর দেবীর পরিধেয় বস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।

 মানালী থেকে কুলুর বাস ধরে কাতরেইনের পাঁচ কিমি দূরের পাতলিখুল নেমে যেতে হবে । এখান থেকে বিপাশা পেরিয়ে অটোয় যাওয়া যায় নগ্নর । 

মালানা – 

বিশ্বের প্রথম গণতান্ত্রিক গ্রাম মালানা । সমাজে এখনও তার প্রভাব বর্তমান । খ্রিস্টপূর্ব ৩২৫ – এ রাজা আলেকজান্ডারের দলছুট কিছু সৈন্য এখানে বসতি স্থাপন করেন । গ্রামের মাঝে বেদিতে ৩৫ জনের হরচা আদালত এখনও সমস্ত বিবাদের মীমাংসা করে । হরচা ব্যর্থ হলে জমলুর ওপর বিচারের দায়িত্ব বর্তায় । গ্রামের মানুষজন ও পবিত্র মন্দির বহিরাগতদের ছোঁয়া নিষেধ । মন্দিরের গায়ে হাত দিলে এক হাজার টাকা জরিমানা । চুরি , ডাকাতি নেই এখানে । বার্লি , মধু ও চরস চাষ এদের জীবিকা ।

পাওনটা – 

গুরু গোবিন্দ সিং – এর স্মৃতিবিজড়িত পাওনটা শিখদের তীর্থস্থান । শিরমুরের রাজার হাতে আক্রান্ত হয়ে গুরু গোবিন্দ মাত্র ১৬ বছর বয়সে এসে উপস্থিত হলেন প্রকৃতির অকৃপণ দানে পুষ্ট পাওনটায় । গুরুর নিজের হাতেই গড়া এই শহর । প্রায় তিন বছর বাস করেছিলেন তিনি এই শহরে । পাওনটায় প্রবেশ করে গুরু গোবিন্দ যে স্থানে ঘোড়া থেকে অবতরণ করছিলেন সেখানেই আজ গুরদ্বারাটি অবস্থান করছে । এখানে বসে গ্রন্থ সাহিবের বেশ কিছুটা রচনা করেছিলেন তিনি । গুরুর স্নানের ঘাটেও হয়েছে গুরুদ্বারা । গোবিন্দ সিং এখানে দুর্গও গড়ে তুলেছিলেন । সেটিও আজ দেখে নেওয়া যায় । যমুনার পাড়ে ৫২ জন কবিকে নিয়ে কবি দরবারে বসতেন , এই স্মৃতিতে এখনও হোলা মহল্লায় কবিদের দরবার বসে । যমুনার পার ধরে নানান হিন্দু দেবদেবীর মন্দিরও রয়েছে । এছাড়াও অতীতের রাজপ্রাসাদটি দেখে নেওয়া যায় অল্প সময় ব্যয়ে ।

নাহান – 

রাজা করণ প্রকাশ ১৬২১ – এ এই শহরের পত্তন করেন । শিরমুরের রাজধানীর তকমাও অনেকদিন ধরে ছিল নাহানের শিরে । হ্রদ , মন্দির ও বাগিচার শহর নাহানে দর্শনীয় জিনিস নানান । রানিতালকে কেন্দ্র করে এই শহর পাক খেয়েছে । হ্রদের পাশে অবস্থিত সুদর্শন মন্দিরটি রাজা দীপপ্রকাশের ( ১৫৭৩ ) তৈরি । গুরু গোবিন্দ সিংহ কিছুদিন অবস্থান করেছেন এখানে । শিখ সম্প্রদায়ের গড়া গুরদ্বারাগুলিও দেখে নেওয়া প্রয়োজন । বর্ষাকালের শেষে রাওয়ান দ্বাদশীর উৎসবে ৫২ টি দেবমুর্তি আসে শহরের জগন্নাথ মন্দিরে । এই উৎসবে অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতাও অনবদ্য । নাহান অবস্থানে বেড়িয়ে নেওয়া যায় ৬০ কিমি দূরস্থ ফসিল পার্কটি । ফাইবার গ্লাসের তৈরি মডেলের মাধ্যমে লুপ্ত জীবজন্তুকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এখানে ।

হিমাচল প্রদেশ এর অন্যান্য দর্শনীয় স্থান :

খাড়াপাথর – 

সিমলার দিকে খাড়াপাথর । সিমলা থেকে রোহরু যাতাযাতের জাতীয় সড়ক । এখানে সবচেয়ে উচ্চতায় ২৮০০ মিটার খাড়াপাথর । শীতকালে নিয়মিত তুষারপাত হয় । ঘনসবুজ প্রকৃতি । দেখার মহত্ব ।

পরওয়ানু – 

নৈসর্গিক শোভা ব্যতীত এখানকার অন্যতম আকর্ষণ কেবলকার । এই গাড়িতে চেপে আকাশপথে পাড়ি দেওয়া যায় টিম্বার ট্রেল রিসর্ট থেকে টিম্বার ট্রেল হাইটে।

বারোগ – 

টয় ট্রেনের সবথেকে বড়ো টানেলটি অবস্থিত বারোগ স্টেশন থেকে মাত্র তিন কিমি দূরে । ট্যানেল পার হতে সময় লাগে প্রায় তিন মিনিট । অথচ এই টানেল বানানোর কোনও ফল না পেয়ে প্রধান ইঞ্জিনীয়ার বারোগ জাতীয় অর্থের অপচয়ের দায়ভার নিয়ে আত্মহত্যা করেন । শায়িত আছেন তিনি তাঁরই নামাঙ্কিত শহরে । কালকা- সিমলা রেলপথের বারোগ স্টেশনে অবতরণ করে চোখ ধাঁধিয়ে যায় । অতিব সুন্দর স্টেশনটি দেখে নিয়ে এগিয়ে চলা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে । এখানকার অতুলনীয় শোভার মাঝে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যাওয়াই যায় । রাতে কটেজ থেকে শুনতে পাবেন উল্লুক ও কুকুটের মিলিত চিৎকার। 

সোলন – 

আরও এক নয়নাভিরাম স্থান সোলন । অতীতের ভগৎ রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল এই শহরে । তবে তার আর কোনও অস্তিত্ব নেই আজকের সোলনে । অন্যতম দর্শনীয় স্থান সালোনী দেবীর মন্দির । আর রয়েছে মোহন মেকিন ডিস্টিলারি কারখানা । সোলন অবস্থানকালে দেখে নেওয়া যায় ভারতের একমাত্র উদ্যান বিশ্ববিদ্যালয়টি ।

কাসৌলী – 

ভারতের অন্যতম শৈলাবাস গড়ে উঠেছে হিমাচল প্রদেশের কাসৌলী নামের ছোট্ট শহরটিতে । আকারে সিমলা অথবা মুসৌরীর থেকে ছোট্ট হলেও সৌন্দর্যে কোনও অংশে কম নয় । বড়ো শহরের থেকে এখানকার জীবনযাপন অনেকটাই শান্ত । অতীতে স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য সমগ্র ভারতের অসুস্থ মানুষেরা আসতেন এখানে । জলাতঙ্ক রোগের হাসপাতালও গড়ে উঠেছে কাসৌলীতে । প্রাকৃতিক শোভার পাশাপাশি দর্শনীয় স্থানগুলি হল সেন্ট্রাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট , পাস্তুর ইন্সটিটিউট , হেনরি লরেন্স প্রতিষ্ঠিত স্কুল , লোয়ার ও আপার ম্যাল । রাতেরবেলা কাসৌলী থেকে চণ্ডীগড় শহরের আলোকবর্ষাও দেখতে মন্দ লাগে না ।

নারকান্দা – 

বাস থেকে নেমে আট কিলোমিটার হাঁটতে পারলেই পৌঁছানো যায় স্বর্গের কাছাকাছি । সেখানে দাঁড়িয়েই দেখে নেওয়া যায় তুষারশুভ্র হিমালয়ের রূপ । এখান থেকে দেখা সূর্যাস্তের আলো অনেক দিন ভ্রামণিকদের মনে লেগে থাকে । হাটুপিক পাহাড়ের চূঁড়োয় অবশ্যই উঠতে হয় নারকান্দা ভ্রমণকালে । কালো পাথরের তৈরি দুর্গা মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় এই সুযোগে । ট্রেকাররা বারবার ফিরে আসেন নারকান্দায় । শীতকালীন নানা খেলার আসর বসে এখানে । পাইন , ফার , ওক , সিডারে ভরা নারকান্দাকে চাঁদনি রাতে দেখার মজাই আলাদা । অমাবস্যার সময় তারাগুলিকে খুব কাছে বলে মনে হয় । উৎসাহীরা এখান থেকেই ঘুরে আসতে পারেন বাপ্পী , খাদরালাও , রোহরু ও শিলাদেশে ।

কিন্নর – 

দেবতাদেশ কিন্নরে আগে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল । ১৯৯৩ – এ এই নিষিদ্ধাদেশ তুলে নেওয়া হয় । সরল প্রকৃতির মাঝে সিধাসাদা মানুষের বাস এখানে । ঐতিহাসিকদের মতে খ্রিস্টজন্মেরও কয়েক শতাব্দী আগে এখানে বসবাস করতে শুরু করে মঙ্গোলিয়ানরা । তিব্বতের রাজার প্রভাবে এখানকার অনেকেই বৌদ্ধধর্মে দিক্ষিত হন । গান – নাচ প্রিয় বর্তমান বাসিন্দারা হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী । হিমালয় পর্বতমালা র এখানেই মিলিত হয়েছে । সমগ্র কিন্ন কিন্নরে ৩৩ টি মনাস্ট্রি রয়েছে । 

সারাহান – 

সারাহান কিন্নর ও সিমলার সীমান্তে অবস্থিত । সারাহানের মনোলোভা সৌন্দর্য অনবরত আকর্ষণ করে চলেছে ভ্রামণিকদের । উচ্চতা প্রায় ১৯২০ মিটার । শ্রীখণ্ড পাহাড়ের পাদদেশে এই জনপদে দাঁড়ালে পশ্চিম থেকে পূর্বে বিস্তৃত পর্বতমালা দেখতে পাওয়া যায় । সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় এখানকার সৌন্দর্য একলাফে অনেক গুণ বেড়ে যায় । রামপুর প্রাসাদ তৈরির অনেক আগে থেকেই এখানে বুশাহার রাজারা থাকতেন । বুশাহারের রাজার গ্রীষ্মকালীন বসবাসের ব্যবস্থা ছিল এখানে । বুশাহাররাজাদের অতীত রাজধানীও ছিল । রয়েছে রাজ পরিবারের গৃহদেবতা ভীমাকালীর মন্দির । প্রায় দুই শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরটির দরজা সোনার তৈরি , মন্দিরের বিগ্রহটিও সোনার । বুশাহার রাজাদের আরাধ্য দেবী ভীমাকালী , সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম । মন্দিরের দেওয়ালে তিব্বতী শৈলিতে কাঠের কারুকার্য দেখবার মতো । একদম উঁচু তলায় দেবী রয়েছেন । এখানে সতীর কান পড়েছিল । কথিত আছে , বানাসুর কন্যা ঊষা ও শ্রীকৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধের বিয়ে হয়েছিল এই মন্দিরেই । গর্ভগৃহের দ্বিতলে রয়েছে মূল দেবীমূর্তি । রয়েছে একটি মিউজিয়ামও । এছাড়াও রয়েছে নরসিংহ মন্দির , রঘুনাথ- হনুমান – শিব মন্দির , অযোধ্যানাথ মন্দির , দত্তাত্রেয় মন্দিব ও রামপুর রাজপ্রাসাদ । মন্দির চত্বরে চামড়ার জিনিস নিয়ে প্রবেশ ও ফটোগ্রাফি করা নিষিদ্ধ । উল্লেখ্য রামপুর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের প্রাচীন শোণিতপুরই বর্তমানের এই সারাহান ।। দশেরা ও নবরাত্রির সময় সমগ্র সারাহান মেতে ওঠে উৎসবে । শহরের বাইরেই রয়েছে আপেল ও খোবানির ক্ষেত । সারাহান থেকে ৪৩ কিমি দূরে ওয়াংটুও দেখে নেওয়া যায় । টাপরি / কারছাম পথে সারাহান থেকে বেড়িয়ে রাজ্যের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের দিকে চলে যাওয়া যায় ।

সাংলা – 

প্রায় ৯৫ কিমি বিস্তৃত অতিব সুন্দর উপত্যকা বাসপার প্রাণকেন্দ্র সাংলা । উচ্চতা ২৬৮০ মিটার । এর উত্তর দিকে রয়েছে কৈলাস আর দক্ষিণে । রয়েছে গাড়োয়াল পর্বতমালার সুউচ্চ প্রাচীর । এপ্রিল -মে তে আপেল ফুলের সাদা রং – এ ভরে ওঠে সাংলা । এমন রূপ অবশ্যই দুর্লভ বলতে হবে । ফুল থেকে আপেল হয় আগস্ট – সেপ্টেম্বরে । ছোটো ছোটো গ্রামের এই উপত্যকায় রয়েছে আপেল , পিচ বাগিচা । পাহাড়ের ধাপে ধাপে তিব্বতীয় শৈলিতে গড়া বাড়িঘরে যে মানুষগুলি থাকেন তাঁদের বেশিরভাগই বৌদ্ধ ধর্মে দিক্ষিত । উপত্যকার যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে মন্দির ও গুম্ফা । বাসপার অদূরে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ও ট্রাউট মাছের গবেষণা কেন্দ্রও দেখে নেওয়া যায় । পায়ে পায়ে ঘুরে সমগ্র সাংলা দেখতে খুব বেশি সময় লাগে না । অদূরে কামরুতেও ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে । রামপুর রাজার গড়া পাঁচ তলার দূর্গটি অবস্থান করছে কামরুতেই । দূর্গের মধ্যে রয়েছে কামাক্ষ্যা দেবীর মন্দির , মিউজিয়াম , বদ্রিনাথ , বেরিনাথ মন্দির । এখান থেকে ঘুরে আসুন বাতসেরি গ্রাম । ভাগ্য ভালো থাকলে এই দূর্গের অস্ত্রাগারও দেখার সুযোগ হয়ে যায় । রূপন ও সিগন পর্বতশৃঙ্গ যেন কামরুর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে । এই দূর্গের পাশেই রয়েছে কামাক্ষ্যাদেবীর মন্দির ।

রকছাম ও ছিৎকুল –

সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম রকছাম । উচ্চতা ৩১১৫ মিটার । পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বাসপা নদী । পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখে নেওয়া যায় এই গ্রামটি । যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে ঝরনা , আপেল ও গালা ক্ষেত । রকছাম মন্দির দেখে চলে আসুন সীমান্তবর্তী ছিৎকুল ( ৩৪৫০ মিটার ) । এখানে ৫০০ বছরের পুরানো চিত্রলেখা মন্দির আছে । এর চারদিকে ভূর্জগাছের বন , যার ছালে প্রাচীন কালে লেখা হত । সুতরাং ভূর্জ গাছের বনের দিকে তাকিয়ে আপনি সুপ্রাচীন অতীতে চলে যাবেন । ছিটকুল থেকে ৬ কিমি দূরে চারপাশে বিরাট বিরাট পাহাড়ের মধ্যিখানে মস্তরং উপত্যকা । এত সুন্দর পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা আছে । তিব্বত ও ভারত সীমান্তের শেষ জনপদ । নী – লা থেকে সৃষ্ট বাসপা নদীর প্রবাহ গিয়েছে ছিৎকুলকে চিরে । মালভূমি প্রকৃতির এই স্থানে পৌঁছে কথা হারিয়ে ফেলেন ভ্রামণিকরা । রংবেরং – এর ফুটে থাকা ফুলে ও ফসলে অস্বাভাবিক সুন্দর দেখায় এইস্থানকে । প্রাচীন কাঠের দুর্গ, কালীমন্দিরও রয়েছে চিৎকুলে।

কল্পা – 

ইংরেজদের তৈরি জেলাসদর ছিল চিনি , বর্তমানের কল্পা । উচ্চতা ২৯৬০ মিটার । কল্পনাতীত সৌন্দর্যে মণ্ডিত কল্পার চারদিক ঘিরে রেখেছে সুউচ্চ গিরি শৃঙ্গরা । কল্পা পিকে উঠে দেখে নেওয়া যায় কিন্নর – কৈলাস । কৈলাস শৃঙ্গেরডানদিকে একটি গ্রানাইট শিলা রয়েছে । মানুষ একে শিবলিঙ্গ হিসেবে পূজা করে । শিবভক্ত বানাসুর নাকি এর প্রতিষ্ঠাতা । একবার উঠলে আর এর এই চূঁড়ো থেকে নামতে ইচ্ছা করে না । সূর্যোদয় – সূর্যাস্তের সময় এইস্থান যে রূপ পরিগ্রহ করে তা বলে বা লিখে বোঝানো শক্ত । তিব্বতী শৈলিতে গড়া হিন্দু দেবদেবীর মন্দির ছাড়াও এখানকার অন্যতম আকর্ষণহল ১০০০ বছরের বেশি পুরোনোহু – বু – লান – কার বৌদ্ধ গুম্ফা । এখান থেকে দেখে নিন চিনি গ্রামের সামদুর চোলিং গুম্ফা ও নারায়ণ নাগিনী মন্দির , চণ্ডি মন্দির , হেরিটেজ ভিলেজ রোঘি , বৌদ্ধ মনাস্ট্রি । ৫ কিমি দূরে একটি গ্রাম রোটি , ১০ কিমি দূরে গ্রামটি পাটি – খুব পরিপাটি ও শান্ত । রোটি গ্রামটি হেরিটেজ সন্মানে সন্মানিত । এখানে যে নারায়ণ মন্দির আছে – তা প্যাগোদা আকারের । বোধি গ্রামের চেয়ে পাটি গ্রাম বড় । এখানেও একটি মন্দির আছে- দেখবার মতো ।

রেকংপিও – 

কিন্নর জেলার সদর তথা বাণিজ্যিক শহর রেকংপিও – এর প্রাকৃতিক শোভা নিয়ে আলাদা কিছু বলার নেই । শহরের কেন্দ্রস্থল ময়দানকে ঘিরে বাড়ি উঠেছে কংক্রিটের । ১৯৯২ সালে দলাই লামার ঐতিহাসিক ভাষণের স্মারক রূপে প্রস্তুত মহাবোধি গুম্ফাটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে রেকংপিও – এ থাকার সময় । শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য অদূরে পিও নামের নতুন শহর গড়ে উঠেছে । সমগ্র কিন্নর জেলা ঘুরে দেখতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগে যায় । কারণ এখানকার উচ্চতা । কিন্নরের সর্বাধিক উচ্চতা ৬০৫০ থেকে কৈলাশ পর্বতও দেখতে পাওয়া যায় । ভারতে অবস্থিত ত্রিকৈলাশের মধ্যে অন্যতম কিন্নর কৈলাশ । পাহাড় কেটে ধাপে ধাপে আপেলের চাষও হচ্ছে কিন্নরে । আপেল থেকে প্রস্তুত মল্টি ও আঙুর থেকে তৈরি বহমি সুরার স্বাদ গ্রহণ করা যায় এ সফরে । কিন্নরের দক্ষিণে রয়েছে গভীর অরণ্য । নানান পাখির কুজন শোনা যায় এখানে । অহরহ চোখে পড়ে বন্য হরিণের পাল । জেলার মানুষেরা খুবই উৎসব প্রিয় । আগস্টে অনুষ্ঠিত হওয়া ফুলেখ এদের প্রিয় উৎসব । এছাড়াও রয়েছে সেপ্টেম্বরের বুদ্ধ মহোৎসব । সমাজ জীবন বিচিত্র এখানকার মানুষদের । নারীরা একাধিক পতি রাখতে পারেন । তবে এখন দ্রৌপদী প্রথা প্রায় লোপ পেয়েছে , তবুও সাথী নির্বাচনে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা মেলে কিন্নরবালাদের । কিন্নরীদের হাতের তৈরি শাল ও বুশাহারি টুপির যথেষ্ট খ্যাতি আছে । অদূরে আপার কিন্নর ।

 অনুর্বর এই জায়গায় সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে যাতায়াতে বিধিনিষেধ রাখা হয়েছে । তবে কল্পা থেকে বাসে কুহু যাওয়া যায় । সেখান থেকে বাসে আরও ১৭ কিমি এগোলে পাওয়া যাবে স্পিতি ও পীরে চু নদীর মিলনস্থল সামধো । এটিই কিন্নর জেলার শেষ বসতি । অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত এখানে আদিবাসী মেলা হয় । এখান থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে আছে বোধী গ্রাম । সেখানে রয়েছে চন্ডিকা মন্দির । সমগ্র বিগ্রহটি সোনার । 

নাকো – 

সমুদ্রতট থেকে ৩৬৬২ মিটার উে অবস্থিত নাকো গ্রাম । নীল জলের লেককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই জনপদ । উইলো ও পপলার গাছের নিবিড় ছায়ায় অবস্থিত নাকোর সৌন্দর্য নয়নাভিরাম । লেকের ধারে রয়েছে নানান বৌদ্ধ মন্দির । কালীমন্দিরও রয়েছে নাকোয় । গ্রাম থেকে আরও ২৩ কিমি দূরে খোবানি , আপেল , নাশপাতি উৎপাদনের জন্য খ্যাত রিব্বা । ৬০০ বছরের পুরোনো বৌদ্ধমঠও রয়েছে এখানে । মরাঙ , কানাম , খাবও ঘুরে দেখা যায় নাকো অবস্থানকালে । দুপাশ দিয়ে বয়ে গেছে অনেকগুলি দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা । পাশাপাশি বয়ে চলেছে শতদ্রু নদী । ৬০০ বছর আগে রিব্বাতে ধর্মগুরু রত্নভদ্র ( রিন ছেন জ্যান পো পো ) বৌদ্ধমঠ স্থাপন করেছিলেন ।

তাবো – 

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষদের তীর্থস্থান তাবো । এখানকার অন্যতম আকর্ষণও বৌদ্ধ গুম্ফাগুলি । ৩০৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই পাহাড়ি জনপদের মানুষ । তিব্বতের রাজা স্রোন – ব্লাসোনের ( ৬১৮-৬৪৯ ) দ্বারা বৌদ্ধধর্মে দিক্ষিত হন । পরবর্তীকালে গুরু পদ্মসম্ভাবাও এ পথেই ভারতে এসেছিলেন বৌদ্ধধর্মের প্রসারের উদ্দেশ্যে । গজের রাজার দ্বারা প্রেরিত ধর্মপ্রচারক চেন – জ্যাঙ্গ – পোরহাতে ৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে তৈরি করেছিলেন মাটির গুম্ফা । পরে কাশ্মীর থেকে শিল্পী আনিয়ে বিশালাকার গুল্ফা তৈরি করা হয় । তাবোর মাটির গুল্ফাকে হিমালয়ের অজন্তাও বলা হয় । মাটির দেওয়ালে ভেষজ রঙের দ্বারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল বুদ্ধের জীবনের নানান কাহিনি । তাবোতে নয়টি গুল্কা , ২৩ টি চোর্তেন ও ৩০ টি থঙ্কাস , অসংখ্য দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে । ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের সম্মানও পেয়েছে এই মনাস্ট্রি । তাবোর হর্টিকালচার রিসার্চ ইন্সটিটিউটটিও দেখে নেওয়া অবশ্য কর্তব্য । মাত্র শ চারেক লোক বাস করে তাবোতে , নাচে – গানে ভরপুর তাঁদের জীবনযাত্রা দেখেও আনন্দ লাভ করা যায় ।

কাজা , থ্রাংখার – 

কাজা স্পিতি জেলার সদর শহর । কাজে গুম্পা থেকে এইস্থানের নাম হয়েছে কাজা । ৩৬৬০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই শহরও হিমাচলের অন্যান্য অংশের মতো প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর । কাজা শহরকে দুভাগে ভাগ করে নতুনটিতে বসেছে সরকারি অফিস , বাসস্ট্যান্ড , হোটেল । আর পুরোনো কাজায় বসবাস করেন স্থানীয় মানুষেরা , যাদের জীবনযাপনে তিব্বতীয় প্রভাব সুস্পষ্ট । বিশ্বের উচ্চতম পেট্রল পাম্পটি অবস্থান করছে এখানেই । সামান্য দূরেই ৬০০ বছরের প্রাচীন কাঙ্গরি গুম্ফা , হিকিম , কোমিক , লাঙ্গিয়া , কী মনাস্ট্রি ( ১২ কিমি ) , ডাংকার মনাস্ট্রি ( ২৪ কিমি ) দেখে নেওয়া যায় কাজা থাকাকালীন । কী মনাস্ট্রি দেখে আরও এগিয়ে চলা যায় ৪২০৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত কিব্বের গ্রাম দেখেতে । এখানে থাকা শ- পাঁচেক মানুষই পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন । ট্রেকারদেরও আনাগোনা আছে কিব্বের গ্রামে ( ৮০ কিমি ) । আরও সাত কিমি পূর্বদিকে এগোলেই পৌঁছে যাওয়া যায় পৃথিবীর উচ্চতম জনবসতি গেট্টে – তে । সমুদ্রতট থেকে ৪২৭০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই গ্রাম ঘুরতে খুব বেশি সময় লাগে না । 

একটা দিন খরচ করে এখান থেকেই ঘুরে আসা যায় স্পিতির অতীত রাজধানী ব্রাংখায় ।

 ব্রাংখায় রাজার তৈরি দূর্গ ছাড়াও রয়েছে প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো মনাস্ট্রি । এখান থেকে অল্পদূরে পিন ভ্যালি ন্যাশানাল পার্ক । ৬৭৫ বর্গ কিমি বিস্তৃত এই অরণ্যে দুষ্প্রাপ্য আইবেক্স ও স্নো লেপার্ড সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণি দেখতে পাওয়া যায় ।

 ল্যাংলস পেরিয়েই পড়বে কোমিক গ্রাম । শাক্যপা গোষ্ঠির থাংগুড় গুল্ফা এখানে রয়েছে । এই গুম্ফায় রয়েছে ছোট বিদ্যালয় এবং অতিথিশালা রয়েছে । কোমিক থেকে হাঁটুন , প্রকৃতির সাথে আলাদা নৈকট্য পাবেন , নয়তো চামরি গাইয়ের পিঠে চড়ে ডেমপু গ্রামে যাওয়া যায় । কাজা থেকে মাত্র ৭ কিমি দূরের ‘ কী ‘ গ্রামের ওপরে টিলার মাথায় গুম্ফাতে রয়েছে । প্রচুর প্রাচীন পুঁথি , পান্ডুলিপি ও থাঙ্কা । 

লাহাহুল ও স্পিতি –

বাণিজ্যের সুবিধার জন্য ১৮৪১ – এ লাহাহুল ও স্পিতি দখল করে ব্রিটিশরা । বর্তমানে কিন্নর একটি স্বতন্ত্র জেলা । মোট ৭৭ টি গ্রাম রয়েছে এখানে । আর লাহাহুল ও স্পিতি উপত্যকা একটি আলাদা জেলায় পরিণত হয়েছে । 

জেলাসদর বসেছে কেলং – 

এ । এই দুই উপত্যকার মানুষের মধ্যে তিব্বতীয় প্রভাব স্পষ্টই দেখা যায় । দশম শতাব্দীতে লাডাকের অংশও ছিল লাহাহুল । পরবর্তীতে শিখরা ও তারও পরে ব্রিটিশরা দখল নেয় অস্বাভাবিক সুন্দর এই উপত্যকায় । এ জেলার বেশিরভাগ মানুষ বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী হলেও হিন্দুধর্মের প্রভাবও বর্তমান সমাজ জীবনে । অদূরে থিরোট ও উদয়পুর জনপদও দেখে নেওয়া যায় একই সফরে । বাতাল থেকে ১৬ কিমি পথ ট্রেক করে দেখে নেওয়া যায় প্রকৃতির আশীর্বাদে ধন্য চন্দ্রতাল হ্রদটি । এখান থেকেই চন্দ্র নদীর উৎপত্তি । থাকার কোনও ব্যবস্থা না থাকায় তাঁবু ও খাবার সঙ্গে নিয়ে ট্রেক শুরু করতে হয় । শীতকালে ( অক্টোবর থেকে মার্চ ) বরফে ঢাকা । থাকে এ জেলা । তবে গ্রীষ্মের দিনেও শীত বর্তমান থাকে । বসবাসকারী মঙ্গোলিয়ান জাতির উত্তরপুরুষদের প্রধান জীবিকা আলু ও হপ চাষ । এখানকার এক রূপসী উপত্যকার নাম বাতাল । ভ্রামণিকদের আকর্ষণ করার জন্য যা যা প্রয়োজন প্রকৃতি সে সবেরই ব্যবস্থা রেখেছে এখানে । উপত্যকার অন্যতম জনপদ তথা গ্রাম লোসার পার হতেই স্পিতি ভ্যালির শুরু । পথেই পরে তাঙি , চন্দ্র ও ভাগা নদীর মিলনক্ষেত্র । আরও কিছুটা এগোলে পৌঁছানো যায় কুনজুমে । বড়াসিথ্রি ও ছোটাসিথ্রি হিমবাহ দুটি দেখে নেওয়া যায় এখান থেকেই । মন্দির আছে বৌদ্ধদের উপাস্য কুনজুম মাতার । এই ছোট্ট জনপদ থেকেই শুরু লাহা উপত্যকার । কুনজুম অবস্থানকালে ৬ কিমি ট্রেক করে চলা যেতে পারে চন্দ্রতাল লেকের সৌন্দর্য দেখতে । ৪৩০০ মিটার উঁচুতে টলটলে নীল জলের হ্রদটির পরিধি প্রায় আড়াই কিলোমিটার । কুনজুমে ফিরে আরও এগিয়ে চললে এসে যায় গ্রামফু । সুন্দর ছোট্ট জনপদের মানুষগুলোর সঙ্গে কিছুটা সময় অতিবাহিত করা যায় । তারপর কেলৎমুখী রাস্তা ধরে পাঁচ কিমি এগোলে পৌঁছে যাওয়া যায় স্পিতি উপত্যকার শেষ গ্রাম খোকসারে । অদূরের বিশাল জলপ্রপাতটি দেখে নেওয়া যায় এই সুযোগে । জানুয়ারি মাসে জমকালো উৎসব হয় এই গ্রামে । আরও ২৩ কিমি পথ অতিক্রম করতে হয় সিশু পৌঁছানোর জন্য । এখানকার মনাস্ট্রিটি দেখার মতো । লাহাহুল ও স্পিতি জেলার গেটওয়ে বলা হয় রোটাং পাসকে । অতীতে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের পথও ছিল রোটাং পাস । সিশু দেখে চলা যায় ১২ কিমি দূরের গোণ্ডালায় । ৩০০ বছরের প্রাচীন দুর্গটি প্রথমেই দেখে নিতে হয় । দুর্গের মধ্যে দলাই লামার উপহার সোর্ড অফ উইসডম সহ আরও নানান অস্ত্রশস্ত্র , পোশাক ও সিবাবের সংগ্রহ রয়েছে । এখানে অবস্থি বিশালাকার পাথরটি সবসময়ই জায়গা বদল করে । দলাই লামার মতে এই পাথরই হবে বুদ্ধের পুনর্জন্মের কারণ । তাই এখানে তৈরি হয়েছে নতুন শুল্কা , বোধিসত্ত্ব জ্ঞানে পুজো হয় এই পাথর । গুরু পদ্মসম্ভাবার হাতে তৈরি ঘান্টাল মনাস্ট্রিতে দেখে নেওয়া যায় কিছুটা সময় খরচ করে । কাঠের তৈরি লাহাহুলের প্রাচীনতম মনাস্তিতে কালী মূর্তিটি দেখে অবাক হতে হয় । গোগুলা থেকে আরও ১৬ কিমি গিয়ে পৌঁছানো যায় জেলা সদর কেলং – এ । এটিই লাহাল ও স্পিতি জেলার একমাত্র শহর । চারদিকে পাহাড় ও অরণ্যে ঘেরা এ শহরটিকে স্থানীয় মানুষরা জঙ্গলের মরূদ্যান বলে থাকেন । এখানকার সমাজ জীবন বড়োই বিচিত্র । বাড়ির বড়ো ছেলে বিয়ে করে বংশ রক্ষা করবে আর বাকিরা যাবে মঠে , লামা হওয়ার উদ্দেশ্যে । বড়োজনের মৃত্যু ঘটেলে পরের জন বাড়ি ফিরে বিধবা বৌদি , তাঁর সন্তান ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় । ছেলেদের মতো মেয়েদেরও পাঠিয়ে দেওয়া হয় কনভেন্টে । কেলং আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেশ অনেকটা পথই এগিয়েছে । লর্ড হার্ডিঞ্জকে বোমা ছোড়ার অপরাধে ১৯১২ – তে এখানেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বিপ্লবী রাসবিহারী বসু । তাঁর মূর্তি বসেছে শহরের কেন্দ্রে । নানা মনাস্ট্রি ছাড়া দুর্গার মন্দির আছে কেলং শহরে । অদূরেই অতীত রাজধানী খারদুং – এর প্রায় ৮০০ বছরের পুরানো মনাস্ট্রিটি দেখে নেওয়া যায় অল্প সময় খরচ করে । আরও কিছুটা এগিয়ে শাশুর মনাস্ট্রি ও তায়ুল মনাস্ট্রিটি অবশ্য – দৃশ্য । 

উদয়পুর – 

সপ্তদশ শতকের মারকুলের নাম পরিবর্তন হয়ে হয় উদয়পুর । এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনবদ্য । বাজারের মাথায় অবস্থিত কারুকার্য খোচিত মন্দিরটির বয়স হাজার বছরেরও বেশি । রুপোর তৈরি লাহুলীরা পুজো হয় এই মন্দির । এখান থেকে আট কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে দেখে নেওয়া যায় ত্রিলোকনাথের মন্দিরে । অষ্টম শতাব্দীতে কাশ্মীর রাজ ললিতাদিত্যের তৈরি শিবমন্দিরের জায়গায় তৈরি বৌদ্ধমন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় । নানান মূর্তিতে সমৃদ্ধ বৌদ্ধ মন্দিরটির বিশেষ এক মূর্তিতে দাবি হিন্দু ও বৌদ্ধ দুই সম্প্রদায়েরই । বুদ্ধ পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে তিন দিনের জাঁকালো পাউরি উৎসব হয় উদয়পুরে । এছাড়াও হিমাচলের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ও যাওয়ার জ জন্য জংশন হিসেবেও উদয়পুরের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে । শীতকালে এখানে যানবাহন চলাচল স্থগিত থাকে । উদয়পুরকে কেন্দ্র করেই দেখে নেওয়া যায় পট্টন উপত্যকার ত্রিলোকনাথ ।

রোটাং পাস – 

তিব্বতী শব্দ রোটাং জোতের অর্থ মৃতদেহের স্তূপ । অতীতের রোটাং জোত আজ রোটাং পাস ( লা ) -এ পরিণত হয়েছে । হিমাচলে ভ্রমণকারীদের কর্তব্য এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাসটি দেখা । মানালী থেকে কেলং যাওয়ার পথেও দেখে নেওয়া যায় রোটাং পাস । আবার কেলং না গিয়ে মানালী থেকে কেবলমাত্র রোটাং পাসের সৌন্দর্য দেখেই ফিরে আসা যায় । এপথের শোভাও অতুলনীয় । বিভিন্ন দর্শনীয়স্থান ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছানো যায় রোটাং – এ । মানালী ছাড়ার পাঁচ কিমির মধ্যেই পড়ে অর্জুন গুম্ফা । আরও এক কিমি এগিয়ে দেখে নেওয়া যায় নেহেরু কুণ্ড ও পার্ক । আরও দশ কিমি গেলে চুড়ুইভাতির আদর্শ জায়গা সোলাং ভ্যালি পৌঁছানো যায় । এ গ্রামেই বরফ জমে তৈরি হয়েছে শিবলিঙ্গ । সেটি দেখেও ভাগ্যবান হওয়া যায় । রোটাং যাওয়ার পথে পাহাড়ি গ্রাম কোটি কোদিতেও ঢু মারা যেতে পারে । আরও ১২ কিমি এগোলেই দেখতে পাওয়া যায় রাহালা ঝরনা । প্রায় ৭০ মিটার উচ্চতা থেকে জলধারা আছরে পড়ছে পাহাড়ের গায়ে । আরও আট কিলোমিটারের মাথায় নৈসর্গিক শোভা সম্পন্ন মারহি । এখান থেকে আরও ১৬ কিমি পথ যেতেই পাহাহুলের গেটওয়ে রোটাং পাস । স্কি করার ও স্লেজ গাড়ি চড়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে । ঘোড়ায় চড়ে । বিপাশা নদীর উৎপত্তি স্থল বিয়াসকুণ্ডটি দেখে নেওয়া যায় । মন্দির আছে নাগজির । পাশেই পবিত্র সরকুণ্ড । সোনাপানি গ্লেসিয়ারও দেখে আসা যেতে পারে রোটাং পাস থেকে । দুপুরের পথ থেকে আবহাওয়ার বিভ্রাট ঘটতে দেখা যায় । তাই উচিত হবে সকাল সকাল রোটাং পাস দেখে ফেরার পথ ধরা । 

মানালী – 

ভারতের অন্যতম প্রসিদ্ধ ভ্রমণকেন্দ্রের নাম মানালী । জনশ্রুতি , এখানেই বসবাস করতেন মানুষের সৃষ্টিকর্তা মনু । বিপাশা নদীর তীরেই প্রথম মানুষের জন্ম । মনুর নাম অনুসারে এইস্থানের তৎকালীন নাম ছিল মানালসু , কালক্রমে তা পরিবর্তন হয়ে । বর্তমান নাম পেয়েছে এই উপত্যকা । ২০৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত পাহাড়ি শহরটি চারদিক থেকে সাদা পাহাড়ে ঘেরা । অন্যান্য বিখ্যাত পাহাড়ি শহরের মতো ঘিঞ্জি নয় এই শহর । যথেষ্ট নীরবতা ও শান্তি বিদ্যমান সবুজাভ মানালীতে । শহরের নিচে দিয়ে নিরলস গতীতে বয়ে চলেছে মানালী ও মানালসু নদী । এই শহরটার বিশেষ আকর্ষণীয় ব্যাপার যেদিকেই হেঁটে যান , দেখবেন হঠাৎ করে চোঁখে লাগছে রোদ চকচকে পিরপাঞ্জাল ও বড়া ভাঙ্গল পর্বতশ্রেণী । ব্রিটিশরা প্রথম আপেল বাগান প্রস্তুত করা ছাড়া আর তেমন কোনও ছাপ রাখতে পারেনি এখানে।

 তবে স্বীকার করতেই হয় ব্রিটিশদের তৈরি বাগানের আপেলের খ্যাতি আজ সারা বিশ্বে । এছাড়াও চেরি ও পিচের বাগিচা রয়েছে এখানে । আর আছে গাঁজা ও চরসের চাষ । তবে এখানকার পুলিশ খুবই সতর্ক । গাঁজা কেনা বা সেবন থেকে বিরত থাকাতেই ভ্রামণিকদের মঙ্গল । র‍্যাফটিং , প্যারাগ্লাইন্ডিং – এর মতো রোমাঞ্চকর খেলার আসরও বসে এখানে । শোনা যায় , মানালীর রূপে আকৃষ্ট হয়ে পাণ্ডবরাও প্রায় একবছর অতিবাহিত করেছিল এখানে । তবে আজ জনসংখ্যার চাপ কিছুটা হলেও বেড়েছে । ফলে হ্রাস পেয়েছে নীরবতা । যত্রতত্র দেখতে পাওয়া যায় আপেল বাগিচার গাছ কেটে বাড়ি তোলা হচ্ছে সেখানে । বাসস্ট্যান্ডকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ঘিঞ্জি পরিবেশ । এসব জেনে মন খারাপ করার প্রয়োজন নেই । কারণ এখনও শহরের কেন্দ্রস্থলকে অতিক্রম করলেই পাওয়া যায় মানালীর সুগন্ধ ।

 শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিমি দূরে ওল্ড মানালী ঘুরে নেওয়া যায় পায়ে হেঁটে । এখানকার গ্রামে গ্রামে হিপিরা আস্তানা গেড়েছে । সুন্দর অলঙ্কৃত পাহাড়ি শৈলির বাড়িগুলি দেখতে ও হিপিদের আহ্লাদের জীবনযাপনের সঙ্গে মিশে যেতে বেশ ভালোই লাগে । কাঠের তৈরি মনু মহর্ষি মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় । অতীতের মানালী দুর্গটিও আজ বিধ্বস্ত । ট্যুরিস্ট অফিস থেকে দেড় কিলোমিটার পায়ে হাঁটা পথে ঢুংরি পাহাড়ের হিড়িম্বা মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় মানালী অবস্থানকালে । অদূরের প্যাগোডার মতো দেখতে মন্দিরেও ঢু মারা যায় । ১৫৫৩ – য় তৈরি এই মন্দিরের দেওয়ালে নানান জীবজন্তু ও নানা দেবদেবীর মূর্তি ।

স্থানীয় মানুষের মতে , মন্দিরের পাথরের ছাপটি বিষ্ণুর পায়ের । বিপাশা নদী পেরিয়ে মানালী ক্লাব হাউসটিও দেখে নেওয়া যায় । এখানে নানান ইন্ডোর গেমের আসর বসে । ভাগ্য ভালো থাকলে মানালীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও দেখার সুযোগ মিলে যাবে ক্লাব হাউসের অডিটোরিয়ামে । বিপাশা পাড়ের পার্কটিতে কিছুটা সময় কাটাতে মন্দ লাগে না । মডেল টাউনের তিব্বতীয় মনাস্ট্রিটি আর এক দর্শনীয় স্থান । ছবির সম্ভারের সঙ্গে হস্তশিল্পের নিদর্শন দেখার ও কেনাকাটার সুযোগ আছে এখানে । শহরের মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউটটিও আরেক দ্রষ্টব্য । রিসেপশন সেন্টারের পেছন দিয়ে বিপাশা পেরিয়ে তিন কিমি যেতেই পাহাড়ের গায়ে বশিষ্ঠ মুনির আশ্রম । কথিত আছে এখানে বসেই ধ্যান করতেন মুনি । কাঠের তৈরি মন্দিরের পাশেই গরম জলের কুণ্ড । এছাড়া অবশ্য দ্রষ্টব্য বনবিহার নেচার পার্ক , নিংমাপা বুদ্ধ মনাস্ট্রি , ফোক মিউজিয়াম , সোলাং ভ্যালি । অদূরেই প্রাচীন রাম মন্দির ও ঘটোৎকচ মন্দির । হ্রদও আছে পাহাড়ের চূঁড়োয় ভৃগু মুনির তপস্যা ক্ষেত্রে । 

কাতরেইন – 

মানালীর ঘিঞ্জিপনায় বিরক্ত হয়ে উঠলে চলে আসতে হয় সেখান থেকে ১৯ কিমি দূরে প্রকৃতির মাঝে কাতরেইনে । বিস্তারিত আপেল ক্ষেতে ভরা এই জনপদে ভ্রামণিকদের চাপ খুব একটা বেশি থাকে না । অবস্থানকালে দেখে নেওয়া যেতে পারে ট্রাউট মাছের হ্যাচারিটি । পাশ দিয়ে বয়ে চলা বিপাশাকেও লাগে সুন্দর ।

হিমাচল প্রদেশ এর কুলু উপত্যকা :

ভ্যালি অফ গড বা ভগবানের উপত্যকা হল কুলু । রামায়ণ , মহাভারতের কাল থেকে এই উপত্যকার খ্যাতি । উচ্চতা ১২১৯ মিটার । তখন অবশ্য নাম ছিল কুলুত । শতদ্রু , তীর্থন , সারোবরী , চন্দ্রাভাগা , পার্বতী নদীর পাড়ে অবস্থিত এই অতিব পুরাতন জনপদে একদা বসবাস ও তপস্যা করতেন বেদব্যাস , গৌতম , বশিষ্ঠ , ভৃগু , মনুর মতো আরও খ্যাতনামা ঋষিরা । রোটাং থেকে মাণ্ডী প্রায় ৮০ কিমি দীর্ঘ এই উপত্যকা প্রস্থে ২ কিমি । কুলুতে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকালে একাধিক পাহাড়ি খরস্রোতা নদীর দর্শন মেলে আর মাথার ওপর হিমালয়ের পীরপাঞ্জাল , পার্বতী , বারাভাঙ্গাল , ধৌলাধারের মতো পাহাড় সারি । বছরের নানান সময় কুলুর রূপ বদল হয় । বসন্তে এই উপত্যকা রেঙে ওঠে পাকা আপেল , নাশপতি , চেরি ও খুবানির রঙে । বছরের অন্যসময় রডোডেনড্রন , ধান , গমের রঙ লাগে কুলুর মনে । কুলু উপত্যকায় অবস্থানকালে সেখানকার ঝলমলে মানুষগুলির সঙ্গে আলাপ করা ছাড়াও দেখে নেওয়া যেতে পারে নানান পর্যটন কেন্দ্র । 

  কুলু- কুলু উপত্যকা জেলার সদর কুলু শহর । অতীতে স্বাধীন রাজ্য ছিল কুলু জেলা । রাজধানী ছিল নগ্গরে । পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কুলু রাজ্যের পরিধি অনেকটাই বাড়ে । সে সময়ই রাজধানী স্থানান্তরীত করে আনা হয় কুলু শহরে । কুলুর ঐতিহাসিক গুরুত্ব যথেষ্ট হওয়া সত্ত্বেও ভ্রামণিকরা কেমন যেন মুখ ফিরিয়ে আছে প্রাচীন এই শহর থেকে । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখানে কম , সে কথাও বলা যায় না । মানালীতে অবস্থানকালেই পর্যটকরা বেড়িয়ে নেয় কুলুতে । অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া দশেরা উৎসবের খ্যাতি আছে । পাহাড়ি গ্রাম থেকে উপাস্য দেবতা সহ নেমে আসেন গ্রামবাসীরা , কুলুর দশেরায় সামিল হওয়ার জন্য । মানালী থেকে আসে দেবী হিড়িম্বা , মালানা থেকে জমলু । এ রকম আরও প্রায় ৬০০ টি দেবদেবী আসেন কুলু পরিক্রমায় । বিস্তৃত ভাবে জানা দরকার , কুলুর ২৩ কিমি দূরে নাপ্পার । ইহা ছিল প্রাচীন রাজধানী , এখানে বিসুধ পাল নামে এক রাজা একসময়ে রাজত্ব করতেন । এখানে কাঠের দূর্গ অন্যতম দর্শনীয় স্থান । অন্যদিকে আসলে , রঘুনাথজি এখানে রাম নামেই পূজিত হন এবং দশেরার রাম নগর পরিক্রমায় বেরিয়ে পড়েন । রাজা জগৎ সিং অযোধ্যা থেকে মূর্তিটি নিয়ে এসে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন । কুলুতে থাকতে থাকতে দেখে নেওয়া উচিত হবে , ১৬৫৭ – র তৈরি কুলুর মহারাজা জগৎ সিং – এর রঘুনাথজির মন্দির , বৈষ্ণোদেবী মন্দির , তীরথান অভয়ারণ্য । সুলতানপুরের রাজপ্রাসাদ , জগন্নাথী মন্দির , বিজলেশ্বর মহাদেব শিবমন্দির ( দূরত্ব ১৪ কিমি ) । এছাড়া দেখে আসতে পারেন অপরূপ চিত্রকলা । সমৃদ্ধ ভিখালির দেবী ভুবনেশ্বরী মন্দির । কুলু থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৫ কিমি । 

সামসি – 

উপত্যকার বিখ্যাতজায়গা সামসি । এখানেই তৈরি হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত শাল । পদব্রজে সামসি ঘুরতে ঘুরতে দেখে নেওয়া যেতে পারে শাল তৈয়ারির পদ্ধতি । দোকানও বসেছে অনেক , স্মারক রূপে অল্প দামেই সংগ্রহ করা যায় এখানকার শাল । 

বাজায়ুরা – 

কুলু উপত্যকার আরও এক সুশ্রী প্রাচীন জনপদ বাজায়ুরায় রয়েছে অষ্টম শতাব্দীর বিশ্বেশ্বর মহাদেব মন্দির । পিরামিডের আদলে তৈরি এই মন্দির নানান দেবদেবীর মূর্তিতে সমৃদ্ধ । বাজায়ুরার উৎপাদিত ফল সারা ভারতেই বিক্রি হয় । 

জারি , কাসোল , মণিকরণ , গ্রহণ – 

কুলু থেকে মণিকরণের জন্য যাত্রা শুরু করলে মাত্র ১৪ কিমি দূরে জারি গ্রাম যাওয়া যায় । চরসের গন্ধে ভরপুর এই গ্রামের পাইনের ছাওয়া যেন একটু বেশিই মিষ্টি । নানান পর্বতশৃঙ্গও দৃশ্যমান এ গ্রাম থেকে । আরও এগোলেই মেলে কাসোল জনপদ । আলাদাভাবে এখানকার সৌন্দর্য বর্ণনা করার মতো কিছু নেই । হিমাচল প্রদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এটিও প্রকৃতির দানে পৃষ্ঠ । কাসোলের সুন্দরকে উপভোগ করে এগিয়ে যেতে হয় মণিকরণের দিকে । উচ্চতা ১৭৩৭ মিটার । এটি হিমাচলপ্রদেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে । পার্বতী নদীর তীরে অবস্থিত পার্বতী উপত্যকার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও শোভাময় জনপদ মণিকরণ । পুরাণ মতে , এখানেই দেবদেবীদের মিলন ঘটত । উষ্ণ প্রস্রবণ যেমন আছে এখানে , তেমনই এই প্রস্রবণকে ঘিরে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনি । গুরু নানকের ( ১৫৭৪ সাল ) পদধূলিও পড়েছে এইস্থানে । রয়েছে গুরদ্বারাও । নিরিবিলিতে কয়েকটা দিন কাটিয়ে দেওয়া যায় এখানে । আবার কাসোল থেকে ৯ কিমি ট্রেক করে গ্রহণ গ্রামে পৌঁছানো যায় । প্রকৃতি এখানে উদার হস্ত । অদূরেই কানাওয়ার অভয়ারণ্যে দেখে নেওয়া যায় পাহাড়ি ছাগল , সিভেট ক্যাট , কস্তুরী মৃগ , থর , স্নো লেপার্ড – এর মতো বন্যপ্রাণি ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি । মণিকরণ থেকে বাসে বারসোনিও যাওয়া চলে । সরেজমিনে দেখে নেওয়া যায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ । অদুরের জমলু মহাদেব মন্দিরটি অবশ্যই দেখতে হয় । পার্বতী নদীর তীরে ১,৭৩৭ মি . উঁচুতে উষ্ণ প্রস্রবন – এর জলে রয়েছে ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য রেডিও অ্যাক্টিভ খনিজ উপাদানের মিশ্রণ । যে কারণে এর জল সর্বরোগ – এর মহৌষধ রূপে গ্রাহ্য – এই মতামত এখানে আসা ভ্রমণার্থীগণ বিশ্বাস করেন । কথিত আছে , ১৫৭৪ সালে শিখগুরু নানক মণিকরণে আসেন এবং যখন তিনি স্থানীয় অভুক্ত মানুষদের রান্না করে খাওয়াতে চান , তখন তিনি আগুনের কোনো ব্যবস্থা না পেয়ে এই জলরাশিকে উষ্ণপ্রস্রবণে পরিণত করেন । আবার এখানে রয়েছে ১৭ শতকে রাজা জগৎ সিং – এর গড়া রামচন্দ্র মন্দির , জনশ্রুতি হল । রামচন্দ্র নিজেই এই মন্দিরকে অযোধ্যা থেকে এখানে নিয়ে আসেন । তাই এখানে রাম ও সীতার বিগ্রহ পূজিত হয় । এখানে লস্কর খানায় তীর্থ যাত্রী ও ভক্তদের জন্য খাবার বিতরণ করা হয় । রয়েছে শ্রীগুরুনানক দেবজি গুরুদোয়ারা । এটি শিখদের জন্য জনপ্রিয় তীর্থস্থান । অনেকে বলেন , গুরুনানক ও তার পাঁচ শিষ্য এই গুরুদোয়ারা ঘুরে গিয়েছেন । এখানেও রয়েছে লস্করখানা । মণিকরণ গ্রন্থটি হরিহর পর্বত দিয়ে ঘেরা বলে দেখতে নৈঃসর্গিক লাগে । 

মাণ্ডী – 

হিমাচলপ্রদেশের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র মাণ্ডীই অতীতে তিব্বত যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল । সে থেকেই এই শহরের ভৌগোলিক গুরুত্ব যথেষ্টই বৃদ্ধি পেয়েছে । ১০৪৪ মিটার উঁচু এই শহর একসময় মান্ডবনগর নামে পরিচিত ছিল । রাজপুত রাজাদের হাতে তৈরি এই শহর থেকেই কুলু উপত্যকার শুরু । বলা যায় ১৫২০ – তে তৈরি এই শহরটিই সমতলের সঙ্গে পাহাড়ের মেলবন্ধন করেছে । এ শহরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই দেখে নিতে হয় । প্রায় ৪০০ বছর আগে তৈরি সোনার কারুকার্যময় তারানা মন্দির বা শ্যামাকালী মন্দির । অদূরের রানি অমৃত কাউর পার্কের আকর্ষণও কম নয় । এছাড়াও রয়েছে ত্রিলোকনাথ মন্দির , অর্ধনারীশ্বর মন্দির , ভূতনাথ মন্দির , অমরনাথের সদৃশ মন্দির । এ সবকে ছাপিয়ে মাণ্ডীর প্রধান দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে হিন্দু , বৌদ্ধ ও শিখধর্মের তীর্থস্থান রিওয়ালসর লেক । মাণ্ডী শহর থেকে ২৫ কিমি দূরে এই লেক । উচ্চতা ১৩৬০ মিটার । এখানে ৩ টি বৌদ্ধ গুম্ফা রয়েছে । পাহাড়ের গাত্রে সরু পঞ্চসম্ভবের মূর্তিটিও চমৎকার । রয়েছে লোমন ঋষির মন্দির । লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির এবং গুরুদ্বার । হ্রদের দক্ষিণেই স্যাংচুয়ারি । সেখানে হরিণ ও হিমালয়ান বিয়ারের প্রাচুর্য । মাণ্ডী শহর থেকে ৫০ কিমি দূরস্থ পরাশর মুনির সাধনক্ষেত্র পরাশর লেকটি দেখে নেওয়া যায় একটা দিন খরচ NIT করে । পরাশর লেকের উচ্চতা ২৭৩০ মিটার । কুলুর দিকে এগোতে ১৯ কিমিতে অবস্থিত প্যান্ডো লেকটিও দ্রষ্টব্য । আবার মাণ্ডী সিমলা পথে ২২ কিমি অগ্রসর হলে সুন্দর শহর সুন্দরনগর । পাহাড় চূঁড়োর মহামায়া মন্দির , বিপাশা – শতদ্রু লিঙ্ক প্রোজেক্ট ও সুন্দরনগর হ্রদ দেখে নিতে হয় এই সফরে । আরও ৪৩ কিমি যেতে বিলাসপুরে গোবিন্দ সাগর নামের হ্রদ । এই হ্রদের জলেই ডুবে আছে অতীতের বিলাসপুর জনপদ । পাহাড়ের চূঁড়োয় নতুন করে শহর তৈরি হয়েছে । নভেম্বর থেকে মার্চ মাস এই সময় জল কম থাকায় প্রায় হাজার বছর পুরোনো বিলাসপুর শহরের নানান স্থাপত্য জেগে ওঠে । নানান মন্দিরও রয়েছে বিলাসপুরে । সুন্দরনগর থেকে অন্যপথে ১৮ কিমি গিয়ে তত্তপানি নামের উষ্ণ প্রস্রবণও বেড়িয়ে নেওয়া যায় । 

যোগীন্দর নগর – 

রাজা যোগীন্দর সেন শুকরাহাটি গ্রামে হাইডেল পাওয়ার প্রোজেক্ট গড়েছিলেন পরবর্তীতে তাঁরই সম্মানে জনপদের নাম পরিবর্তন করা হয় । এখন হিমাচলের অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি এই শহর । জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সঙ্গে সঙ্গে দেখে নেওয়া যেতে পারে উলী নদীর কৃত্রিম জলাধার । লামবাডাগ নামের কৃত্রিম জলপ্রপাতটিও সুন্দর । ইলেকট্রিক ট্রলি করে বোটে ঘোরার সুযোগ থাকলেও সকলে সাহস করে উঠতে পারেন না । তবে কোনও ক্রমে একবার উঠে পড়তে পারলে অনবদ্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয় । কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত বিষয়ের পাশাপাশি এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও দেখার মতো । পাহাড়ের চূঁড়োয় রয়েছে বন্দেরী দেবীর মন্দির , আর প্রাচীন কেল্লার ধ্বংসাবশেষ । ১৫ কিমি দূরের বীর – এও ঘুরে আসা চলে যোগীন্দর নগর থেকে । চারিদিকে ক্ষেত – খামারে ভরা বীরের বৌদ্ধ মনাস্ট্রিটি দেখার মতো ।

বৈজনাথ – 

কাংড়া উপত্যকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সুন্দর শহর বৈজনাথ ঘুরে দেখা যেতে পারে । নবম শতাব্দীতে গড়া বৈজনাথ শিবমন্দির এস্থানের অন্যতম আকর্ষণ হলেও ধৌলাধার , আশাপুরী পর্বত ও নিচ দিয়ে বলে চলা বিনোয়া নদীর দর্শন পেয়েও মুগ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না । বৈজনাথে মোট ১৬ টি মন্দির রয়েছে , আর মূর্তি রয়েছে অগণিত । ভক্তদের বিশ্বাস এই মন্দিরগুলি স্থাপন করেছিলেন পাণ্ডবরা । রাবণও অমরত্ব পাওয়ার আশায় এখানেই এসেছিলেন ।

পালমপুর – 

হিমাচলের অন্যতম স্বাস্থ্যপদ স্থান হল পালমপুর । অনেকে চা বাগিচার মাঝের স্বাস্থ্যকর আবহাওয়ার থেকে শরীর ও মনকে সতেজ করে ফিরে আসেন কাজে । ‘ লটস অফ ওয়াটার’- এর অর্থ পুলুম তা থেকেই ক্রমে নাম হয়েছে পালমপুর । পাইন ও ঝাউ গাছের ছাওয়ায় ঢাকা এইস্থানে চায়ের চাষ শুরু হয় ব্রিটিশদের হাত ধরে । বর্তমানে এখানকার চা বিশ্ববিখ্যাত । পালমপুরে অবস্থানের সময় চা বাগানগুলি ছাড়াও ঘুরে দেখে নিতে হয় চা প্রসেসিং ফ্যাক্টরি , কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় , সেন্ট জন চার্চ , বুণ্ডুলামাতার মন্দির । অদূরের জলপ্রপাতের ভীষণতাও দেখে নেওয়া চলে সুযোগ বুঝে ।

   পালমপুর থেকেই দেখতে যাওয়া যায় তাশিজং মনাস্ট্রি , গোপালপুর ন্যাশনাল পার্ক , হ্যাং গ্লাইডিং খেলার জন্য খ্যাত বিল্ডিং , শিল্পীদের গ্রাম আন্দ্রেত্তা ।

চামুণ্ডা দেবী – 

প্রায় ৭০০ বছরের পুরোনো চামুণ্ডা দেবীর মন্দিরটি ধরমশাল যাওয়ার সময় দেখে নেওয়া উচিত হবে । সুন্দর পাহাড়ি পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত মন্দিরের দেবী নাকি খুবই জাগ্রত । অদূরে নন্দীকেশ্বর শিবের গুহা , ঝরনা ও দুর্গামন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় একই সুযোগে । চামুণ্ডা দেবীর মন্দির থেকে ১৬ কিমি পায়ে হেঁটে পৌঁছানো যায় চণ্ড ও মুণ্ড অসুর বধের স্থানটিতে । 

ধরমশালা – 

কাংড়া জেলার সদর ধরমশালা ধৌলাধারের সিংহাসনে উপবিষ্ট । উচ্চতা প্রায় ১২৫০ থেকে ২০৮২ মিটার । শহরের পায়ের কাছ থেকে নেমে গেছে নানান উপত্যকা । ওক , পাইন , দেবদারু গাছে সমৃদ্ধ এই শান্ত পাহাড়ি শহরের পত্তনকাল ১৮৫৫ সালে । ব্রিটিশরা চলে গেলেও ধরমশালাকে সাজিয়ে দিয়ে গেছে , দ্বিতীয় লন্ডন বা তারচেয়েও কিছু বেশি । সবকিছুই তৈরি হয়েছে পরিকল্পনানুযায়ী , এবং ছিমছাম । দেখবেন ওদের হাতে গড়া টিউত্তর ও কার্ডিয়ান ঢঙের কটেজ চারদিকে । অবশ্য বর্তমানে , এদের পাশাপাশি বিলাসবহুল বড় বড় বাড়ি তৈরি হচ্ছে । আর তা অবশ্যই ব্রিটিশদের রুচি ও সৌন্দর্যের ধারার সাথে খাপখাইয়ে । ব্রিটিশদের তৈরি শৈলশহরগুলির মধ্যে সমধ্যে অন্যতম এটি । লর্ড এলগিন এই স্থানটিতে গ্রীষ্মকালীন বাসস্থান গড়ার চেষ্টা করেও সফল হননি । ধরমশালাকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেন দলাই লামা । মার্চ , এপ্রিল , মে , অক্টোবর ও নভেম্বর এই পাঁচ মাস ধরমশালা ভ্রমণের যথার্থ সময় । এখানে থাকার সময় দেখে নেওয়া যায় , লোয়ার

ধরমশালার কোতোয়ালি বাজার , কাংড়া আর্ট মিউজিয়াম ( মঙ্গল – শনি , সকাল ১০.০০-১৭.০০ ) , ডলস মিউজিয়াম , সেন্ট জন চার্চ , ডাল লেক , ইন্দো – চায়না ও ইন্দো – পাক যুদ্ধের শহিদদের উদ্দেশ্যে তৈরি ওয়ার ১০৩ মেমোরিয়াল , স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিবিজড়িতহরিকুঠি । আর আপার ধরমশালায় রয়েছে ম্যাকলয়েডগঞ্জ ও ফরসিথগঞ্জ । ঘুরে দেখা অবশ্য কর্তব্য । ব্রিটিশ গভর্নর স্যার ইয়ান ম্যাকলয়েডের নাম অনুসারে এইস্থানের নাম হয় ম্যাকলয়েডগঞ্জ । ধরমশালা থেকে ম্যাকলয়েডগঞ্জের দূরত্ব ১০ কিমি । ম্যাকলয়েডগঞ্জের উচ্চতা ২০৮২ মিটার । এখানে অবস্থিত ১৯৫৯ – এ চীন – তিব্বত দখল করায় দলাই লামা তার মিশন নিয়ে চলে আসেন এখানে , গড়েন মনাস্ট্রিও । চীন আক্রমণে শহিদ তিব্বতীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি স্তূপটি দেখে নেওয়া যায় । আপার ও লোয়ার ধরমশালার মধ্যে অবস্থান করছে স্কুল অফ টিবেটান কালচার লাইব্রেরি । এখানে তিব্বতীয় ভাষার নানান দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি , পুঁথি ছাড়াও রয়েছে ছোট্ট এক সংগ্রহশালা । অদূরে মনাস্ট্রি । টিবেটান হ্যান্ডিক্রাফটস সেন্টারেও ঢু মারা যায় । পছন্দসই জিনিস অল্পদামে কেনার সুযোগ রয়েছে এখানে । ১৭৫৪ – য় তৈরি বৌদ্ধ ধর্মশিক্ষা গ্রহণের বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান নরবুলিংকা ইন্সটিটিউট ও অ্যাস্ট্রো মেডিক্যাল ইন্সটিটিউটটি দেখে নিন একই সঙ্গে ।

  ম্যাকলয়েডগঞ্জের থেকে সামান্য দূরে ভাগসুনাথ শিবমন্দির , জলপ্রপাত , হ্রদ ও উষ্ণ জলের প্রস্রবণ । আবার ম্যাকলয়েডগঞ্জে ফিরে ৭ কিমি ট্রেক করে পৌঁছে যাওয়া যায় ট্রিউন্ড , সেখান থেকে আরও পাঁচ কিমি গেলে বরফ রাজ্য লিয়াকা । আবার শহরে ফিরে দেখতে যাওয়া চলে ডাল লেক ( ম্যাকলয়েডগঞ্জ থেকে দূরত্ব ৩ কিমি . ) ও লাগোয়া শিবমন্দির । আরও কিছুটা এগিয়ে যাওয়া যায় নাজ্জিতে । এখান থেকে দেখতে পাওয়া যায় নানান পর্বত শৃঙ্গ । ধরমশালার প্রাণকেন্দ্র কোতয়ালি থেকে ৩৫ কিমি দূরের অনন্যসুন্দর কারেরি লেকও ঘুরে আসা যায় একটি দিন খরচ করে ।

কাংড়া – 

এখানকার মিনিয়েচার পেন্টিং জগৎ | বিখ্যাত । হিমাচলের একান্ত আপন পাহাড়ি শৈলীর সঙ্গে মোগল শৈলীর মেল বন্ধনে তৈরি কাংড়া মিনিয়েচার ছবির প্রধান বিষয় রাধা – কৃষ্ণের প্রেম । প্রথিতযশা শিল্পীদের কাজ দেখার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার ব্রজেশ্বরী মন্দিরটির জৌলুসও দেখার মতো । আবুল ফজলের বর্ণনায় এই মন্দিরের মহত্ব প্রকাশ পায় । ১৭৪৪ , রাজা গোবর্ধন সিং – এর সময় থেকে কাংড়ার গুরুত্ব বাড়তে থাকে । ব্রিটিশরা ধরমশালাকে জেলা সদর হিসেবে বেছে নেওয়ায় এই ছোট্ট শহরের পাহাড়ি শহরে উপভোগ্য দৃশ্যরসওদাগী গুরুত্ব কমে যায় । তা হলেও এখনও এই নিরিবিলি শহর ভ্রামণিকদের মধ্যে বেশ খ্যাত । কাটোকরাজাদের তৈরি কাংড়া দূর্গটির ধ্বংসাবশেষ এই সফরে যোগ করতে পারে অন্য মাত্রা । সুলতানি রাজের সঙ্গেও এইস্থানের সম্পর্ক গভীর । চায়ের বাগানে ঘেরা কিছু কম নয় । নওয়া ১৫ কিমি দূরের মসরুর ঘুরে দেখে নেওয়া যায় ইন্দো – আর্য কৃষ্টিতে তৈরি ১৫ টি মন্দির । গাছপালা ঘেরাটোপের মধ্যে রয়েছে ছোট লেক , এখানে বোটিং করুন । ১৬ কিমি দূরে রয়েছে বৈজনাথ , ১৩২০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত । পাথরে গড়া প্রাচীন শিবমন্দির ধৌলাধারের কোলে । খোদাই শিল্পের অপূর্ব সব কাজ । এগুলি জাতীয় ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে পরিচিত । কাংড়া আর্ট মিউজিয়াম রবি ও সোমবার বন্ধ থাকে । সপ্তাহের বাকি পাঁচদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে সংগ্রহশালা।

জ্বালামুখী – 

প্রাচীন এই জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায় পুরাণে । সতীর জিহ্বা পড়েছিল এইখানে । জ্বলন্ত জিহ্বার শিখা আবিষ্কার করেন এক রাখাল । এই শিখাকে কেন্দ্র করে রাজা ভূমিচন্দ্র মন্দির নির্মাণ করেন । এই মন্দিরের চারপাশে ক্রমে গড়ে উঠতে থাকে জনপদ । এখন তা রূপ নিয়েছে শহরের । প্রাকৃতিক গ্যাসে জ্বলতে থাকা এই শিখাই মন্দিরের উপাস্য । আকবর মন্দিরটির চূঁড়ো সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছিলেন । পাঞ্জাবের রাজার দানে মন্দিরের দরজা হয়েছে রুপোর ।

  জ্বালাজি মন্দির ছাড়াও এ শহরে আরও অনেক মন্দির রয়েছে । জ্বালামুখী থেকে ৩৫ কিমি দূরে অবস্থিত চিন্তাপূর্ণি ঘুরে আসা যায় একই সঙ্গে । এখানেই রয়েছে ছিন্নমস্তাদেবী ভগবতীর মন্দির । শোনা যায় সতীর চরণ পড়েছিল এখানে , বর্তমানে এটি হিন্দুদের পরম তীর্থস্থান ।  

খাজিয়ার – 

‘ সুইজারল্যান্ড অফ ইন্ডিয়া ’ খাজিয়ারের রূপ দেখে লর্ড কার্জন বলেছিলেন এমন সৌন্দর্য দ্যা টাভেল অন্ ভারত পরিক্রমা তিনি আর কখনোই দেখেননি । এই শৈলশহরটি ১৯৫১ মিটার উঁচু । আজও কমবেশি সেই সৌন্দর্যই এখনও মুগ্ধ করে যাচ্ছে ভ্রামণিকদের । এখনও ছোট্ট এই পাহাড়ি উপত্যকা রাতের অন্ধকারে জোনাকিতে ভরে ওঠে , ঝিঁঝিঁর ডাকে জাগে অদ্ভুত নেশা । দেবদারু গাছে ঘেরা ছোট্ট লেকটিও সুন্দর । অদূরের সুন্দর গল্ফ কোর্সটিও দর্শনীয় । সামান্য এগোতেই দ্বাদশ শতাব্দীর খাজিয়ানাগের মন্দির এবং ১.৬ কিমি লম্বা ও ০.৯ কিমি চওড়া সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ ।

 ডালহৌসি থেকে খাজিয়ার যাওয়ার পথে কালাটপও বেড়িয়ে নেওয়া যায় । এখান থেকে পর্বত শৃঙ্গের পেছনে সূর্যাস্ত দেখতে খুবই ভালো লাগে । অদূরে কালাটপ – খাজিয়ার স্যাংচুয়ারিটিতে বিভিন্ন বন্যপ্রাণি দেখে মন ভরানো যায়।

চাম্বা – 

ইরাবতী নদীর ধারে ভারমোরের রাজা সাহিল ভার্মার হাতে এই শহরের পত্তন হাজার বছরের বেশি সময় আগে । অতীতে ভ্যালি অফ মিল্ক ও হানি নামে খুবই প্রসিদ্ধ ছিল এই বাণিজ্যিক শহর । তিন বর্গ কিমি বিস্তৃত রাজধানীর কেন্দ্রে এক কিমি জুড়ে রাজার প্রমোদ উদ্যান বা চৌগান । অপার্থিব সৌন্দর্যের মাঝে দাঁড়িয়েই দেখে নেওয়া যায় নিচ দিয়ে বয়ে চলা রাবি নদী আর ওপর দিকে তাকালেই দেখা যায় নানান পর্বত শৃঙ্গ । শিব ও বিষ্ণু চাম্বার উপাস্য দেবতা , সারা শহর জুড়ে অজস্র মন্দির ছড়িয়ে আছে তাদের । এখানকার চর্মজাত নানান সামগ্রীর খ্যাতি রয়েছে সারা ভারতে । চাম্বা প্রবেশ করেই দেখে নেওয়া যায় পাহাড়ের চূঁড়োয় অবস্থিত দশম শতাব্দীর চামুণ্ডা মন্দির । ডোগরা বাজারের পেছনে লক্ষ্মীনারায়ণ ও বিষ্ণু মন্দিরটি দেখে নেওয়া কর্তব্যের মধ্যে পড়ে । চাম্বার অতীত জানতে যেতে হয় হাসপাতালের বিপরীতে ভুরি সিং মিউজিয়ামে । আগস্ট মাসে স্থানীয় বাসিন্দা গদ্দীদের মিঞ্জার উৎসবের পর্যটনমূল্য যথেষ্টই । অনেক ভ্রামণিকই এই রঙিন উৎসবে সামিল হওয়ার জন্য চাম্বাতে যান । রাজা উমেদ সিং – এর গড়া অখণ্ড চণ্ডী প্রাসাদ ও চম্পাবতী মন্দির দুটিও দ্রষ্টব্য । রাজকন্যা চম্পাবতীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে চম্পাবতী মন্দিরটি নির্মিত হয় । এখানে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা পুজিত হন । এছাড়াও এখানকার অন্যান্য দ্রষ্টব্য হল লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির , সেন্ট অ্যান্ড্রু চার্চ , হরিরাই মন্দির , কাটা সান মন্দির , ভন্ডাল ভ্যালি । চাম্বা থেকে ২ কিমি দূরে সুভাষ বাওলি প্রস্রবণ পায়ে পায়ে হেঁটে দেখে নেওয়া যায় ।

মণিমহেশ – 

কৈলাশ পর্বতের ঢালে অবস্থিত মণিমহেশের সৌন্দর্য না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না । যাওয়ার পথেই পড়ে ভারমোর । এখানকার প্রকৃতিও অনন্য সুন্দর । অতীতে চাম্বার রাজ্যের রাজধানীও ছিল ভারমোর । আপেল বাগান ছাড়াও এখানে রয়েছে চৌরাশিয়া অর্থাৎ ৮৪ টি শিবমন্দির । এছাড়াও রয়েছে ভীষণদর্শনা মন্দির ও উগ্রস্বভাবা ব্রাহ্মণী গুহা মন্দির । এখান থেকে ১৮ কিমি যেতে হাড়সার গ্রামটিও ঘুরে দেখা যায় । এটিই এ পথের শেষ বসতি । আরও আট কিমি এগোতে ধানছো । সেখান থেকে চড়াই- উতরাই ভেঙে ১০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় মণিমহেশে । এখানকার আকর্ষণীয় লেক দেখার জন্য আরও ১০ কিমি পথ এগোতে হয় । এখানেই রয়েছে মণিমহেশ তথা শিবলিঙ্গ । কৈলাশ পাহাড়কেও অনেকে শিবলিঙ্গ জ্ঞানে পুজো করেন । আগস্ট – সেপ্টেম্বর এপথে যাতায়াত করা শ্রেয়। 

ভাকরা বাঁধ- ভারত তথা বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধটি দেখার অভিজ্ঞতাই আলাদা । ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই বাঁধের ওপর দিয়ে ৩০ ফুট চওড়া রাস্তা তৈরি হয়েছে । এ পথেই হাঁটতে হাঁটতে দেখে নেওয়া যায় শতদ্রু নদের বিশালতা । বাঁধের উচ্চতা ও ‘ ভি ’ আকৃতি দেখে সাধারণ পর্যটকদের অবাক হতেই হয় । শতদ্রুর জল ধারণ করছে গোবিন্দ সাগর । ১৬৬ বর্গ কিমি বিস্তৃত এই জলাশয়ে মাছ ধরা ও বোটিং – এর ব্যবস্থা রয়েছে । হ্রদের চারপাশের প্রকৃতি ও পাখিদের রকমভেদ দেখার মতো । এই হ্রদ থেকেই হিমাচল প্রদেশ , দিল্লি , পাঞ্জাব , হরিয়ানা , রাজস্থানের এক কোটি একর জমিতে সেচের জল সরবরাহ হচ্ছে । এখানে উৎপাদিত ১০ লক্ষ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ দেশের নানান প্রদেশকে আলোকিত করছে । ভাকরা- নাঙ্গাল দেখার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয় , পিআরও , নাঙ্গাল টাউনশিপ , নাঙ্গালের থেকে । ছবি তোলা এখানে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ।

রেণুকাজি – 

রাজাপ্রসেনজিৎ – এর মেয়ে , পরশুরামের মার নামে এই শহরের নাম হয়েছে রেণুকাজি । পিতা জমদ্যাগ্নির আদেশে পরশুরাম কুঠার আঘাতে মাকে দ্বিখণ্ডিত করে দেয় । এইস্থানে অবস্থিত হ্রদকে দেখে মনে হয় যেন রেণুকাজি স্বয়ং ঘুমিয়ে আছে । লেকের পাশেই রয়েছে রেণুকাজির মন্দির । পরশুরাম লেকের পাশে অবস্থিত পরশুরাম মন্দিরটিও দেখার মতো । আরও অনেক মন্দির রয়েছে রেণুকাজিতে । লেককে ঘিরে গড়ে উঠেছে ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি , লায়ন সাফারি ও চিড়িয়াখানা । ফলে অরণ্য দেখার অনেকটাই।

হিমাচল প্রদেশ প্রশ্ন ও উত্তর (Himachal Pradesh FAQ Question and Answer in Bengali) :

  1. হিমাচল প্রদেশ এর রাজধানী কোথায়?

Ans: হিমাচল প্রদেশ এর রাজধানী সিমলা।

  1. হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের জেলার সংখ্যা কত?

Ans: হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের জেলার সংখ্যা 12 টি।

  1. হিমাচল প্রদেশ এর জনসংখ্যা কত?

Ans: হিমাচল প্রদেশ এর জনসংখ্যা প্রায় ৬৮ লক্ষ ৫৭ হাজার জন।

  1. হিমাচল প্রদেশ এর নারী / পুরুষ অনুপাত কত?

Ans: হিমাচল প্রদেশ এর নারী / পুরুষ অনুপাত ৯৭.৪ / ১০০ জন।

  1. হিমাচল প্রদেশ এর আয়তন কত?

Ans: হিমাচল প্রদেশ এর আয়তন ৫৫৬৭৩ বর্গকিলোমিটার।

  1. হিমাচল প্রদেশে জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমি কত?

Ans: হিমাচল প্রদেশে জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমি ১২৩ জন।

  1. হিমাচল প্রদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কত?

Ans: হিমাচল প্রদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১২.৮১ শতাংশ ( ২০০১-২০১১ )।

  1. হিমাচল প্রদেশে সাক্ষরতার হার কত?

Ans: হিমাচল প্রদেশে সাক্ষরতার হার ৮৩.৭৮ শতাংশ।

  1. হিমাচল প্রদেশ এর প্রধান ভাষা কি?

Ans: হিমাচল প্রদেশ এর প্রধান ভাষা হিন্দি কিন্তু পাঞ্জাবি ও ইংরেজিরও চল আছে।

  1. হিমাচল প্রদেশ এর আবহাওয়া কেমন?

Ans: এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসে এখানকার আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ থাকে । জুলাই থেকে আগস্ট মাস বর্ষাকাল । নভেম্বর থেকে মার্চ বরফে ঢাকা থাকে এ রাজ্য ।

◆ আরও দেখুন :-

হিমাচল প্রদেশ এর ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ | Facts About Himachal Pradesh in Bengali

আশা করি এই পোস্টটি বা ” হিমাচল প্রদেশ এর ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ | Facts About Himachal Pradesh in Bengali ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir): ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir): ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir): ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ : জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের একটি রাজ্য। এই রাজ্যটি প্রধানত হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত। এই রাজ্যের দক্ষিণে ভারতের হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাব রাজ্যদুটি অবস্থিত। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের উত্তরে ও পূর্বে চিন অবস্থিত। এই রাজ্যের পশ্চিমে ও উত্তরপশ্চিমে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে কাশ্মীরের পাকিস্তান-অধিকৃত অংশ ও গিলগিট-বালটিস্তান অবস্থিত। জম্মু, কাশ্মীর উপত্যকা ও লাদাখ – এই তিন অঞ্চল নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যটি গঠিত।

  জম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাস, নদী, পাহাড়, ঐতিহাসিক স্থান, জনসংখ্যা ইত্যাদি সম্পর্কে জানব শুকতারা Tv র এই পর্বে।

জম্মু ও কাশ্মীর সম্পর্কে কিছু তথ্য (Facts About Jammu and Kashmir in Bengali)

ভারতের রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir)
রাজধানী শ্রীনগর ( গ্রীষ্মকালীন ) , জম্মু ( শীতকালীন )
জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ ৫০ হাজার
নারী / পুরুষ ৮৮.৩ / ১০০
আয়তন ২২২২৩৬ বর্গকিলোমিটার
জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমি ১২৪
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২৩.৭১ শতাংশ (২০০১-২০১১)
সাক্ষরতার হার ৬৮.৭৪ শতাংশ
প্রধান ভাষা উর্দু (এছাড়াও কাশ্মীরি , লাডাকি , ডোগরি , পাঞ্জাবি , হিন্দি ও ইংরেজির চল আছে)
আবহাওয়া শীতকালে তাপমাত্রা ০.৯ থেকে ১২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে ।
গড় বৃষ্টির পরিমাণ ১০৫ সেমি

জম্মু ও কাশ্মীর এর ইতিহাস (Jammu and Kashmir History in Bengali) :

 দীর্ঘ ঘাত – প্রতিঘাতের পর মোগল সম্রাটের হাতে আসে ভারতের মাথার মণি কাশ্মীর রাজ্য এবং সেই সাম্রাজ্যের পতনের ( ১৭৫৬ ) পর বেশ কয়েক দশক স্বাধীন ছিল এই রাজ্য । সেই থেকেই স্বাধীনতার প্রতি আনুগত্য এই উপত্যকার মানুষের । ১৭৫৬ থেকে ১৮১৯ পর্যন্ত সর্বাঙ্গীন সুন্দর এই রাজ্য স্বাধীন ছিল , নিজের মতো । কিন্তু গোল বাঁধে ঠিক তারপরেই । কাশ্মীর তখন কাবুলের দখলে । দূর থেকে আগত কাবুলিদের দখল কেন সহ্য করবেন পার্শ্ববর্তী রাজ্য পাঞ্জাবের রাজা রণজিৎ সিংহ । কাবুলিদের হটিয়ে ভুস্বর্গের ওপর দখল নিলেন তিনি । আবার ক্ষমতা হাত বদল হল ১৮৪৬ – এ । পাঞ্জাবের রাজাকে পরাজিত করে শাসকের স্থান দখল করল ব্রিটিশরা । কাশ্মীর থেকে শিখ রাজাদের অপসারণে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সাহায্য করেছিলেন জম্মুর রাজা গুলাব সিং । তাঁর সাহায্যে ইংরেজরা খুশি হয়ে অমৃতসর সন্ধি অনুসারে তাঁকে মাত্র সাত লাখ টাকায় ইজারা দিল কাশ্মীর রাজ্য । এই সময় থেকেই রাজ্যের নাম হল জম্মু ও কাশ্মীর । 

  শুরুতে যে ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে কেবলমাত্র সেখান থেকেই লিখিত হয়নি এ রাজ্যের ইতিহাস । কাশ্মীরের ইতিহাস আরও অনেক পুরানো । বিভিন্ন পুরাণে এ রাজ্যের উল্লেখ মেলে । জানা যায় , প্রজাপতি ব্ৰহ্মা ( কাশ্যপ ) জলোদ্ভব অসুর বধ করে এই রাজ্যের পত্তন করেন । এই কাজে তাকে সাহায্য করেন বিষ্ণু ৩১ ও শিব । অন্য পুরাণে বর্ণিত হচ্ছে , অতীতে সতীসর নামের এইস্থান ছিল জলমগ্ন । দৈত্যদের বসবাস ছিল এই অঞ্চলে । কিছু সাধারণ মানুষের বাস একদা থাকলেও তারা দৈত্যের ভয়ে বাসস্থান পরিত্যাগ করে অন্যত্র পালিয়েছিল । ফলে সতীসরে অসুর দমন আবশ্যক হয়ে পড়ল । দায়িত্ব নিলেন ব্রহ্মার মানসপুত্র কাশ্যপ । বিশাল সংখ্যক অসুর মৃত্যু বরণ করে মহামুনি কাশ্যপের হাতে । তার হাতে মরতে মরতে একটিও অসুর বাকি থাকে না সতীসরে । পুরোনো বাসিন্দারা ও কিছু নতুন সংখ্যার মানুষ এসে জনপদ গড়ে তোলেন এইস্থানে । নাগরাজ তক্ষকের হাতেজন দায়িত্ব দিয়ে অযোধ্যায় ফিরে যান মুনি । কাশ্যপ মার বা কাশ্যপ মীর থেকেই নাকি এইস্থানের নাম হয়েছে কাশ্মীর । মহাভারতেও জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের উল্লেখ মেলে । এখানেই একদা এসেছিলেন রামচন্দ্রের ছোটো ভাই ভরত ও শত্রুঘ্ন । 

জম্মু ও কাশ্মীর এর প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক পরিবেশ :

আপাদমস্তক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য সমুদ্রতট থেকে ১৫৮৫-১৮২৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থান করছে । ভারত রাষ্ট্রের উত্তর প্রান্তের এই রাজ্যকে চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছে হিমালয় পর্বতমালা । পৃথিবীর স্বর্গরাজ্যকে পীরপাঞ্জাল পর্বতশ্রেণি সমতল ভারতের থেকে আলাদা করে রেখেছে । অর্থাৎ রাজ্যের দক্ষিণে রয়েছে পীরপাঞ্জাল । এই পর্বত শৃঙ্গের এপারে রয়েছে ভারত রাষ্ট্রের অন্য রাজ্য হিমাচল প্রদেশ । দক্ষিণ – পশ্চিম দিক সংযুক্ত রয়েছে পাঞ্জাবের সঙ্গে । দক্ষিণ – পূর্ব তথা সমগ্র পূর্ব ও উত্তরের কিছুটা অংশ জুড়ে রয়েছে চীন অধীনস্থ তিব্বতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত । সীমানার এপারে বেশ কিছুটা অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করছে কাশ্মীর রাজ্যের লাডাক প্রদেশ । নাঙ্গা পর্বত লাড়াককে তিব্বত থেকে আলাদা করলেও স্থানীয় মানুষের ধর্ম , সংস্কৃতি ও দৈনন্দিন জীবনে তার প্রভাব বর্তমান । রাজ্যের উত্তর দিকের সামান্য অংশের সঙ্গে সীমানা রয়েছে আফগানিস্তানের । বাকি উত্তর ও পশ্চিমের সমগ্রটাই পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বর্তমান । অবস্থানের দিক থেকে সমগ্র জম্মু – কাশ্মীরকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় । অদ্ভুতভাবে এই তিন প্রদেশের ভাষা , সমাজ ও সংস্কৃতি ভিন্ন । পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী এলাকা অর্থাৎ সমতল জম্মুতে বসবাস করেন শিখ তথা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা । একদা তাঁরা ডোগরা রাজবংশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । রাজ্যের মধ্যস্থানে একদা গড়ে উঠেছিল মোগল সম্রাটের গ্রীষ্মাবাস । কারাকোরাম , জাঁসকর ও পীরপাঞ্জাল পর্বতে ঘেরা ১৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই অঞ্চলটিই রাজ্যের মুখ্য ভ্রমণকেন্দ্র । এখানে বসবাস করেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষেরা । উত্তর সীমান্তের লাডাকের উচ্চতা প্রায় ৭০০০ মিটার । এখানে বসতি স্থাপন করেছেন বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী মানুষজন । তিব্বতীদের প্রভাব সুস্পষ্ট এদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে । অনেকে এইস্থানকে মিনি তিব্বতও বলে থাকেন । ভারত – চীন ( ১৯৬২ ) যুদ্ধে লাডাক দখল করেছিল শত্রুপক্ষ । এখন ভারতীয় সেনার বিশাল বাহিনী সর্বদা মোতায়েন রয়েছে লাডাক সীমান্তে।

জম্মু ও কাশ্মীর এর সাংস্কৃতি (Culture of Jammu and Kashmir) :

 কলহনের লেখা শ্লোক থেকে জানা যায় মৌর্যসম্রাট অশোকের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল কাশ্মীর । কুষাণ রাজ কণিষ্কও এখানকার রাজা ছিলেন । এই দুই রাজার রাজত্বকালেই বৌদ্ধধর্ম বিস্তার লাভ করেছে এখানে । জানা যায় বিশ্ববিখ্যাত তৃতীয় বৌদ্ধ কংগ্রেসও বসেছিল কাশ্মীরে । হিউয়েন সাঙ – এর বর্ণনা অনুযায়ী বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারক মধ্যাস্তিকার হাত ধরেই উপত্যকায় গৌতম বুদ্ধ প্রচারিত ধর্মের আগমণ । আজ কাশ্মীরের খ্যাতি জাফরান চাষের জন্য , এই সন্ন্যাসীর হাতেই তা শুরু । হিন্দু রাজাদের রাজত্বকালে ক্রমে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ক্ষীণ হয় । আনুমানিক সপ্তম শতাব্দীতে রাজ্যের প্রায় সমস্ত মানুষই হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেন । ধারণা , এসময়েই এখানে এসেছিলেন সনাতন ধর্ম প্রচারক গুরু শঙ্করাচার্য । হিন্দু রাজাদের হাত থেকে কাশ্মীরের ক্ষমতা চলে যায় তিব্বতের বৌদ্ধ রাজকুমারের হাতে । বৌদ্ধ রাজা রিনচিন ধর্মান্তরীত হয়ে ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত হন ১৩২০ – তে । তিনিই ভুস্বর্গের প্রথম মুসলিম সম্রাট । এই বংশেরই সম্রাট জাইনুল আবেদিনের ( ১৪২০-৭০ ) সময়ে রাজ্যের অভূতপূর্ব উন্নতি হয় । যোগাযোগ ব্যবস্থা , কৃষিতে আমূল পরিবর্তনকারী এই বাদশাহকে কাশ্মীরের বাসিন্দারা এখনও শ্রদ্ধা করেন । শিল্প – সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য । কাশ্মীরের বিখ্যাত হস্তশিল্পের জনক বলা হয়ে থাকে তাঁকেই । সুন্দর সূচিশিল্পের উপত্যকায় আগমন এ সময়েই পারস্য ও সমরখন্দ থেকে । জাইনুল আবেদিনের উদ্যোগেই বিদেশি শিল্পীরা এখানে থেকে কাজ করতেন ও স্থানীয়দের কাজ শেখাতেন । আইনের খসড়া তৈয়ারি করানো ছাড়াও পণ্ডিতদের উপত্যকায় ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন তিনি । হিন্দু পণ্ডিতদের উচ্চপদস্থ নানান প্রশাসনিক পদেও আসিন করেন । জাইনুল আবেদিনের রাজত্ব শেষ হতে না হতে ক্রমে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটানোর তাগিদে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে উপত্যকার মানুষেরা । সফলও হন তারা । অবশ্য কিছুকাল মাত্র স্বাধীনতা ভোগ করার পর ( ১৫৮৬ ) তাঁদেরকে আসতেই হয় শক্তিমান মোগল বাদশাহ শাসনে । এরপরের ইতিহাস আমাদের অজানা নয় ।

 তবে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ইতিহাসের অন্য অধ্যায় শুরু হয় ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের পর । ১৯৪৭ সাল , অনেককাল আগে থেকেই ডোগরা রাজার রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর একরকম স্বাধীনই ছিল । সদ্য বিভক্ত হওয়া ভারত ও পাকিস্তান ভূখণ্ডের মাঝামাঝি স্থানে স্বাধীন রাজার রাজত্ব । চোখ পড়ল দু দেশেরই । পাকিস্তান প্রথমেই এ রাজ্যকে নিজের দখলে আনার চেষ্টায় ব্রতী হল । নতুন সৃষ্ট রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কর্তারা কাশ্মীর দখল করার জন্য সেনা মোতায়েন ও সন্ত্রাসমূলক কাজ চালিয়ে যেতে লাগল । ৬৮ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী রাজ্যের হিন্দু রাজা হরি সিং সাহায্য চাইলেন ভারতের কাছে । দিল্লির নির্দেশ মতো ১৯৪৭ – এর ২৬ অক্টোবর ভারত রাষ্ট্রে যোগও দিলেন মাত্র কয়েকদিন আগে পর্যন্ত স্বাধীন থাকা এই রাজ্য । সমতল ভারত থেকে কাশ্মীর যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল লাহোর হয়ে । পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত সে পথ ব্যবহার করতে পারলো না ভারতীয় সেনা , বিমানে করে অবতরণ করল উত্তপ্ত কাশ্মীরে । যুদ্ধ লেগে গেল ভারত – পাকিস্তানের । রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপে ১ লা জানুয়ারি , ১৯৪৯ – এ যুদ্ধবিরতি ঘটল । ততদিনে ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানকে ঠেলে রাজ্যের প্রায় শেষ সীমানায় নিয়ে গিয়েছে । অধিকৃত অঞ্চল বরাবর নির্ধারিত হল কাশ্মীরের সীমান্ত । মাত্র কয়েক বছর আগের স্বাধীন রাজ্য দ্বিখণ্ডিত হল , বুক চিরে হল আন্তর্জাতিক সীমানা । ভারতের কাছে রইল তিন ভাগের দুইভাগ আর পাকিস্তান রাখল তিনভাগের একভাগ । উপত্যকাবাসীর তুমুল বিদ্রোহ আন্দোলনও যে – কোনো এক দেশে আনতে পারল না সমগ্র রাজ্যকে । দুখণ্ডের একটি অংশেই রাজত্ব চালিয়ে যান রাজা । পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে কোনও রাজা ছিল না , তাই এই অংশকে তাঁরা আজাদ কাশ্মীর নামে আখ্যায়িত করেছিল । এমন নাম দেওয়ার পেছনে ছিল আরও এক উদ্দেশ্য , বোঝাতে চাওয়া হল ভারতের দিকের কাশ্মীর অধীন সেখানে কোনও স্বাধীনতা নেই , আর পাকিস্তানের অংশে সুখেই রয়েছে স্বাধীন মানুষেরা। 

 ১৯৫৭ তে স্বায়ত্ত শাসনের অবসান ঘটে ভারত রাষ্ট্রের অংশটি দেশের সংবিধানের প্রতি আস্থা দেখাল । ভারতের নতুন রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল জম্মু ও কাশ্মীর । এই রাজ্যকে কেন্দ্র করেই ১৯৬৫ ও ১৯৭১ – এ আরও দুবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশি দুই রাষ্ট্র । রাজ্যের অভ্যন্তরেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠি । তাঁরা সদা – সর্বদা ব্যস্ত স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় । বর্তমানে ভারতের মাথার কোহিনুর , প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খনি জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য অনেকটাই শান্ত ।

জম্মু ও কাশ্মীর এর জলবায়ু (Climate of Jammu and Kashmir) :

 ঋতুভেদে ভূস্বর্গের সৌন্দর্যও বদলায় । গ্রীষ্মে সমগ্র উপত্যকা গোলাপি ও সাদা রঙের ফুলে ভরে ওঠে । এ সময়ই ঘুরে দেখে নেওয়া যায় সমগ্র রাজ্যটিই । শীতকালে এখানে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য । তীব্র শীত সহ্য করে যদি একবার পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে তাহলেই দেখতে পাওয়া যায় বরফে ঢাকা সমগ্র উপত্যকা । সুবিশাল ডাল হ্রদের জল এ সময় বরফে পরিণত হয় । সহজেই এখান দিয়ে হেঁটে পারাপার করা যায় । এই সময়ে শ্রীনগর থেকে রাজ্যের সরকারি দপ্তর স্থানান্তরিত হয় জম্মু শহরে । 

জম্মু (Jammu) :

জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের শীতকালীন রাজধানী জম্মু । চন্দ্রভাগা নদীর উপনদী তাওয়াইয়ের তীরে অবস্থিত এই শহরটি । গরমের সময় আবার রাজ্যপাট উঠে যায় শ্রীনগরে । কারণ জম্মুতে গরমের প্রকোপ প্রচণ্ড । __ দ্যা ট্রাভেল অনুন্ ভারতপরিক্রা গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে । রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি সমুদ্রতট থেকে ৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত । তবে বেশ কিছু জায়গায় সমতলভূমিও রয়েছে । জাম্বু রাজা প্রতিষ্ঠিত অতীতের জাম্বুনগরে বর্তমানে বসবাস করেন ডোগরা সম্প্রদায়ের মানুষ । বেশ কয়েক শতাব্দী ডোগরা রাজার রাজ্যও ছিল বর্তমান জম্মু । ডোগরাদের ভাষা ডোগরি , সংস্কৃত , ফারসি ও পাঞ্জাবি মিশ্রিত মধুর । ভ্রামণিকদের কাছে এ শহরের কদর না থাকলেও ব্যবসায়ীদের জন্য এটিই ভূস্বর্গ । তাওয়াই ও চন্দ্রভাগা নদীর তীরে অবস্থিত শহরটি জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র ৷ রাজ্যে ভ্রমণকালে জম্মু প্রবেশদ্বার ও জংশন রূপে কাজ করে । তা সত্ত্বেও জম্মু অবস্থানকালে ঘুরে দেখা যায় এখানকার বিখ্যাত কিছু স্থান ।

রঘুনাথজির মন্দির (Raghunath Ji Temple) – 

রাজা গুলাব সিং – এর সময় ১৮৩৫ – এ এই মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয় , শেষ হয় ছেলে রণবীর সিং – এর সময় , ১৮৬০ – এ । সুদীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি এই মন্দির দেখলেই তৃপ্তি পাওয়া যায় । শহরের মূল আকর্ষণ এই মন্দিরের দেওয়াল সোনা দিয়ে মোড়া , সঙ্গে রয়েছে মার্বেল ও রঙিন পাথরের কারুকার্য আর রকমারি দেওয়াল চিত্র । সুদর্শন মন্দিরে পুজিত হয় রাম , লক্ষ্মণ ও সীতা । এই চত্বরেই রয়েছে আরও নানান মন্দির । সূর্যাস্তের সময় মন্দির চত্বর অসাধারণ রূপ ধারণ করে । অদূরেই ১৮৮৮ – তে তৈরি আরও এক রঘুনাথজির মন্দির ও ১৮৮৩ – র হাজার শিবলিঙ্গের রণবীরেশ্বর মন্দির দেখে নেওয়া চলে একই সঙ্গে । জম্মু থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে কোলকোন্ডালি মন্দির । ৪ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে পির খোহ । এখানকার দর্শনীয় বিষয় গুহার অভ্যন্তরে শিবলিঙ্গের অবস্থান । এছাড়াও দেখে নিতে পারেন লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির ।

বাহু দূর্গ (Bahu durga) – 

ডোগরা রাজা বাহুলোচনের হাতে তৈরি এই দুর্গটি আজ জম্মুর অন্যতম দর্শনীয় স্থান । শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে তাওয়াই নদীর বাম পাড়ে অবস্থিত ডোগরা রাজার তৈরি অজস্র মন্দিরে ভরা এই দুর্গটি পরবর্তীতে দখল করেন সূর্য বংশীয় রাজা জম্বুলোচন । অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে আবার ডোগরা রাজারা দখল করে নেন এই দুর্গ । এ চত্বরে অজস্র বানরের বাসা আজ । প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাহু দুর্গের ঠিক প্রবেশদ্বারের কাছেই রয়েছে আকবরের তৈরি মসজিদ । দূর্গের অভ্যন্তরে রয়েছে বাওয়েওয়ালি মাতা বা মা কালীর মন্দির । এখানে রয়েছে মহামায়া মন্দির । সুন্দর বাগিচায় ঘেরা এই দুৰ্গে কিছুটা সময় কাটানো চলে । সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এই দুর্গ দর্শন করা যায় । বিপরীতেই রয়েছে মহারাজা হরি সিং – এর তৈরি মুবারক মাণ্ডী প্রাসাদ । রাজস্থানি , ইউরোপীয় ও মোগল শৈলীর এই প্রাসাদ তৈরি হয় ১৮২৪ – এ । এখান থেকে প্রায় সমস্ত শহরটাকেই দেখতে পাওয়া যায় । সূর্যাস্তের সময় সমগ্র জম্মু শহরকে এখান থেকে দেখে নেওয়া যায় । 

রামনগর দূর্গ (Ramanagar durga) – 

রাজা কৃষ্ণদেবের তৈরি এই মন্দিরটি জম্মু শহরের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত । দূর্গের অভ্যন্তরস্ত মসজিদটি দেখে বোঝা যায় মুসলিম প্রজাদের প্রতি রাজার ভালোবাসা । এছাড়াও বিধ্বস্ত দূর্গের প্রতিটি দেওয়ালই ধারণ করে রেখেছে বাসোলী শৈলীর চিত্র । নানান আখ্যান ধরা রয়েছে এইসব চিত্রে । 

ডোগরা আর্ট মিউজিয়াম (Dogra Art Museum) – 

ঘুরতে ঘুরতে দেখে নেওয়া যায় ১৯৫৪ – য় নির্মিত বাসোলী ও ডোগরা শিল্পকর্মে সমৃদ্ধ সংগ্রহশালাটি । ৬০০ – র অধিক ছবি , ভাস্কর্য ও নানান হস্তশিল্পের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় এখানে । সোমবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য যে কোনো দিন গান্ধিভবনের ডোগরা আর্ট মিউজিয়ামে ভ্রমণ করা যায় । মাথায় রাখতে হবে গরমের দিনে সকাল ৮.০০ থেকে দুপুর ১.৩০ পর্যন্ত ও শীতে সকাল ১০.৩০-১৬,৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে এই সংগ্রহশালা । 

অমরমহল প্রাসাদ (Amarmahal Palace) – 

এখানে গিয়েও দেখে নেওয়া যায় বেশ কিছু দেশি – বিদেশি দুষ্প্রাপ্য জিনিসের সংগ্রহ । ১৯০৭ – এ ফরাসি স্থাপত্য শৈলীতে গড়ে ওঠা এই প্রাসাদে দেখা মেলে রাজ পরিবারের ব্যবহার করা আসবাবপত্র , বইপত্র , মিনিয়েচার ছবির সংগ্রহ । !সোমবার ছাড়া অন্য যে কোনো দিন সামান্য সময় খরচ করে দেখে নিন এই সংগ্রহশালা । সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা এবং দুপুর ২ টো থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে মিউজিয়াম । এছাড়াও জম্মু শহরে হরি সিং জেনানা পার্ক , রাজেন্দ্র পার্ক , পির খো , গুহামন্দির , রণবীর ক্যানেলের মতো আরও অনেক দেখার জায়গা রয়েছে । প্রয়োজন শুধু সময়ের ।

শ্রীনগর (Srinagar) :

সম্রাট অশোক মেয়ে চারুমতীকে নিয়ে ধর্মযাত্রায় বেরিয়েছিলেন । ৩ শতাব্দীর এই যাত্রায় বিভিন্নপ্রাস্ত ঘুরে যখন ডাল লেকের পাড়ে এসে মুগ্ধ হয়ে যান সম্রাট । মেয়ে চারুমতীর ইচ্ছায় বৌদ্ধ বিহার গড়ে তোলেন অশোক ডাল হ্রদের তীরে । এই বিহারকে কেন্দ্র করেই ক্রমে হরি সিং পর্বতের পাদদেশে জনসমাগম হতে থাকে । গড়ে ওঠে জনপদ । এই জনপদই রূপ নেয় শহরের । শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা মাথায় রেখে নামকরণ করা হয় শ্রীনগর । অনেকের ধারণা এই জনপদের আদি নাম ছিল সূর্যনগর , তারই অপভ্রংশ নাকি শ্রীনগর । পর্যটক হিউয়েন সাঙ – এর বিবরণ থেকে জানা যায় , বর্তমান শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রবর সেন , খ্রিস্টাব্দ শুরুর শতকে । এ সময় শহরের নাম ছিল প্রবরপুরা ।

 এখন এই শহরটিই জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী । অত্যধিক আধুনিক পদ্ধতিতে গড়ে ওঠা শ্রীনগরের জনসংখ্যা প্রায় আট লাখ । ৩৭.৮ বর্গ কিমি বিস্তৃত শহরটির প্রাণবায়ু ধারণ করে রেখেছে ডাল হ্রদ ও ঝিলম । সমুদ্রতট থেকে ১৫৩০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ঝিলমকে উত্তরে রেখে সম্প্রসারিত হচ্ছে শহর ।

 বেশিরভাগ ভ্রামণিকই জম্মু ও কাশ্মীর ভ্রমণের সিডিউল করেন শ্রীনগরকে কেন্দ্র করে । আর সেটাই করা উচিত । কারণ এখানে থাকা , খাওয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিবিধ সুযোগ রয়েছে । তবে রাজনৈতিক কারণে আজ সমগ্র শ্রীনগরই সেনাবাহিনীর হাতে । ফলে বিভিন্ন স্থানে স্বাধীন চলাফেরায় নিষেধ আছে । কাশ্মীর ভ্রমণের স্মারক রূপে বিভিন্ন জিনিস ক্রয়ের সবথেকে ভালো সুযোগ শ্রীনগরেই । এখানেই বসেছে সরকার পরিচালিত ও বেসরকারি নানান বাজার । বাজার ঘুরে দেখে সস্তায় সংগ্রহ করা যায় শাল , কম্বল , আখরোট , জাফরানের মতো নানাবিধ দ্রব্য ।

 ভ্রামণিকদের সুবিধার জন্য গড়া সরকারি ট্যুরিস্ট রিসেপশন সেন্টারে গিয়ে পকেটের মাপ অনুযায়ী থাকা , খাওয়ার জায়গা ঠিক করে নেওয়া যায় । কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরাসরি হোটেলে যোগাযোগ করায় অনেকটাই খরচা বাঁচে । থাকা , খাওয়া ছাড়া সরকারি , বেসরকারি বাস , ট্রেন , বিমান , গাড়ি বুকিং – এর সুবিধা রয়েছে এখানে । এখান থেকেই পাওয়া যায় সাইট সিয়িং – এর টিকিট । উচিত হবে প্রথম দিন গিয়েই পর পর সাত দিনের প্যাকেজ ট্যুরে টিকিট কেটে রাখা । তবে যেন শ্রীনগরে ৩৭ এজেন্টের সংখ্যা অত্যধিক । শ্রীনগর অবস্থানকালেই কাশ্মীরের বিশেষ বিশেষ কয়েকটি ভ্রমণকেন্দ্র দেখা হয়ে যায় । এখানে শঙ্করাচার্যের মন্দির আছে । কলহনের ‘ রাজতরঙ্গীনী ‘ – তে শঙ্করাচার্য মন্দিরের উল্লেখ আছে । এই শিবমন্দিরে তিনি দীর্ঘকাল তপস্যা করেছিলেন । ২০০ খ্রীষ্টপূর্বে সম্রাট অশোকের পুত্র নির্মাণ করেন এই মন্দির । 

ডাল লেক (Dal Lake) – 

শহরের কেন্দ্র থেকে আট কিমি ও ট্যুরিস্ট রিসেপশন সেন্টার থেকে মাত্র হাফ কিমি দুরে শ্রীনগর তথা কাশ্মীরের চোখের মণি তথা প্রাচ্যের ভেনিস ডাল হ্রদ । প্রায় ৬ কিমি দৈর্ঘ্য ও ৩ কিমি প্রস্থ বিশিষ্ট ডালকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে । গাগরিবাল , লাকুতি ডাল ও বড়া ডাল । এই লেকের মাঝেই ভেসে আছে শয়ে শয়ে হাউস বোট । থাকা – খাওয়ার বিবিধ ব্যবস্থা থাকে এখানে । হ্রদের মাঝে হাউস বোটে থাকার অভিজ্ঞতাই অনবদ্য । শিকারা চড়ে সারাদিন হাজারো দোকানদার তাদের পসরা সাজিয়ে আসে বোটে বোটে । সমগ্র কাশ্মীরে যা পাওয়া যায় এই লেকের জলে ভেসেও সে সকল জিনিস কেনা সম্ভব । এমনকি পোস্ট অফিসও আসে শিকারা করে ভেসে ভেসে । পাড় থেকে মানুষকে হাউস বোট পর্যন্ত পৌঁছানোর যানও শিকারা । লেকের পূর্বদিকে হরি সিং , দক্ষিণে শঙ্করাচার্য পর্বত আর পাড় ধরে দাঁড়িয়ে আছে শ্রীনগরের হাজারো হোটেল । ডালের পাড়ে বুলেভার্ড রোডে এসে দাঁড়ালেই অবাক হতে হয় রঙিন এই ভ্রমণকেন্দ্র দেখে । ডালের উত্তর পাড় বরাবর রয়েছে একাধিক মোগল বাগিচা , সেগুলিতে বসেও কিছু সময় ডালের শীতল হাওয়া খাওয়া যেতে পারে । পশ্চিম দিক আলোকিত করেছে হজরতবাল মসজিদ । লেকের জলেও ভেসে বেড়াচ্ছে নানান উদ্যান । তাতে চাষবাসও হয় । জনবসতিও গড়ে উঠেছে এই দ্বীপে । বর্ষার দিকে পদ্মের সঙ্গে ওয়াটার লিলি ফোটে এই হ্রদে । ফুলের মধ্যে দিয়ে পথ হয় শিকারা যাওয়ার । ফুল ঠেলে শিকারা করে জলবিহার করতে করতে নিজেকে সম্রাট শাহজাহানের মতো শৌখিন মানুষ বলে মনে হয় অনেক ভ্রামণিকের । আর যদি চাদনি রাত হয় , তাহলে কোনও কথাই নেই । ডালের জল থেকে চাঁদনি ছলকে ছলকে উঠে এক মায়াবি পরিবেশ তৈরি করে । হ্রদ থেকে এক কিমি দীর্ঘ খাল কেটে যোগাযোগ করা হয়েছে ঝিলমের সঙ্গে । এই খালপথে ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও অসাধারণ । 

চারচিনার (Charchinar) – 

হ্রদের মাঝামাঝি শাহজাদা মুরাদের হাতে রোপন করা চারটি চিনার গাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে । লাগোয়া দ্বীপটির নাম হয়েছে চারচিনার দ্বীপ । শিকারা চড়ে চলা যায় এখানে । রেস্টুরেন্টও রয়েছে এই দ্বীপে । 

কবুতরখানা (Kabutarakhana) – 

অদূরে কবুতরখানা দ্বীপ । এখানেই রাজা রাজরাদের শখের পায়রা পোষা হত । এখনও সেখানে পায়রা বর্তমান আছে কিনা তা জানার কোনও উপায় নেই । কারণ , দ্বীপে ওঠার অনুমতি নেই , দূর থেকে দেখে নিতে হয় কবুতরখানা ।

নেহরু পার্ক (Nehru Park) – 

ডালের অংশ গাগরিবালে গড়ে তোলা হয়েছে নেহরু পার্ক । শঙ্করাচার্য পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই পার্কের পরিবেশ অতিব মনোলোভা । জওহরলাল নেহেরুর বন্দিবাসের স্মারক হিসেবে তৈরি এই পার্কে সন্ধ্যার পর আলোর রোশনাই হয় । ডাল লেক ভ্রমণে কিছুটা সময় অতিবাহিত করা যায় নেহরু পার্কে । 

জওহর বোটানিক্যাল গার্ডেন (Jawaharlal Nehru Botanical Garden) – 

শহর থেকে ৯ কিমি দূরে শাহজাহানের তৈরি এক রাজকীয় প্রস্রবণ ঘিরে জওহর বোটানিক্যাল গার্ডেন , শোনা যায় এই হল সর্বরোগহর । নেহেরুজি নিয়মিত এই জলপান করতেন । অনেকে বোতল ভরে এই জল নিয়ে যান ।  

হরি পর্বত (Hari parbata) – 

শ্রীনগর অবস্থানে আরও এক অবশ্য – দৃশ্য স্থান হল হরি পর্বত । শহর কেন্দ্র থেকে মাত্র পাঁচ কিমি দূরে অবস্থিত এই পর্বতের উচ্চতা খুব একটা বেশি নয় । পর্বত শিরে দেখে নেওয়া যায় ১৫৮৬ – তে আকবরের তৈরি দূর্গ । অনেকের ধারণা , প্রায় ৫ কিমি দীর্ঘ ১০ মিটার উঁচু প্রাচীরে ঘেরা এই দূর্গটি ১৮১২ – তে পাঠান শাসক আট্টা খান গড়েছেন । এ তথ্য ভুল । আট্টা খান এই দূর্গ সংস্কার করেছিলেন । তবে এখন এই দুর্গ বিধ্বস্ত । বিচিত্র দেওয়াল চিত্র ও ফারসি ভাষার নানান ক্যালিগ্রাফি আজ প্রায় ধ্বংস হওয়ার মুখে । তৈরির সময় দূর্গে একাধিক মন্দির ছিল , কিন্তু আজ আর তাদের হদিশ মেলে না । তাও সুন্দর হরি পর্বত । পাহাড়েই নানান ফুলের চাষ হয় । বিভিন্ন পুরাণে উল্লেখ মেলে এই পর্বতের । তবে এখন এই পাহাড়ে ঘেরা দূর্গ দেখার জন্য পর্যটন দপ্তরের বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয় । 

চশমাশাহী (Casamasahi) – 

ডাল লেকের পাড়ে শাহজাহানের নির্দেশে রাজকীয় প্রস্রবণকে ঘিরে আলি মর্দান খান তৈরি করেন সুন্দর , ছোট্ট স্থাপত্যের নিদর্শন চশমাশাহী । স্থানীয় ভাষায় চেশমাশাহী নামেই পরিচিত । স্থাপনকাল ১৬৩২ সাল । এখানকার জলে নানান দূরারোগ্য ব্যাধি সেরে যায় বলে স্থানীয় মানুষদের ধারণা । শোনা যায় , প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু নিয়মিত এই জলপান করতেন । পরবর্তীকালে এখানেই গড়ে উঠেছে জওহর বটানিক্যাল গার্ডেন , চিনার , ঝাউ গাছের নিবিড় ছায়ায় গড়ে ওঠা এই স্থানটির দৃশ্যগুণই আলাদা । তবে এখন বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা যায় এখানে । অদূরেই দারার প্রমোদ ভবন পরি নিকেতনও দেখে নেওয়া যেতে পারে । লাগোয়া মনাস্ট্রিতে অতীতে সুফি কলেজ বসেছিল । আজ সেখানেই জ্যোতিষ স্কুল বসেছে । সুন্দর বাগিচা গড়ে উঠেছে পরি মহলকে কেন্দ্র করে । ডাল লেকও দেখতে পাওয়া যায় এই মহল থেকে । সামান্য নিচে পার্বতীর মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় সামান্য সময় খরচে । 

নিশাত বাগ (Nishat bug) – 

মোগল আমলের আরও এক কীর্তি নিশাত বাগ । প্রমোদ উদ্যান হিসেবে গড়া এই বাগিচায় এখনও দেখা মেলে সেকালের কারুকার্য মণ্ডিত বাড়িঘরের । ১৬৩২ – এ নুরজাহানের ভাই আসফ খান ১২ ধাপের এই বাগিচা প্রস্তুত করান । ঝরনা রয়েছে এই বাগিচায় । চিনার , সাইপ্রাস , চেরি , আপেল ও সিডারের বাগানও রয়েছে এখানে । শ্রীনগর শহর থেকে ১১ কিমি দুরে অবস্থিত ফুলে ফলে সমৃদ্ধ নিশাত বাগে ১৬৩৩ – এ শাহজাহানও এসেছিলেন হাওয়া খেতে । অদূরেই কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ঢু মারা যেতে পারে । 

হরওয়ান (Harwan) – 

সম্রাট অশোকের তত্ত্বাবধানে দি গ্রেট বুধিস্ট কাউন্সিল বসেছিল এখানেই । মহাদেব পর্বতে ঘেরা হরওয়ানের উল্লেখ মেলে পুরাণেও । সেখানে অবশ্য এইস্থানের নাম কুণ্ড লবণ । হরওয়ান জলাধারের জল পাইপের মাধ্যমে শ্রীনগর শহরে যায় । ট্রাউট মাছেরও চাষ হয় এই জলাশয়ে । চতুর্থ – পঞ্চম শতাব্দীতে গড়া বৌদ্ধ উপাসনালয়ের নিদর্শনও পাওয়া গেছে এখানে । 

শালিমার বাগ (Shalimar bug) – 

সম্রাট জাহাঙ্গির নূরজাহানের জন্য তৈরি করিয়েছিলেন শালিমার বাগ , ১৬১৯ – তে । শ্রীনগর শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত এই বাগিচাটি মোট ৪ টি ধাপে বিস্তৃত । চিনার গাছের সারির সঙ্গে বিভিন্ন ঋতুতে নানান রঙের ফুল ফুটতে দেখা যায় এখানে । চার ধাপের প্রথমটি জনসাধারণের জন্য নির্মিত । দ্বিতীয় ধাপটি প্যাভিলিয়ন ও রাজকীয় অ্যাপার্টমেন্টে সমৃদ্ধ । তৃতীয়টিতে পামপুরের কালো পাথরে তৈরি বরাদরি ও চতুর্থ ধাপে সম্রাটের নিজস্ব প্যাভিলিয়ন । গ্রীষ্মে এখানেই এসে বাদশাহরা আসতেন তাদের বেগমকে নিয়ে । সারিবদ্ধ ঝরনা শোভা বর্ধন করছে শালিমার বাগে । তবে রবিবার ছাড়া এসব ঝরনার সৌন্দর্য দেখা যায় না । মে থেকে অক্টোবরের মধ্যে এখানে পৌঁছালে প্রতি সন্ধ্যাতেই দেখে নেওয়া যায় ভারচুয়াল মোগল দরবার । 

নাসিম বাগ (Nasim Bagh) – 

নাসিম কথার অর্থ সকালের হাওয়া । ডাল লেকের সামান্য দূরে অবস্থিত এই বাগিচায় সকালের দিকে মনোরম হাওয়া বয় । ১৫৮৮ – তে সম্রাট আকবর এই বাগিচা প্রস্তুত করান । চিনার গাছ ছাড়া অন্য কোনও গাছ নেই এখানে । অন্যান্য বাগিচার মতো ঝরনাও দেখতে পাওয়া যায় না এখানে । তবে এখান থেকে ডাল লেকের শোভা অপরূপ । আকবর নির্মিত এই বাগিচায় ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ বসেছে আজ । শিকারা নিয়ে সারাদিনের জন্য বেরিয়ে পরতে পারেন মোগল বাগিচাগুলো দেখার জন্য । তবে খাবার ও জল সঙ্গে নেওয়া জরুরি । 

হজরতবাল মসজিদ (Hazratbal Mosque) – 

ডাল লেকের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত হজরতবাল মসজিদে সংরক্ষিত আছে হজরত মহম্মদের একখানি চুল । মোগল ও কাশ্মীরি শৈলীতে গড়া এই মসজিদটি তৈরি করিয়েছিলেন শাহজাহান । ১৯৬৩ – র ডিসেম্বরে মহম্মদের পবিত্র চুল চুরি যাওয়ায় অশাস্ত হয় সমগ্র উপত্যকা । কিন্তু পাঁচ সপ্তাহ পর যথাস্থানে ফিরে পাওয়াতে শান্তি ফিরে আসে কাশ্মীরে । ১৯৯৪ – এর গোড়ার দিকে জঙ্গীরা দখল নিয়েছিল এই মসজিদে । কিন্তু ভারতীয় সৈন্যদের তৎপরতায় জঙ্গীরা মসজিদ ছাড়তে বাধ্য হয় । অদূরে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়টিও দেখে নেওয়া যেতে পারে । 

শ্রী প্রতাপ সিং মিউজিয়াম – 

জম্মু ও কাশ্মীরের নানান ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু নিয়ে গড়ে ওঠা মিউজিয়ামটি দেখে নেওয়া অবশ্য কর্তব্য । ঝিলাম নদীর দক্ষিণে অবস্থিত সংগ্রহশালাটি থেকে জেনে নেওয়া যায় উপত্যকার অনেক অজানা ইতিহাস । সোমবার ছাড়া অন্যান্য দিন সকাল ১০.০০ টা থেকে বিকেল ৪.০০ টের মধ্যে ঘুরে নেওয়া যায় এই মিউজিয়ামে । 

জুম্মা মসজিদ – 

অদ্ভুত এই মসজিদটি তৈরি করেন সুলতান সিকান্দার । ইন্দো – সেরাসেনিক শৈলীতে তৈরি এই মসজিদের থামের কাজ করছে প্রায় ৩০০ টি শাল ও ৩৭৮ টি দেবদারু গাছ । দৈর্ঘ্য প্রস্থে ১৭ মিটারের ছাদ ও চারটি ও তিনটি মিনার ধারণ করে আছে এই শাল গাছগুলি । ১৩৮৫ – তে তৈরি জুম্মা মসজিদ বর্তমানে কাশ্মীরের সবথেকে বড়ো মুসলিম উপাসনালয় । প্রায় ১০০০০ মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন এখানে । সিকান্দারের পুত্র জাইনুল আবেদিনের হাতে সংস্কার হওয়ার পর তিনবার আগুনে পোড়ে এই মসজিদ । কিন্তু বারবারই সংস্কার করা সম্ভব হয়েছে । শেষবার , ১৬৭৪ – এ আগুনে ভষ্মীভূত হওয়ার পর সংস্কার হয় রাজা প্রতাপ সিং – এর আমলে । 

বাদশাহ –

ফারসি স্থাপত্যের নিদর্শন পাঁচ ডোমের সমাধি সৌধ বাদশাহ দেখে নেওয়া যায় শ্রীনগরে থাকাকালীন । কাশ্মীরের জনপ্রিয় রাজা জাইনুল আবেদিনের মাতা , মির্জা হায়দর ও খোদ জাইনুল শায়িত আছেন এখানে । তবে সংস্কারের অভাবে আজ প্রায় ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে বাদশাহ । 

শঙ্করাচার্য পাহাড় – 

গোবিন্দ পদাচার্যের কাছে দীক্ষা নিয়ে ভারত ভ্রমণে বের হন শঙ্করাচার্য । নানান স্থান ভ্রমণ করার পর আসেন এই পাহাড়ে । তপস্যায় বসেন এখানে । তখন এই পাহাড়ের নাম তখত – ই – সুলেমান , অর্থাৎ সলোমন বা সুলেমানের সিংহাসন । শঙ্করাচার্য ভ্রমণের পর পাহাড়ের নাম বদলায় । বাদশাহ জাহাঙ্গিরের আমলে এই পাহাড়ে মন্দির গড়া হয় শঙ্করাচার্যের । সনাতন ধর্মী মানুষের কাছে এই মন্দির খুবই পবিত্র । পাহাড় থেকে কাশ্মীর উপত্যকা , ঝিলম নদী , পীরপাঞ্জাল শৃঙ্গ দেখে নেওয়া যায় । শানি এছাড়াও শ্রীনগরে থাকাকালীন ঘুরে দেখা যায় গাগরিবাল পার্ক , শাহ হামদান মসজিদ , পাথর মসজিদের মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলি । 

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) হ্রদ , জল প্রবাহ , হিমবাহ , উপত্যকা :

মানসর (Mansar) – 

জম্মু থেকে গাড়ি চড়েই ঘুরে নেওয়া যায় সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের নিদর্শন মানস সরোবর বা মানসর হ্রদে । চারদিক দিয়ে পাহাড় ও পাইন গাছে ঘেরা এই হ্রদের কাছে গেলেই শাস্তি পাওয়া যায় । পান্না সবুজ রঙের জলের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায় অনেকটাই সময় । বোটিং – এর ব্যবস্থাও রয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটার বিস্তৃত এই হ্রদে । চত্বরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শেষনাগ , মানসরেশ্বর শিব , নৃসিংহদেব , দুর্গা মন্দির । অদূরেই রয়েছে ডিয়ার পার্ক । হরিণদের সঙ্গেও সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে নেওয়া যায় । এখান থেকে ফেরার পথে দেখে নেওয়া যায় সুরিনসর বা সনাসর হ্রদ । মনোরম পরিবেশে অবস্থিত হ্রদের মাঝে ছোট্ট একটি দ্বীপও রয়েছে । 

লোলাব ভ্যালি (Lolab Valley) – 

‘ল্যান্ড অফ লাভ এন্ড বিউটি এর প্রতিশব্দের আদ্যাক্ষর নিয়েই লোলাব । শ্রীনগর থেকে ১১৪ কিমি দূরে । কুয়াওয়ারা থেকেই আলাদা হয়েছে রাস্তা । চলে গেছে ওয়াদি এ লোলাব তোরণ পেরিয়ে । ৫,৫০০ ফুট উচ্চতায় এই উপত্যকাটি দৈর্ঘ্যে ২৫ কিমি . এবং প্রস্থে ৫ কিমি । শোনা যায় কাশ্যপ মুনির সাধনা স্থল ছিল লোলাব উপত্যকা । এই কাশ্যপ থেকে কাশ্মীর । প্রধান জনভাষা হল সোগাম । আবার ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউসটির অবস্থান চন্ডীগ্রামে । অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে এই রেস্টহাউস । আবার ধান – ভুট্টা – আখরোটের – কৃষিক্ষেতে চলেযান— সাথে সাথে দেখুন উপত্যকার বুক চিরে চলে গেছে নদী দুটি লালকুল বা লাহওয়াল ও ডালকুল । 

শ্রীনগর (Srinagar) –

 থেকে দূরত্ব ১৩৫ কিমি । নীলরঙা কিষেনগঙ্গা নদীর তীরেই দাওয়ার । উন্নত শিক্ষিত জীবনযাত্রার সবই রয়েছে এই জনপদে । পাকিস্থান অধিকৃত কাশ্মীর থেকে আসা বুরহিল নদী দাওয়ার – এর কাছেই শীতলবাগে এসে মিশেছে কাওয়াল নদীর সাথে । এই ভাবে জন্ম নিল কিযেনগঙ্গা নদী । চারিপাশে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি , মাঝে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্থানের সেনা ছাউনিসহ অনেক কিছুই দেখা যায় । সীমান্তবর্তী জায়গা বলে গুরেজ এ আসতে হলে কাজিপারা ডি.সি.অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে আসা দরকার । ভোটার কার্ড ও পাসপোর্ট সাইজ ছবি রাখুন অনুমতি প্রাপ্তির জন্য । সন্ধ্যায় হরা খাতুন ড্রামাটিক ক্লাবে সময় কাটাতে পারেন ।

বানগাস (Bangas) –

বানগাস মানে ঘাসের বন । আর হয়তো তাই , ট্রান্স হিমালয়ান রেঞ্জে ১০০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই উপত্যকায় হাঁটতে গেলে পা ডুবে যাবে নরম ঘাসের কার্পেটে । ৩০০ বর্গকিমি আয়তন এই উপত্যকার রূপ খানিকটা কাঠির মতো । নানা দুষ্প্রাপ্য ঔষধি গাছও পাবেন । জেনে রাখা ভালো সীমান্তবর্তী এলাকা হবার জন্য এখানে আসতে হলে হান্দওয়ারা এস – পি – অফিস থেকে অনুমতি পত্র করবেন , ভোটার কার্ড ও ছবি সহ । 

কর্ণ (Karna) –

 কুপওয়ারা জেলায় অবস্থিত কর্ণ । উপত্যকার অর্থ হল টাংধার । আধুনিক শিক্ষিত জীবনযাত্রার সবকিছু এখানে আছে । শীতে বরফের জন্য ৫ মাস পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকে । চলে যান স্থানীয় কিষেণগঙ্গা নদীতে । উপভোগ করুন এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । এই নদীর ওপর একটি সেতু রয়েছে , জিরো ব্রিজ , ক্রেশিং ব্রিজও বলে কেউ কেউ , মাসে দুবার সরকারের অনুমতিতে দুদেশের আত্মীয় – বন্ধুত্ব একত্র হয় কুশল বিনিময়ের জন্য । 

আলপাথার লেক (Alpather Frozen Lake) – 

সমুদ্রতট থেকে ৩৮৪৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত আলপাথার লেকের জল দেখে তৃপ্ত হয় মন । তিনকোনা লেকের পাশে সদাসর্বদাই রয়েছে প্রকৃতি দত্ত সৌন্দর্য । সবজে রঙের জলে ভেসে বেড়ায় সাদা বরফ । অদূরেই আফারওয়াট পাহাড় , বলাবাহুল্য এই পাহাড়ের পাদদেশেই এই প্রাকৃতিক হ্রদ । 

নিঙ্গেল নামা , ফিরোজপুর নালা , কান্টারনাগ হ্রদ (Ningel Nama, Firozpur Nala, Kantarnag Lake) – 

আফারওয়াট ও আলপাথার পাহাড়ের বরফ গলা জল প্রবাহ নিঙ্গেলনামা দেখে নেওয়া যায় গুলমার্গ অবস্থানকালে । এই প্রবাহই অদূরে মিলিত হয়েছে ঝিলম নদীর সঙ্গে । সামান্য এগোলেই পৌঁছে যাওয়া যায় সবুজের সমারোহ লিয়েন মার্গে । লিয়েন নালা থেকে আরও কিছুটা এগোলে দেখতে পাওয়া যায় ফিরোজপুর নালা । ট্রাউট মাছের চাষও হচ্ছে এই পাহাড়ি নদীতে । মনোরম পরিবেশের মধ্যে দিয়েই পৌঁছে যাওয়া যায় কান্টারনাগ নামক প্রাকৃতিক হ্রদে । এখানকার পরিবেশও মন মাতানো । অদুরেই হাতছানি দেয় তোষ ময়দান ।

কোলাহাই হিমবাহ (Kolahai Glacier) – 

এই হিমবাহ দেখার জন্য ভ্রামণিকদের করতে হয় খুবই কষ্ট । কথায় আছে কষ্ট করলেই কেষ্ট মেলে । ৩৩৫২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত হিমবাহের সামনা সামনি পৌঁছাতে পারলেই সমস্ত কষ্ট দূর হয় । দুই পাহাড়ের মাঝ থেকে নেমে আসা চওড়া কোলাহাই হিমবাহের থেকে বেগুনি রঙের আভা বার হয় । এখানে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন পোরখাওয়া ভ্রামণিকরা । হিমবাহের গলা জলেই পুষ্ট কাশ্মীরের লিডার নদী । সূর্যের অবস্থান পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নানান মহিমা বিচ্ছুরণ করে কোলাহাই ।

মহিমান্বিত হতে অন্তত একটা রাত্রি থাকা প্রয়োজন এখানে । উৎসাহীরা আরও ১৬.৪ কিমি হেঁটে যেতে পারেন তারসর লেকের শোভা দেখতে । কোলাহাই থেকে সাত কিমি দূরের শিকারগড় রিজার্ভ ফরেস্টটিও দেখে নেওয়া যায় এই সুযোগে ।

উলার , মানসবল লেক (Ular, Manasbal Lake) – 

কাশ্মীরের সৌন্দর্য দেখার জন্য কিছুক্ষণের জন্য অন্তত উলার লেকে ঘুরে আসা দরকার । প্রকৃতির তৈরি এই হ্রদের চারপাশে হিমালয় পর্বতমালার নানান গিরি শিখর । লেকের জলে পদ্ম ফুলের সমারোহ । লেকের পাড় ধরে গড়ে উঠেছে বসতি । বোটিং – এর সুবিধাও আছে এখানে । তবে প্রায় প্রতিদিন বিকেলেই এখানকার আবহাওয়া খারাপ হয় । ঝড় ও বৃষ্টি প্রায়শই লেগে থাকে । তাই ৩০ ফুট গভীর এই লেকে বিকেলের দিকে বোটিং করা উচিত হবে না । সমুদ্রতট থকে ১৫৮০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত উলার ( দৈর্ঘ্যে ১৯ ও প্রস্থে ১০ কিমি ) ভারতের বৃহত্তম মিষ্টি জলের হ্রদ । অদূরেই বাঁকি পুর নালা । ঝিলাম নদী এখানেই মিশেছে উলারে । সেখানেই প্রকৃতির খেয়ালে তৈরি হয়ে মনোরম একটি দ্বীপ । দক্ষিণে সোপুরের কাছে ঝিলম আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । কাশ্মীর সম্রাট জাইনুল আবেদিন ১৪৪৪ খ্রিস্টাব্দে প্রাসাদ গড়েছিলেন উলারের পাড়ে । কিন্তু তা আজ প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে । এখান থেকে পাঁচ কিমি যেতে পারলেই নিঙ্গেল নালা । হ্রদের পশ্চিম দিকে অবস্থিত বাবা শুকরদিন পাহাড়ের চূড়ো থেকে এই জলাশয় দেখতে মন্দ লাগে না ।

 উলার দেখতে আসার সময় পথেই পড়ে পাট্টান ৷ সামান্য সময় খরচ করে দেখে নেওয়া যায় নবম শতাব্দীর রাজা শঙ্কর বর্মার রাজধানীটি । তারই গড়া দুটি মন্দির রাজধানীর নিদর্শন বহন করছে এখনও । উলার দেখে চলা যেতে পারে মানসবল লেক দেখতে । মানসবল লেকের উচ্চতা ১৫৬০ মিটার । আকারে খুব একটা বড়ো না হলেও ঝিলম উপত্যকার এই হ্রদের নীল রঙের জল পাগল করে ভ্রামণিকদের । টলটলে জলের এই হ্রদ খুবই প্রিয় ছিল শাহজাহানের মেয়ে রোশেনারার । তাঁরই তৈরি দারগোবাগের ধ্বংসস্তূপ আজও সে বিষয়ের দিকেই ইঙ্গিত করে । শীতে পরিযায়ী পাখিরা দূর দেশ থেকে আসে মানসবল লেকে । এ সময় এখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পাখি দেখিয়েরাও ভিড় জমান । 

প্যাংগং লেক (Pangong Lake) – 

এশিয়ার বৃহত্তম নোনা জলের প্যাংগং লেক , বা প্যাংগং সো । এখানে উচ্চতার সাথে শরীরকে মানাতে হবে । থ্রি ইডিয়ট সিনেমার ক্লাইমেক্স শুটিং হয়েছিল এখানে । ৪৪০০ মিটার উঠে শ্বাসকষ্টে পড়েন অনেকে । এই লেকের জল এতটাই নীল মনে হবে রূপকথা । সকালের দিকে না গিয়ে বিকেলে যাওয়া দরকার এই ১৩৫ কিমি দীর্ঘ লেকটি দেখতে । কারণ সূর্যের আলো কমে যাওয়ার সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে পরিবেশের রং বদলায় । ৪২৬৭ মিটার উচ্চে অবস্থিত লেকটির সামান্য কিছুটা অংশ ভারতে বাকি অংশ চীন অধিকৃত তিব্বতে । ৪০ ফুট গভীর এই লেকের স্বচ্ছ জল ভেদ করে তলায় পড়ে থাকা রঙিন পাথর দেখতে মন্দ লাগে না । হাস , সিগালও রয়েছে লেকের জলে । টুক করে প্যাংগং দেখে ফিরে গেলে ভ্রামণিক মন শান্তি পায় না । এখানকার পরিবেশ দাবি করে অন্তত একটা দিন থেকে সৌন্দর্য দেখার । লেক দেখতে যাওয়ার সময় চাংপাদের গ্রাম তাংসেও দেখে চলা যেতে পারে ।

সামোরিরি লেক (Somoriri Lake) – 

প্রায় ৫০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত প্রকৃত ভূস্বর্গ লাডাকের সামোরিরি লেক । সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তে এই লেকের রূপ দেখার মতো । হ্রদকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বসতি । যাতায়াত সহ সামোরিরি দেখার জন্য সময় লাগে প্রায় পাঁচ দিন । ট্রেক ছাড়া আর কোনও গতি নেই সামোরিরি ভ্রমণে । সামোরিরির গুম্ফাটিতেও ঢু মারা যায় । যাত্রাকালে পথে বাস থামে কোরজোেক গ্রামে । এখানকার গুম্ফাটিও দেখে নেওয়া অবশ্য কর্তব্য । এপথে চলার জন্য অনুমতি প্রয়োজন লের ডেপুটি কমিশনারের কাছ থেকে ।

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) ঐতিহাসিক স্থান :

আখনুর ফোর্ট (Akhnoor Fort) – 

রাজা গুলাব সিং ও রণজিৎ সিং – এর স্মৃতিবিজড়িত আখনুর ফোর্ট আজ জনসাধারণের জন্য অবশ্য দৃশ্য । রণজিৎ সিং এখানে অবস্থানকালেই রাজা খেতাবে আখ্যায়িত করেছিলেন গুলাব সিংকে । দুর্গতে এখন স্কুল ও সরকারি দপ্তর বসেছে । আখনুর ফোর্ট থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে এগোতে থাকলে নৌসেরা , পুঞ্চ ও ঝানগড় । ১৯৪৭ – এর বেদনা এখনও যেন ভারী করে রেখেছে এখানকার বাতাসকে । পাক মদতপৃষ্ঠ জঙ্গিদের বারমুলা , কোট , নৌসেরা থেকে তাড়িয়ে ভারতের বীর সৈনিক ব্রিগেডিয়ার ওসমান ১৯৪৭ – এর ৪ নভেম্বর ঝানগড়ে শহিদ হন । 

বারমুলা (Barmula) – 

১৯৪৭ – এর পাক হানাদার ও ভারতীয় জওয়ানদের মধ্যে যুদ্ধের স্মৃতি এখনও বহন করে চলেছে বারমুলা । এলাকার তৎকালীন বিখ্যাত নেতা মগবুল শেরোয়ানিকে হত্যা করে পাক দুষ্কৃতিরা । শহরের কনভেন্ট হাসপাতালটিও রক্ষা পায়নি ঘৃণ্য এই আক্রমণ থেকে । এইস্থানে যুদ্ধ চলাকালীন ভারতীয় বীর ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রণজিৎ রায় । 

ক্রিমচি (Krimi) – 

অনুচ্চ পাহাড়ে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এইস্থানের ইতিহাস গুপ্তযুগের । এ সময়ে এখানে স্থাপিত হয়েছিল বর্ধিষ্ণু নগরী । যদিও কয়েকটি মন্দির ব্যতীত সে ইতিহাস ব্যক্ত করার মতো আর কিছুরই সন্ধান করা যায়নি । মন্দিরগুলিকে দেখে খাজুরাহোর মন্দিরের কথা মনে পড়ে যায় ।

বানিহাল (Banihal) – 

প্রকৃতির মায়া জড়ানো আরও এক লোকালয় বানিহাল । অতীতে কাশ্মীর উপত্যকার প্রবেশদ্বার ছিল এই বানিহাল । তৎকালীন কালা কানুনের বিরোধীতা করে এখানেই বন্দি হয়েছিলেন জওহরলাল নেহেরু ও ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় । নেহরু ছাড়া পেয়ে গেলেও বন্দি অবস্থাতেই শ্রীনগরের হরি পর্বতে ১৯৫৩ – তে মৃত্যু হয় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের । এরকম অনেক ইতিহাসেরই সাক্ষী বানিহাল । স্বাধীনতার আগে শ্রীনগর যাওয়ার প্রধান সড়কটি ছিল লাহোর হয়ে । দ্বিতীয় পথটি ছিল পীরপাঞ্জাল পাহাড়ের গা বেয়ে । প্রায় ৩৩০০ মিটার উঁচু এইপথে সব সময়ই বরফ থাকত । দেশের অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে সড়ক পথে শ্রীনগরের যোগাযোগ উন্নত করার উদ্দেশ্যে পাহাড় কেটে তৈরি হয় টানেল । প্রথমে একমুখী থাকলেও প্রয়োজনীয়তা বোধ করে দ্বিমুখী করা হয় টানেলকে । প্রায় ২৬০০ মিটার উচ্চতায় পাহাড়ের বুক কেটে তৈরি টানেলের নাম দেওয়া হয় জওহর টানেল । ১৯৫৬ – র ২২ ডিসেম্বর টানেলটির উদ্বোধন করেন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন । তবে টানেলে ঢোকার নানান বিধিনিষেধ রয়েছে । ফলে বাসে চলাকালীনই দেখে নিতে হয় দু- কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেলটিকে । যে সকল বাস সকাল ৯ টার পর জম্মু ছাড়ে তারা রাতে বানিহালেই থেকে যায় । ক্ষণিক সময় ব্যয় করে টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট থেকে সমগ্র উপত্যকার সৌন্দর্য গ্রাস করা যায়।

ভেরিনাগ (Verinag) – 

সম্রাট জাহাঙ্গির ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে খনন করান ভেরিনাগ নামের ১৫ মিটার গভীর কুন্ডটি । ১৬১২ – তে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গির এই কুন্ডটি নির্মাণ করেন । প্রচুর ট্রাউট মাছের বাস স্বচ্ছ এই জলে । সুদর্শন ঝরনাও রয়েছে এই কুন্ডর ওপর নির্ভর করে । গ্রীষ্মের দিনে যেমন ভেরিনাগের জল শুকোয় না বর্ষায় তেমন উপচেও পড়ে না । ভেরিনাগ পাহাড়ে ১৮৭৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই কুণ্ডের জলেই পুষ্ট ঝিলম নদী । জাহাঙ্গিরের অতি প্রিয় ভেরিনাগ থেকে ফেরার পথেই তার মৃত্যু ঘটে । জলাশয়ের চারপাশের সবুজকে বাগিচার রূপ দেন সম্রাট শাহজাহান , ১৬২০ – তে । পাহাড়ের কোলে তৈরি এই বাগিচাটিই কাশ্মীরে তৈরি মোগল গার্ডেনের মধ্যে প্রাচীন । জম্মু থেকে দেরিতে ছাড়া বাস বানিহালে রাত্রিযাপন করে পরদিন সকালে ভেরিনাগ দেখিয়ে যাত্রি নিয়ে শ্রীনগরের দিকে যায় । 

বাবারেষির (Babareshir) –

 সুলতান জাইনুল আবেদিনের স্মৃতিবিজড়িত এইস্থান । তার সভাসদ ফকির বাবা পামদিনের সমাধি রয়েছে এখানে । পঞ্চদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত এই সমাধিক্ষেত্রকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্টই ভক্তি রয়েছে । সমাধিক্ষেত্রের কারুকার্যও দেখার মতো।

অবন্তীপুর (Avantipur) – 

নবম শতাব্দীতে গড়া দুটি মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অবন্তীপুরা শহর । উৎকল বংশের প্রথম রাজা অবন্তী বর্মার হাতে তৈরি মন্দির দুটি আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে । আবার অনেকে ধারণা করেন মন্দির দুটি পাণ্ডবরা বানিয়েছিলেন । শ্রীনগরের প্রতাপ সিং মিউজিয়ামে এই মন্দিরের কিছু নিদর্শন এখনও দেখতে পাওয়া যায় । ৮৫৫-৮৮৩ সাল পর্যন্ত অবস্তীপুর ছিল কাশ্মীর রাজ্যের রাজধানী । কিন্তু পরবর্তীকালে রাজা প্রবর সেন এখান থেকে শ্রীনগরে স্থানান্তরিত করেন রাজধানী । 

আচ্ছাবল (Accha bala) – 

মোগল বাদশাহ জাহাঙ্গিরের তৈরি উদ্যান আচ্ছাবল দেখে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের চোখে সুখের অশ্রু আসে । অনেকে ধারণা করেন ১৬২০ – তে শাহজাহানের কন্যা জাহানারা এই বাগিচাটি প্রস্তুত করান । উচ্চতা ১৬৭৭ মিটার । একাংশের মত খ্রিস্টের জন্মের প্রায় পাঁচশত বছর আগে রাজা অক্ষবল এই বিশালাকার উদ্যানটি তৈরি করিয়েছিলেন । তবে ইতিহাস বলছে , তিনটি ধাপে তৈরি এই বাগান বড়ো প্রিয় ছিল মোগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের মহিষী নূরজাহানের । সংলগ্ন ট্রাউট হ্যাচারিটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে । 

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) অন্যান্য দর্শনীয় স্থান বা ভ্রমণ স্থান :

বাসোলী (Basuli) – 

জম্মুতে অবস্থানকালে ঘুরে নেওয়া যায় বাসোলী শিল্পের পীঠস্থানে । মোগল ও কাশ্মীরের নিজস্ব পাহাড়ি শিল্পধারার সমন্বয়ে তৈরি বাসোলী চিত্রশিল্প জগৎ বিখ্যাত । শহরে ঘুরে ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন শিল্পীর হাতের ছোঁয়া লাগা বাসোলী চিত্র । এছাড়াও এ শহরে বেশ কিছু মন্দির সহ আরও অনেক দেখার মতো জায়গা রয়েছে । পায়ে পায়ে দেখে নেওয়া যায় সেগুলিও । 

বৈষ্ণোদেবী কাটরা (Vaishnodevi Katra) – 

ভারতভূমির অন্যতম হিন্দু তীর্থস্থান বৈষ্ণোদেবী অবস্থিত জন্ম থেকে ৬২ কিলোমিটার দূরে । ২১১২ মিটার ( ৬৫০০ ফুট ) উচ্চে গুহা অভ্যন্তরে অবস্থিত মন্দিরটি প্রায় ৭০০ বছরের প্রাচীন । জনশ্রুতি হংসালি গ্রামের নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ শ্রীধরজিকে দর্শন দেন বৈষ্ণোদেবী । তিনিই স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে দেবীর বসন আবিষ্কার করেন এই গুহায় । পুরাণ অনুসারে পরমা শক্তিশালী এই দেবীর চোখের মণি চন্দ্র ও সূর্য । বসনে তারকাখচিত ব্রহ্মাণ্ড । বসন প্রাস্তে থাকে পৃথিবী । অসুর বধের পর দেবী এখানেই আবাস গড়েন । গুহা অভ্যন্তরে বৈষ্ণোদেবী রূপোর মুকুট ও ছাতার দ্বারা সজ্জিত । ওহার তিন দেওয়ালে রয়েছে দেবীর আরও তিন রূপ , মহাকালী , মহাসরস্বতী ও মহালক্ষ্মী । ৩৯.৬ মিটার দীর্ঘ ও ১.৮২ মিটার প্রশস্ত গুহা অভ্যন্তরীণ মন্দির সংস্কার হয়েছে ১৯৭৬ সালে । অতিব সাবধানে দশ থেকে বারো জন একসঙ্গে দর্শন করতে পারেন দেবীর প্রতিমা । গুহায় পায়ের পাতা ডুবে যায় শীতল জলে । অবশ্য এখন গুহার বাইরে থেকে বাইপাস করা হয়েছে সহজে প্রতিমা দর্শনের জন্য । পুজোর কোনও প্রথা নেই এখানে । নবরাত্রির পর টানা আড়াই মাস চলে এখানে ভক্তদের আগমন । কাটরা ট্যুরিস্ট রিসেপশন সেন্টার থেকে চিরকুট নিয়ে তবেই মন্দিরে ঢোকা যায় ।

  নতুন আরেকটি মন্দির গড়ে উঠেছে ১৪৬০ মিটার উচ্চতায় । অনেকের ধারণা , মহিষাসুর বধের এই গুহাতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন দেবী । আধকাবরী মন্দিরে নানা কৃত্রিম জিনিস দেখতে পাওয়া যায় । ফলে অনেক ভক্তই বিশ্বাস করেন না দেবীর প্রকৃত আশ্রয়স্থান হিসেবে । বৈষ্ণোদেবীর গুহায় পৌঁছানোর আড়াই কিলোমিটার আগে অবস্থিত ভৈরবনাথ মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় এ সুযোগে বৈষ্ণোদেবীর মন্দির দর্শন হেতু কাটরা অবস্থানকালে দেখে নেওয়া যায় হনুমানজি মন্দির , রঘুনাথ মন্দির , হরে রাম হরে কৃষ্ণ মন্দির , ভূমিকা মন্দির , বাবা জিট্টো মন্দির , দেবা মাঈ মন্দির।

রিয়াসী (Reasi) – 

সরল হাইডেল প্রোজেক্ট দেখতে রিয়াসী যাওয়া যেতে পারেন কাটরা অবস্থানের সময় । প্রোজেক্ট ছাড়াও এখানে দেখার মতো আরও অনেক কিছুই রয়েছে । জেনারেল জারোয়ার সিং – এর বিধ্বস্ত দূর্গ ও অঘোর জিট্টোতে কিছুটা করে সময় দেওয়া যায়। 

উধমপুর (Udhampur) – 

বৈষ্ণোদেবীর মন্দির দর্শন করে তড়িঘড়ি শ্রীনগরে না গিয়ে কিছুটা সময় খরচ করে উধমপুর ঘুরে নেওয়া যেতে পারে । অত্যন্ত সাজানো – গোছানো ক্যান্টনমেন্ট শহর উধমপুরের নীরবতা মনলোভা । এখানে শান্তিতে কিছুটা সময় কাটানো যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে ।

কুদ (Kuda) –

১৭৩৮ মিটার উচ্চতায় মনোরম পরিবেশে অবস্থিত কুদে শান্তিতে দিন যাপন করা চলে । এইস্থান চড়ুইভাতির জন্য খুবই বিখ্যাত । অদূরে পাহাড়ি ঝরনাটি দেখে নেওয়া যায় সামান্য সময় খরচে । কুদের আরও একটি বিখ্যাত হল মিষ্টি । এখানে গরম সৌনপাপড়ির , স্বাদ নিতে ভুলবেন না । বিভিন্ন ধরনের প্রেমদি হাট্টির দোকান ।

পাটনীটপ (Patnitop) – 

পাইন ও দেওদার গাছের ছাওয়ায় ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ পাটনীটপ । চারদিক থেকে পাহাড় 201 ঘিরে রেখেছে ২০২৪ মিটার উঁচু পাহাড়ি মনোরম স্থানটিকে । আপেল বাগানও রয়েছে এখানে । শীতের দিকে বরফেরও দেখা পাওয়া যায় । নিরালায় কয়েক দিন কাটানোর জন্য এই শৈলাবাস খুবই বিখ্যাত ৷

সুদ মহাদেব (Sud Mahadev) – 

পাটনীটপের অদূরে ১২২৫ মিটার উচ্চতায় সুদ মহাদেবের অবস্থান । এখানে একটি ত্রিশূল ও দণ্ডকে পুজো করা হয় । শক্তিমান ভীমের দণ্ড হিসেবে খ্যাতি আছে স্থানীয় মানুষের মধ্যে । এখানে জমকালো মেলা ও অনুষ্ঠান হয় শ্রাবণী পূর্ণিমায় । সামান্য এগোতেই দেখে নেওয়া যায় তলাই । এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রত্নতত্ত্বের নানান নিদর্শন ।

সানাসার (Sanasara) – 

সমুদ্রতট থেকে প্রায় ২৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মনোরম সানাসার । চারপাশে বরফে ঢাকা পাহাড়ের মাঝে পেয়ালার মতো পড়ে থাকা বৃত্তাকার স্থানটির আবহাওয়া খুব স্বাস্থ্যকর । উপত্যকায় চড়ে বেড়ায় গৃহপালিত পশুরা । ফার ও পাইনে ঢাকা নৈসর্গিক শোভার অধিকারী সানাসারে চাষবাসও হচ্ছে । তবে এখানকার সৌন্দর্য দেখার লোক খুব একটা বেশি নেই । কারণ এই স্থানটি ভ্রামণিকদের মধ্যে ততটা খ্যাত নয় । ছোট্ট করে বলে রাখা যায় , এটি সৌন্দর্যের দিক থেকে গুলমার্গকেও টেক্কা দিতে পারে । 

বাটোর্ট ও ভাদরওয়া (Butort and Bhadarwa) – 

কাশ্মীরে অরণ্য দেখার স্বাদ মেটায় বাটোট । নিবিড় অরণ্যের মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে দেখে নেওয়া যায় নানাধর্মী পাখির সমারোহ । পাখির গান শুনতে শুনতেই পৌঁছে যাওয়া যায় ভাদরওয়া । অপরূপ সুন্দর এইস্থানে প্রাচীন মন্দিরও আছে । এখান থেকেই অমরনাথের ছড়ি যাত্রা শুরু হয় । সমগ্র রাজ্যের তুলনায় ছোটা কাশ্মীর বলে খ্যাত এইস্থানের বাসিন্দাদের মধ্যে শিক্ষিতের হার অনেক বেশি ।

বাসুকি কুণ্ড বা কৈলাস লেক (Basuki Kund or Kailash Lake) – 

হিন্দুদের আরও এক তীর্থস্থান এটি । সমুদ্রতট থেকে ৩৮০০ মিটার উচ্চতায় টলটলে জলের হ্রদটি দেখলেই পুণ্য হয় । রাখি পূর্ণিমার পরের অমাবস্যায় এই কুণ্ডে তিন ডুব দিয়ে দেবাচনা করলে পাপখণ্ডিত হয় । জনশ্রুতি এই রাতে কুণ্ডের জলে ভক্তদের দেখা দেন বাসুকি নাগ । এ চত্বরে কোনও মন্দির না থাকলেও খোলা আকাশের নিচে পাথরের বেদীতে বসানো আছে শিব – বিষ্ণু – বাসুকির প্রস্তরমূর্তি । 

কিস্তওয়ার (Kistowar) – 

এখানকার জলে নানান রোগের উপশম হয় । তাই আশপাশের মানুষের কাছে খুবই পরিচিত নাম কিস্তওয়ার । তবে কাশ্মীর ভ্রামণিকদের কাছে তত্রেটা পরিচিত নয় ছোট্ট পাহাড়ি শহরটি । সমগ্র কাশ্মীরের সৌন্দর্য রয়েছে এখানে । একাধিক জলপ্রপাত রয়েছে এ শহরকে ঘিরে । সুদর্শন পার্কও গড়ে উঠেছে স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া সম্পন্ন কিস্তওয়ারে । শ্রীনগরে ও জাঁসকরে এখান থেকে ট্রেক করে যান অনেক ভ্রামণিকই ।

গুলমার্গ (Gulmarg) – 

অতীতে এইস্থানের নাম ছিল গৌরিমার্গ । উচ্চতা প্রায় ২,৭৩০ মিটার কিন্তু এখানে ফুটে থাকা অগণিত ফুলের রঙে মুগ্ধ হয়ে সুলতান ইউসুফ শা স্থানটির নাম বদলে করে দেন গুলমার্গ । গুল অর্থে ফুল আর মার্গ হল উপত্যকা । ফুলের উপত্যকা বিশেষণে ভূষিত গুলমার্গের সৌন্দর্য প্রত্যেক বছর লাখো লাখো ভ্রামণিকদের পাগল করছে । প্রায় সারাবছরই এখানে নানান ফুল ফুটে থাকতে দেখা যায় । বিশেষ করে গ্রীষ্ম ও বসন্তে ছোট্ট পাহাড়ি জনপদটি ফুলে ফুলে ভরে থাকে । শীতে গুলমার্গ শহর বরফে ঢাকা পড়ে যায় । শহরের কেন্দ্রবিন্দু গল্ফ কোর্স । আঠারো পয়েন্টের এই মাঠটি বিশ্বের উচ্চতম গল্ফ কোর্স । সারা গ্রীষ্মে এখানে খেলার আসর বসে । শীতে ( নভেম্বর – মার্চ ) কোর্স বরফে ঢাকা পড়লে স্কি খেলা শুরু হয় এখানে । স্কি শেখানোর স্কুলও আছে এখানে । জাতীয় শীতকালীন খেলাধুলার আসরও বসে এই মাঠে । পাইন , দেওদারের ছায়ায় পাহাড়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা নিষ্পাপ শিশুসম সুন্দর গুলমার্গের আকর্ষণ এমনই যে ভ্রামণিক মাত্রই তার মায়া কাটাতে পারেন না । অদুরেই গড়ে উঠেছে গন্ডোলা অর্থাৎ রোপওয়ে । পাঁচ কিমি দীর্ঘ রোপওয়ের মাধ্যমে গুলমার্গের যোগাযোগ পার্শ্ববর্তী শহর খিলেনমার্গের সঙ্গে ।

খিলেনমার্গ (Khilanmarga) – 

চারিদিকে বরফ আর বরফ দেখার জন্য শ্রীনগর অবস্থানকালে অবশ্যই ঘুরে আসা দরকার খিলেনমার্গে । নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঝে দাঁড়িয়ে চোখ চালিয়ে দিতে পারেন মাইলের পর মাইল । দেখে নিতে পারেন বিশ্বের পঞ্চম উচ্চ পর্বত শৃঙ্গ নাঙ্গা পর্বত ( ৮১৩৭ মিটার ) সহ হরমুখ , গৌরিশঙ্কর , ত্রিশূলও । শ্রীনগর শহর , ডাল লেক , উলার , শঙ্করাচার্য পাহাড় , ঝিলামও দেখতে পাওয়া যায় প্রায় ৩৬০০ মিটার উচ্চ খিলেনমার্গ থেকে ।

সোনামার্গ (Sonamarg) – 

২৮০০ মিটার উচ্চতায় সোনামার্গ , শ্রীনগর থেকে ৮৪ কিমি দূরে । রাস্তাটা জোজিলা , দ্রাস , কারগিল হয়ে সোজা চলে গেছে লে । জানুয়ারী এপ্রিল এ অঞ্চল বরফে ঢাকা , বাকি সময় সবুজ ঘাসে ভরা । তুষারবৃত থাজ্ঞিবাস হিমবাহ দেখে মুগ্ধ হবেন । ঘোড়ায় চড়ে বেড়ানোর সুযোগ , পাইন গাছ ঘেরা সোনামার্গ যাবার রাস্তাতেই রয়েছে সিন্ধুনদ ।

আহারবল (Aharabala) –

মোগল বাদশাহদের পছন্দের জায়গা আহারবলে পৌঁছে আপনারও ভালো লাগবে এখানকার পরিবেশ । পাহাড় থেকে নেমে আসছে বিষভ নদী , অনেকটা জলপ্রপাতের ঢঙে । আপেলবাগানে মোড়া আহারবল বিখ্যাত এই জলপ্রপাতের জন্য । সেতু পেরিয়ে দেখে নেওয়া যায় নদীর গভীর খাদ । অদুরে কাঙ্গওয়াট্রন নামের মনোরম জনপদ । ছবির মতো সুন্দর উপত্যকায় চড়ে বেড়ায় গৃহপালিত পশুরা । এখানকার উষ্ণ জল প্রস্রবণটিও দেখার মতো । আর আছে প্রকৃতির খেয়ালে তৈরি কৌনসারনাগ লেক ।

পামপুর (Pampur) – 

জাফরান চাষের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত পামপুর । এছাড়া স্পেনের বিশেষ বিশেষ স্থানে চাষ হয়ে থাকে জাফরান । জাফরান গাছের ফুলগুলি দেখার মতো । মনে কেমন যেন আগুন লাগায় । এখান থেকে ৩৫ কিমি দূরে সংগ্রামায়ও ঘুরে নেওয়া যেতে পারে । সেখানে পাহাড়ের গায়ে থাকে থাকে সাজানো উইলো কাঠের ক্রিকেট ব্যাট ।

অনন্তনাগ (Anantnag) –

পাহাড় থেকে অঝোর ধারা নেমে আসছে এখানে । দু পাশে রয়েছে দুটি কুণ্ড । একটির জল গরম ও একটির জল ঠাণ্ডা । হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র এইস্থান । ভক্তরা বিশ্বাস করেন বড়ো কুণ্ডটিতে বিষ্ণুর প্রিয় অনস্তনাগ বাস করে । কুণ্ডদুটির মাঝে রয়েছে শিব ও রাধাকৃষ্ণের মন্দির । 

কোকরনাগ (Kokarnag) – 

কোকর অর্থে মুরগি আর নাগ মানে সাপ । মুরাগ ও সাপের মেল বন্ধন ঘটেছে এখানে । পাহাড়ের গায়ে অজস্র মুরগির পায়ের ছাপ , সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে জলের ধারা । ধারাগুলি মিলিত হয়ে রূপ নিয়েছে ঝরনা । এখানকার জলে উপশম হয় নানান দুরারোগ্য ব্যাধি । পাশে সুদর্শন গোলাপ বাগিচা । গোলাপ ছাড়াও নানান ফুলের সমারোহ তাতে । সমুদ্রতট থেকে ২০১২ মিটার উচ্চতায় এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে যারপরনাই আনন্দিত হন ভ্রামণিকরা । পাইনে ছাওয়া মনোরম কোকরনাগে রাজ্যের বৃহত্তম ট্রাউট মাছের প্রজননকেন্দ্রটিও দেখে নিতে হয় ।

ডাকসুম (Daksum) – 

কাশ্মীরের অন্যতম শৈলাবাস ডাকসুম । এখানকার আবহাওয়ার গুণে অসুস্থ মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠেন । সবুজ উপত্যকার মাঝ বরাবর বয়ে চলেছে ব্রিংহী নদী । ট্রেকাররা এখান থেকেই সোজা চলে যান কিস্তওয়ারে । ২৪৩৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ডাকসুম থেকে ট্রেক করে ১৩৩০ মিটার চড়ে সিলথন পাসেও পৌঁছাতে পারেন । মন চাইলে ডাকসুম থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাজপারিয়া ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিটিও দেখে আসা যায় ।

ভাবন , মার্তণ্ড মন্দির (Bhavan, Martand Temple) –

স্থানীয় হিন্দুদের কাছে ভাবন অতি পবিত্র জায়গা । বেশ বড়ো মন্দির রয়েছে এখানে । আর আছে কুণ্ড । এই জলে স্নান করে অনেক ধর্মীয় রীতি সম্পাদন করেন স্থানীয়রা । এখান থেকে হাঁটাপথে পৌঁছানো যায় কারুকার্যময় মার্তণ্ড মন্দির । সূর্যদেবকে পুজো করা হয় এখানে । ধারণা , প্রায় দু হাজার বছর পুরানো মন্দির এটি । সংস্কার করেছিলেন রাজা লালিত্যদেব ( ৬৯৯-৭৩৬ ) । অনেকের ধারণা কাশ্মীররাজ ললিতাদিত্যই এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা । যাই হোক না কেন , আজ প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত at হয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই মন্দির । ৮৪ টি স্তম্ভের দেখা মিললেও ৭৫ ফুটের চূড়োটি ধ্বংসপ্রাপ্ত । মাউন্ট মোড়ের কাছেই রয়েছে প্রাচীন গুহা মন্দির ‘ কুমজুভা ’ । গুহার মধ্যে স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাকমাইট দ্বারা নির্মিত বেশ কিছু শিবমন্দির রয়েছে । 

পহেলগাঁও- বৈশরণচঞ্চল (Pahelgaon- Vaisharanchanchal) –

লিডার ও শেষনাগ এর জলধারার সঙ্গমস্থলে এই পহেলগাঁও । কাশ্মীরে আগত ভ্রামণিকদের তালিকায় অবশ্যই পহেলগাঁও থাকা উচিত । উচ্চতা ২১৩০ মিটার । সমতলের মানুষেরা যে নৈসর্গিক দৃশ্যের কথা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেন না এখানে সেটাই স্বচক্ষে দেখা ও অনুধাবন করা যায় । পাহাড়ি শহরটাকে ঘিরে রেখেছে ১২ টি বৃহদাকার পর্বতশৃঙ্গ । হিমালয় পর্বতমালার এই শৃঙ্গগুলিতে সবসময়ই বরফ থাকে । অন্তত একটা রাত সুন্দরী পহেলগাঁওতে না কাটালে কাশ্মীর ভ্রমণ অনেকাংশেই বৃথা হয় । পূর্ব ও পশ্চিম লিডারের মিলন ঘটেছে এখানে । সারা শহরকে দুভাগে ভাগ করে দিয়েছে লিডার নদী । দু পাড়ে গড়ে উঠেছে দোকানপাট , বাড়িঘর , হোটেল । ট্রাউট মাছ ধরার সুযোগও রয়েছে এখানে । মাত্র শখানিক টাকা খরচ করে মাছ ধরার নেশা মেটানো যায় । এখানে অবস্থানকালে নয় পয়েন্টের গলফ কোর্সটিও দেখে নেওয়া যায় । অদূরে রাজা জয় সিংহের তৈরি মামলেশ্বর শিবমন্দির । পাথরের এই মন্দির লাগোয়া কুণ্ডটিও দর্শন করা যেতে পারে । আরও কিছুটা এগিয়ে আরু নামের সুদর্শন জায়গাটি ঘুরে নেওয়া যায় ।

   শহরের কেন্দ্র থেকে মাত্র পাঁচ কিমি দূরে ঘাসে ভরা বৈশরণ । এখান থেকেও হিমালয়ের শৃঙ্গগুলি দেখতে পাওয়া যায় । পেছনে ফেলে আসা পহেলগাঁও ও লিডার নদী দেখতে এখান থেকে বেশ ভালো লাগে । আরও ১০ কিমি এগোলে পাওয়া যায় জলে টলটলে তুলিয়ান লেক । লেকে প্রতিচ্ছবি পড়ে বরফ শৃঙ্গগুলির । জলেও ভাসতে থাকে শুভ্র বরফ । পহেলগাঁও থেকে সামান্যদূরে একেএকে দেখে নিন প্রায় দেড় কিমি দূরে মমলেশ্বর শিবমন্দির , বেতাব ভ্যালি ( ৭ কিমি ) , চন্দনবাড়ি ( ১৬ কিমি ) । বেতাব ভ্যালি চলচ্চিত্রের শ্যুটিং স্পট হিসেবে প্রসিদ্ধ । শেষনাগ থেকে বয়ে আসা নদী উপত্যকার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে । অসাধারণ এর সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে । চন্দনবাড়ির উচ্চতা ২৮৯৫ মিটার । এর প্রসিদ্ধ তার প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য।

আরু (Aru) – 

পহেলগাঁও থেকে নানাদিকে ট্রেকের সুযোগ রয়েছে । কোলাহাই হিমবাহের দিকে সাড়ে এগারো কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছানো যায় আরু নামের জনপদে । ২৯৬০ মিটার উচ্চ এই পাহাড়ি গ্রামে বসবাস করেন গুর্জর সম্প্রদায়ের মানুষজন । হিমালয়ের সুবিশাল ক্রোড়ে কিছুটা সময় নিরিবিলিতে কাটিয়ে নেওয়া যায় । সঙ্গী ভ্রামণিকের সঙ্গে যেন কথাও বলতে ইচ্ছে হয় না এখানে গিয়ে । কেবলই মুগ্ধ দৃষ্টি শোষন করতে চায় দৃশ্য রস । এখানে আসার পথে দেখে নিন আপেল উইলো গাছে ঘেরা ক্লাব পার্ক , গল্ফ কোর্স , ল্যাভেন্ডার পার্ক , লিডার ভ্যালি অ্যমিউজমেন্ট পার্ক , মিনি জু ইত্যাদি ।

নুব্রা উপত্যকা (Nubra Valley) –

লে শহর থেকে ৪০ কিমি পেরিয়ে পৌঁছন বিশ্বের উচ্চতম মোটরগাড়ি চলাচলকারী গিরিপথ ‘ খারদুংলা ’ ( ৫,৬০০ মিঃ ) । অনেকে এখান থেকে লে তে ফিরে যান । আপনি এই বোকামি না করে নুব্রার দিকে যান । আগে খারদুংলার আর্মি ক্যান্টিনে চা খেয়ে নিন । নুব্রা ও শিয়া –এই দুটি নদীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে লাদাখের সবুজ সুন্দর নুব্রা উপত্যকা স্থানীয় ভাষায় ‘ নুব্রা ’ মানে সবুজ । এই উপত্যকার বৃহত্তম গুম্ফা দিসটি গ্রামের মাথায় । এগিয়ে এসে হুন্ডায় রাত্রিবাস করুন । এখানেই লাদাখের বিখ্যাত মরু বালিয়াড়ির অবস্থান । আর বালির রং কাদা । ৩০৫০ মিটার উঁচু । দু – দুখানা কুঁজযুক্ত উটে চরে ঘুরে বেড়ান । চলুন তুর্ভুক গ্রামের দিকে । মুসলিম প্রধান এই গ্রামটি সাবেক বালুচিস্তানের অংশ । নুব্রা নদীর পাড়ে সুমুর গ্রাম , সামতানলিং গুম্ফা ও পালামিক উষ্ণ প্রস্রবণ আছে । কয়েক দিন হাতে নিয়ে গেলে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে শরীর অসুস্থ হবার কারণ থাকে না । 

জোরায়ার সিং কোর্ট (Zorayar Singh Court) –

জোরায়ার ছিলেন কাশ্মীররাজ গোলাব সিংহের সেনাপতি , যাকে বলা হয় ভারতবর্ষের অন্যতম যুদ্ধ কুশলী । ঊনবিংশ শতাব্দিতে তিনি লাদাখ জয় করে কাশ্মীরের সাথে যুক্ত করেছিলেন , সেই থেকে লাদাখ ভারতের ই অংশ , সেই বিজয় কাহিনি বর্ণিত আছে এই দূর্গে । 

শান্তিস্তপ (Santi stupa) – 

দিনের আলোয় যেখানেই থাকুন সন্ধ্যের আগে পৌঁছে যান শাস্তিস্ত্বপে । দেশ – বিদেশের ট্যুরিস্টরা আসেন এখানকার সুর্যাস্ত দেখতে ।

লিডারওয়াট (Leaderwatt) – 

আরুর পরে আরও সৌন্দর্য ভ্রামণিকদের জন্য অপেক্ষা করে থাকে লিডারওয়াটে । সবুজের চাদরে ঢাকা এইস্থান পৌঁছাতে পারলে পথ চলার ক্লান্তি দূর হয়ে যায় । ৩০৪৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত লিডারওয়াটকে ঘিরে রেখেছে হিমালয় পর্বতমালা ৷ কাছাকাছি দ্রষ্টব্যগুলি হল পোশপাথরি , কুটপাথরি , কুত্তুরীওয়ান জায়গাগুলি৷

অমরনাথ (Amarnath) – 

দেবী পার্বতী অমরত্ব পাওয়ার আশায় মহাদেবের কাছে দরবার করলে এক নিরাপদ আশ্রয় সৃষ্টির সমস্ত রহস্য বর্ণনা করতে চায় জটাধারি । সেই নিমিত্তেই ত্রিশূলের খোঁচায় তৈরি করে ফেলেন অমরনাথ গুহা । বর্তমানে এটি ভারত রাষ্ট্রের অন্যতম হিন্দু তীর্থস্থান । দৈর্ঘ্যে ১৬ মিটার , প্রস্থে ১৫ মিটারের এই পাহাড়গুহার উচ্চতা প্রায় ১১ মিটার । গুহার শেষপ্রান্তে পাহাড়ের ছাদ চুইয়ে জল পড়ে তৈরি হয়েছে ৮ ফুটের বরফের শিবলিঙ্গ । উজ্জ্বল এই বরফ লিঙ্গ কোনও সময়েই গলে না । সাদার সঙ্গে কিছুটা নীলচে রঙ মিশেছে লিঙ্গে । পাশেই চোয়াজলে তৈরি হচ্ছে মহাগণেশ ও পার্বতীর মূর্তি । কথিত আছে , মহাদেব পার্বতীকে যখন সৃষ্টির রহস্য শোনাচ্ছিল তখন গুহার মধ্যে দুটি শুকপাখি উপস্থিত ছিল , তারা এখনও অবস্থান করছে এই গুহা অভ্যস্তরে । ভক্তদের ধারণা , অমরনাথ গুহার সন্ধান পায় মহর্ষি ভৃগু । তারই আদেশে কশ্যপ দ্বারা নির্বাচিত কাশ্মীরের রাজা তক্ষকনাগ সর্বপ্রথম দেখে এই শিবলিঙ্গ । অমরনাথের দুর্গম পথে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভৃগু তক্ষককে একটি মন্ত্রপুত ছড়ি দিয়েছিল । এই ছড়ি নিয়েই আজ হয় ছড়ি মিছিল । শ্রাবণ মাসের শুক্লা পক্ষের দ্বাদশী তিথিতে শুরু হয় এই বিখ্যাত ছড়ি মিছিল । নুনওয়ান ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করে ছড়ি অর্থাৎ রৌপ্য দন্ডটি পরিচালকদের কাধে চড়ে যায় অমরনাথ গুহায় । পেছনে থাকে হাজার হাজর ভক্তের কাতার । ছড়ি মিছিলে নেতৃত্ব প্রদান করেন কাশ্মীর ধর্মার্থ সঙ্ঘের মোহান্ত । রাজা তক্ষকের পর বহুকাল এ পথে ভক্তদের আনাগোনা ছিল না । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিস্তৃত হয়েছিল অমরনাথ । অষ্টম শতাব্দীতে গুরু শঙ্করাচার্যের নেতৃত্বে আবার শুরু হয় অমরনাথ তীর্থযাত্রা । আবার লোকচক্ষুর অন্তরালে যায় এই ধর্মস্থান । অষ্টাদশ শতকে পুনরায় শিবলিঙ্গটি আবিষ্কার করেন আক্রমবাট মল্লিক নামের মুসলিম মেষপালক । অমরনাথ দর্শনের প্রধান সময় আষাঢ় মাসের গুরু পূর্ণিমা থেকে শ্রাবণী পূর্ণিমার ১ মাস ( জুন – জুলাই ) । এ সময় গুহা যাওয়ার পথের দু ধারে সারিবদ্ধভাবে পুজোর সামগ্রীর দোকানপাট বসে।

   সামরিক ঘেরাটোপের মধ্যে দিয়ে পায়ে পায়ে । চলে ছড়ি মিছিল । আগে চলে রৌপ্যদণ্ড , ঠিক পেছনেই সাধুর দল , এর ঠিক পরেই দেখতে পাওয়া যায় নাগা সন্নাস্টীদের । আর তারও পেছনে থাকেন তীর্থযাত্রীরা । যাত্রার দিনান্ত আসে বিকেলে , ১৩ কিমি অতিব বন্ধুর পথ চলার পর । যাত্রা শুরুর তিন কিমির মধ্যেই আসে পিসু চড়াই । পিচ্ছিল পাহাড়ি চড়াইতে চড়তে অক্ষম ঘোড়াও , তাই লাঠি ধরে ধীরে ধীরে পায়ে হাঁটাই ভালো । পিসু চড়াই ওঠার পর পিসু টপে সামান্য বিশ্রাম নেওয়ার প্রথা । তারপর চার কিমি সমতল ও পাঁচ কিমি চড়াই ভেঙে শেষনাগে বিশ্রাম । ছোট্ট পাহাড়ি লেকের ধারে ক্লান্ত মানুষদের অস্থায়ী কলোনী গড়ে ওঠে । কথিত আছে , সুত্রবসনাগ নিজে থাকার জন্য এই হ্রদটি খনন করেছিল । এখান থেকে সামান্য এগোলেই পাওয়া যায় ব্রহ্মা , বিষ্ণু ও মহেশ্বর পাহাড় । অনেকেই ১ ম রাতের আশ্রয় গ্রহণ করে বায়ুযানের বিশ্রামগৃহে বা যোজিবালে । দ্বিতীয় দিনে ছড়ি মিছিল । এগিয়ে মহাগুনাস পর্বত পাড় হয়ে বায়ুযান । সারাবছর বরফে ঢাকা থাকে ওয়াব্যান । শ্বাসকষ্ঠের সমস্যাও হয় অনেকের । ছড়ি মিছিলের ইতিহাসে ঐতিহাসিক | স্থান এটি । ১৯২৮ – এ প্রচন্ড প্রাকৃতিক বিপর্যয় কেড়ে নিয়েছিল হাজার হাজার তীর্থযাত্রীর প্রাণ । ১৯৯৬ – এও ঘটেছে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি । মহাগুণাস পার হলেই পাওয়া যায় উতরাই । এপথে আরও আট কিমি গিয়ে সেই দিনের জন্য যাত্রার ইতি টানা হয় পঞ্চতরণীতে । প্রাকৃতিক শোভায় সুসজ্জিত এখানকার পরিবেশ । পাঁচটি নদীর মিলন ঘটায় জায়গার নাম পঞ্চতরণী । নদীর পাড়েই বসে যাত্রী ক্যাম্প । ইচ্ছা করলে স্থায়ী বিশ্রাম ঘরেও থাকা যায়।পরদিন ভোর ৪ টেয় আবার হাঁটা শুরু । কিলোমিটার খানিকের মধ্যেই পড়ে ভৈরব ঘাট । তিন কিমি চড়াই চড়ে ৪১৫৪ মিটারে সন্তসিং টপ । আবার উতরাই ধরে আরও সাড়ে তিন কিমি যেতেই গন্তব্যে পৌঁছায় মিছিল । তবে অমরনাথ গুহায় প্রবেশ করতে হলে প্রায় পাঁচশটি খাঁড়া সিঁড়ি ভাঙতে হয় । অদূরে অমরাবতী নদী মিলেছে অমরগঙ্গায় । অনেকে সেখানে স্নান করে বা সেখানকার জল নিয়ে তীর্থস্থলে প্রবেশ করেন । হাঁটার অভ্যাস না থাকলে বা শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে ঘোড়া , দান্ডি বা কান্ডি করেও সামিল হওয়া যায় মিছিলে । প্রয়োজনীয় মালবহনের জন্য কুলি ও খচ্চরের ব্যবস্থাও আছে এখানে । চন্দনবাড়ি বেসক্যাম্পে পৌঁছে সেখান থেকেও খচ্চর ভাড়া করে নেওয়া যায় । শুক্লপক্ষের দ্বাদশীর দিন ভোর চারটেয় ছড়ি মিছিল শুরু হয় বেসক্যাম্প থেকে । গুহার দূরত্ব ৩২ কিমি । মিছিলের সঙ্গে চলার ইচ্ছা না থাকলে চন্দনবাড়ি থেকে পঞ্চতরণী পথ ধরে সঙ্গম পৌঁছে সেখান থেকে বালতাল হয়ে মাত্র সাড়ে চোদ্দো কিলোমিটার হাঁটলে পৌঁছানো যায় মহাতীর্থে । 

মাতা ক্ষীরভবানী , গান্ধারবল , গঙ্গাবল – 

সতীর ৫১ পীঠের একটি এটি । পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী , সীতা হরণের পর রাবণের ওপর তুষ্ট হয়ে দেবী পার্বতী লঙ্কা ছেড়ে চলে আসেন তুল্লামুল্লা গ্রামে । পাণ্ডাদের বর্ণনা অনুযায়ী , তাঁদের পূর্বপুরষদের কাছে পথক্লান্ত এক মহিলা এসে আহার্য চান । পূর্ব – পাণ্ডারা তৎক্ষণাত গরুর দুধের ক্ষীর দেন মহিলা রূপী দেবী পার্বতীকে । এখানে পার্বতীর মন্দিরও গড়ে তুলেছিলেন রাজা প্রতাপ সিং । শ্বেতপাথরের ছোট্ট মন্দিরটির সামনে রয়েছে ক্ষীরসাগর নামের কুণ্ড ও অসংখ্য প্রস্রবণ । কাঠের পাঠাতন পার হয়ে মন্দিরে যেতে হয় । পাঠাতনে দাঁড়িয়েই ক্ষীরসাগরে দুধ দেওয়া হয় ভবানীর উদ্দেশে । স্বামী বিবেকানন্দ অমরনাথ দেখার পর এ মন্দিরেও এসেছিলেন ভগিনী নিবেদিতার সঙ্গে । জ্যৈষ্ঠ মাসে এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে মেলাও বসে তুল্লামুল্লাতে । অদূরে দুর্গা , বুদ্ধ ও মহাবীরের মন্দিরটি দেখে নেওয়া যেতে পারে । এখান থেকে শ্রীনগরের দিকে কিলোমিটার পাঁচেক এগোতেই পাহাড়ি গ্রাম গান্ধারবল । সিন্ধুভ্যালির সুন্দর রূপ দেখা যায় এখান থেকে । সিন্ধু নদ সমতলে নেমেছে এখানেই । গান্ধারবলে সিন্ধুভ্যালির সদর দপ্তরও বসেছে । এখানকার জল খাবার হজম করতে সাহায্য করে । গান্ধারবল অবস্থানকালে দেখে নেওয়া যায় গঙ্গাবল । কাশ্মীরের হিন্দুরা এই লেকের জলেই অস্থি বিসর্জন করেন । শ্রাবণ মাসে এখানে তীর্থে আসেন ভক্তরা ।

  শ্রীনগর থেকে ২৭ কিমি দুরে ক্ষীরভবানী । সার্ভিস বাসে পৌঁছানো যায় গন্তব্যে । সেখান থেকে শ্রীনগরে ফেরার পথে পড়ে গান্ধারবল , শ্রীনগর থেকে দূরত্ব ২১ কিমি । আবার এখান থেকে ১৯ কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছানো যায় গঙ্গাবলে । কনডাকটেড ট্যুরে বাসে চেপে বেড়িয়ে নেওয়া যায় উলার লেক , মানসবল লেক , মাতা ক্ষীরভবানী , গান্ধারবল ।

শোনমার্গ (Sonmarg) – 

সোনলি বাগিচা অর্থে শোনমার্গ । উচ্চতা ২৭৩০ মিটার স্থানীয় মানুষদের ধারণা এই উপত্যকায় কোথাও সোনালি জলের রূপ আছে যার কারণেই সোনা রঙা হয় শোনমার্গ । ঘাসের রঙের সঙ্গে অদ্ভুত কোরাস তৈরি করে শুভ্ররঙা পর্বত চঁড়োগুলি । প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর অতিপ্রিয় ছিল স্বাস্থ্যকর শোনমার্গ । তিব্বত থেকে আসা সিন্ধু নদের পাশে গড়ে ওঠায় সবুজের অভাব নেই এখানে । পাহাড়ি নদটি উৎসের এত কাছে দেখার সৌভাগ্যও কিছু কম নয় । সব মিলিয়ে এইস্থানের সৌন্দর্য দেখে শেষ করা যায় না । এখান থেকে পায়ে হেঁটে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে দেখে নেওয়া যায় খাজিয়ার হিমবাহ । বরফের চাদরে ঢাকা পুলের মাধ্যমে সিন্ধু পেরিয়ে যাওয়া যায় তারই উৎপত্তিস্থলের আরও কাছাকাছি । এই হিমবাহর গলা জলেই পুষ্ট আদিম এই নদ । হিমবাহ দেখতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করলে হয় না । খুব তাড়াতাড়ি এ সৌন্দর্য আপনাকে স্বমহিমায় আসতে দেবে না । শোনমার্গ অবস্থানকালে দেখে নেওয়া যায় । পার্শ্ববর্তী কিছু বিশেষ ভ্রমণকেন্দ্র । 

বিনসর লেক (Binsar Lake) – 

শোনমার্গ থেকে অদূরে ৪০৮৪ মিটার উচ্চতায় বিনসর হ্রদ । ভ্রামণিকদের মনে এখানকার নিখুঁত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকে না । নিচিনাম পাস হয়ে যাওয়া পথটিও মনোরম । 

কৃষ্ণসর লেক (Krishnasara Lake) – 

বিনসর লেকের পাশেই কৃষ্ণসর হ্রদ । তবে উচ্চতা কিছুটা কম । একই সূত্রপাতে দেখে নেওয়া যায় শোনমার্গ , খাজিয়ার হিমবাহ , বিনসর লেক ও কৃষ্ণসর লেক । 

নীলাগ্রাড – 

বাল্টি উপজাতির মানুষের বাস এই উপত্যকায় ৷ শোনমার্গ থেকে ছয় কিমি পথ পেরিয়ে নীলাগ্রাডে খরস্রোতা এক পাহাড়ি নদী মিশেছে সিন্ধুতে । পাহাড়ি নদীর রক্তিম জল বাল্টিকদের কাছে খুবই পবিত্র , নানান রোগের উপশমও হয় এই জলে । স্থানীয় মানুষেরা সকলেই রবিবার করে এই নদীর জলে স্নান করেন।

  শোনমার্গের দূরত্ব শ্রীনগর থেকে ৮৪ কিমি । বাস চলে এ রাস্তায় । ট্যাক্সিতেও যাওয়া যায় শোনমার্গে । সময় লাগে তিন- সাড়ে ৩ ঘণ্টা । সারাদিনের জন্য পুরো গাড়িভাড়া খরচ পড়বে ২৯০০-৩৫০০ টাকা । ৩ কিমি দূরে খাজিয়ার হিমবাহ দেখার জন্য হাঁটাই একমাত্র ভরসা । ঘোড়ার পিঠে চড়ে কিছুটা পথও যাওয়া যায় ৷ তবে ব্রিজ পার হয় না ঘোড়া । 

যুসমার্গ , চারার – ই – শরিফ – 

মনোরম পরিবেশের আরও এক নিদর্শন শ্রীনগরের অদূরে অবস্থিত যুসমার্গ উপত্যকা । পশুচারণক্ষেত্র হিসেবে ফার ও পাইন গাছে ছাওয়া এইস্থানের যথেষ্ট খ্যাতি আছে । হাতে সময় থাকলে এই স্বাস্থ্যকর পরিবেশে এক বা দু দিন কাটানো যেতে পারে । দুধগঙ্গানদী নয়নাভিরাম সবুজ উপত্যকার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে । অদূরে অবস্থিত হে জন দরগা , নীলানাগ লেকটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে অল্প সময় খরচ করে । শ্রীনগর থেকে যুসমার্গ যাওয়ার রাস্তায় পড়ে চারার – ই – শরিফ । শ্রীনগর থেকে দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার । সুফী শেখ নুরুদ্দিন ওয়ালিয়া শায়িত আছেন এখানে । সম্রাট জাইনুল আবেদিন এখানেই তৈরি করান কাঠের মাজার । এই সৌধকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে চারার শহর । ১৯৯৫ – এ জঙ্গি হানায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় চারার – ই – শরিফ । সারা শহরের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয় । কাশ্মীরের কর্মঠ মানুষরা আবার সাজিয়ে তুলেছেন শহর ও মাজার । যুসমার্গ দর্শন করে ফেরার সময় ঝটিতি দেখে নেওয়া যেতে পারে পবিত্র মাজার শরিফ । 

দাচিগাম ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি – 

জঙ্গলপ্রেমী ভ্রামণিকদের জন্য কাশ্মীরের নতুন ঠিকানা দহিগাঁও ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি । অতীতে রাজারা এখানে মৃগয়া করতে আসতেন । শোনমার্গের উত্তর – পূর্ব দিকে অবস্থিত এই অরণ্যের উচ্চতা ১৬৯২ থেকে ৪২৮৯ মিটার । ফলে বিভিন্ন ধরনের গাছ এখানে দেখতে পাওয়া যায় । উদ্ভিদ ছাড়াও সহজেই দর্শন মেলে চিতাবাঘ , কালো ও বাদামি ভালুক , কাশ্মীরি স্ট্যাগ , হরিণ প্রভৃতি বন্যপ্রাণির । পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী আরও সুন্দর করে তুলেছে স্যাংচুয়ারিটিকে । রবিবার ছাড়া যেকোনও দিন ২০ টাকার বিনিময়ে রিসেপশন সেন্টার থেকে ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেনের অনুমতি নিয়ে ঘুরে দেখা যায় অরণ্য । 

লাডাক (Ladak) : 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর লাডাকের ইতিহাস অতি প্রাচীন ও বর্ণময় । বেশ কয়েক হাজার বছর ধরে যাযাবরদের বাস ছিল এখানে । চীনা তীর্থযাত্রী হুই | চাও – র বিবরণ থেকে জানা যায় , সপ্তম শতাব্দীতে হ সম্প্রদায়ের বাস ছিল এখানে । পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ অবশ্য বাসিন্দাদের কোনও বর্ণনা দেননি । তিনি এইস্থানকে লালভূমি বলে উল্লেখ করেছেন । বিভিন্ন নথিতে পাওয়া যচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের । এই প্রদেশের আদি নাম ছিল কাঞ্চাপা , পরিবর্তীত হয়ে রিপুল , আরও পরে লাডওয়াক এবং সবশেষে লাডাক । গিরিবর্তর দেশ লাডাকে একটি জাতি বা উপজাতির বাস গড়ে উঠেছে মাত্র কয়েক শতাব্দী আগে । বর্তমান জাতিটি বালতিস্তানের দর্দ উপজাতি , মধ্য এশিয়ার মঙ্গোলিয়ান ও ভারতের মন উপজাতির মিশ্রণে তৈরি । এরা এখন লাডাকি নামে পরিচিত ।

   তাই শাসনের অবসান ঘটলে ৮৪২ – এ লাডাক যায় লাচেন রাজাদের হাতে । প্রথম রাজা ডেনিমাগনেরের মৃত্যুর পর তাঁর রাজত্ব তিন ছেলের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় । পালজিমাগনের ভাগে পড়ে লাডাক । তিনি কাশ্মীর ও তিব্বত থেকে স্থপতিদের আনিয়ে লাড়াককে সাজাতে শুরু করেন , তাঁরই আমলে প্রথম গুম্ফাটি তৈরি হয় এখানে । লাডাককে একাধিক প্রাসাদ উপহার দেন রাজা নাগলুপ ৷ ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বৌদ্ধধর্মের রাজত্ব শুরু হয় এখানে । শতাব্দীর শেষের দিকে রাজা নোরুবগণের সময় এখানেই রচিত হয় বৌদ্ধ পুঁথি কান্দসুর । তাঁরই পুত্র রিনচেন ধর্মান্তরীত হয়ে মুসলিম হন । তিনি কাশ্মীর উপত্যকা দখল করে রাজ্যের সীমানাও বাড়িয়েছিলেন । তিনিই কাশ্মীর তথা লাডাকের প্রথম মুসলিম শাসক । সুলতান সদর – উদ্দিন নামে ১৩২৪-২৭ পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেছিলেন । ১৫৩৩ – এ মুসলিম শাসনের অবসান ঘটিয়ে সোয়াং নামগয়াল রাজা হন । রাজধানী লে – তে একের পর এক প্রাসাদ , মন্দির , সেতু ও সড়কপথ গড়েন তিনি । রাজ্যের পরিধিও বৃদ্ধি করেছিলেন তিনি । তাঁর মৃত্যুর পর ভাই জামইয়াং নামগয়াল রাজা হন । স্কার্দুর রাজা আলি শেরের মেয়ে খাতুনের সঙ্গে বিবাহ হয় জামইয়াং – এর । লে তথা লাডাকের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিবাহ এটি । তাঁদের সন্তান সিঙ্গে নামগয়াল রাজত্ব লাভ করেন ১৬১০ – এ । রাজা হিসেবে সিঙ্গে নানান কৃতিত্বের নিদর্শন রেখেছেন । স্পিতি , মানস সরোবর ও কৈলাস পর্বত পর্যন্ত রাজ্যের প্রসার ঘটানো , বালতিক ও মোগল যুগ্ম বাহিনিকে পরাস্ত করা ছাড়াও সমগ্র রাজ্যে অসংখ্য গুম্ফা , মণিওয়াল ও চোর্তেন গড়েন । এই বংশের রাজত্বকালেই প্রথম মসজিদ গড়ে ওঠে এখানে । ১৬৭৯ – এ তিব্বত রাজ লাডাকের ওপর চড়াও হলে মোগল সেনাদের সহযোগিতায় রাজা ডেলডন নামগিয়াল জয়ী হন । পরবর্তীতে তিনি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন । কিন্তু প্রজারা কেউই ধর্মান্তরীত হননি । ১৬৮৪ – তে মঙ্গোলিয়ানদের কাছে পরাস্ত হলে তিব্বত দখল নেয় লাডাকের ওপর । কাশ্মীরের সহযোগিতায় তিব্বতের হাত থেকে রক্ষা পায় লাডাক । তেমিসগাম চুক্তি অনুসারে বাৎসরিক ৭০০০০ টাকা ভাতার বিনিময়ে কাশ্মীরের অধীনে আসে লাডাক । এরপর রনজিৎ সিংহের শাসনকাল । তারপর গুলাব সিং চতুরতার সহিত তেমিসগাম চুক্তি লঙ্ঘন করে লে আক্রমণ করেন ও লাডাক দখল করেন । স্বাধীনোত্তর কালে পাকিস্তান দখল নিতে চাইল লাডাক ও কাশ্মীর । অন্যদিক থেকে চীন এগিয়ে এল তিব্বত দখল করতে । ১৯৬২ – র যুদ্ধের সময় চীন লাডাকের কিছুটা অংশ দখলও করে নিয়েছিল । এখন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সদা মোতায়েন রয়েছে লাডাকে । পাকিস্তান ও চীনের হাত থেকে লাডাককে বাঁচানোর জন্য তৎপরতার অভাব নেই জওয়ানদের ।

   তিব্বতীয় জীবনযাপনের রীতিনীতি এখনও বর্তমান লাডাকে । ১৯৫৯ – এ চীন তিব্বতের দখল নিলে বহু সংখ্যক তিব্বতীয় বাসস্থান ছেড়ে লাডাকে চলে আসেন । সেই থেকে এইস্থানকে মিনি তিব্বতও বলা হয়ে থাকে । দলাই লামাকেই এখানকার মানুষেরা গুরু বলে মানেন । মহাযানপন্থী বৌদ্ধ ছাড়াও এখানে কিছু সংখ্যক মুসলিম ধর্মাবলম্বীও বসবাস করেন । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে এখানে ভ্রামণিকদের প্রবেশ নিষেধ ছিল । ১৯৭৪ – এ নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় । এখন সহজেই ভ্রামণিকরা ঘুরে নিতে পারেন প্রাকৃতিক অপরিসীম সৌন্দর্যের মাঝে । তবে এ প্রদেশের বেশিরভাগ অংশই অগম্য । জনবসতিও নেই সেখানে । জুন থেকে সেপ্টেম্বর গ্রীষ্মকাল আর বাকি সময়টা অত্যস্ত শীত , বৃষ্টি হয়না এখানে । সিন্ধু নদ এখান দিয়েই বয়ে চলেছে সমতলের দিকে । লাডাকের উত্তর দিকে কারাকোরাম পর্বতমালা আর দক্ষিণে হিমালয় পর্বতমালা পেরিয়ে সীমানা গড়েছে পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশে । জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের লে ও কারগিল দুটি জেলা রয়েছে লাডাকে । লাডাক ভ্রমণে অবশ্য দর্শনীয় স্থানের নাম ও বিবরণ নিম্নে দেওয়া হল ।

লে (জম্মু ও কাশ্মীর) :

 অতীতের রাজধানী আজ হয়েছে জেলাসদর । কারাকোরাম পর্বতের ৩৫২১ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই শহরটি গড়ে উঠেছে লে ওয়েসিসকে কেন্দ্র করে । চারদিক থেকে শহরকে ঘিরে রেখেছে সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গ । এখানে থাকার সময় দেখে নিতে হয় লে মনাস্ক্রিটি । পাহাড়ের গায়ে গায়ে লেগে থাকা বাড়িগুলিতে বসবাস করেন বেশিরভাগই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ । আর আছেন কিছু খ্রিস্টধর্মীয় । শহরকে চিরে দিয়ে চলে গেছে মূল সড়ক । তারই দুপাশে গড়ে উঠেছে হাজারো দোকানপাট । দোকানীদের বেশিরভাগই মেয়ে । ঝলমলে কুনটুপ ও পেরাক টুপিতে ও নানান ভূষণে সুসজ্জিত থাকেন মেয়েরা । আর ছেলেরা পরেন জোব্বার মতো গৌচা । জুলাই থেকে আগস্ট গ্রীষ্মকাল এখানে । এসময় প্রায় ১৪ ঘন্টা ধরে সূর্য অবস্থান করে লাডাকে । জুন থেকে সেপ্টেম্বর বসন্তকাল । সমতলের মানুষের জন্য এসময়টাই লাডাক দেখার উপযুক্ত সময় । সমগ্র লে শহর এ সময় উৎসবে মেতে ওঠে । নাচ – গান – বাজনায় ভরপুর হয় তিরন্দাজি উৎসব । এছাড়াও ৬ জুলাই দলাই লামার জন্মদিনের উৎসব পালিত হয় মহাধুমধামের সঙ্গে । দুদিনে এই উৎসবও নাচ – গান – বাজনা – খাওয়াদাওয়ায় ভরপুর । দুটি দেবতার উপাসনা হয় দুদিনে । সমগ্র লাডাক জুড়ে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে মনাস্ট্রি থেকে মনাস্ট্রিতে উপাসনা চলে এ দু দিন । উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ রকমারি মুখোশ পরিহিত ছাম নৃত্য । সম্প্রতি সরকারের উদ্যোগে মে – জুন মাসে লে শহরকে কেন্দ্র করে সিন্ধু দর্শন উৎসব শুরু হয়েছে । সমগ্র লাডাক থেকে মানুষরা আসেন লে শহরে এই উৎসবে সামিল হতে । লে চোখাং বৌদ্ধমন্দিরে শহরবাসী তাদের দিন শুরু করেন এই মন্দিরকে প্রদক্ষিণ করে । লে বাজার বিখ্যাত , কারণ বহুপূর্বে কাশ্মীর , তিব্বত ও মধ্য এশিয়ার ইয়ারকান্দ থেকে ব্যবসায়ীরা ঘোড়ার ক্যারাভ্যানে করে মাল আনত এখানে । এখানে থাকতে থাকতে ঘুরে নিতে পারেন দর্শনীয় স্থানগুলি । 

নেজের লাখো – 

লে তে থাকাকালীন একদিন আসুন সন্ধ্যেবেলা নেজের লাখো – তে । টিলার ওপর চৌকো সাদা স্তুপটি লে শহরের দেবতার সন্ধানে এই স্তুপটি প্রতিষ্ঠিত । 

তিব্বতীয় মার্কেট – 

কলকাতা বা অন্যান্য শহরের মতো এই জেলা সদরেও কেনাকাটির ক্ষেত্রে চলে তুমুল দরাদরি । হেন কোনও জিনিস নেই যা এই বাজারে পাওয়া যায় না । লাডাক বেড়ানোর স্মৃতি স্বরূপ এখান থেকে কিনে নেওয়া যেতে পারে লাডাকবাসীদের পোশাক , টুপি , হস্তশিল্পের মতো দ্রব্যাদি । 

লে রাজপ্রাসাদ – 

শহরের শেষপ্রান্তে রাজা সিঙ্গে নামগয়ালের কাজ শুরু হয় রাজা সোভাং নামগয়ালের সময় ) তৈরি নয়তলার রাজপ্রাসাদ । তিব্বতের পোতোলা রাজপ্রাসাদের অনুকরণে তৈরি এই বাড়িটি তুমুল ক্ষতিগ্রস্থ হয় গুলাব সিং – এর আক্রমণে । বর্তমানে প্রাসাদটি ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক দপ্তরের মালিকানাধীন । সকাল ৬.০০-৯.০০ ও বিকেল ৫.০০-৭.০০টার মধ্যে লে রাজপ্রাসাদে ঢুকে দেখে নেওয়া যায় রাজাদের ব্যবহার করা নানান জিনিসপত্রের সংগ্রহ । 

রেড গুম্ফা (Red Cave) – 

রাজপ্রাসাদের মাথার ওপর পাহাড়ের চূড়োয় রেড গুম্ফা দাঁড়িয়ে আছে ১৪৩০ থেকে । বিশালাকার বুদ্ধ মূর্তিটি এখানকার অন্যতম আকর্ষণ । এছাড়া দেখতে পাওয়া যায় থঙ্কাস , পুঁথি , পাণ্ডুলিপি ও নানান ছবির সংগ্রহ । কিছুটা সময় হাতে নিয়ে সকাল ৭.০০ থেকে ৯.০০ টার মধ্যে রেড গুম্ফা দেখে নিতে হয় । গুম্ফার উঠোন থেকে লে শহরের টপ ভিউ দেখে নেওয়া যেতে পারে । অদূরের আরেক রাজপ্রাসাদ স্টকটিও দেখে নেওয়া যায় একই সঙ্গে । 

শঙ্কর গুম্ফালে –

লে শহরে অবস্থানকালে পায়ে পায়ে হেঁটেই দেখে নেওয়া যায় শঙ্কর গুম্ফা । অসংখ্য সোনার তৈরি মিনিয়েচার মূর্তি রয়েছে এখানে । এছাড়াও রয়েছে ১১ টি মাথা ও ৫০০ জোড়া চোখের অবলোকিতেশ্বর আর ৫০০ জোড়া হাত – পায়ের অদ্ভূত বুদ্ধ মূর্তি । এখানকার উপাসনালয়টিও দেখার মতো । শঙ্কর গুম্ফার ওপর থেকে রাতের লে শহরকে দেখতে বেশ ভালোই লাগে । 

ইকোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার –

লাডাকের প্রাকৃতিক সম্পদ , সংস্কৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে জানতে হলে চলে যেতে হবে ইকোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে । বিশালাকার লাইব্রেরিও রয়েছে এখানে । দেখে নেওয়া যায় সোলার এনার্জির ওপর গবেষণালব্ধ ফলাফল । সপ্তাহের তিন দিন ‘ লার্নিং ফ্রম লাডাক ‘ নামের তথ্যচিত্র দেখানোর ব্যবস্থাও রয়েছে । অদুরেই সিএটিএস – এ প্রতি সন্ধ্যায় বসে লাডাকি সংস্কৃতির আসর ।

   ১৫৯৪ – এ তৈরি মসজিদ , নিউ মনাস্ট্রির সোনার বুদ্ধ মূর্তি , রাজগিরের আদলে তৈরি শান্তি স্তূপ ও মণিওয়াল দেখে নেওয়া যায় একই দিনে ।

হেমিস গুম্ফা (Hemis Cave) – 

শহর থেকে ৪৩ কিমি দূরে অবস্থিত এই গুম্ফাটি দ্রুকপা সম্প্রদায়ের । ১৬৩০ – এ সিঙ্গে নামগয়াল তৈরি করান বিশালাকার এই গুম্ফাটি । লাডাকের গুম্ফাগুলির মধ্যে বৃহত্তম । এই গুম্ফাটির মধ্যে রয়েছে একাধিক মন্দির ও মূর্তি । সোনার জল করা মন্দির , শাক্যমুনিরূপী বুদ্ধের মূর্তি ও চারপাশের রুপোর চোর্তেন বিশেষভাবে ভ্রামণিকদের আকর্ষণ করে । ধর্মীয় গুরু রামপোচের মূর্তি রয়েছে উপাসনালয়ে । হেমিস গুম্ফার দেওয়ালগুলি নানান চিত্রে ভরপুর । প্রধান লামার সহস্র মুখ ও হাতের মূর্তিটিও অসাধারণ । গুম্পার লাইব্রেরিটি অসংখ্য মূল্যবান পাণ্ডুলিপি ও পুঁথিতে ভরপুর । ১৮৮৭ – তে রাশিয়ার মানুষ নটোভিচ এখানকার পুঁথি ঘেটে আবিষ্কার করেন নাথ সম্প্রদায়ের সাধুদের সঙ্গে এসে যিশুখ্রিস্ট এখানেই বৌদ্ধধর্মে দিক্ষিত হয়েছিলেন । হেমিসের থঙ্কাসের সংগ্রহ অনবদ্য । বিশ্বের বৃহত্তম থঙ্কাসটিও রয়েছে এখানে । এটি দেখার সুযোগ মেলে প্রতি বারো বছর অন্তর মহোৎসবের সময় । ২০১৬ – তে পুনরায় দেখতে পাওয়া যাবে বিশালাকার রঙিন থঙ্কাসটি । অদুরে ১৩ শতকে তৈরি গোতসাঙ গুম্ফাটিও দেখে নেওয়া যায় । গুরু গোতসাঙ পা গুম্ফাটি তৈরি করিয়ে এই পাহাড়েই ধ্যানে বসেছিলেন । তাঁর হাত ও পায়ের ছাপ রয়েছে এই বৌদ্ধ তীর্থস্থানটিতে । এখানকার ছাপা ধর্মীয় শাস্ত্র আজ লাডাকের সমস্ত গুম্ফাতেই যাচ্ছে । 

স্পিটাক গুম্ফা (Spitak Cave) – 

কদম – পা সম্প্রদায়ভুক্তরা একাদশ শতাব্দীতে এই গুম্ফা প্রস্তুত করালেও ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে এটি গেলুগ – পা সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে পরিণত হয় । এখানে সংরক্ষিত থঙ্কাস , প্রেয়ার প্ল্যাগ , দুষ্প্রাপ্য পুঁথি দেখার সুযোগ মেলে । অদূরেই রয়েছে নতুন তৈরি গুম্ফা । জানুয়ারি ২৮ ও ২৯ – এ এখানে জমকালো উৎসব হয় ৷ গুম্ফা ছাড়াও এখানে তিনটি মন্দির রয়েছে । উৎসবকালে সেজে ওঠে মন্দিরগুলিও । 

ফিরাং গুম্ফা (Firang cave) – 

পাঁচটি গুম্ফা এক জোটে রয়েছে ফিরাং – এ । এখানেই রয়েছে ৯০০ বছরের প্রাচীন সংগ্রহশালা । অনবদ্য এই সংগ্রহশালায় দেখতে পাওয়া যায় চীনা , মঙ্গোলিয়ান ও তিব্বতীয় অস্ত্রের বিপুল সম্ভার । গুম্ফার আটটি দেওয়াল সজ্জিত হয়েছে বুদ্ধের অষ্টমার্গ দ্বারা । গুম্ফাস্থিত বৌদ্ধ মূর্তিটি খুবই সুন্দর । অদূরের ফিরাং হ্রদটিও দেখে নেওয়া যায় একই সুযোগে । কিভাবে যাবেন লে থেকে ১৭ কিমি দুরস্থ ফিরাং যাওয়ার বাস পাওয়া যায় । কোথায় থাকবেন সকালে বেরিয়ে ফিরাং দেখে বিকেলের মধ্যে ফিরে আসা যায় লে শহরে ।

থিকসে গুম্ফা (Thikse Cave) – 

লাডাকের আরও এক আকর্ষণ পাহাড়ের চূড়োয় অবস্থিত ১২ তলার থিকসে গুম্ফা । এটিই এপ্রদেশের সবথেকে বেশি কারুকার্যমণ্ডিত গুম্ফা । অন্যান্য বৌদ্ধ উপাসনালয়ের মতো এখানেও রয়েছে থাঙ্কাস , দেওয়ালচিত্র ও লাইব্রেরি । আর আছে সুবিশাল বুদ্ধ মূর্তি । প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন এই গুম্ফায় সম্প্রতি আটটি নতুন মন্দির তৈরি হয়েছে , যাতে শোভা পাচ্ছে নানান দেবদেবীর মূর্তি । অদূরে মাথো গুম্ফাটিও দেখে নেওয়া যায় একই সঙ্গে । 

তাক তোক গুম্ফা – 

জনশ্রুতি এখানেই ধ্যানে মগ্ন হয়েছিলেন গুরু পদ্মসম্ভবা । ব্রাকথোক নামেও খ্যাত এই গুম্ফাটি নিংমা সম্প্রদায়ের একমাত্র উপাসনালয় । বসেছে তন্ত্রসাধনায় মগ্ন পদ্মসম্ভবা ও অন্যান্য নানা দেবদেবীর মূর্তি । দেওয়াল চিত্রে ধরা পড়েছে নানা আখ্যান । লে থেকে তাক তোেক যাওয়ার পথে দেখে নেওয়া যেতে পারে ছেমরে গুম্ফা । 

স্টোক প্যালেস (Stoke Palace) – 

একদা রাজপ্রাসাদ থাকলেও আজ এখানেই বসেছে সংগ্রহশালা । প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন এই প্রাসাদের দ্বার সাধারণের জন্য রুদ্ধ । ২০ টাকার বিনিময়ে প্রাসাদের একাংশের সংগ্রহশালাটি দেখে নেওয়া যেতে পারে নির্দিষ্ট সময়ে লে থেকে স্টোক প্যালেস যাওয়ার পথটির শোভা দেখার মতো । সিন্ধুর উপর দিয়ে চোগ – লামসারের সেতু পেরিয়ে যেতে হয় প্যালেস দেখতে ।

শ্যে প্যালেস , গুম্ফা –

রাজপরিবারের গ্রীষ্মাবাস ছিল এখানে । পরবর্তীকালে ( ১৬৪৫ ) ধর্মগুরু লাচেন ডপল – গেভি – এমগন এর হাতে এখানে গুম্পা তৈরি হয় । এখানে সোনার তৈরি নানান জিনিস দেখা যায় । বিশেষভাবে উল্লেখ্য , বিজয়স্তূপের শীর্ষভাগ ও বুদ্ধের বিশালাকার মূর্তির বর্হিভাগ । এছাড়াও দেওয়ালে খচিত মূল্যবান রত্নের কারুকার্য । সকাল ৭.০০-১.০০ ও বিকেল ৫.০০ থেকে ৬.০০ টার মধ্যে দেখে নেওয়া যায় শ্যে প্যালেস ও গুম্ফা । 

আলচি গুম্ফা (Alchi Cave) – 

কাঠের তৈরি এই গুম্ফাটি লাডাক ভ্রমণকালে অবশ্যই দেখে নিতে হয় । প্রায় ১০০০ বছরের পুরোনো এই উপাসনালয়টিতে দেখতে পাওয়া যায় সহস্র হাত ও মাথা বিশিষ্ট অবলোকিতেশ্বরের মূর্তি । দেওয়ালে তৈরি ফ্রেস্কোচিত্র ও কাঠের কারুকার্যে সমৃদ্ধ আলচি গুম্ফার অদুরে পাথরের তৈরি বাড়ির দেওয়ালে নানান বিন্দু দেবদেবী ও বুদ্ধর ছবি চিত্রিত wille ople রয়েছে । 

মুলবেক (Mulbeck) – 

প্রাকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের প্রতীক মুলবেত গ্রাম । এখান থেকে দাঁড়িয়েই দেখতে পাওয়া যায় নানা রঙের পাহাড় চূঁড়ো । সামান্য এগোতেই পাওয়া যায় গভীর খাদ , যার নিচ পর্যন্ত চোখ চালালে সমতলের মানুষের বুক কেঁপে ওঠে । চারিদিকে স্বচ্ছ সবুজ রঙের গাছপালা । পাহাড়ের চূঁড়োয় দুটি গুম্ফাও রয়েছে । কুষাণ যুগে পাহাড় কেটে তৈরি বুদ্ধের বিশালাকার মূর্তিটিও দেখে নেওয়া যায় মুলবেক অবস্থানকালে । প্রায় ২০০০ বছর আগে তৈরি এই চতুর্ভূজ মূর্তিটি বর্তমানে বিশ্বের উচ্চতম বুদ্ধ মূর্তি । মূর্তির পাশেই প্রার্থনাচক্রটি অবশ্যই দেখে নিতে হয় ।

লামায়ুরু (Lamayuru) – 

এখানেই রয়েছে লাডাকের প্রাচীনতম গুম্ফাটি । পাহাড় কেটে তৈরি এই গুম্ফাটি দেখার অভিজ্ঞতাই আলাদা । লামায়ুরুতে শীতের প্রকোপ খুবই বেশি । ফলে বাস থেকে নামতেই একটু জড়তা আসতে পারে ভ্রামণিকদের মধ্যে । কিন্তু এখানকার সৌন্দর্য জড়তা কাটাতে যথেষ্টই সাহায্য করে । গুম্ফার তলার এক ঘরে অবস্থানরত একাদশ শিবের মূর্তি ও অন্য ঘরের দ্বাদশ মুখের বৌদ্ধ মূর্তির নির্মাণ শৈলী ও নিপুণতা দেখে মুগ্ধ হতে হয় । অদূরে মুনল্যান্ড ভিউ পয়েন্ট থেকে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি ও মণিদেওয়াল দেখে নেওয়া যায় । উল্লেখ্য , বাতাসের হাত থেকে শহরকে বাঁচাতে মণিদেওয়াল তৈরি করা হয়েছে । সামান্য দূরেই খালসেতে দেখে নেওয়া যায় সেনাপতি জোরাবার সিং – এর তৈরি দুর্গের ধ্বংসস্তূপ । পাথরে খোদাই করা ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠি শিলালিপিও দেখে নেওয়া যায় খালসেতে ।

কারগিল (Kargil) – 

একদা পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী ছিল কারগিল । অতীতে এ জেলা সদরের নাম খারখিল থাকলেও কালক্রমে তা হয়েছে কারগিল । নাকতুর , হোরকার ও ওরজন পাহাড় সদাজাগ্রত প্রহরির মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে শহরকে ঘিরে । অতীতে খুবই তাবড় ভ্রামণিকরাই কারগিল নিয়ে মাতামাতি করতেন । কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে সমগ্র দেশের মাথাব্যথার কারণ হয়েছিল কারগিলের ভারত – পাক যুদ্ধ । এ শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জেলার নামও কারগিল । জেলার মোট জনসংখ্যা ১ লক্ষ ২০ হাজার ( প্রায় ) । এখানে বসবাসকারী শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমরা লাডাকি ও বালতিক মিশ্রণে তৈরি পুরিস ভাষায় কথা বলেন । ইংরেজিরও চল আছে এখানে । নানানরকম ফলের বাগানে সমৃদ্ধ কারগিলের খোবানি ভারত বিখ্যাত । কারগিল অবস্থানকালে দেখে নেওয়া যায় ইমামবাড়া বা ইকবাল মসজিদ । ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের কাছে রিসেপশন সেন্টার থেকে ভাড়া পাওয়া যায় ট্রেকিং এর জিনিসপত্র । ছোটো ছোটো ট্রেক করা যায় এখানে । এ শহর থেকে মাত্র তিন কিমি দূরে পাকিস্তান সীমান্ত । ঘণ্টা খানেক পাহাড়ি গ্রাম্য পথে হেঁটে পৌঁছে যাওয়া যায় আপার কারগিলেও । 

জাঁসকর উপত্যকা (Janskar Valley) – 

জাঁসকর লাডাক ভ্রমণকারী ট্রেকারদের স্বর্গরাজ্য বিশ্বের অন্যতম শীতল স্থান জাঁসকর উপত্যকা । অনেকে কারগিল থেকে সরাসরি ট্রেক করে চলে আসেন জাঁসকর স্বর্গের মাঝে । এখানকার সৌন্দর্য সারাবিশ্বে খ্যাত । জাঁসকরে দাঁড়িয়ে দেখে নেওয়া যায় নুন ও কুন পাহাড়কে । আশ্চর্যের বিষয় এই দুই পাহাড়ের উচ্চতা এক হওয়া সত্ত্বেও নুন বরফে ঢাকা আর কুন বরফহীন । এই উপত্যকার দু দিকে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হিমালয় ও জাঁসকর পর্বতশ্রেণি । এই উপত্যকার সদর শহর পাদুমও ঘুরে দেখে নেওয়া যায় ট্রেক করে । প্রায় ২০০০ লোকের বসতি পাদুমও সৌন্দর্যের দিক থেকে যথেষ্টই এগিয়ে । বৌদ্ধ ও সুন্নি মুসলমানদের বাস । বছরের প্রায় ৭ মাস এই উপত্যকা ঢাকা থাকে বরফে , শীতকালে এখানকার তাপমাত্রা -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস । অদূরে সানি গুম্ফাটিও দেখা যায় জাঁসকর অবস্থানে । 

জম্মু ও কাশ্মীর প্রশ্ন ও উত্তর (Jammu and Kashmir Question and Answer / FAQ ):

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর রাজধানী কোথায়?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর রাজধানী শ্রীনগর ( গ্রীষ্মকালীন ) , জম্মু ( শীতকালীন )।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর জনসংখ্যা কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ ৫০ হাজার।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর আয়তন কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর আয়তন ২২২২৩৬ বর্গকিলোমিটার।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর প্রতি বর্গ কিমি জনসংখ্যা কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর প্রতি বর্গ কিমি জনসংখ্যা ১২৪ জন।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২৩.৭১ শতাংশ (২০০১-২০১১)।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর সাক্ষরতার হার কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর সাক্ষরতার হার ৬৮.৭৪ শতাংশ।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর প্রধান ভাষা কি?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর প্রধান ভাষা উর্দু (এছাড়াও কাশ্মীরি , লাডাকি , ডোগরি , পাঞ্জাবি , হিন্দি ও ইংরেজির চল আছে)।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর গড় বৃষ্টির পরিমাণ কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর গড় বৃষ্টির পরিমাণ ১০৫ সেমি।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এ নারী / পুরুষ অনুপাত কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এ নারী / পুরুষ অনুপাত ৮৮.৩ / ১০০ জন।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর তাপমাত্রা কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর তাপমাত্রা শীতকালে তাপমাত্রা ০.৯ থেকে ১২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে ।

◆ আরও দেখুন :-

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir): ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ

আশা করি এই পোস্টটি বা ” জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir): ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

পাঞ্জাব (ভারত): ইতিহাস, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ

0

পাঞ্জাব (ভারত): ইতিহাস, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ

পাঞ্জাব ভারতের একটি বিশেষ রাজ্য, যেটি পাঞ্জাব অঞ্চলের বৃহত্তর অংশ গঠন করেছে। উত্তরে জম্মু ও কাশ্মীর, পূর্বে হিমাচল প্রদেশ, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে হরিয়ানা, দক্ষিণ-পশ্চিমে রাজস্থান, এবং পশ্চিমে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ভারতের, পাঞ্জাবের সীমা নির্ধারণ করেছে। পাঞ্জাব রাজ্যের রাজধানী চণ্ডীগড়ে অবস্থিত। পাঞ্জাব একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানারও রাজধানী।

পাঞ্জাব (ভারত): ইতিহাস, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ইত্যাদি সম্পর্কে জানব শুকতারা Tv র এই পর্বে।

পাঞ্জাব (ভারত) সম্পর্কে কিছু তথ্য

রাজ্য পাঞ্জাব
রাজধানী চণ্ডীগড়
জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৭৭ লক্ষ ৫ হাজার
নারী / পুরুষ ৮৯.৩ / ১০০
আয়তন ৫০৩৬২ বর্গকিলােমিটার
জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমি ৫৫০
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৩,৭৩ শতাংশ (২০০১-২০১১)
সাক্ষরতার হার ৭৬.৬৮ শতাংশ
প্রধান ভাষা পাঞ্জাবি
আবহাওয়া শীত ও গ্রীষ্মের আধিক্য আছে এখানে। মে – জুনে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর নভেম্বর – ফেব্রুয়ারি প্রায় বরফ জমা ঠাণ্ডা থাকে । জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর বর্ষাকাল ।
জেলা তালিকা

২২

হাইকোর্ট পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট

পাঞ্জাব (ভারত) ইতিহাস :

বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ভারত রাষ্ট্রের উত্তরের রাজ্য পাঞ্জাব । পাঞ্জাবের ঘল্পর উপত্যকায় হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন মেলায় অনেকটাই নিশ্চিন্ত হওয়া গেছে এই জনপদের বয়স সম্পর্কে । খ্রি.পূ. ৫২২ সালে এই প্রদেশ ছিল পারস্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত । পাঞ্জাব নামটিও ফারসি । অর্থ পাঁচ জলাশয়ের সমারােহ । ‘ দ্য গ্রেট আলেকজাণ্ডার ‘ – ও দখল নিয়েছিলেন এই জনপদের । পরবর্তীতে রাজা চন্দ্রগুপ্তের আমলে পাঞ্জাব মৌর্য সাম্রাজ্যের মধ্যে আসে । এরপর সুলতানি শাসন বারবার বদল হতে থাকে পাঞ্জাব রাজ্যের মালিকানা । ফলে এখানকার মানুষেরও বন্দি দশা ঘােচে না । এমতাবস্থায় শুরু নানক ( ১৪৬৯-১৫৩৯ ) শিখ ধর্মের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটান পাঞ্জাবে । একই ধর্মের ছাতার তলায় আসায় রাজ্যের সাধারণ মানুষদের মধ্যে অভূতপূর্ব একতা গড়ে ওঠে ক্রমে শিখদের মধ্যে নবজাগরণ ঘটে । রণজিৎ সিংহ সময়ের সদব্যবহার করে দখল করেন লাহাের গড়ে ওঠে শিখ রাজ্য । রণজিৎ সিংহের শাসনকালে এই রাজ্য সমস্ত দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে যায় । ১৮৩০ – এ তার মৃত্যু ঘটলে শাসনভার আসে পুত্র দিলীপ সিং – এর হাতে ।

এই রাজ্যের উন্নতি চোখ টানে ব্রিটিশদের ১৮৪৯ – এ ইংরেজ দখল করে পাঞ্জাব । ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ , ১৮৫৭ – য় ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়েছিল পাঞ্জাব রাজ্য পরে নিজেদের ভুল বুঝতে পারে শিখরা । ক্রমে ক্রমে পাঞ্জাব হয়ে ওঠে ব্রিটিশ বিরােধী শক্তির আখরা । অবিভক্ত বাংলা দেশের সঙ্গে পাঞ্জাবও হাতে হাত দিয়ে প্রতিরােধ গড়ে তােলে ইংরেজ রাজের বিরূদ্ধে । এখান থেকেই এ রাজ্যের ইতিহাস অন্য দিকে মােড় নেয় । পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে দমনমূলক নীতি গ্রহণ করল ইংরেজ সরকার । তারই ফসল ১৯১৯ – এর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ।

 বাংলার আদলেই পাঞ্জাবকে বারবার খণ্ডিত করা হয়েছে । ১৯৪৭ – এ দেশভাগ পাঞ্জাবের বুকে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে । রণজিৎ সিং প্রতিষ্টিত রাজ্যের রাজধানী লাহােরও চলে যায় নতুন দেশ পাকিস্তানে । ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া এই রাজ্যের মুসলিমরা চলে যাবেন পাকিস্তানে আর সেখানকার শিখরা চলে আসবেন ভারতে , এই ছিল শর্ত দেশ ভাগের । ডামাডােলকে কাজে লাগায় পাকিস্তানের দুষ্কৃতিরা । লাখাে লাখাে শিখদের হত্যা করে তারা এ ক্ষত কোনও দিনও ভুলবার নয় । এরপর ১৯৪৮ – এ ভাষার ভিত্তিতে তিনটি পাহাড়ি জেলা চলে যায় হিমাচল প্রদেশ । ১৯৬৬ – এ হিন্দু অধ্যুষিত হরিয়ানাকে আলাদা করা হয় পাঞ্জাব থেকে । যদিও এই দুই রাজ্যেরই রাজধানী চণ্ডীগড় ।

পাঞ্জাব (ভারত) ভৌগোলিক অবস্থান :

 পাঞ্জাব রাজ্যের উত্তরে অবস্থান করছে জম্মু ও কাশ্মীরের সামান্য ও হিমাচল প্রদেশের কিছুটা অংশ । পূর্বদিক ঘিরে রেখেছে হিমাচল প্রদেশ ও হরিয়ানার অংশ বিশেষ । দক্ষিণ দিকে রয়েছে হরিয়ানা । ও রাজস্থানের সঙ্গে সীমানা । আর সমগ্র পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত । 

পাঞ্জাব (ভারত) ধর্ম, প্রাকৃতিক পরিবেশ, অনন্য :

 পাঞ্জাব রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষই শিখ সম্প্রদায়ের । কেশ , কাঙ্গা , কাচ্ছা , কারা , কৃপান এই পাঁচটি জিনিস শিখদের রাখতেই হয় । লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পুরুষদের জাতীয় পােশাক । মহিলারা সালােয়ার কামিজ , হাটু পর্যন্ত জামা ও ওড়না পরেন । লক্ষ করার মতাে বিষয় সারা ভারতের মানুষের গড় আয়ু ৫০ বছর হলেও পাঞ্জাবিদের ক্ষেত্রে তা ৬৫। এ থেকেই আন্দাজ করা যায় তাদের শারিরীক ক্ষমতা কতটা । সুঠাম দীর্ঘাঙ্গ ও মনের জোর এই সম্প্রদায়কে অনেক ক্ষেত্রেই ভারত সেরা করেছে । আখ , তুলা ও তৈলবীজ উৎপাদনের তালিকায় সর্বাগ্রে এই রাজ্যের নাম পাওয়া যায় । এছাড়া মােট উৎপাদনের ২২ শতাংশ গম ও ১০ শতাংশ চাল এখানেই হচ্ছে । ১৯৮৯ – তে পাঞ্জাব সাইকেল উৎপাদনে বিশ্ব রেকর্ড করেছে । 

পাঞ্জাবের প্রাকৃতিক পরিবেশ সত্যিই দেখার মতাে । বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সবুজের সমারােহ দেখতে ও জানদার মানুষদের দেখা পেতে অন্তত একবার যেতেই হয় এ রাজ্যে । ভ্রমণকেন্দ্রগুলি অবশ্য এই যাত্রার আকর্ষণ বাড়ায় । এ প্রদেশের ভাংড়া নাচ গানের খ্যাতি সারা ভারতে । গজল , কাওয়ালিতেও অন্যান্য প্রদেশের থেকে অনেকটাই এগিয়ে পাঞ্জাবিরা ।

চণ্ডীগড় – পাঞ্জাব (ভারত) :

এই শহরের বয়স অর্ধ শতাব্দীর কিছুটা বেশি । রাজ্য গড়ার পর রাজধানী শহরের অভাব দেখা দিতে ১৯৫০ – এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় শিবালিক পাহাড়ের পাদদেশে রাজধানী শহর স্থাপন করা হবে । পিয়েরি জিনার্ট , ম্যাক্সওয়েল ফ্রাই , করবু ও জেইন ডু – র সঙ্গে ভারতীয় স্থপতিদের মেলবন্ধনে তৈরি হয়েছে । অত্যাধুনিক শহর চণ্ডীগড় । পরবর্তীকালে এ শহর হরিয়ানা রাজ্যের রাজধানীর দায়িত্ব পেয়েছে । বর্তমানে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা এই দুই রাজ্যের রাজধানীর ভূমিকা নিরলসভাবে পালন করে চলেছে কেন্দ্রশাসিত ঝকঝকে চণ্ডীগড় শহর ।

 সমুদ্রতট থেকে ৩৮৩ মিটার উচ্চে অবস্থিত এই শহরের বিস্তৃতি প্রায় ১১৪ বর্গকিলােমিটার । শহরকে ভাগ করা হয়েছে মােট ৪৭ টি সেক্টরে । প্রত্যেক সেক্টরই স্বয়ংসম্পূর্ণ । প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের বাস এই শহরে । এক সেক্টর থেকে অন্য সেক্টরে যাওয়ার জন্য রয়েছে সরকারি বাস , অটো ও রিকশা । 

শহরের প্রাণকেন্দ্র সেক্টর ১৭ , বাণিজ্যকেন্দ্রও বলা চলে । শপিং সেন্টার , প্যারেড গ্রাউন্ড , সরকারি অফিস , বাস টার্মিনাস , জেলা আদালত এ সবেরই অবস্থান এখানে । রাতের বেলা এই সেক্টর সেজে ওঠে ঝলমলে আলােতে । ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সিটি সম্মান প্রাপ্ত এই শহরে দ্রুত গতি ও ধীর গতির গাড়ি যাতায়াতের রাস্তা আলাদা । সমগ্র শহরেই ফুল গাছ ও ঘাসের বাগিচা ছড়িয়ে রয়েছে ।

রক গার্ডেন :

এখানে অবস্থানকালে রক গার্ডেন । দেখতে ভুললে চলে না । শহরের জঞ্জাল , শিবালিক । পাহাড়ের পাথর মিলিয়ে তৈরি করা এই রক গার্ডেন । এখানেই রয়েছে মিউজিয়াম , মুক্তাঙ্গন থিয়েটার , কৃত্রিম জলপ্রপাত , দরবার হল , প্যাভিলিয়ন । 

শুকনা লেক : 

অদূরের শুকনা লেকটিও দেখে নেওয়া যায় একই সুযােগে । কলকাতার রবীন্দ্র সরােবর লেকের মতাে এই লেকের চরিত্র । শহরবাসীরা । সকাল সন্ধে হাঁটার জন্য আসেন এখানেই । বােটিং , রােয়িং , স্কেলিং , সেইলিং – এর ব্যবস্থাও আছে এখানে । 

চণ্ডীদেবীর মন্দির : 

কিছুটা এগিয়ে চণ্ডীদেবীর । মন্দির দেখতে পাওয়া যায় । এই দেবীর নাম অনুসারেই শহরের নাম । মন্দিরে যাওয়ার জন্য বাস ধরতে হয় ।। 

সেক্রেটারিয়েট , হাইকোর্ট , বিধানসভা :

লে মাডুলাের শৈলীতে গ্রানাইট পাথর ও কংক্রিট ব্যবহারে জ্যামিতিক রূপে গড়ে তােলা হয়েছে এই তিন বাড়ি । পাঞ্জাব ও হরিয়ানা উভয় রাজ্যেরই জনপ্রতিনিধি , ২২ বিচারক ও সরকারি কর্মচারীরা কাজ করেন একই বিল্ডিংগুলিতে । সাধারণ দর্শকদের জন্য সকাল । ১০.০০-১২.০০টা সেক্রেটারিয়েট ভবনের ছাদে উঠে সমগ্র শহরকে দেখে নেওয়ার সুযােগ থাকে । বিধানসভা ঘুরে দেখার অনুমতি মেলে রিসেপশন । থেকে । অত্যাধুনিক হাইকোর্টটিও দেখার সুযােগ । পাওয়া যায় ১০.৩০-১২.৩০ ও ১৪.৩০-১৬,৩০ – এর । মধ্যে আধ ঘণ্টা অন্তর । 

ওপেন হ্যান্ড :

সেক্টর ওয়ানে , হাইকোর্টের পাশেই রয়েছে বিশালাকার মুক্ত হস্ত । ১৪ মিটার উঁচু ইস্পাতের তৈরি এই হাত হাওয়ার সঙ্গে ঘুরতে থাকে । 

মিউজিয়াম ও আর্ট গ্যালারি :

সেক্টর ১০ – এ পাশাপশি অবস্থান মিউজিয়াম ও আর্ট গ্যালারির । রাজস্থানি , কাংড়া ও মােগল মিনিয়েচার ছবি , মডার্ন আর্টের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় গ্যালারিতে । সংগ্রহশালায় রয়েছে গান্ধার যুগের নানান ভাস্কর্য , টেরাকোটার কাজ , ফসিল প্রভৃতি । সােমবার বাদে অন্যান্য দিন সকাল ১০.০০-১২.৩০ ও ১৪.০০ ১৬,৩০ – এর মধ্যে দেখে নেওয়া যায় এই সংগ্রহ । অদূরের ইভােলিউশন অফ লাইফ মিউজিয়ামে সিন্ধু । সভ্যতা থেকে শুরু করে বর্তমান সভ্যতার মধ্যেকার । বিবর্তনের নানান ইতিহাস জানার সুযােগ রয়েছে ।

পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় :

চণ্ডীগড়ের আরও এক দর্শনীয় স্থান সেক্টর ১৪ – তে অবস্থিত পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় । পাহাড়ের গায়ে ছড়িয়ে থাকা এই ক্যাম্পাসের কোথাও খুব নিচু আবার কোথাও উঁচু । একাধিক পার্ক ও জলাশয়ে ভরা এই চত্বরে অবস্থিত । গান্ধি ভবনটি সত্যিই দেখার মতাে । এখানকার স্টুডেন্টস ভবন , লাইব্রেরি ও ফাইন আর্ট মিউজিয়ামটি ত ঘুরে দেখা যায় । 

জাকির গােলাপ বাগ :

এশিয়ার বৃহত্তম গােলাপ ফুলের বাগিচা এটি । ২৭ একর জমির ওপর ছড়িয়ে থাকা এই বাগানে গােলাপ গাছের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার । ১৬০০ রকমের গােলাপ ফোটে এই গাছগুলিতে । অদ্ভুত এই বাগানে ঘুরতে ঘুরতে গােলাপের রকমভেদ দেখা ও পাগল করা গন্ধে হারিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাই আলাদা ।

পাঞ্জাব (ভারত) ঐতিহাসিক স্থান :

রােপার :

 ঘিঞ্জি বাণিজ্যিক শহর রােপারে দেখার মতাে নানান বিষয় রয়েছে । সবথেকে উল্লেখযােগ্য এএসআই মিউজিয়ামটি , ১৯২৯ থেকে ৫৫ পর্যন্ত এই অঞ্চলে খনন কায় যে সকল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মিলেছে , তা সবই আছে এখানে । উল্লেখ্য এই শহরেই লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ও রণজিৎ সিংহের সাক্ষাৎ ঘটেছিল। 

কাপুরথালা :

জলন্ধর থেকে ২১ কিমি দূরে অবস্থিত কাপুরথালা প্রায় ৯০০ বছরের পুরােনাে শহর । রাজা ইব্রাহিম ভট্টি , যশা সিং আলুওয়ালিয়া ও সর্বোপরি রণজিৎ সিং – এর স্মৃতিবিজরিত এই শহরে রয়েছে গােলাপি রঙের রাজপ্রাসাদ । রণজিৎ সিং – এর গড়া এই রাজপ্রাসাদের সাজসজ্জা , কারুকার্যের সঙ্গে দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থে সমৃদ্ধ বিশালাকার লাইব্রেরিটিও দেখে নেওয়া উচিত হবে । সােনা – রুপাে দিয়ে গড়া ঘােড়ার গাড়িটি এখনও দেখতে পাওয়া যায় । এছাড়াও এখানে রয়েছে গুরদ্বারা , কারুকার্য খােচিত মসজিদ , ল কোর্ট , কাঞ্জলি লেক , হারেম মহল , ফতে সিং – এর তৈরি পাঁচ মন্দিরের মতাে আরও নানান দর্শনীয় স্থান।

পাতিয়ালা , শেরহিন্দ- অতীতে স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল পাতিয়ালা । এশিয়ার অন্যতম । বিশালাকার মােতিবাগ রাজপ্রাসাদ ছাড়া আরও অনেক প্রাসাদ ও দূর্গতে সমৃদ্ধ পাঞ্জাব প্রদেশের এই শহর । মহারাজা নরিন্দর সিং – এর তৈরি মােতিবাগ প্রাসাদের অনবদ্যতা প্রমাণিত হয় কাচের কারুকার্য , ঝাড়লণ্ঠনে সমৃদ্ধ শিশমহল ও সংরক্ষণশালাটি । মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে বেশ কিছুটা সময় লাগে কারণ এখানে । রয়েছে রাজস্থানি শিল্পীদের আঁকা ছবি , হাতে লেখা পুঁথি , তরবারি ও ছােরাগুলির সংগ্রহ দেখার মতাে । 

 পাতিয়ালা অবস্থানকালে মহাকালী মন্দির , সাহিব । গুরুদ্বারা , মুবারক দূর্গ , বারাদারি উদ্যানটি দেখে নিতে হয় । শহরের কেন্দ্র থেকে আট কিমি দূরে বাহাদুরগড় 2 দূর্গটি সামান্য সময় খরচ করে দেখে আসা যেতে পারে । ২১০০ মিটার বিস্তৃত এই দূর্গ ঘিরে রয়েছে ৫৮ ফুট চওড়া পরিখা । মালেরকোটলা শহরটি পাতিয়ালা থেকে আধ ঘণ্টা দুরত্বে অবস্থিত । এখানকার রহমত দুর্গ , মুবারক মঞ্জিল , মকরা দেখে এখনও মুগ্ধ হতে হয় পর্যটকদের ।

 পাতিয়ালা থেকেই ঘুরে দেখা যায় শেরহিন্দ শহর । ১৫৫৫ – তে এখান থেকেই হুমায়ুন দিল্লি দখল করেন । দূর্গ , মসজিদ , গুরদ্বারা , মীর আলমের সমাধি , গুরু গােবিন্দের দুই ছেলের জীবন্ত সমাধি থাকায় ধর্মীয় ও পর্যটন উভয় দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ শেরহিন্দ । 

পাঞ্জাব (ভারত) অন্যান্য দর্শনীয় স্থান :

নাঙ্গল : 

পাঞ্জাব ভ্রমণে ঘুরে দেখা যায় নাদাল । ভাকরা বাধ থেকে একটি ধারাকে শিবালিক পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ তৈরির উদ্দেশ্যে । রাসায়নিক সার কারখানাও রয়েছে এখানে । কারখানা ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে সম্বল করে গড়ে উঠেছে শহর । 

আনন্দপুর সাহিব , কিরাতপুর সাহিব (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) : 

শিখদের পাঁচটি তীর্থস্থানের মধ্যে এটি অন্যতম । হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে বশিষ্ঠ মুনি এখানেই ধ্যান করতেন । রামায়ণও লেখেন বাল্মীকি মুনি এইস্থানেই বসে । ১৬৬৫ – তে ৯ ম গুরু তেগ বাহাদুরের হাতে প্রতিষ্ঠিত এই শহর । তখন এইস্থানের নাম ছিল চক নানাকি । গুরু তেগ বাহাদুরের স্মারক নিয়ে । সংরক্ষণশালাও গড়ে উঠেছে এখানে । কেশগড়েই প্রথম শিখ সৈনিকদের সিং নামে উপাধিতে ভূষিত করেন গুরু গােবিন্দ সিং । গুরদ্বারা রয়েছে অনেক এখানে । শিখদের অতি পবিত্র নগরদুর্গ গুরদ্বারাটিও এখানে অবস্থিত । হােলা মহল্লা ও বৈশাখী এখানকার বিশেষ উৎসব । এই দুসময়ে এখানে উপস্থিত থাকলে আসল পাঞ্জাবকে অনুভব করা যায় ।

 আনন্দপুর সাহিব থেকে ১১ কিমি দূরে কিরাতপুর সাহিব , আরও এক পবিত্র স্থান । ষষ্ঠ গুরু হরগােবিন্দের পুত্র বাবা গুরদিট্টা এই গুরদ্বারার প্রতিষ্ঠা করেন । এইস্থানটি অনেকদিন ধরে শিখ সম্প্রদায়ের কেন্দ্রস্থলসম ছিল । এখানেই রয়েছে গুরু নানক সাহিব , গুরু হরগােবিন্দ সাহিব – এর মতাে আরও নানান গুরদ্বারা । 

নয়না দেবী মন্দির (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) :

 হিমাচল রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলেও নয়না দেবীতে যাওয়ার সুবিধা পাঞ্জাব থেকে । সতীর ৫১ পিঠের একটি এটি । এখানে সতীর নয়ন । পড়েছিল , তাই এটি হিন্দুদের কাছে অতীব পবিত্র স্থান । মন্দিরের পাশে গুহাও আছে । রােপওয়ে চড়ার । অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করা যায় এখান থেকে ।

অমৃতসর (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) : 

চণ্ডীগড় পাঞ্জাবের রাজধানী হলেও শিখ সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল তথা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর অমৃতসর । ভারত থেকে পাকিস্তান যাওয়ার একমাত্র সড়কটিও গিয়েছে এই শহর থেকেই । প্রায় সাত লক্ষ মানুষের বাস শিখদের পবিত্র শহর অমৃতসরে । একদা খালিস্তান আন্দোলনের আর্তুরঘর এই শহর আজ অনেকটাই সন্ত্রাস মুক্ত । ফলে সাধারণ ভ্ৰামণিকরা নির্দ্বিধায় ঘুরতে পারেন এখানে । রেল । স্টেশনের কাছে রয়েছে পুরােনাে ঘিঞ্জি শহর সামান্য দূরেই গড়ে উঠেছে ঝকঝকে নতুন শহর । 

ওয়াঘা বর্ডার (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) :

 ভারত পাকিস্তানের সীমান্ত এই ওয়াঘা বর্ডার । মূল শহর থেকে ২৫ কিমি দূরে । অবস্থিত সীমান্তে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা দু দেশের । সৈনিকদের মেলবন্ধন ঘটে । বাস , অটো বা ট্যাক্সি । করে শহর থেকে সীমান্তে পৌঁছে ফ্ল্যাগ ডাউন ( ১৮.৪৫ ) -এ অনুষ্ঠানটি সাধারণ ভ্ৰামণিকরাও দেখতে পারেন । পতাকা নামানাের সময় সামরিক নিয়ম মেনে মার্চ ও কুচকাওয়াজ হয় । দু দেশেরই সাধারণ মানুষরা অংশ নেন এই অনুষ্ঠানে । 

স্বর্ণমন্দির (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) : 

অমৃতসর তথা ভারতের অন্যতম ভ্রমণকেন্দ্র স্বর্ণমন্দির । অমৃতসর শহর গড়ার স্বপ্ন গুরু নানক দেখেছিলেন । তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হয় সম্রাট আকবরের ফরমানে অনন্তকালীন অধিকার পেয়ে শহর গড়েন গুরু রামদাস । প্রাচীরে ঘেরা শহরে ১৮ টি ফটক রাখা হয়েছিল সেকালে । শহরের কেন্দ্রস্থলে সরােবর খননও করান তিনি । এই সরােবরের সংস্কার করে সেখানে হরমন্দির গড়েন গুরু অর্জন । তার আমন্ত্রণে ১৫৮৮ – তে লাহাের থেকে পীর হজরত মিয়ান মীর এসে এই মন্দিরে । ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন । সরােবরের জলও হয় অমৃত সমান শুদ্ধ । সেই থেকে এইস্থানের নাম হয় অমৃতসর । ১৬০৪ – এ গুরু অর্জনের লেখা আদি গ্রন্থসাহিবকে স্থাপন করা হয় হরমন্দিরে । ১৬০৬ – এ জাহাঙ্গীর অর্জনকে মৃত্যুদণ্ড দিলে তার পুত্র গুরু হরগােবিন্দ শিখ ধর্ম রক্ষার্থে অস্ত্র ধরার কথা বলেন । গড়েন লৌহগড় দূর্গ । তিনবার যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে চতুর্থবার মােগল বাহিনীকে হারায় তার দল । আজকের মন্দিরটি গড়েছিলেন রণজিৎ সিং । কালে কালে এই মন্দির হয়ে ওঠে শিখ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান তীর্থস্থান । মন্দির গম্বুজ দেখে মনে হয় ওল্টানাে পদ্ম ফুল ।। সাড়ে তিন হাজার স্তোত্র লেখা আছে এই গম্বুজে । রাজা রণজিৎ সিং গম্বুজটিকে ৪০০ কেজি সােনা । দিয়ে ঢেকে দেন । মন্দিরের গায়েও রয়েছে কাঁচ ও সােনার কারুকার্য । রুপাের দরজাতেও সােনার পাত লাগে । এ থেকেই হরমন্দিরের নাম হয় স্বর্ণমন্দির । মূল দরজা ছাড়া আরও চারটি দরজা আছে এই মন্দিরে প্রবেশ করার । প্রসাদ হিসেবে মেলে হালুয়াও । দেওয়ালিতে সমগ্র অমৃতসর সেজে ওঠে । বাদ পড়ে না স্বর্ণমন্দিরও । এই দিন এই মন্দিরে ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতাও অনবদ্য । গম্বুজ শিরের অকাল তখত বা দেবতার সিংহাসনটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে । একই সঙ্গে । এখান থেকেই সমস্ত ধর্মীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় । শুরুদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র সংরক্ষিত রয়েছে এখানে । মন্দির চত্বরেই রয়েছে । হরগােবিন্দের পুত্র বাবা অটল রায়ের স্মৃতিস্মারক – রূপী আট কোণের বাবা অটল গুরদ্বারা । অদুরেই শুরু কা লঙ্গর থেকে প্রসাদ সংগ্রহ করা যেতে পারে । স্বর্ণমন্দিরের প্রবেশদ্বারের কাছে মিউজিয়ামটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে একই সুযােগে । এখানে সংরক্ষিত রয়েছে হায়দ্রাবাদের নিজাম প্রদত্ত মহামূল্যবান নানান উপহার । গুরু রামদাসের জন্মদিনেই কেবলমাত্র এই সংরক্ষণশালা সাধারণের জন্য খােলা হয় । পা ধুয়ে খালি পায়ে ও মাথা ঢেকে মন্দির চত্বরে ঢোকার নিয়ম । মাথা ঢাকার কাপড় মেলে ক্লোক রুম থেকে । 

জালিয়ানওয়ালাবাগ (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) :

 ব্রিটিশসরকারেরঅত্যাচারের প্রত্যক্ষ নিদর্শন এখনও দেখতে পাওয়া যায় । জালিয়ানওয়ালা বাগের দেওয়ালে । ম্লান মুখে এখনও এই ময়দান ব্যক্ত করছে ১৩ এপ্রিল ১৯১৯ – এর ভয়ানক বর্বরতার কথা । রাওলাট আইনের প্রতিবাদে ধরনায় বসা নিরস্ত্র জনগণের ওপর জেনারেল ডায়ার গুলি চালানাের আদেশ দেন । শহিদ হন কয়েক হাজার । মানুষ । ইংরেজ সরকার ঘটনাটি ধামা চাপা দেওয়ার প্রচণ্ড চেষ্টাকরেছিল । কিন্তুতাসত্বেও দেশময়হত্যাকাণ্ডের বিরূদ্ধে প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায় । ডায়ারকে লন্ডনে । পাঠিয়ে দেওয়া হয় । বর্তমানে জালিয়ানওয়ালা বাগে গড়ে উঠেছে বাগিচা । শহিদদের স্মৃতিতে বসেছে স্মারক। গ্যালারিতে ছবির প্রদর্শনীও আছে । অমৃতসর অবস্থানকালে অবশ্যই জালিয়ানওয়ালা বাগে গিয়ে ইতিহাসের সঙ্গে দেখা করে আসতে হবে । 

গােবিন্দগড় দূর্গ (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) : 

রণজিৎ সিং ও ভাঙ্গী সর্দারের । স্মৃতিবিজরিত এই দূর্গ । ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম । দিকে গড়ে ওঠে গােবিন্দগড় দুর্গ । বর্তমানে এটি ভারতের সামরিক বাহিনীর অধীনে । 

রামবাগ উদ্যান (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) : 

স্টেশন থেকে সামান্য দূরেই সাজানাে – গােছানাে রামবাগ উদ্যান । নানারকম ফুলের শােভার সঙ্গে দেখে নেওয়া যায় রণজিৎ সিং – এর । গ্রীষ্মকালীন বাসাটি । বর্তমানে এখানেই বসেছে মিউজিয়াম । অদূরের রামবাগ গেট দেখে নেওয়াও উচিত হবে একই সঙ্গে । রবি ও সােমবাদে যে – কোনাে দিন সকাল ১০.০০-১৮.০০ – এর মধ্যে ঘুরে দেখা । যায় উদ্যানটি । 

রামতীর্থ (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) : 

মহর্ষি বাল্মীকির আশ্রম ও রামের দুই জাঁকালাে উৎসব দেখার জন্য অনেক ভ্রামণিকই জমা হন রামতীর্থে । 

তরণ – তারণ (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) : 

অমৃতসর শহর থেকে ২৪ কিমি দূরের এই ছােট্ট শহরেই ছিল গুরু অর্জনের বাসস্থান । গুরু রামদাসের স্মৃতিতে এখানে তিনি স্থাপন করেছিলেন গুরদ্বারা , সেও প্রায় ৫০০ বছর আগের ঘটনা । এই গুরদ্বারাকে কেন্দ্র করেই ক্রমে শহরটি গড়ে ওঠে । রাজা রণজিৎ সিং একটি বিশালাকার জলাশয়ও খনন করিয়ে ছিলেন । বর্তমানে এটি শিখ সম্প্রদায়ের অন্যতম তীর্থস্থান । 

ডেরা বাবা নানক (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) : 

জীবনের শেষ ১২ বছর এখানেই অতিবাহিত করেছেন গুরু নানক । অমৃতসর শহর থেকে ৩৫ কিমি দূরে ভারত – পাক সীমান্ত লাগােয়া এইস্থানে তাহিল সাহিব গুরদ্বারাও আছে । মক্কা ও মদীনা ভ্রমণের সময় গুরু নানকের ব্যবহৃত পােশাকও সংরক্ষিত রয়েছে এখানে ।

 এছাড়াও অমৃতসরে দেখার মতাে আরও অনেক স্থান রয়েছে । তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল হিন্দু তীর্থ দুর্গিয়ানা মন্দির , মােগলদেরকে হারানাের স্মারকদমদমা সাহিব , গুরু তেগ বাহাদুরের বাসস্থান বাকালা গ্রাম । 

জলন্ধর (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) : 

পাঞ্জাবের প্রাচীন শহর জলন্ধর প্রায় ২০ বর্গ কিমি বিস্তৃত । এখানকার তৈরি ফুটবলেই ২০০২ – এর বিশ্বকাপ খেলা হয়েছিল । হিন্দু রাজার রাজধানী ও মােগল সাম্রাজ্যের অন্যতম কেন্দ্রে আজ বসেছে পাঞ্জাব পুলিশের সদর । পর্যটন শিল্পে ততটা খ্যাতি অর্জন না করলেও জংশন হিসেবে এই শহরের যথেষ্ট খ্যাতি আছে । অবস্থানকালে দেখে নেওয়া । যায় ক্যান্টনমেন্ট , জামি মসজিদ , ইমাম নাসিরের সমাধি ইত্যাদি ।

লুধিয়ানা (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) : 

এখানকার পশম , রেশম ও সুতিবস্ত্রের চাহিদা সারা ভারতে । এখানকার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও মিউজিয়ামটি দেখতে ভুললে চলবে না । লােধী বংশের রাজপুত্রদের হাতে তৈরি ৫০০ বছরের পুরােনাে শহরে এখনও বর্তমান পুরােনাে দূর্গ । আর আছে পীরই দস্তগির মসজিদ , মন্দির ও গুরু গােবিন্দ সিং – এর স্মৃতিবিজরিত গুরদ্বারা ।

হােসিয়ারপুর (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) : 

জলন্ধর থেকে ৪৪ কিমি দূরস্থ হােসিয়ারপুরের ঠাকুর দ্বোয়ারাম টিটোয়ালি মন্দিরটি অবশ্যই দেখতে হয় । মন্দির অভ্যন্তরে শ্রীকৃষ্ণর লীলা চিত্রের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে । অবস্থানকালে বৈদিক গবেষণাকেন্দ্রর সংরক্ষণশালা ও পাঠাগারটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে । খাজা দেওয়ান চিস্তির সমাধি ক্ষেত্রেরও পর্যটন মূল্য কম নয় । এখানকার কাঠের পুতুল , তবলা , . সেতার , হারমােনিয়ামের খ্যাতি আছে । 

ফিরােজপুর (পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান) : 

ভারত – পাক সীমান্তের এই ছােট্ট শহরটিতে রয়েছে শহিদ ভগৎ সিং , সুকদেব ও রাজগুরুর স্মৃতিমন্দির । এছাড়াও এখানে রয়েছে । সারাগরহি মেমােরিয়াল গুরদ্বারা , জৈনদের শ্বেতাম্বর মন্দির , অ্যাংলাে – শিখ ওয়ার মেমােরিয়াল ইত্যাদি ।

পাঞ্জাব (ভারত) প্রশ্ন ও উত্তর FAQ :

  1. পাঞ্জাবের রাজধানী কোথায়?

Ans: চণ্ডীগড়।

  1. পাঞ্জাবের কয়টি জেলা?

Ans: ২২ টি।

  1. পাঞ্জাবের সাক্ষরতার হার কত?

Ans: ৭৬.৬৮ শতাংশ।

  1. পাঞ্জাবের জনসংখ্যা কত?

Ans: প্রায় ২ কোটি ৭৭ লক্ষ ৫ হাজার।

  1. পাঞ্জাবের প্রধান ভাষা কি?

Ans: পাঞ্জাবি।

◆ আরও দেখুন :-

পাঞ্জাব (ভারত): ইতিহাস, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ

আশা করি এই পোস্টটি বা ” পাঞ্জাব (ভারত): ইতিহাস, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

ডেথ ভ্যালির চলমান পাথর সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Sliding stones in Bengali

ডেথ ভ্যালির চলমান পাথর সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Sliding stones in Bengali

ডেথ ভ্যালির চলমান পাথর সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Sliding stones in Bengali : বিচিত্র এ পৃথিবীতে এমন সব রহস্য লুকিয়ে আছে যার ব্যাখ্যা আজও দিতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। তেমনই প্রকৃতির এক বিস্ময় ডেথ ভ্যালি উপত্যকার রেসট্র্যাক প্লায়া জায়গাটির চলমান পাথর।

 শুকতারা Tv র এই পর্বে জানব ডেথ ভ্যালির চলমান পাথরের (Sliding stones) আশ্চর্যজনক তথ্য সম্পর্কে।

ডেথ ভ্যালি কি?

উপত্যকাটির নাম ‘ডেথ ভ্যালি’, তার উপরে সেখানে ঘটে এমন এক আজব ঘটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এই উপত্যকায় জীবনের চিহ্ন কম। সেই কারণেই তার এমন নামকরণ। রেসট্র্যাক প্লায়া নামের সেখানকার একটি বিশুষ্ক হ্রদে ৭০০ পাউন্ডেরও বেশি ওজনের পাথরকে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করতে দেখা যায়। প্রায়শই দেখা যায় এই সব বিশাল বিশাল সাইজের পাথর তাদের স্থান পরিবর্তন করছে।

চলমান পাথর কি? (Sliding stones)

চলমান পাথর (Sailing Stones বা Sliding stones) : প্রকৃতির এক বিস্ময়, যে পাথরগুলো আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় নিজে নিজেই স্থান পরিবর্তন করে। পাথরগুলিকে চলমান অবস্থায় কেউ কখনো দেখেনি, তবুও পাতলা কাদার স্তরে রেখে যাওয়া ছাপ থেকে পাথরগুলোর স্থান পরিবর্তন নিশ্চিত হওয়া যায়। কিছু কিছু পাথরের কয়েকশ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন হয়, এই ভারি ভারি পাথরগুলো কিভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়, সে রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। পাথরের ট্রেইলে রেখে যাওয়া সূক্ষ্ম ছাপ থেকে বোঝা যায় পাথরগুলো এমন সময়ে স্থান পরিবর্তন করে যখন উপত্যকায় পাতলা কাদামাটির আস্তরণ থাকে। মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর দ্বারা পাথরের স্থান পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আশেপাশের কাদায় তাদের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না।

ডেথ ভ্যালির চলমান পাথরের অজানা তথ্য – Amazing and Interesting Facts about Sliding stones in Bengali

চলমান পাথর (Sailing Stones বা Sliding stones) প্রকৃতির এক বিস্ময়, যে পাথরগুলো আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় নিজে নিজেই স্থান পরিবর্তন করে। শুষ্ক হ্রদটির স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ২ কিলোমিটার। এর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,১৩০ মিটার উঁচুতে। পাথরগুলিকে চলমান অবস্থায় কেউ কখনো দেখেনি, কিন্তু পাতলা কাদার স্তরে রেখে যাওয়া ছাপ থেকে পাথরগুলো স্থান পরিবর্তন করার কথা নিশ্চিত হওয়া যায়। কিছু কিছু পাথরের কয়েকশ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন হয়। এই ভারি ভারি পাথরগুলো কিভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়, সে রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি।

 পাথরের ট্রেইলে রেখে যাওয়া সূক্ষ্ম ছাপ থেকে বোঝা যায় পাথরগুলো এমন সময়ে স্থান পরিবর্তন করে যখন উপত্যকায় পাতলা কাদামাটির আস্তরণ থাকে। মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর দ্বারা পাথরের স্থান পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আশেপাশের কাদায় তাদের পায়ের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না। ক্যালিফোর্নিয়ার রেসট্র্যাক প্লায়া, ডেথ ভ্যালি-তে এমন বিশ্বয়কর ঘটনাটি বিশেষজ্ঞদের নজরে আসে ১৯৪৮ সালে। তীব্র বাতাস, কাদামাটি, বরফ, তাপমাত্রার তারতম্যতা বিভিন্ন বিষয় পাথরের সরে যাওয়ার পেছনে কারণ বলে বিজ্ঞানীরা মনে করলেও পাথরের চলার পথের ভিন্নতার কারণে রহস্য থেকেই যায়।

 পাথর গুলোর এক একটি চলার সময়কাল কয়েক বছর ধরে। কখনো সরল পথে, কোনটি বাঁকানো পথে পরিভ্রমণ করে। এমনও দেখা যায় দুটি পাথর সমান্তরালে কিছুদূর পর ঠিক বিপরীত দিকে তাদের দিক পরিবর্তন করে। দীর্ঘ ৫০ বছরের গবেষণায় এখনো পর্যন্ত শুকনো লেক রেস প্রায়া, ডেথ ভ্যালির চলমান পাথরের রহস্য উন্মোচন হয়নি। ১৯৭৬ সালে রবার্ট শার্প এবং ডুইট ক্যারে, এম স্ট্যানলীর আইস-সিট মতবাদে দ্বিমত পোষণ করেন। তারা পাথরের চলার পথের ধরন ও জ্যামিতিক বিশ্লেষণ করে একাধিক ট্র্যাকের মাঝে সম্পর্ক দেখতে পান যেটি বরফ খণ্ডের দ্বারা ঘটা সম্ভব নয়। তারা মত প্রকাশ করেন যে, বছরের নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট আবহাওয়ায় বাতাসের কারণে পাথরগুলো সরে যায় যেটি প্রতি বছর বা দুই বছর অন্তর ঘটে থাকে।

 ১৯৯৫ সালে জন বি. রেইড এবং হ্যাম্পশায়র কলেজের ভূ-তাত্ত্বিকগণ শার্প-ক্যারে মতবাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। ১৯৮০ র দশকের শেষ হতে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তারা সাতটি ড্যাথ ভ্যালি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে স্ট্যানলির আইস-সিট মতবাদকে সমর্থন করেন। আধুনিক জিপিএস ট্র্যাকিংনির্ভর স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে পাথরগুলোর স্থান পরিবর্তনের সময় গতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেলেও তাদের স্থান পরিবর্তনের রহস্য এখনো আবৃতই রয়ে গেছে। বিশেষ করে আপস্ট্রিমে পাথরের স্থান পরিবর্তনের সঠিক ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি।

ডেথ ভ্যালির চলমান পাথর প্রশ্ন ও উত্তর – Sliding stones Question and Answer in Bengali (FAQ)

  1. ডেথ ভ্যালির চলমান পাথরের (Sliding stones) উচ্চতা কতো?

Answer : 2,810 মিটার (9,220 ফুট)।

  1. ডেথ ভ্যালির চলমান পাথর (Sliding stones) কোথায় এবং কোন দেশে অবস্থিত?

Answer : ক্যানাইমা জাতীয় উদ্যানের, এটি ভেনিজুয়েলা, ব্রাজিলিয়ান এবং গায়ানিজ অঞ্চল রয়েছে। তবে এর আগমন ভেনিজুয়েলায়।

  1. ডেথ ভ্যালির চলমান পাথরের (Sliding stones) কি একপ্রকার মালভূমি?

Answer : হ্যাঁ ।

  1. ডেথ ভ্যালির চলমান পাথরের (Sliding stones) পবর্তমালা প্রথম কবে আলোচনায় আসে?

Answer : 1596 সালে।

  1. ডেথ ভ্যালির চলমান পাথরের (Sliding stones) পবর্তমালায় কি ভ্রমণ করা যায়?

Answer : হ্যাঁ।

◆ আরও দেখুন :-

উপসংহার : ডেথ ভ্যালির চলমান পাথর সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Sliding stones in Bengali

আশা করি এই পোস্টটি বা ” ডেথ ভ্যালির চলমান পাথর সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Sliding stones in Bengali ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন অথবা YouTube, Facebook, Instagram, Twitter, Telegram এই সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে আমাদের ফলো করুন , ধন্যবাদ।

মাউন্ট রোরাইমা সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Mount Roraima in Bengali

মাউন্ট রোরাইমা সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Mount Roraima in Bengali

মাউন্ট রোরাইমা সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Mount Roraima in Bengali : সুবৃহৎ ঘন সবুজ অরণ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মাউন্ট রোরাইমা পাহাড়চূড়াটি। শ্বেতশুভ্র মেঘলোক ছাড়িয়ে তার বিস্তৃতি। ঘন কুয়াশার আবরণ মাউন্ট রোরাইমা চূড়াটিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।

 শুকতারা Tv র এই পর্বে জানব মাউন্ট রোরাইমাের (Mount Roraima) আশ্চর্যজনক তথ্য সম্পর্কে।

মাউন্ট রোরাইমা কি? (Mount Roraima)

মাউন্ট রোরাইমা (Mount Roraima) : মাউন্ট রোরাইমা সমতল শীর্ষ বিশিষ্ট পর্বতমালা যার স্থানীয় নাম টিপুই। খুবই দুর্গম আর মেঘে আবৃত-ভেজা রহস্যময় টিপুই, এমনকি শুকনো মৌসুমেও মেঘে ঢাকা থাকে। এই পবর্তমালার প্রথম আলোচনায় আসে 1596 সালে। 31 বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থান আর চারদিক 400 মিটার লম্বা ক্লিফ দ্বারা বেষ্টিত এই পর্বতমালার অবস্থান তিন দেশের সীমান্তে ভেনিজুয়েলা, ব্রাজিল আর গায়ানা। কিন্তু একমাত্র ভেনিজুয়েলা সীমান্ত দিয়েই এই দুর্গম পর্বতে প্রবেশ করা যায়। এই অপূর্ব সুন্দর পবর্তটি বছরের বেশিরভাগ সময় মেঘে ঢাকা থাকে, যেন এক স্বর্গ রাজ্য!

মাউন্ট রোরাইমাের অজানা তথ্য – Amazing and Interesting Facts about Mount Roraima in Bengali

মাউন্ট রোরাইমা (Mount Roraima) : সুপ্রাচীন কোনো সভ্যতার চেয়েও প্রাচীন এই পাহাড়চূড়াটি অবস্থিত দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে নাম মাউন্ট রোরাইমা। সুবৃহৎ ঘন সবুজ অরণ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়চূড়াটি। চূড়াটির নিখাঁদ, অকৃত্রিম সৌন্দর্য যেন শ্বাস আটকে দিতে চায়। যেখানে ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা আর গায়ানার সীমান্ত মিলেছে এক মোহনায়, সেখানেই ঘন সবুজ অরণ্যে ঘেরা এই পাহাড়চূড়ার অবস্থান। এর চূড়া অন্যসব পর্বতের মতো তীক্ষ্ম আর খাড়া নয়, বরং সমতল!

 আঞ্চলিক পেমন ইন্ডিয়ানদের দেওয়া টেপুই নামটির অর্থ দেবতাদের আবাসস্থল। আর এই ধরনের পাহাড়কে বলা হয় টেবিল-টপ মাউন্টেন। এই রকম মাউন্ট গায়ানার উচ্চভূমিতে, বিশেষ করে ভেনিজুয়েলা এবং পশ্চিম গায়ানাতে দেখতে পাওয়া যায়, তবে এটি হচ্ছে সর্বোচ্চ টেপুই। এই অঞ্চলটি প্রকৃতপক্ষে মালভূমি। স্থানীয় আদিবাসীদের বিশ্বাস ছিল এই পাহাড়, পাহাড় ঘেরা অরণ্য, সিঙ্কহোল প্রভৃতিতে দেবতারা বাস করে, যারা অনেক গোপন জ্ঞান ধারণ করে আছে। এজন্যই তারা টেপুইয়ের নামকরণ করে দেবতাদের আবাসস্থল।

 মাউন্ট রোরাইমা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 2,810 মিটার (৯২২০ ফুট) উঁচু। এর চূড়া 31 বর্গ কি.মি. (12 বর্গমাইল) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং চূড়াটিকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে 400 মিটার উচ্চতার পাথুরে পর্বতের দেয়াল। মাউন্ট রোরাইমা ও অন্যান্য টেপুইগুলোর বয়স আনুমানিক প্রায় 2 বিলিয়ন বছর, এবং এগুলো বালি দিয়ে গঠিত। এদের গঠন হয়েছিলো প্রিক্যাম্বিয়ান যুগে, তখন এরা একসাথেই ছিলো, মহাদেশগুলো একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাওয়ার সাথে সাথে টেপুইগুলোও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সবগুলো টেপুই-ই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অনন্য। আমরা সকলেই দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড নামের ম্যাগাজিনের সাথে পরিচিত, এই ম্যাগাজিন স্যার আর্থার কোনান ডয়েল তার ক্লাসিক উপন্যাসে লেখার অণুপ্রেরণা পেয়েছিলেন মাউন্ট রোরাইমা দেখেই।

মাউন্ট রোরাইমা প্রশ্ন ও উত্তর – Mount Roraima Question and Answer in Bengali (FAQ)

  1. মাউন্ট রোরাইমাের (Mount Roraima) উচ্চতা কতো?

Answer : 2,810 মিটার (9,220 ফুট)।

  1. মাউন্ট রোরাইমা (Mount Roraima) কোথায় এবং কোন দেশে অবস্থিত?

Answer : ক্যানাইমা জাতীয় উদ্যানের, এটি ভেনিজুয়েলা, ব্রাজিলিয়ান এবং গায়ানিজ অঞ্চল রয়েছে। তবে এর আগমন ভেনিজুয়েলায়।

  1. মাউন্ট রোরাইমাের (Mount Roraima) কি একপ্রকার মালভূমি?

Answer : হ্যাঁ ।

  1. মাউন্ট রোরাইমাের (Mount Roraima) পবর্তমালা প্রথম কবে আলোচনায় আসে?

Answer : 1596 সালে।

  1. মাউন্ট রোরাইমাের (Mount Roraima) পবর্তমালায় কি ভ্রমণ করা যায়?

Answer : হ্যাঁ।

◆ আরও দেখুন :-

উপসংহার : মাউন্ট রোরাইমা সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Mount Roraima in Bengali

আশা করি এই পোস্টটি বা ” মাউন্ট রোরাইমা সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Mount Roraima in Bengali ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন অথবা YouTube, Facebook, Instagram, Twitter, Telegram এই সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে আমাদের ফলো করুন , ধন্যবাদ।

বাল্ট্রা দ্বীপ সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Baltra Island in Bengali

বাল্ট্রা দ্বীপ সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Baltra Island in Bengali

বাল্ট্রা দ্বীপ সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Baltra Island in Bengali : পৃথিবীতে এখনো অনেক স্থান বা দ্বীপ আছে যা রহস্যঘেরা কিংবা অন্য দ্বীপ বা স্থান থেকে একবারে আলাদা। আর এসব রহস্যঘেরা স্থানগুলোর মধ্যে একটি হলো বাল্ট্রা দ্বীপ।

 শুকতারা Tv র এই পর্বে জানব বাল্ট্রা দ্বীপের (Baltra Island) আশ্চর্যজনক তথ্য সম্পর্কে।

ইসলা বালত্রা বা বাল্ট্রা দ্বীপের অজানা তথ্য – Amazing and Interesting Facts about Baltra Island in Bengali

বাল্ট্রা দ্বীপ বা ইসলা বালত্রা হলো গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত ছোট দ্বীপ। বাল্ট্রা দ্বীপটি গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ছোট সমতল দ্বীপ। দ্বীপটি ইকুয়েডর এর নিকটবর্তী ১৩ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। আর এই ১৩টি দ্বীপের একটিই হচ্ছে বাল্ট্রা। কিন্তু এই অঞ্চলের অন্য ১২টি দ্বীপ থেকে বাল্ট্রা দ্বীপ একেবারেই আলাদা, অদ্ভুত এবং রহস্যময়। দক্ষিণ সিমুর (লর্ড হিউ সিমুর-এর নামে) নামেও পরিচিত।

 দ্বীপ খুব শুষ্ক এবং ছোটখাটো শক্ত ঝোপঝাড়, একজাতের ফণীমনসা এবং পালো সান্টো গাছে পরিপূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দ্বীপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর এয়ার ফোর্স বেস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো এটি। পানামা খালকে সুরক্ষিত রাখা এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে বাল্ট্রা দ্বীপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুদ্ধের পর ইকুয়েডর সরকারের কাছে দ্বীপটি হস্তান্তর করা হয়।

 দ্বীপ বর্তমানে ইকুয়েডর সেনাবাহিনীর একটি সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মার্কিন ঘাঁটির কিছু স্থাপনা এখনও দ্বীপের কিছু কিছু অংশে দেখা যায়। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দ্বীপের সিমুর বিমানবন্দরটি সমগ্র গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের একমাত্র বিমানবন্দর ছিল। বর্তমানে গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ দুটি মোট বিমানবন্দর রয়েছে; অন্য বিমানবন্দরটি সান ক্রিস্তোবাল দ্বীপে অবস্থিত। তবে কেবল সিমুর বিমানবন্দরেই দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেবা পাওয়া যায়। বাল্ট্রা দ্বীপে দুটি ফেরিঘাট রয়েছে। পর্যটক আকর্ষণ ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে ইকুয়েডর সরকার দ্বীপটির সার্বিক উন্নয়নের জন্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

বাল্ট্রা দ্বীপের রহস্য :

 বাল্ট্রা দ্বীপ এর অবস্থান দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরে। এটি মূলত একটি মানববসতিশূন্য একটি দ্বীপ। মানব বসতি নেই বলে মানুষ এই দ্বীপকে -মৃত দ্বীপ বলেও ডাকে। জানা যায় যে, বাল্ট্রা দ্বীপে এক সময় মানববসতি ছিলো। কিন্তু কয়েকশো বছর আগে এই দ্বীপে কি এক অদ্ভুত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মানুষ মরতে শুরু করে। এবং ভয় পেয়ে দ্বীপবাসীরা সবাই এই দ্বীপ ছেড়ে পালায়। তারা ফিরে গিয়ে সবাইকে জানায় এই দ্বীপটি অভিশপ্ত, কেউ যেন দ্বীপের আশে পাশে না যায়, একবার গেলে আর প্রান নিয়ে ফেরা যাবে না। তারপর থেকে দ্বীপটি অভিশপ্ত দ্বীপ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

রহস্যময় দীপ বাল্ট্রা :

 বাল্ট্রা দ্বীপের রহস্যের কথা বিশ্ববাসীর সামনে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। এই সময় কৌশলগত কারণে এই দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে এয়ারবেস স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একটি এয়ারবেসের একজন অফিসার ছিলেন ফ্রান্সিস ওয়াগনার নামে এক ব্যাক্তি। তার মাধ্যমেই বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারে বাল্ট্রা দ্বীপের অদ্ভুত চরিত্রের কথা। এরপর অনেকেই এই দ্বীপের রহস্যময় আচরণের কথা স্বীকার করেন।

 বাল্ট্রা দ্বীপ গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলেও কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো বৃষ্টির এক ফোঁটাও পড়েনা বাল্ট্রাতে। কী এক রহস্যজনক কারণে বাল্ট্রার অনেক উপর দিয়ে মেঘ গুলো উড়ে যায় এবং অন্যান্য দ্বীপগুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এ যেন সেখানকার এক অমোঘ নিয়ম। বৃষ্টির প্রকোপ যত বেশি হোক না কেন, বাল্ট্রাতে তার ছোঁয়া কখনোই পায় না। বাল্ট্রাতে এলেই অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে নাবিকদের কম্পাস, কখনও উল্টোপাল্টা ভুল দিক নির্দেশ করে। কিন্তু এখানে এলে কম্পাসের কাটা কখনও স্থির হয়ে থাকে, কখনও ইচ্ছেমত ঘুরতে থাকে আবার তবে সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো বাল্ট্রা দ্বীপের উপর প্লেনে থাকাকালীন সময়েও এমন অদ্ভুত আচরণ করে কম্পাস। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক। এই দ্বীপে এলে অনেকের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এই দ্বীপে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন মানুষের মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অনেকে দেখা যায় উলটা পালটা আচরন শুরু করে। বেশিরভাগ মানুষ বলেছেন এখানে গেলে যাওয়ার আশ্চর্যরকম ভালো একটা অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। একবার গেলে আর ফিরতে ইচ্ছে করে না। বাল্ট্রায় কোন বৃক্ষ নেই, নেই কোন পশুপাখি। কোন পশুপাখি এ দ্বীপে আসতেও চায় না।

বাল্ট্রা দ্বীপ প্রশ্ন ও উত্তর – Baltra Island Question and Answer in Bengali (FAQ) :

  1. বাল্ট্রা দ্বীপ (Baltra Island) কোথায় অবস্থিত?

Answer : গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কেন্দ্রে অবস্থিত।

  1. বাল্ট্রা দ্বীপের (Baltra Island) আয়তন কত?

Answer : রূপান্তর: অকার্যকর সংখ্যা।

  1. বাল্ট্রা দ্বীপ (Baltra Island) কোন দ্বীপপুঞ্জের অংশ?

Answer : গালাপাগোস।

◆ আরও দেখুন :-

উপসংহার : বাল্ট্রা দ্বীপ সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Baltra Island in Bengali

আশা করি এই পোস্টটি বা ” বাল্ট্রা দ্বীপ সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Baltra Island in Bengali ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন অথবা YouTube, Facebook, Instagram, Twitter, Telegram এই সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে আমাদের ফলো করুন , ধন্যবাদ।

শয়তানের গর্ত সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Devils Kettle in Bengali

শয়তানের গর্ত সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Devils Kettle in Bengali

শয়তানের গর্ত সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Devils Kettle in Bengali : যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিয়ার লেকের উত্তর দিকে ডেভিলস কেটেল নামক একটি রহস্যময় ঝর্ণা অবস্থিত। যার অর্থ হলো শয়তানের গর্ত ।

 শুকতারা Tv র এই পর্বে জানব শয়তানের গর্তের (Devils Kettle) আশ্চর্যজনক তথ্য সম্পর্কে।

ডেভিলস ক্যাটেল বা শয়তানের গর্তের অজানা তথ্য – Amazing and Interesting Facts about Devils Kettle in Bengali

শয়তানের গর্ত (Devils Kettle) : যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিয়ার লেকের উত্তর দিকে ডেভিলস কেটেল নামক একটি রহস্যময় ঝর্ণা অবস্থিত। যার অর্থ হলো শয়তানের গর্ত, আজ এই ঝরনাটি মিনেসোটা স্টেটের জাজ ম্যাগনি স্টেট পার্কে অবস্থিত। এই ঝর্ণা দুই ভাগে বিভক্ত। এর পূর্ব দিকের অংশ একেবারেই সাধারণ ঝর্ণার মত। ঝর্ণার জল নিচে পড়ে ব্রুল নামক নদীতে গিয়ে মিশে। কিন্তু ঝর্ণার পশ্চিম দিকের অংশ একেবারেই অস্বাভাবিক। এই ঝর্ণার ঠিক নিচে একটি গর্ত রয়েছে।

ঝর্ণার এই অংশের জল এই গর্তেই পড়ে। অবাক করা বিষয় হলো, এই গর্তে পড়ার পর জল সামনে অদৃশ্যভাবে প্রবাহিত হয়। কিন্তু জল সামনের দিকে প্রবাহিত হওয়ার কথা কিন্তু এই ঝর্ণার জল কোন দিকে প্রবাহিত হয় তা বিষ্ময়কর! ঝর্ণার জল নির্দিষ্ট ওই গর্তেই মিলিয়ে যায়। তবুও গর্ত কখনো ভরেনা। তাহলে এই গর্তে প্রত্যেক মিনিটে পড়া লাখ লাখ লিটার জল কোথায় যায় এ প্রশ্নের উত্তর এখনো জানা যায়নি। কয়েক দশক আগেও অনেকের ধারণা ছিলো এই গর্তের অনেক গভীরে ছোট ছোট ছিদ্র বা ফাটল আছে। তাই সকলের ধারনা ছিলো ঐ ফাটল দিয়ে জল পাশের ঝর্ণার জলের সঙ্গে মিশে যায়। তবে এই তথ্যকে প্রমাণ করতে ঝর্ণার জলের সঙ্গে মিশিয়েছিলো যাতে ঐ পানীয় যাতে রঙিন হয়ে যায়। পরবর্তীতে, ঐ জল যখন পাশের ঝর্ণার জলের সঙ্গে মিশবে তখন উক্ত জলের রঙও পরিবর্তন হয়ে যাবে। এই তথ্যকে প্রমাণ করতে ঝর্ণার জলের রং মেশানো হয়। কিন্তু সকলেই অবাক হয়ে যায়! কারণ রঙিন জল উক্ত গর্তেই বিলীন হয়ে গেছে এই দেখে। অন্যদিকে, পাশের ঝর্ণার এ ফোটা জলও রঙিন হয়নি। আরো অনেক পদ্ধতিতে এই ঝর্ণার জলের গন্তব্য স্থল জানার চেষ্টা করা হয়েছে। তবেও এর রহস্য ভেদ হয়নি।

শয়তানের গর্ত প্রশ্ন ও উত্তর – Devils Kettle Question and Answer in Bengali (FAQ)

  1. শয়তানের গর্তের (Devils Kettle) উচ্চতা কতো?

Answer : 1,073 ফুট (327 মিটার)।

  1. শয়তানের গর্ত (Devils Kettle) কোথায় অবস্থিত?

Answer : কুক , মিনেসোটা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

  1. শয়তানের গর্তের (Devils Kettle) ক্ষেত্রফল কত?

Answer : 4,643 একর।

◆ আরও দেখুন :-

উপসংহার : শয়তানের গর্ত সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Devils Kettle in Bengali

আশা করি এই পোস্টটি বা ” শয়তানের গর্ত সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Devils Kettle in Bengali ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন অথবা YouTube, Facebook, Instagram, Twitter, Telegram এই সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে আমাদের ফলো করুন , ধন্যবাদ।

শয়তানদের পাহাড় সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Devils Tower in Bengali

শয়তানদের পাহাড় সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Devils Tower in Bengali

শয়তানদের পাহাড় সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Devils Tower in Bengali : শয়তানদের পাহাড় বা ডেভিলস টাওয়ার হ’ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম জাতীয় স্মৃতিসৌধ , যা 24 সেপ্টেম্বর 1906 সালে রাষ্ট্রপতি থিওডোর রুজভেল্ট দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ।

 শুকতারা Tv র এই পর্বে জানব শয়তানদের পাহাড়ের (Devils Tower) আশ্চর্যজনক তথ্য সম্পর্কে।

শয়তানদের পাহাড় (Devils Tower) কাকে বলে?

শয়তানদের পাহাড় (Devils Tower) হলো একটি বিচ্ছিন্ন ছোট পাহাড় বা Butte যা ল্যাকোলিথ আগ্নের শিলা দ্বারা গঠিত। শয়তানদের পাহাড় (Devils Tower) বেল ফোরচে নদীর উপরে 1,267 ফুট (386 মিটার) উপরে উঠে শিখর থেকে বেস পর্যন্ত 867 ফুট (265 মিটার) দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্রতল থেকে শয়তানদের পাহাড়ের (Devils Tower) উচ্চতা 5,112 ফুট (1,559 মিটার)।

বিগ ট্রি বা শয়তানের টাওয়ার বা শয়তানদের পাহাড়ের অজানা তথ্য – Amazing and Interesting Facts about Devils Tower or BigTree in Bengali

শয়তানদের পাহাড় বা ডেভিলস টাওয়ার বা শয়তানের টাওয়ার (Devils Tower) : পশ্চিম আমেরিকার ওয়াইওমিং রাজ্যের ব্ল্যাক হিল অঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার একটি আদর্শ স্থান। পাহাড়ে হাইক করতে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ পাড়ি জমায় এই পাহাড়ের পাদদেশে। হাইক করতে করতে যখন দর্শনার্থীরা বেল ফশ নদীর তীরে পৌঁছায়, তখন সবারই চোখ আটকে যায় একটি টাওয়ার সদৃশ বস্তুর উপর।

 ১৮৭৫ সালে আমেরিকান কর্নেল রিচার্ড আরভিং ডজের নেতৃত্বে বিজ্ঞানী ভূতত্ত্ববিদ ওয়াল্টার পি.জেনি ব্ল্যাক হিল অঞ্চলে একটি ভূতাত্ত্বিক গবেষণা চালান। তাদের কাছে খবর ছিল যে, এখানে অনেক স্বর্ণ মজুদ আছে। তারা সেখানে পৌঁছে কোনো সোনা খুঁজে পেলেন না ঠিকই, তবে এই টাওয়ারের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেলেন, যা আবার ডেভিলস ট্রি নামেও পরিচিত।

 ডজ একে বিশ্বের সবচেয়ে অসাধারণ চূড়াগুলোর একটি বলে উল্লেখ করেন। নেটিভ আমেরিকানরা একে Lakota Matȟó Thípila বলে ডাকতো, যার অর্থ -হোম অভ বিয়ার বা ভাল্লুকের বাসস্থান। তবে যে ব্যক্তি নেটিভ আমেরিকার মানুষদের দেওয়া নামের অনুবাদ করেন, তিনি ভুলবশত Bad Gods Tower বা শয়তানদের পাহাড় বা শয়তানের টাওয়ার ডেভিলস টাওয়ার (Devils Tower) বা খারাপ দেবতার টাওয়ার অনুবাদ করেন। কর্নেল ডজ তাই এর নাম দেন – শয়তানদের পাহাড় বা ডেভিলস টাওয়ার (Devils Tower)। এই ভুল নামটিই একসময় বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

 প্রথম দর্শনে মনে হতে পারে এটি কোনো প্রাচীন স্থাপত্য, যা এই অঞ্চলের আদিবাসীদের তৈরী। যেমনটা দেখা যায় মিশর, পেরু কিংবা স্কটল্যান্ডে। তবে কাছে গেলে সেই ভুল ভেঙে যায়। টাওয়ারটি প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি। দেখতে অনেকটা খাঁজকাটা চূড়ার মতো। বিজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর উন্নতির সাথে সাথে ডেভিলস টাওয়ার নিয়ে এক আধুনিক তত্ত্বের জন্ম হয়েছে। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ বিশ্বাস করে, এই টাওয়ার কোনো বহির্জাগতিক শক্তির সৃষ্টি। তারা মনে করে, এটি কোনো এলিয়েন স্পেসশিপ ল্যান্ডিং স্টেশন ছিল। এই ধারণার ওপর ১৯৯৭ সালে একটি সিনেমা নির্মাতাকে Close Encounters of the Third Kind নামে, যা মানুষের মধ্যে এই ধারণা আরও বদ্ধমূল করে।

 ২০১১ সালে -পল নামে একটি সিনেমা নির্মিত হয়, যেখানেও এই টাওয়ারের সাথে এলিয়েনের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। এটি ম্যাগমা বা লাভা সঞ্চিত হয়ে সৃষ্টি বলে ভূতাত্ত্বিকগণ মনে করেন। তাদের মতে, ভূপৃষ্ঠের ফাটলের মধ্যে গলিত ম্যাগমা সঞ্চিত হয়ে থাকে। ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে টেক্টনিক প্লেটের চাপে যখন রকি মাউন্টেনের উত্থান হয়, তখন এই জমে যাওয়া ম্যাগমার খণ্ড উঠে আসে। পরে হাজার বছর ধরে বাতাস এবং বৃষ্টির প্রভাবে আশেপাশের মাটি ক্ষয়ে যায় এবং জমাটবাঁধা এই ম্যাগমার চূড়া পড়ে থাকে।

 এর উচ্চতা ২৬৫ মিটার বা ৭৬৮ ফুট। এটির চূড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,১১২ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। ডেভিলস টাওয়ার আমেরিকার সর্বপ্রথম স্বীকৃত জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ। ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯০৬ সালে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট একে জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করেন। ২০০৫ সালে নেটিভ আমেরিকানরা এই চূড়ার বিকৃত নাম পরিবর্তনের দাবি জানায়। তবে অনেক ইতিহাস এই নামের সাথে জড়িত থাকায় তাদের দাবি মানা হয়নি। এই টাওয়ারটি আগ্নেয়গিরি পাথর দ্বারা তৈরি হলেও এটি আসলে আগ্নেয়গিরি না। এমনকি আশেপাশেও কোনো আগ্নেয়গিরি নেই। অনেকে মনে করত, এটি আসলে ভেতর দিকে ফাঁপা। তবে ভূতাত্ত্বিকরা মনে করেন এটি ফাঁপা নয়। এর চূড়ার উপরের অংশ প্রায় একটা ফুটবল মাঠের সমান উঁচু। জুন মাসে এর চূড়ায় ওঠার অনুমতি নেই, কারণ সে সময় এখানে অনেক নেটিভ আমেরিকান ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এছাড়া কিছু রাস্তা শীতের সময় পাখিদের বাসা বোনার জন্য বন্ধ করে রাখা হয়।

 উপকথায় কথিত আছে যে, ভাল্লুকের হাত থেকে বাঁচার জন্য স্থানীয়রা একটা পাথরের উপর উঠে হাঁটু গেড়ে বসে তাদের মহৎ স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করতে শুরু করে। মহৎ স্রষ্টা তাদের প্রার্থনা শুনতে পায় এবং তাদের বাঁচাতে পাথরটিকে স্বর্গের দিকে প্রসারিত করে দেয়। তা-ও ভাল্লুকেরা চূড়ায় ওঠার চেষ্টা করতে থাকে। আর ভাল্লুকের নখের আঁচড়ে টাওয়ারের গায়ে খাঁজকাটা আকৃতি দেখা দেয়। সাইয়ান ইন্ডিয়ানরা আরেকটি গল্পতে বলা আছেঃ ভাল্লুকেরা দুটি মেয়ে বাদে বাকি সবাইকে মেরে ফেলে। বেঁচে যাওয়া মেয়েরা তাদের বাসস্থানে ফিরে এসে ছেলেদের ঘটনাটি বলে। তারা তাদের ধর্মগুরুর মাধ্যমে জানতে পারে যে, ভাল্লুকের পায়ের নিচে তীর মারতে পারলেই তাদের মারা সম্ভব। ছেলেরা বুদ্ধি করে ভাল্লুকগুলোকে ওই চূড়ার কাছে নিয়ে যায় এবং ভাল্লুকেরা ভাবে ছেলেগুলো চূড়ার উপরে। ভাল্লুকেরা তখন চূড়ায় ওঠার জন্য বারবার চেষ্টা করতে থাকে, যার ফলে চূড়ার গায়ে বেশি বেশি খাঁজ দেখা দেয়। একসময় ছেলেদের ছোঁড়া একটি তীর ভাল্লুকের পায়ের খুব কাছে লাগে এবং ভাল্লুকেরা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। এভাবেই উৎপত্তি হয় এই চূড়ার। মূলত এই সবই কাল্পনিক রুপকথা বটে। বিজ্ঞান বলে ভিন্ন কথা!

শয়তানদের পাহাড় সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Devils Tower in Bengali FAQ

  1. শয়তানদের পাহাড়ের (Devils Tower) উচ্চতা কতো?

Answer : 5,112 ফুট (1,558 মিটার)।

  1. শয়তানদের পাহাড় (Devils Tower) কোথায় অবস্থিত?

Answer : ক্রুক কাউন্টি, ওয়াইমিং , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

  1. শয়তানদের পাহাড় (Devils Tower) কোন শিলা দ্বারা গঠিত?

Answer : ল্যাকোলিথ আগ্নের শিলা।

  1. শয়তানদের পাহাড়ের (Devils Tower) নিকটবর্তী শহরের নাম কি?

Answer : হুলেট, ওয়াইমিং।

  1. শয়তানদের পাহাড়ের (Devils Tower) ক্ষেত্রফল কত?

Answer : 1,346 একর।

◆ আরও দেখুন :-

শয়তানদের পাহাড় সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Devils Tower in Bengali

আশা করি এই পোস্টটি বা ” শয়তানদের পাহাড় সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Devils Tower in Bengali ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন অথবা YouTube, Facebook, Instagram, Twitter, Telegram এই সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে আমাদের ফলো করুন , ধন্যবাদ।

মারিয়ানা খাত সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Mariana Trench in Bengali

মারিয়ানা খাত সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Mariana Trench in Bengali

মারিয়ানা খাত সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Mariana Trench in Bengali : মারিয়ানা খাত (Mariana Trench) প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশের একটি খাত বা পরিখা। মারিয়ানা খাত (Mariana Trench) বিশ্বের গভীরতম সমুদ্র খাত। মারিয়ানা খাত (Mariana Trench) প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের ঠিক পূর্বে অবস্থিত।

 শুকতারা Tv র এই পর্বে জানব মারিয়ানা খাতের (Mariana Trench) আশ্চর্যজনক তথ্য সম্পর্কে।

মারিয়ানা খাতের (Mariana Trench) গভীরতা :

বিশ্বের সব থেকে গভীর খাতের গভীরতা কতো জানেন? বলা যায়, এ খাতের গভীরতা অনায়াসে গিলে নিতে পারে একটা গোটা হিমালয়কে। শুনতে অদ্ভুত হলেও কথাটা সত্যি। উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ছড়ানো এই খাতের গভীরতা ১১.০৩৩ মিটার, যার কাছে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টও শিশু। প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের কাছেই রয়েছে বিশ্বের সবথেকে গভীর আর রহস্যময় এই মারিয়ানা খাত (Mariana Trench)।

মারিয়ানা খাতের অজানা তথ্য – Unknown Facts about Mariana Trench

মারিয়ানা খাত বা মারিয়ানা ট্রেঞ্চ (Mariana Trench), অন্য নাম চ্যালেঞ্জার ডীপ বা এইচ এম এস চ্যালেঞ্জার-২। প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশের একটি বড় গর্ত, খাত বা পরিখা। এটি বিশ্বের গভীরতম সমুদ্র খাত। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের ঠিক পূর্বে অবস্থিত। মারিয়ানা খাত একটি বৃত্তচাপের আকারে উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ২৫৫০ কিমি ধরে ব্যাপ্তি। এর গড় বিস্তার ৭০ কিমি। অধোগমন নামক এক ভৌগোলিক প্রক্রিয়ায় এই খাতটি গঠিত হয়েছে। খাতটির দক্ষিণ প্রান্তসীমায় গুয়াম দ্বীপের ৩৪০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে পৃথিবীপৃষ্ঠের গভীরতম বিন্দু অবস্থিত। এইচ এম এস চ্যালেঞ্জার ২ এর জাহাজের নাবিকেরা বিন্দুটি ১৯৪৮ সালে আবিষ্কার করে বিধায় বিন্দুটি ঐ জাহাজের নামে নামকরণ করা হয়েছে, অর্থাৎ নাম [এইচ এম এস চ্যালেঞ্জার ২]। এই বিন্দুর গভীরতা প্রায় ১১,০৩৩ মিটার। ১৯৬০ সালের জানুয়ারি মাসে সুইস মহাসাগর প্রকৌশলী জাক পিকার ও মার্কিন নৌবাহিনীর লিউট্যান্যান্ট ডনাল্ড ওয়াল্‌শ ফরাসি-নির্মিত বাথিস্কাফ ত্রিয়েস্ত-এ করে চ্যালেঞ্জার ডীপে অবতরণ করেন। জাক পিকারের বাবা ওগুস্ত পিকার বাথিস্কাফ উদ্ভাবন করেন। জাক ও ডনাল্ড ত্রিয়েস্তকে ১০,৯১৫ মিটার গভীরতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এটি ইতিহাসের সবচেয়ে গভীরতম ডুব। খাদটি প্রায় ২ হাজার ৫৫০ কিলোমিটার (১ হাজার ৫৮০ মাইল) দীর্ঘ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য চওড়ায় এটি মাত্র ৬৯ কিলোমিটার (৪৩ মাইল)। এবং এখনো পর্যন্ত খাদের সর্বোচ্চ গভীরতা জানা গেছে প্রায় ১১ কিলোমিটার (প্রায় ৩৬ হাজার ৭০ ফুট)! অবশ্য গভীর সাগরের তলদেশে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে এখনো রয়ে গেছে নানা সমস্যা। ফলে বিজ্ঞানীদের ধারণা খাদের গভীরতা আরো বেশি হতে পারে। সে জন্যই তাঁরা চালাচ্ছেন নিত্যনতুন অভিযান। (অর্থাৎ পুরো মাউন্ট এভারেস্টকেও যদি তুলে এনে এই জায়গায় ডুবিয়ে দেয়া হয়, তাও তার মাথার ওপর আরও জায়গা বেঁচে যাবে)! মারিয়ানা খাতের সবচেয়ে গভীর অংশটি শেষ হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে – চ্যালেঞ্জার ডিপ নামের ভ্যালিতে গিয়ে। খাদের শেষ অংশে জলের চাপ এতটাই যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের স্বাভাবিক বায়ুচাপের তুলনায় তা ১০০০ গুণেরও বেশি! এ কারণেই এখানে স্বাভাবিকের চেয়ে জলের ঘনত্বও প্রায় ৫ শতাংশ বেশি।

মারিয়ানা খাত সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য - Amazing Facts about Mariana Trench in Bengali

কখনো হাইড্রোজেন সালফাইডসহ বিভিন্ন ধরনের খনিজ সমৃদ্ধ গরম জলও বের হয় চ্যালেঞ্জার ডিপের ছিদ্রপথ দিয়ে। এগুলো প্রধান খাদ্য ব্যারোফিলিকজাতীয় ব্যাকটেরিয়ার। এসব ব্যাকটেরিয়াকেই আবার শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয়। এদের খেয়ে বেঁচে থাকে মাছেরা। এভাবেই সাগরতলের এত গভীরেও জীবনের চক্র কিন্তু ঠিকই চলতে থাকে, যেমনটি চলে সাগরের ওপর। অতি ক্ষুদ্র কিছু ব্যাকটেরিয়ারও দেখা মেলে মারিয়ানা খাদে। সাধারণত সমুদ্রতলের গভীরে মৃত প্রাণীর কঙ্কাল, খোলস জমা পড়তে থাকে। মারিয়ানার তলও আলাদা নয়। এখানকার জলের রং সে জন্যই খানিকটা হলুদ। সুগভীর খাদটির অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরের ঠিক পশ্চিমে। দীর্ঘ গবেষণার পর আধুনিক বিজ্ঞানীরা জেনেছেন প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ে সমুদ্রের তলদেশে শত শত বছরে সংগঠিত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে তৈরি হয়েছে মারিয়ানা প্লেট। দ্বীপগুলোর অবস্থান এসব প্লেটের ওপরেই। আর দ্বীপের খুব কাছাকাছি হওয়ায় সবচেয়ে গভীর খাদ মারিয়ানা খাতের নামও স্বাভাবিকভাবেই হয়ে গেছে রানি মারিয়ানার নামেই। মারিয়ানা খাত নিয়ে মানুষের অপার উৎসাহ বহু আগে থেকেই। তবে এটির গভীরতা মাপার তোড়জোড় শুরু হয় প্রায় দেড় শ বছর আগে। ১৮৭২ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৮৭৬ সালের মে মাসের মধ্যে বেশ কয়েকবার চ্যালেঞ্জার এক্সপিডিশন নামের পরীক্ষামূলক অভিযানের মাধ্যমে গভীরতা মাপার চেষ্টা চালানো হয় খাদটির। অভিযানের প্রধান বিজ্ঞানী ছিলেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের প্রাকৃতিক ইতিহাসবিদ এবং সামুদ্রিক প্রাণীবিজ্ঞানী স্যার চার্লস ওয়াইভিল থমসন। তখন জানা গিয়েছিল,খাদটির সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ২৬ হাজার ৮৫০ ফুট। ১৮৭২ সালের ২১ ডিসেম্বর অভিযান শুরু করা হয়েছিল ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলীয় শহর পোর্টসমাউথ থেকে। ক্যাপ্টেন জর্জ নারেসের নেতৃত্বে অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। বিজ্ঞানীরা সে আমলে খাদের গভীরতা মাপার জন্য ব্যবহার করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের সাউন্ডিং মেশিন বা শব্দ উৎপাদক যন্ত্র। ১৯৩১ সালে সহজ এবং আগের তুলনায় নির্ভুলভাবে বিজ্ঞানীরা মাপার চেষ্টা করেন বিশ্বের সবচেয়ে গভীর স্থান আসলে কতটা গভীর। পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয় চ্যালেঞ্জার-২ নামের একটি জাহাজ। এতে চড়ে বিজ্ঞানীরা মারিয়ানা খাদের গভীরতা মাপেন ইকো সাউন্ডিং বা প্রতিধ্বনি গ্রহণ পদ্ধতিতে। সেই দুঃসাহসিক অভিযানে জানা গেল খাদটির সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৫ হাজার ৭৫৭ ফুট। এরপর চালানো হয়েছে আরো অভিযান এবং ভুল প্রমাণিত হয়েছে আগের মাপা গভীরতাগুলো। আধুনিক বিজ্ঞানীরা এখন জানেন মারিয়ানা খাত প্রায় ৩৬ হাজার ৭০ ফুট গভীর।

মারিয়ানা খাত সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Mariana Trench in Bengali Q&A

  1. বিশ্বের গভীরতম সমুদ্র খাতের নাম কি?

Ans. মারিয়ানা খাত (Mariana Trench) হলো বিশ্বের গভীরতম সমুদ্র খাত।

  1. মারিয়ানা খাত (Mariana Trench) কোথায় অবস্থিত?

Ans. মারিয়ানা খাত (Mariana Trench) প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের ঠিক পূর্বে অবস্থিত।

  1. মারিয়ানা খাতের গভীরতা কতো?

Ans. মারিয়ানা খাতের গভীরতা ১১.০৩৩ মিটার।

  1. মারিয়ানা খাতকে আরোও কি কি নামকরণ করা হয়?

Ans. মারিয়ানা খাত বা মারিয়ানা ট্রেঞ্চ (Mariana Trench), অন্য নাম চ্যালেঞ্জার ডীপ বা এইচ এম এস চ্যালেঞ্জার-২।

◆ আরও দেখুন :-

আশা করি এই পোস্টটি বা ” মারিয়ানা খাত সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Mariana Trench in Bengali ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Dragon Triangle in Bengali

ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Dragon Triangle in Bengali

ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Dragon Triangle in Bengali : আমরা সবাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কথা জেনেইছি। জাহাজ বা বিমান- ওই অঞ্চলে ঢুকে পড়লেই অদৃশ্য হয়ে যায়! তবে এবার বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতোই আরেকটি বিস্ময়কর স্থানের সন্ধান পাওয়া গেছে। সে অঞ্চলটি জাপানে। অঞ্চলটি সবাই চেনে ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল (Dragon Triangle) নামে।

শুকতারা Tv র এই পর্বে জানব ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল (Dragon Triangle) আশ্চর্যজনক তথ্য সম্পর্কে।

ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে অজানা তথ্য – Amazing Facts about Dragon Triangle

চীনের বিশ্বাস অনুযায়ী, পাতালে ড্রাগন বাস করে। সেই মিথ থেকেই এই রহস্যময় অঞ্চলের এমন নামকরণ করা হয়েছে। এখানকার সমুদ্র অশুভ শক্তির আস্তানা, এমন মিথই গড়ে উঠেছে। তাই একে ডেভিলস সি-ও বলা হয়। এটি জাপানের দক্ষিণে টোকিও থেকে ১০০ কি.মি দূরে এই রহস্যময় স্থান অবস্থিত। সে সময়ে বেশকিছু বড় বড় জাহাজ এ অঞ্চলের কাছে আসতেই অদৃশ্য হয়ে যায়। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরে সব মিলিয়ে ৯টি জাহাজ হারিয়ে যায়। অথচ সব ক’টি জাহাজেই রেডিও ট্রান্সমিটার ছিল। কিন্তু কোনোটা থেকেই কোনো রকম বার্তা আসেনি। জাপান সরকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কাইয়ো মারু নামের একটি জাহাজ পাঠায় ওই অঞ্চলে,সেখানে নাকি বিজ্ঞানীরাও ছিলেন। কিন্তু সেটিও আর ফিরে আসেনি, অনেকটা বারমুড়ার নাইটিন ফ্লাইটের মতই। অনেক পরে সেই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু জাহাজে থাকা ৩১ জন নাবিকের কোনো সন্ধান মেলেনি। কী কারণে ওই অঞ্চলে জাহাজ বা বিমান অদৃশ্য হয়, তা অবশ্য সঠিকভাবে জানা যায়নি আজও। তবে তড়িচ্চৌম্বকীয় তরঙ্গের তত্ত্বই এখনো পর্যন্ত জোরালো। যা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের ক্ষেত্রেও বলা হয়ে থাকে। পাশাপাশি নানা মিথ তৈরির পেছনে আসল ঘটনা ঢাকা পড়ে যায়, যার কারণে প্রকৃত কারণ মানুশষ বিশ্বাস করতে ইচ্ছুক নয়। সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই নাকি এখানে অসংখ্য জাহাজ উধাও হয়ে গেছে। খোঁজ করতে গিয়েও নাকি ফিরে আসেননি কেউ। তাই এ অঞ্চলকে এশিয়ার বারমুডা ট্রায়াঙ্গলও বলা হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই ঘটনাগুলোর পর থেকে জায়গাটি ঘিরে আতঙ্কের রেশ ক্রমে বাড়তে থাকে। পাশাপাশি শুরু হয় ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেলর ভুতুড়ে কাণ্ডের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা। কেউ বলেছেন, তড়িচ্চৌম্বকীয় তরঙ্গের কথা। কেউ কেউ আবার সময় ভ্রমণের তত্ত্ব হাজির করে ওই অঞ্চলে টাইম লুপ খুঁজে পেয়েছেন। জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে ১০০ কিমি দূরে মিয়াকের কাছেই নাকি আজব সব ঘটনা ঘটে। সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই নাকি এখানে অসংখ্য জাহাজ উধাও হয়ে গেছে। খোঁজ করতে গিয়েও আর নাকি ফিরে আসেননি কেউ। তাই এশিয়ার বারমুডা ট্রায়াঙ্গলও বলা হয়ে থাকে জাপানের এই ডেভিল সি-কে। জাপান ও ফিলিপিন্সের সীমান্তে জাপানের ইয়োকাহামা থেকে ফিলিপিন্সের গুয়াম পর্যন্ত, গুয়াম থেকে মারিয়ানা, আবার সেখান থেকে ইয়োকাহামা পর্যন্ত এই -মা নো উমি- বা ডেভিল সি-র ড্রাগন ট্রায়াঙ্গলে নাকি অশুভ আত্মারা রয়েছে, অনেকেই এমনটা বলে থাকেন। ১৯৫২-১৯৫৪ সালে নাকি পরপর বেশ কয়েকটি জাহাজ হারিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় ৭০০ জন সেনাও গায়েব হয়ে যান। কারও নাকি আর খোঁজই মেলেনি। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও নাকি ৫০০টি বিমান, ১০টি যুদ্ধজাহাজ, ১০টি নৌ-যান ওই এলাকাতেই ধ্বংস হয় বা হারিয়ে যায়। আবহাওয়া একেবারেই প্রতিকূল ছিল না, তাও নাকি ওই এলাকার আশপাশে এলেই জাহাজ নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু রেডিও সিগন্যালে নাকি বার্তা পাওয়া যায়নি। -এর রহস্য নিয়ে চলেছে বিস্তর আলোচনা। নানা ব্যাখ্যা। পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে নানা যুক্তি। ৩১ জন বিজ্ঞানীর খোঁজ না মেলার কথা রটে যাওয়ার পর থেকেই অনেকেই বলতে থাকেন সমুদ্রের তলদেশে নাকি ড্রাগন রয়েছে। সেই থেকে নাম ড্রাগন ট্রায়াঙ্গল। তবে ঠিক কবে থেকে ডেভিল সি-র এই অংশকে ড্রাগনস ট্রায়াঙ্গল বলা শুরু হল, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ১৯৫২-৫৪ সাল নাগাদ নাকি পরপর বেশ কয়েকটি জাহাজ হারিয়ে যায়। এ সময় প্রায় ৭০০ সৈন্যও গায়েব হয়ে যান। কারও নাকি আর খোঁজই মেলেনি। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও নাকি ৫০০টি বিমান, ১০টি যুদ্ধজাহাজ, ১০টি নৌযান ওই এলাকায়ই ধ্বংস হয় বা হারিয়ে যায়। রহস্য সন্ধানে কায়ো মারু নামে একটি জাহাজ পাঠিয়েছিল জাপান। সেখানে নাকি বিজ্ঞানীরাও ছিলেন। কিন্তু রহস্যভেদ করতে গিয়েও তারাও আর ফিরে আসেননি। ড্রাগন ট্রায়াঙ্গল – এর রহস্য নিয়ে চলেছে বিস্তর আলোচনা, নানা ব্যাখ্যা। পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে নানা যুক্তি। ৩১ জন বিজ্ঞানীর খোঁজ না মেলার কথা রটে যাওয়ার পর থেকে অনেকেই বলতে থাকেন, সমুদ্রের তলদেশে নাকি ড্রাগন রয়েছে। সেই থেকে নাম ড্রাগন ট্রায়াঙ্গল।

ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য - Amazing Facts about Dragon Triangle in Bengali

এমনটাও বলা হয়, কুবলাই খাঁ নাকি ১২০০ সালে ওই এলাকা দিয়ে জাহাজ নিয়ে যাচ্ছিলেন, তারপর নাকি জাহাজের ৪০ হাজার আরোহী সমুদ্রেই নিখোঁজ হয়ে যায়। ১৮০০ সালে এক রহস্যময়ী নারীকে নাকি ওই এলাকায় জাহাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এরপর আরও নানা মিথ রটতে থাকে কয়েক দশক ধরে। ১৯৮৯ সালে চার্লস বার্লিৎজ নামে এক লেখক দ্য ড্রাগনস ট্রায়াঙ্গল বইয়ে লেখেন পঞ্চাশের দশকে জাহাজডুবি ও সেনা নিখোঁজের কথা। ১৯৯৫ সালে ল্যারি কুশে নামে এক লেখক বলেন, কায়ো মারু ১৯৫২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ধ্বংস হয়। পরে ধ্বংসাবশেষ মিলেছিল। ল্যারিই বলেন, এই অঞ্চলে মৎস্যজীবীদের নৌকা নিখোঁজ হয়েছিল, জাহাজ নয়। ল্যারি বলেন, অগ্ন্যুৎপাত ছাড়াও ভূমিকম্পের প্রবণতাও রয়েছে এই সব এলাকায়। সব মিলেই অশুভ আত্মার কথা রটে গিয়েছিল। আর ছোট মাছ ধরার নৌকা গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। ইভান টি স্যান্ডারসন বলেন, এটি বিশ্বের ১২টি ভাইল ভর্টেক্সের অন্যতম। ১৯৭২ সালে লন্ডনের সাগা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত দ্য টুয়েলভ ডেভিলস গ্রেভ ইয়ার্ডস অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড বলছে, পৃথিবীতে মোট ১২টি জায়গায় তীব্র চৌম্বকীয় আকর্ষণ অনুভূত হয়। আর ডেভিলস সি ড্রাগন ট্রায়াঙ্গলও তাই। সায়েন্টিফিক আমেরিকানের তথ্য অনুযায়ী, ড্রাগন ট্রায়াঙ্গলের এই স্থানটিতে প্রায় ৩৭ হাজার মাইল এলাকা জুড়ে গভীর সামুদ্রিক খাদ রয়েছে এবং এখানে প্রচুর পরিমাণে গরম লাভা ও কার্বন ডাই অক্সাইড রয়েছে। এছাড়াও ৫০-এর দশকে রেডিও সিগন্যাল ব্যবস্থা শক্তিশালী ছিল না। তাই ওই ঘটনাগুলো রটে যায়। [নোটঃ ল্যারিই, ইভানের মতই আরো কিছু বিজ্ঞানী আছেন যারা পৃথিবীকেও প্ল্যাট মনে করেন, উল্লেখ্য যে ঐ খানে হারিয়ে যাওয়া সৈন্যবহর, জাহাজ, বিমান ইত্যাদির কথা উপেক্ষা করে তিনি কিছু তুচ্ছ ঘটনাকে ব্যাখা করেছেন যা মোটেই ডেভিল-সির সাথে সামঞ্জস্য নয়]। তবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতো ড্রাগন ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বিপরীত মতও রয়েছে। যারা ভিন্নমত পোষণ করেন তাদের দাবি এগুলো আসলে কাল্পনিক। যদিও সব ঘটনার ব্যাখ্যা এখনও মেলেনি, তবুও ড্রাগনস ট্রায়াঙ্গল নিয়ে তৈরি নানা মিথের সদুত্তর এ বার পাওয়া যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Dragon Triangle in Bengali Q&A

  1. ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল (Dragon Triangle) কি?

Ans. আমরা সবাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কথা জেনেইছি। জাহাজ বা বিমান- ওই অঞ্চলে ঢুকে পড়লেই অদৃশ্য হয়ে যায়! তবে এবার বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতোই আরেকটি বিস্ময়কর স্থানের সন্ধান পাওয়া গেছে। সে অঞ্চলটি জাপানে। অঞ্চলটি সবাই চেনে ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল (Dragon Triangle) নামে।

  1. ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেলের (Dragon Triangle) নামকরণ কিভাবে হয়েছে?

Ans. চীনের বিশ্বাস অনুযায়ী, পাতালে ড্রাগন বাস করে। সেই মিথ থেকেই এই রহস্যময় অঞ্চলের এমন নামকরণ করা হয়েছে।

◆ আরও দেখুন :-

আশা করি এই পোস্টটি বা ” ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Dragon Triangle in Bengali ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।